গরুর কালো ভূনা

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৮:৫৩ সকাল



আজ ছুটির দিন। ফজরের নামাজ পড়েই দিলাম এক দৌড় অথবা ড্রাইভ...একেবারে পোর্টল্যান্ড অভিমূখে। ইদানিং পোর্টল্যান্ড আমাকে টানছে। নানান সব পণ্যদ্রব্য কেনার নেশা চেপেছে,যার সবই খাদ্যদ্রব্য।

সাতসকালে ট্রেন স্টেশনে গেলাম। এখানে ওভারব্রীজের নীচে দেখী বেশ কিছু ছিন্নমূল মানুষ কোনোরকমে বেচে আছে। শীত,গৃষ্ম,বৃষ্টি সব কালেই তারা এখানে তাবু খাটিয়ে থাকে। নিজেকে তাদের স্থানে রেখে চিন্তা করে বললাম,,,,আল্লাহু আকবার !! আল্লাহ কতই না ভালো রেখেছেন,,,,আল্লাহ যেন তার রহমত উঠিয়ে না নেন !

স্টেশনের ভেতর গেলাম,লোকজন তেমন কেউ নেই। মাত্র ২জন যাত্রী দেখলাম। এখানে অত ভীড়বাট্টা নেই। তবে ট্রেন যে টাইমে ছাড়ে বা আসে তখন কিছু লোক পাওয়া যায়। ট্রেন সার্ভিস অনেক দারুন। ভেতরের পরিবেশ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। আমি টিকেট বিক্রেতার সাথে খানিকক্ষন কথা বললাম এবং জিজ্ঞেস করলাম তাদের নিজস্ব বাস আছে কিনা...। বলল,হ্যা নিজস্ব বাস সার্ভিসও আছে। আর সে বাস পুরো ওরেগন ,ওয়াশিংটন জুড়ে চলে।

আজ রৌদ্রজ্জ্বল দিন। বাইরে তাপমাত্রা হালকা ঠান্ডা ধরনের তবে ততটা প্রবল নয়। বাইরে আসলাম। দেখলাম একের পর এক সুন্দর সুন্দর ট্রাম চলছে। ট্রাম আমার খুবই ভালো লাগে। রাস্তায় হাটলাম বেশ কিছুক্ষন। স্টেশনের সামনে গ্রে-হাউন্ড নামক বাসের বিশাল কাউন্টার আছে,সেখানে হাটার সময় হুইল চেয়ারে বসা এক বৃদ্ধা ইশারায় ডাকল। বিশাল সাইজের মহিলার সামনে যাওয়ার পর সাহায্য চাইলো। পকেট থেকে ১ডলারের একটা নোট দিয়ে বাচার চেষ্টা করলাম কিন্তু নাছোড়বান্দার মত আরও চাইলো,,,মাফ চেয়ে কেটে পড়লাম। এরকম আরও বেশ কিছু ভিক্ষুক পেলাম,যাদের সকলেই কালো।

স্টেশনের সামনে কয়েকজন দেখলাম বিড়ির মত করে কিছু টানছে। সম্ভবত কোনো মাদক হবে।মারিজুয়ানা হতে পারে। এটা ওরেগনসহ অনেক স্টেটে বৈধ,তবে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া নেওয়া নিষেধ। এদেরকে এসব অপরাধে পুলিশ ধরে বলে মনে হয়নি,,কারনট এমন হতে পারে যে,সরকারী খরচে এদেরকে খাওয়াতে হবে....। অবশ্য অন্য এলাকায় এই জিনিস খাওয়ার অপরাধে আটক হতে দেখেছি। খানিক পর বিশাল সাইজের এক কালো লোক কাছে ডাকার চেষ্টা করল,,,আমি এড়িয়ে গেলাম। সাতসকালে এত উদার হওয়ার ইচ্ছে নেই। ওরেগনে অবশ্য ভিক্ষুক একেবারেই কম। মাঝে মাঝে রাজকীয় ভিক্ষুকও চোখে পড়ে। সেদিন পোর্টল্যান্ড যাওয়ার পরে এক রেস্ট এরিয়াতে দেখী এক মেয়ে চুপচাপ বসে আছে,পাশে একটা বোর্ডে লেখা গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে,মেরামত করব,টাকা দাও...ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুক ! তাকিয়ে দেখী তার গাড়িটা হল একটা ট্রাক বা পিকআপ। আমেরিকাতে এই ধরনের পিকআপ চালানোর একটা চল আছে। এগুলো ভি-৮ ইঞ্জিন এবং প্রায় ৫হাজার থেকে সাড়ে ৫হাজার সিসি। প্রচুর তেল খরচ হয় এগুলো চালাতে। আর দামও অনেক বেশী। চিন্তা করলাম আরেক পাশে তার মত আমার বসা উচিৎ কি না...কিন্তু গরিব মানুষের ইজ্জতটাই সম্বল,,,,,,,Happy

যাইহোক বেশ খানিক হাটলাম। পরিচ্ছন্ন ফুটপাথ ধরে হাটতে খুব ভালো লাগে। লোকজন আইন-কানুন মেনে রাস্তায় চলছে,হাটছে। কেবল আমি কোনো আইন টাইন মানলাম না। রাস্তা পারাপারে সকলেই সিগনাল লাইট অনুযায়ী চলে,আর আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখী পার হতে সমস্যা আছে কি না....এরপর দৌড় দেই।

সকালে ডাল আর পেপের তরকারী দিয়ে টেনেছিলাম,ফলে আজ আর ভারতীয় রেস্টুরেন্টে গেলাম না। এখান থেকে চলে গেলাম প্যাসিফিক হাইওয়েতে। টাইগার্ডের উইনকো থেকে কেনাকাটা করলাম। অর্গানিক ব্লুবেরী মধু আর একেবারে টাটকা এমন্ড বাটার কিনলাম। এখানে ছোট্ট একটা মেশিনে এমন্ড,বাদাম,ক্যাসিও নাট এসব লোড করা থাকে। মেশিনের সবুজ বাটন চাপলে উক্ত আস্ত নাটগুলো পিষে বাটার হয়ে নীচ দিয়ে পড়ে। তখন সেখানে খালি কৌটা রাখতে হয়। প্লাস্টিকের পাত্রগুলো পাশেই থাকে। সতর্কতার জন্যে মেশিনে প্রগ্রাম করা আছে যে একবার সবুজ বাটনে চাপলে আনুমানিক ২০০গ্রাম বা তার কম বাটার বের হয়ে মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আবার সবুজ বাটন চেপে খানিক পরেই লাল বাটন চাপলেও তা বন্ধ হবে। এমন্ড আমি প্রচুর খাই কিন্তু এর বাটার খাওয়া হয়নি। নিলাম আযান দিয়ে,সাথে মধু। আরও অনেক কিছু কিনলাম। এরপর বাসায় ফিরলাম।

ফিরেই এমন্ড বাটার আর মধু দিয়ে ব্রেড খেলাম....অসাধারন জিনিস মনে হল। এমন্ডে প্রচুর ক্যালসিয়াম আর ফাইবার আছে। জিনিসটা হাড়ের জন্যে দারুন।

এক ঘুমের পর বিকেলে সাতার কাটতে গেলাম। ১২০০ মিটার সাতার কাটলাম। এরপর ক্ষুধা লাগল কিন্তু চেপে গেলাম।

খানিক আগে গরুর গোস্ত রান্না শুরু করলাম। গরুর গোস্ত আমি প্রথমে তেলে ভেজে নেই,কিন্তু আজ বেশী ভাজা হয়ে গেছে ,মানে একটু পুড়ে গেছে। আর কষানোর সময়ও বুলে গেছিলাম,তখনও একবার পুড়েছে। এই দুই পোড় খেয়ে আজ সৃষ্টি হল গরুর কালো ভূনা। ভাত রান্না করে ,ভাতের সাথে ঐতিহাসিক টান দিলাম। এক টানে মাথা পর্যন্ত উঠিয়ে দিলাম। আমার গরু প্রীতির কথা নরেন্দ্র মোদী জানতে পারলে দু:খে হয়ত গরুর চনা খাওয়া বন্ধ করে দিত !!

বিষয়: বিবিধ

১২৯৯ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382395
২৩ মার্চ ২০১৭ দুপুর ১২:২৪
ইয়াফি লিখেছেন : আমেরিকায় ছিন্নমুল লোকজন, রাস্তার ধারে বসবাস! এরাও নিশ্চয় কৃষ্ণাঙ্গ! রাষ্ট্র এদের পূনর্বাসনের ব্যবস্হা করেনা?
২৩ মার্চ ২০১৭ দুপুর ০১:০২
316057
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : হ্যারিকেন ক্যাটরিনার সময় মার্কিন সেনাবাহিনী দুর্গত মানুষের সহায় সম্পদ লুটপাট, নারীদের ধর্ষণ, খাবার-পানি দিতে অস্বীকার ইত্যাদি নির্বিকারভাবে চালিয়ে গিয়েছিল কারণ মানুষগুলো ছিল কালো। পুলিশের গুলিতে নিগ্রো মৃত্যুর ঘটনা মার্কিন মুলুকে ডালভাত।
২৬ মার্চ ২০১৭ রাত ১০:০৮
316075
দ্য স্লেভ লিখেছেন : কেবল কালোরাই নয়,অনেক সাদাও ছিন্নমূল। তবে কালোদের পরিমান বেশী। এদের অনেকের সামাজিক অপরাধের রেকর্ড আছে। সরকার ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কিছু করে ,তবে ততটা নয়। ভেতরে ভেতরে সাদা কালোর একটা ভেদাভেদও আছে
382396
২৩ মার্চ ২০১৭ দুপুর ১২:৩২
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!‍ আপনার লেখার সাথে ভ্রমণে ভালোই লাগলো। জাযাকুমুল্লাহ্ ভাইজান।
২৬ মার্চ ২০১৭ রাত ১০:০৮
316076
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম সালাম জনাবা। আপনাকে গরুর গোস্তের শুভেচ্ছা
382397
২৩ মার্চ ২০১৭ দুপুর ০১:০৬
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : এমন্ডে প্রচুর ক্যালসিয়াম আর ফাইবার আছে,জিনিসটা হাড়ের জন্যে দারুন। হুম জানি। আমার তো মেরুদন্ডের হাড়ে অনেকদিন ধরে সমস্যা। বছরখানিক চিকিৎসা করেও তেমন কোন লাভ হয়নি এখন প্রাকৃতিক জিনিসের দিক ঝুকতে হবে। কিন্তু এদেশে সব খাদ্যেই ভেজাল। :(
২৬ মার্চ ২০১৭ রাত ১০:১০
316077
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি,ছোট মাছ,বাদাম জাতীয় খাদ্য ,দুধ ডিম বেশী খেতে হবে। আর ডাক্তারের পরামর্শে হালকা ব্যায়াম
382404
২৩ মার্চ ২০১৭ রাত ১১:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : গরুর কালো ভুনা আগে সিদ্ধ করতে হয় পরে মসলা দিয়ে ভাল ভাবে কষাতে হয়!! তবে একটু পোড়া হইলে গরুর স্বাদ মনে হয় আরো বাড়ে।
ওই ইজ্জত টা কম বলেই আমেরিকান রা সারাদুনিয়ার উপর মুরুব্বি হয়ে আছে। সে কিন্তু বিনিময়ে দাতার জন্য দুয়া করে রেখেছে। বাঙ্গালি ইজ্জত রাখতে গিয়া চির গরিব হয়ে আছে!!!
২৬ মার্চ ২০১৭ রাত ১১:২০
316078
দ্য স্লেভ লিখেছেন : তা যা বলেছেন Happy Happy
382421
২৫ মার্চ ২০১৭ সকাল ১০:২৬
হতভাগা লিখেছেন : গরুর মাংশ কেজি প্রতি এখন ৫০০ টাকা বাংলাদেশে । কুরবানীর সময় ছাড়া মনে হয় মধ্যবিত্তরা গরুর মাংশের দিকে হাত বাড়াবে না ।

আমেরিকায় দাম কি রকম ?
২৬ মার্চ ২০১৭ রাত ১১:২৩
316079
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমেরিকায় দাম একতরফা নয়। এখানে একেক গ্রসারী স্টোরে একেক দাম। আবার অনেক সময় দামে ছাড়ও দেওয়া হয়। গরুর শরীরের একেক স্থানের গোস্তের একেক দাম। কোনো কোনো স্থানের গোস্তের কেজী ২৫ডলারও পড়ে। তবে এভারেজ ধরলে বলব-৮/১০ ডলার কেজী হবে। তবে এর ভেতর হাড় নেই,কেবল গোস্ত।
২৮ মার্চ ২০১৭ রাত ০৮:৪৩
316085
হতভাগা লিখেছেন : সরকারের বেধে দেওয়া রীতি অনিযায়ী প্রতি ১ কেজি মাংশে ২৫০ গ্রাম হাড্ডি দেওয়া লাগবেই । মানে সলিড মাংশ ৭৫০ গ্রাম।

সলিড মাংশের কেজি দাঁড়ায় ৬৭০/৬৮০ টাকার মত / কেজি।

এসব মাংশের সাথে আবার ৩/৪ দিনের পুরনো মাংশও মিশিয়ে দেওয়া হয়।
382445
২৮ মার্চ ২০১৭ সকাল ০৭:৫১
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপনার লেখা থেকে,(১)কেবল আমি কোনো আইন টাইন মানলাম না। রাস্তা পারাপারে সকলেই সিগনাল লাইট অনুযায়ী চলে,আর আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখী পার হতে সমস্যা আছে কি না....এরপর দৌড় দেই উওরঃ এই দৌড় দেওয়াকে জে হাঁটা বলে , ট্রাফিক নিয়মকানুন লঙ্ঘন, বিশেষ করে যখন ব্যর্থতা পথচারী মনোনীত crosswalks ব্যবহার করে না। পুলিশ দেখলে ফাইন এবং কোটে
যেতে হবে।
(২) অর্গানিক ব্লুবেরী মধু আর একেবারে টাটকা এমন্ড বাটার কিনলাম।অর্গানিক সবকিছুর একটু দাম বেশী। স্বাদ ভাল। তাইলে অর্গানিক খাওয়া শুরু করছেন।

২৯ মার্চ ২০১৭ সকাল ০৯:০৪
316089
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি ভাই,,অস্ট্রেলিয়াতে আইন অনেক বেশী কড়া,কিন্তু একই কাজ করেছি Happy এত আইন সহ্য হয়না ...স্বভাব। আমি সস্তা পছন্দ করি। কখনও সস্তায় অর্গানিক পেলে খাই Happy
382607
১১ এপ্রিল ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় ভাই আপনার লিখাটি খুব ভালো লেগেছে।
রাস্তা পারাপারে সকলেই সিগনাল লাইট অনুযায়ী চলে,আর আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখী পার হতে সমস্যা আছে কি না....এরপর দৌড় দেই।
এই কাজটা যদি আবুধাবি শহরে করেন, তাহলে সিআইডি আপনাকে ৩০০দিরহাম জরিমানার একটা রিসিট হাতে ধরিয়ে দিবে। আমি মনে করি আমাদের সকলের ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলা উচিৎ।
১৫ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ০৭:০৪
316202
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস সালাম। জি ভাই দেখেশুনেই পার হওয়া উচিৎ। আমেরিকাতে এই কাজে কয়েক'শ ডলার জরিমানা,আর অস্ট্রেলিয়াতে আরও বেশী....কিন্তু পরোয়া করিনি Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File