কলার পাতায় কারা খেয়েছেন আওয়াজ দেন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১০:১৬:২৫ সকাল
(ছবি সংযুক্ত হলনা)
আহ কলার পাতায় খাওয়ার যে মজা তা না খেলে বোঝা যাবেনা। প্রথমে বুটের ডাল,চর্বি,আলু দিয়ে বানানো তরকারী(স্থানীয় নাম ছাক্কা)দেয়। যারা মনে করে গোস্ত কম খাওয়াবে,তারা এই ছাক্কা দ্বিতীয়বার দিয়ে যায়। তবে তৃতীয়বার সাধারনত ছাক্কা দেয়না,তাহলে গৃহস্তের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করে অতিথীরা। সামাজিকভাবে অপদস্ত হওয়ার ভয়ে মানুষ মরলে মহা উৎসাহে এই উৎসব পালিত হয়। কোথাও বলে চল্লিশা,কোথাও কুলখানি,তবে আমাদের এলাকায় খানা বলে।বিষয়টা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে ধার কর্য করে হলেও এটা করা লাগে,নইলে মানুষের কাছে অপদস্ত হতে হয়।
যাইহোক আমরা এই খওয়ার দিকে আলোকপাত করব। ছাক্কা দিয়ে ধুমধাম খাওয়ার পর মানুষ গোস্তের আশায় অপেক্ষমান থাকে। কারন এরপরই গোস্ত আসবে আর তা গরুর। পাটিতে লাইন ধরে বসে থাকা মানুষদের পাতে যারা খাবার সরবরাহ করে তাদের নাম খাজনদার। এদের ভেতর যারা খুবই প্রশিক্ষিত,তাদেরকে দিয়ে গোস্ত বেড়ে দেওয়া হয়। মূল দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বলে দেয় প্রথমে ২ পিস করে মার। মানে হল প্রথমে ২পিস করে দিতে হবে। তবে তারা আসলে মুখ চিনে মারে। কেউ কেউ আরেকটু বেশী চয়ে নেয়,এরা না করেনা। তবে আমি কেবল ঝোল চাইতাম। আমার শুধু ঝোল বেশী ভালো লাগত। খানিক পর আবার ভাত দিয়ে যায় এবং এরপর খাজনদারদের সরদার বলে এবার ১পিছ করে মার(পরিমানটা মানুষ ভেদে বাড়া কোমা করে)। মানে শেষবার ১পিছ করে দিয়ে যাবে। এবারও আমি ঝোল চাইতাম অনুচ্চস্বরে,কারন কোনো কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে লজ্জা করত। মূলত আমাকে জিজ্ঞেস করত কিছু দেবে কি না...তখনই বলতাম ঝোল দেন। তারা ঝোলের সাথে ছোট ছোট ২/১পিস গোস্তও দিত সেটা বেশ মজার ছিলো। তবে শেষে যখন ডাল দিয়ে যায়,তখন হয় খেলা। এ ডাল হয় পাতলা আর জম্মের মজা। কলায় পাতায় গরম ডাল ৪ দিকে সামলে খেতে হয় ,দেরী হলেই ডাল মাটিতে ...
মনে পড়ছে খাটুরায় ছোটবেলায় ফুফাত ভাই মাহবুবের নানার খানা খেয়েছিলাম। হাজার হাজার লোক আমন্ত্রিত ছিলো। আমরা ২দুদিন আগেই গিয়েছিলাম স্বপরিবারে। সে সময় নিয়ম ছিলো যে বাড়িতে খানা হবে,সে বাড়ির সকল আম্তীয় স্বজন পূর্বেই সেখানে উপস্থিত থাকবে,বিশেষ করে মহিলারা ও শিশুরা। সে এক বিরাট উৎস্যব....(মানুষ মরেছে সেই আনন্দে !!!)
উক্ত খানায় অনেক গরু জবাই হল। আমি উক্ত বিশাল খানার দিন পাটি বাদ দিয়ে কলার পাতায় বসলাম ধুলো মাটিসহকারে....পরে দেখী আমার দুপাশে ফকিররা বসেছে। ফকিরদেরকে অন্যদের মত আদর আপ্যায়ন করত না। আর ফকিররা শুধু চিল্লাচিল্লি করে নিজেদের খাবারের প্রয়োজন তা জানাতো। আবার কেউ কেউ দেখলাম পলিথিনের প্যাকেটে খাবার ভরছে। একসাথে ভাত তরকারী পলিথিনে দেখে আমার ঘৃণা করছিলো। পাটিতে বসা আত্মীয়রা আমাকে ডাকলেও আর উঠিনি....সেখানেই খেয়েছিলাম । ফকিরদের সাথে খেলাম বলে লজ্জাও পেয়েছিলাম ,অন্যরাও খেপাচ্ছিলো....তবে মজা করেই খেয়েছি। এরকম আরও অনেকবার খেয়েছি। মাটিতে বসে কলার পাতায় খাওয়ার মজাই আলাদা
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সর্বশেষ গত ২০০৯ অথবা ২০১০ সালে এক হিন্দু বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে দেখেছিলাম। তাদের গ্রামের হিন্দুরা পদ্ম পাতা ও কলাপাতায় খেলেন পাটি বিছিয়ে। আমি অবশ্য সম্পর্কের খাতিরে গিয়েছিলাম খাওয়াটা বিভিন্ন কৌশলে এড়িয়ে চলেছি আজ অবধি।
কলা পাতায় নানান কিছু খেয়েছি, কিন্তু খানা অর্থায় আমাদের এলাকার ভাষায় জেয়াপতে থালা বাসনেই খেয়েছি। তবে কোনো অজানা কারণে এইসব খাবারের স্বাদের তুলনা হয়না।
আর বলা বাহুল্য, মানুষ সারা জীবনে বাবা মায়ের কোনো সেবা যত্ন না করলেও এই চল্লিশার দিনে কিন্তু মৃত বাবা মায়ের জন্য কোমরে লুঙ্গি তুলে নেমে পড়ে
ছোটবেলার অনেক মজার কাহিনী মনে করিয়ে দিলেন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন