এক ধনী লোকের কাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৫২:২৪ দুপুর
জাফর মিয়া বলদপুর গ্রামের চায়ের দোকানদার। চা ভালো বানায় তাই লোকজন আসে বেশ। চা উপভোগ করে। জাফর মিয়া বিড়ি বিক্রী করেনা কারন এটা নেশাদার দ্রব্য এবং ক্ষতিকর,সে পান বিক্রী করলেও জর্দা বিক্রী করেনা কারন সেখানেও তামাক রয়েছে,যা নেশাকর এবং ক্ষতির মাত্রা বৈজ্ঞানিক পরিক্ষায় প্রমানিত হওয়ার কারনে মুস্তাহিদগন হারাম ঘোষনা করেছেন তামাকজাত দ্রব্যসমূহকে। জাফর মিয়া ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে জামাতে। পরিবারে সময় দেয়। ফজরের পর দোকানে বসে,দুপুরে দোকান বন্ধ করে নামাজে গিয়ে পরে বাড়িতে খাবার খেয়ে এক ঘন্টা ঘুমায়। বিকেলে আবার দোকানে বসে এবং নামাজের বিরতি নিয়ে সে এশা পর্যন্ত দোকানদারী করে
যেহেতু দোকানের কাছেই তার বাড়ি তাই পরিবারকে সময় দিতে বেগ পেতে হয়না। তার যা উপার্জন তা দিয়ে তার মোটামুটি চলে যায়। সুস্থ্য দেহে সে পরিবারের সাথে তার রিজিক উপভোগ করতে থাকে। এভাবেই চলছিলো।
একদিন এক লোক তার দোকানে চা খেতে আসল এবং বলল ভাই এই পুটলিটা একটু রাখেন,আমি খানিক পরে এসে নিয়ে যাব। লোকটা চলে গেলে জাফর মিয়া পুটলিটা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। দেখলো সেখানে কিছু গাছগাছড়া আর ওষুধ। সেই লোক ফিরলে জিজ্ঞেস করল ভাই আপনি কি অসুস্থ্য ? সে বললো কেন ?? জাফর বলল-আপনার পুটলিটা অনুমতি না নিয়েই নেড়ে দেখছিলাম,দেখলাম ওষুধ ওখানে।
লোকটা বলল ওটা আমার জন্যে না।..সে জানতে চাইলো স্ত্রীর জন্যে কি না...কিন্তু লোকটা বলল, এটা শরীরে বল বর্ধক ওষুধ। মানুষকে চাঙ্গা রাখে এটা। এগুলো সীমান্তের ওপার থেকে নিয়ে এসেছি। ঢাকায় পৌছে দিলে আমি পাক ৫০ হাজার টাকা।
টাকার অংশ শুনে জাফর মিয়ার চোখ কপালে উঠে গেল। এত টাকা !! সে প্রশ্ন করলো এগুলো কোথা থেকে কিনেছেন ? আমিও কিনতে পারব ??
লোকটা তাকে বলল-এটা সীমান্তের ওপারে ওমুক স্থানে পাওয়া যায়,তবে আমার দালাল আছে,তারা এপারে দিয়ে যায়। আপনি চাইলে আপনিও ব্যবসা করতে পারেন। মাত্র ১০ হাজার টাকা বনিয়োগ করলেই আপনি ৪০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন।
জাফর মিয়ার ঘুম হারাম হয়ে গেল। সারারাত সে টাকার হিসেব করতে লাগল। রাতে টাকার স্বপ্ন দেখলো সে,যে বিশাল বাড়ী তার,অনেক কর্মচারী,দামী গাড়ি....সে ফজরের নামাজ মিস করল। কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। সে সকালে দোকানও খুললো না। চলে গেল সেই লোকের কাছে। তার জমানো ১০ হাজার টাকা নিয়ে সে দালালের থেকে ওষুধ কিনলো। এরপর সে ঢাকায় নির্দিষ্ট স্থানে নিয়মিত সরবরাহ করতে শুরু করল। আর সত্যি সত্যিই তার প্রতি চালানে ৪০হাজার টাকা লাভ হতে শুরু করল। কিন্তু সে ঠিক জানত না এটা কেমন ধরনের ওষুধ। আর যখন সে জানলো এটা ইয়াবা তখন ঘটনা বহুদূর। টাকার নেশায় সে ডুবে গেল।
আরও টাকা বিনিয়োগ করল সে। একজনের সাথে মিলে সে ঢাকায় ইয়াবা কারখানাও তৈরী করল। বছর দুয়েকের ভেতর সে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেল। সে এখন মারাত্মক ব্যস্ত,পরিবারকে সময় দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হলনা। নিজের দিকেও তাকানোর সময় নেই,তাকে আরও টাকা উপার্জন করতে হবে। এভাবে দশ বছর গেল।
জাফর মিয়া এখন জাফর সাহেব। সে শত কোটি টাকার মালিক। মানুষ তাকে সম্মান করে। পুলিশও তাকে সেবা দেয়। দামী গাড়িতে বিশেষ বডিগার্ড নিয়ে চলে। একদা ডাল-ভাতে অভ্যস্ত জাফর এখন নাম না জানা নানান সব খাবার খায় বিদেশী রেস্টুরেন্টে। শরীর হয়েছে দ্বীগুন। তাতে প্রবেশ করেছে খানদানী সব রোগব্যাধী। কিন্তু সে তার তোয়াক্কা করেনা,তার আরও টাকা চাই।
জাফর মিয়া এবার পৃথিবী ভ্রমন করবে ভাবল। সে ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোতে গেল। তাকে সেবা করতে সার্বক্ষনিক লোক প্রস্তুত। কিন্তু জাফর মিয়া খেয়াল করল,কেন যেন তার মানুষিক শান্তি নেই। তার ভেতর কেবল ভয় শংকা কাজ করে। চরম অনিরাপত্তাবোধে ভোগে। নানান দেশের নানান খাবার অনেক দাম পরিশোধ করে খায় বটে কিন্তু তার স্বাদ সে যেন প্রাপ্ত হয়না। অনেক দামী স্থানে ঘুমায় কিন্তু তার ঘুম আসেনা। তার বার বার মনে হয় তার তৈরী করা ওষুধ খেয়ে তরুন যুবকরা বিকৃত আচরনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে ,সামাজিক অপরাধে যুক্ত হচ্ছে এর দায়ভার তার উপরও পড়ে। ঘুমালে সে দু:স্বপ্ন দেখে। রাত হলেই তার দুচোখের পাতা এক হতে চায় না,কেবল নানান সব দুশ্চিন্তা কাজ করে। অনেক কষ্টেও ঘুম আসেনা। শরীরে নানান সব রোগ ব্যাধী তাকে চরম অসুখী করে তোলে।
সে প্রত্যক্ষ করে সারা পৃথিবীর বড় বড় ধনীরা এখানে এসেছে সময় কাটাতে কিন্তু তারা যা করছে তা মোটেও ধনীদের কাজ নয়। এরা হাফ প্যান্ট পরে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে এখানে সেখানে ঘুরছে আর সাধারন সব খাবার খাচ্ছে। অধিক প্রকৃতিবাদী হয়ে পড়েছে এসব লোক। অনেক পয়সা খরচ করে যা করছে তা অতি সাধারন। সবুজ প্রকৃতি সাদামাটাভাবে উপভোগ করতে পারাকেই এরা সুন্দর সময় পার করা বলছে। অনেক ধনী হয়ে এরা যেন সাধারন হয়ে উঠেছে । তার নিজের অবস্থাও তাই। যত বেশী টাকা খরচ করে সে সার্ভিস নিচ্ছে তত বেশী প্রাকৃতিক আচরন করা হচ্ছে তার সাথে। সাগর,নদী লেকের খুব কাছাকাছি বা সেগুলোর ভেতর কিছুদিন বসবাস। অথচ সে পূর্বে এরকম পরিবেশেই ছিলো। পার্থক্য এই যে এখন তার সেবা উপভোগের মত শারিরীক যোগ্যতা নেই। সার্বক্ষনিক মানুষিক অশান্তি তাকে গ্রাস করে। টাকা তাকে সাধারন অবস্থা থেকে অসাধারন অবস্থানে এনেছে কিন্তু তার থেকে কেড়ে নিয়েছে জীবনকে উপভোগ করার মত যোগ্যতা। সে তার পেছনের সময়কে মূল্যায়ন করতে শুরু করলো। হিসেব করে দেখলো সে কেবল টাকা নামক মুদ্রা প্রাপ্ত হয়েছে,আর সেটা পেতে তাকে পরিবারের সাথে দূরত্ব বজায় রাখত হয়েছে। নিজের শরীর ও মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। সমাজের লোকদেরকে সমালোচনাকে উপেক্ষা করেছে। একদা মসজিদের সাথীদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে তার বিশাল বিত্ত বৈভবের মাধ্যমে যা উপার্জন করেছে তা হল মানুষের ঘৃণা,নিজের স্বাস্থ্যহীনতা,নিরাপত্তাহীনতা,মানুষিক অশান্তি,পারিবারিক অশান্তি । নিজ হাতে সুখকে কবর দিয়ে সে পৃথিবীর আনাচে কানাচে সুখ খুজে বেড়াচ্ছে......। সে অনুধাবন করলো সুখ বিচরন করে সাধারনত্বে। তা উপভোগ করতে হয় সকলের সাথে মিলেমিশে। সুখ থাকে সততায়। অন্যের উপকারের ভেতর দিয়ে আত্মতৃপ্তী লাভের মাধ্যমে আত্মসূখ উপার্জন করতে হয়। জীবনে প্রথমবারের মত সে নিজেকে চিনতে শুরু করল.....
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাস্তবে মানুষ জাফর সাহেবের মতই টাকার পেছনে দৌড়ায় ।
বাস্তবে মানুষ জাফর সাহেবের মতই টাকার পেছনে দৌড়ায় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন