পুটির বাপের অসম্পুর্ণ চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৪:১৮:২৮ রাত
প্রিয়তমেষু
পত্রের শুরুতে আমার প্রান ঢালা সালাম ও শুভেচ্ছা নিও,আস সালামু আলাইকুম ও য়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে কুশলে আছো। কিন্তু বার বার মন বলছে তুমি আসলেই ভালো আছো তো ? শহরে আসার সময় তোমাকে জ্বর অবস্থায় রেখে আসতে হয়েছিলো। কি করব, বলো, চাকুরীজীবীরা তো চাকর, অফিসের বসের কথায় ওঠা বসা করতে হয়। বড় পদে চাকুরী করলেও হয়ত আরো কিছু সুবিধা নিতে পারতাম ! সবই তোমার কপাল , সামান্য বেতনভুক্ত এক কর্মচারীর বৌ হয়েছো। তারপরও তোমার অসুস্থ্যতার কথা বলে ৩দিন অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছিলাম।
আসার সময় তোমার কপালে হাত রেখে দেখলাম বেশ গরম। জানিনা এখন তুমি কেমন আছো,কি করছ। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করছ কি না কে জানে। তুমি তো আবার কথা শোনোনা। মানুষের সেবা করতে গিয়ে কখনও নিজের দিকে তাকাও না তুমি। সকালের খাবার দুপুরে,দুপুরের টা রাতে খাওয়াই তোমার নিয়ম। কিছুবললে বলো,আমি ঠিক আছি। কিন্তু সংসারের জন্যে খেটে তুমি দূর্বল। তোমার নিজের যে সেবা নেওয়া প্রয়োজন সেই বোধ তোমার হয়না। সেবার জ্বর থেকে উঠেও তোমার কাজ আর ফুরায় না। আমি বার কয়েক ধমক দিয়ে তবে তোমাকে বিশ্রামে পাঠিয়েছি। যথাযথ পুষ্টিকর খাবার সঠিকভাবে কিনে দিতে পারিনা,এটা নিয়ে কখনও অভিযোগ করোনি,কিন্তু অসুস্থতায় যে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী সেটা নিশ্চয়ই উপলব্ধী করা উচিৎ। আমাদের সন্তানদেরকে খাওয়ালে তোমার জন্যে আর তেমন কিছু থাকেনা,সেটা কি অসুস্থ্যতার সময় ভাবলে চলবে বলো ! তুমি সুস্থ্য না থাকলে বাচ্চারা কিভাবে সুস্থ্য থাকবে ! তুমি ভাবো চাল-ডাল,তেল,নুন কেনার টাকা যে লোকের তেমন থাকেনা সে আবার মাছ,গোস্ত,ফলমূল কিনবে কিভাবে ! কিন্তু তুমি তো জানো আমার কষ্টের উপার্জনের একটা ক্ষুদ্র অংশ জরুরী প্রয়োজনে জমিয়ে রাখি। সেখান থেকেই তো মাঝে মাঝে সেসব খাবার কেনার টাকা দেই। কিন্তু মন্টু মিয়ার কাছ থেকে শুনেছি তুমি সে টাকা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্যে জমিয়ে রাখো। এটা তোমার অন্যায়। তোমাকে তো সুস্থ্য দেহে সুন্দরভাবে বাচতে হবে ! আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে মন্টু মিয়ার মাধ্যমে বাজার সওদা করে পাঠিয়ে দেব।
কিছুদিন পরই শীত পড়বে। গতবার শীতের শুরুতে তোমার কাশি হয়েছিলো ব্যপক। নতুন সুয়েটার কিনে দিতে পারিনি তোমায়,পুরোনোটা দিয়ে চালিয়ে নিও। আর আমার মাফলারটা গলায় পেচিয়ে রেখো। ঠান্ডা হাওয়ায় তোমার কাশি হতে পারে। উলের যে মোজাটা কিনে দিয়েছিলাম, সেটা পরে থাকবে ,বেশ গরম ওটা। ফজরে ঘুম থেকে উঠে কেরোসিনের স্টোভ জ্বালিয়ে পানিটা গরম করে ওজু কইরো,নইলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে। আর ঠান্ডা লাগালে জ্বর আবার ঘুরে আসবে।
পাশের বাড়ির আব্দুল গফুরের মাকে সব বলে দিয়ে এসেছি,সে তোমার দেখাশুনা করবে কিন্তু ওরা গরবি হলেও সৎ নয়। বার বার না ডাকলে আসবে না। তাকে ডেকে তোমার কাজগুলো করিয়ে নিও। যতদিন সুস্থ্য না হচ্ছ ততদিন তোমার চাচাতো বোনটাকে তোমার কাছে নিয়ে রাখো। তার তো ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়েছে। মাস খানেকের জন্যে তাকে আনো। সেও তো তোমাকে খুব পছন্দ করে। আর তাকেও পাকা নামাজী বানিয়ে দিও,সে খুব অলস প্রকৃতির। সে আমাদের বাচ্চাদেরকে খুব পছন্দ করে।তারাও একজন খেলার সাথী পাবে,তোমারও বেশ উপকার হবে। তার বাড়ি ফিরে যাবার কিছু পূর্বে দর্জির দোকানে গিয়ে একটা জামার মাপ দিবে। যে রং পছন্দ তার ,সেই রঙের একটা সুন্দর জামা বানিয়ে দিও। আমি দর্জির কাছে টাকা পাঠায় দেব,সে আমার বন্ধু মানুষ,প্রাইমারী স্কুলে একসাথে পড়তাম। লোক ভালো সে। দাম বেশী রাখবে না।
সিজন পরিবর্তনে জ্বর অনেকেরই হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম,তাদের বেশী হয়। কিন্তু এসবে চিন্তা করবা না। তুমি তো অল্পতেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ো। যদি শরীরটা বেশী গরম হয়,মাথা ধুয়ে ফেলবে এবং ঠান্ডা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে নিবে। আর সব সময় পানি খাবে। ঠান্ডা পানি খাবেনা। আর পাতি লেবুর রস করে খাবে। বাতবী লেবু অনেক ভালো হবে। আর খেতে ইচ্ছে না করলেও খাবে। ছোটবেলায় আমার যখন জ্বর হত,মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যেত। তখন ভালো জিনিসও খারাপ লাগত। আর ডাক্তার এক ধরনের তেতো বড়ি দিত জ্বরের জন্যে। আমি ওষুধ খেতে চাইতাম না। মুখে পানি নিয়ে তারপর সেই বড়ি মুখে দিয়ে গিলে ফেলতাম,কিন্তু বারবার আবিষ্কার করতাম পানি গিলে ফেলেছি তবে ওষুধটা মুখের ভেতর রয়ে গেছে। আর সে কি তেতো রে বাবা ! মা তখন বড়িটা গুড়ো করে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে দিয়ে বলত, একবারে গিলে ফ্যাল আর এরপর একগ্লাস পানি খা,একটু চিনি ডলে দে জিহবার উপর ,তেতো ভাব থাকবে না। কিন্তু কিছু খেতে ভালো লাগত না বলে জ্বর সারতে অনেক সময় লাগত।
পরে যখন বুঝতাম যে শরীরকে সচল রাখতেই হবে,তখন জোর করে খেতাম। বমি বমি ভাব হত,তাই বসা অবস্থায় অল্প খাবার মুখে পুরে,পানি দিয়ে গিলে ফেলতাম এবং সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়তাম যাতে বমি না আসে। আবার খানিক পর উঠে দ্রুত আরো কিছু পেটে চালান করে দিতাম। আর এভাবে আমি দ্রুত সুস্থ্য হতাম ওষুধ ছাড়াই। তুমিও এরকম করবে। কারন তোমাকে সুস্থ্য থাকতে হবে। পুটির মা'দেরকে অনেক বেশী করিৎকর্মা হতে হয়। আর তুমি তো অনেক ভালো,তাই ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবে।
আর শোনো খালি পায়ে হাটাহাটি করবে না। তাহলে ঠান্ডা লাগবে। ডাক্তার যে ওষুধ দিয়েছিলো সেটা ঠিক মত খাবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসম্পূর্ণ শব্দটাই অনেক বেদনাদায়ক!!! পুটীর মায়ের সুস্থতা কামনা করছি।
সর্বাবস্থায় সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। খুব ভালো। এই প্রার্থনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন