মাউন্ট পিসগাহ !!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৪২:৫২ সকাল





সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে আর ঘুমালাম না। শারিরীক কসরত করে রুটি বানালাম ,ডিম ভাজলাম,পূর্বে আলুর তরকারী ছিলো,সেটা দিয়ে খেলাম। আজ কোথাও যাওয়ার তেমন প্লান ছিলোনা,তাছাড়া আশপাশে জানামতে উল্লেখযোগ্য এমন স্থান নেই,যেখানে যেতে বাকী রেখেছি। উদ্দেশ্যহীনভাবে ইউজিন শহরের একটা স্টোরে গেলাম কিছু কেনাকাটা করতে। এখানে গাড়ির তেলের দাম দেখলাম গ্যালনে ৫সেন্ট কম,মানে ৩.৮লিটার অকটেন ৩.৩ ডলার। একই কোম্পানী একেক স্থানে একেক দামে তেল বিক্রী করে। শেল,শেভরন এদের তেলের দাম অন্যদের থেকে অন্তত ৪০সেন্ট বেশী দাম। এটা একটা বিশাল ব্যবধান তারপরও মানুষ তাদের থেকে তেল ক্রয় করে। পাশাপাশি দুটি তেল পাম্পের দামের পার্থক্য ৫০সেন্টও হয় কিন্তু দুটোতেই মানুষ কেনার জন্যে যায় যদিও বেশী দামে কেনা লোক কম। আমি দুটো শীতের জ্যাকেট কিনলাম যদিও উদ্দেশ্য এমন ছিলোনা কিন্তু ব্যপক মূল্যহ্রাসে সহ্য করতে পারলাম না।

এবার উদ্দেশ্য সেট করলাম মাউন্ট পিসগাহ। এটা ততটা বড় পাহাড় নয় কিন্তু শহরের ভেতর দারুন একটি স্থান। এর উচ্চতা ১৫৩১ ফুট । এর পাদদেশে আসলাম। আমার মত বেশ কিছু রসিক লোকও আজ উপস্থিত হয়েছে। উল্লেখ্য কোমরে জোর না থাকলে এই এলাকায় আসা নিষেধ। প্রায় ৩ কি:মি: উপরের দিকে পাহাড়ী রাস্তা চলে গেছে,এবং সর্বোচ্চ পয়েন্টে শেষ হয়েছে। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথের উপর আলগা পাথর কুচি ফেলে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। সকালে বৃষ্টির সুবাদে রাস্তা পানিময়। তার উপর দিয়ে চলছিলাম। কিছুদূর পরপর অসহ্য সুন্দর সব দৃশ্য চোখে পড়তে লাগল। ক্যামেরার চোখে ধারন করলাম।

উপরের দিকে উঠতে থাকলাম। হঠাৎ দেখী এক বুড়ি আমাকে পাশ কাটিয়ে সামনে চলে গেল। বয়স তার ষাটের কাছাকাছি হবে। দেখে মনে হল এথলেট হিসেবে জীবন কাটিয়েছে, পোষাকও সেরকম। কিন্তু তাই বলে আমাকে ছাড়িয়ে যাবে এক বুড়ি ! ভাবা যায় ! দিাম গতি বাড়িয়ে নাক দিয়ে গরুর মত ফোস ফোস শব্দ হলেও তাকে ছাড়িয়ে গেলাম। খেয়াল করলাম পূর্বে যেখানে ভাবছিলাম আমি যথেষ্ট গতি নিয়ে চলেছি এবং এর বেশী আমি পারব না ,কিন্তু ভদ্র মহিলাকে পাশ কাটাতে দেখে মনোবল বেড়ে গেল এবং সত্যিই পূর্বের চেয়ে অনেক জোরেই উপরে চলে গেলাম। মানুষের মনের জোর সম্পর্কে মানুষ নিজেই ওয়াকিবহাল নয়। এটা এমন এক বিষয়,যা তাকে ধর্য্যের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যায়,বা মনোবল বিষয়টা সম্পুর্ণরূপে ধৈর্য্য ছাড়া আর কিছু নয়। এর মাধ্যমে মানুষ তার নিজের শক্তিমত্তা,পারদর্শিতা উপলব্ধী করে থাকে। অভিজ্ঞতাহীনতা তাকে তার নিজের সম্পর্কেই অনঅবহিত রাখে নানানভাবে। জিদ এমন একটি উপাদান,যা মানুষকে পারদর্শী করে তোলে। এসব বৈশিষ্ট্য মানুষ ভালো কাজে লাগালে দুনিয়ার চেহারা বদলে যেত। অধিকাংশ মানুষই তাদের সকল পারদর্শীতা অকাজে ব্যয় করে। আমিও সেরকম অধিকাংশেরই একজন।

খানিকদূর চলার পর পেছনে দেখলাম এক লোক ফোস ফোস করতে করতে আসছে। আমার ঠিক কাছাকাছি এসে খিচে মারল দৌড় উপরের দিকে। মনে হল ওর সাথে আমি পাল্লা দিচ্ছি। কিন্তু খানিক পর মনে হল,আসলেই তো তাই,ওই বুড়িকে পার হয়েছি তো মনে মনে পাল্লা দেওয়ার মনোভাব থেকেই। আরে ও তো চলে গেল ! দিলাম দৌড়....ওরে আল্লাহ এ যে কি কষ্টের। খাড়া উপরের দিকে দৌড়ানো প্রচন্ড কষ্টের। কিন্তু লোকটাকে তাড়া করে বেশীদূ গেলাম না,কারন আমি একেক লুকআউটে দাড়িয়ে ছবি উঠচ্ছিলাম এবং কখনও বরাবরের মত মানুষকে অনুরোধ করছিলাম নিজের ছবি তুলে দিতে।

একেবারে উপরে উঠে আসলাম। সূর্যমামা মেঘের সাথে সাপ লুডু খেলছে । তবে বেশীরভাগ সময়ই সে দীপ্তমান। আজ তাপমাত্রা ১০ডিগ্রী সেলসিয়াস,কিন্তু সূর্য্যের তাপে বেশ আরামদায়ক। পাহাড়ের মাথা থেকে চারিদিকের যে দৃশ্য দেখা যায়,তার দিকে কেবল তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। নীচে অনেক আবাদী ভূমী সবুজে মোড়া,দূরের পাহাড়শ্রেনী,ম্যাকেঞ্জী নদী,দূরের রাস্তায় চলমান গাড়িঘোড়া,পার্ক সবই গোচরীভূত হয়। পাহাড়ের মাথার উপর ছোট স্তম্ভ দেখলাম যা ব্রোঞ্জ নির্মিত। এর উপর ইউজিনের ম্যাপ খোঁদায় করা রয়েছে দারুনভাবে।

খানিকক্ষন দৃশ্য দেখে নীচে নামতে লাগলাম। নামার সময় যাদেরকে সামনে দেখেছি সবাইকে দৌড়ে পার হয়েছি। নীচের দিকে দৌড়ানোও বেশ কষ্টের এবং বিষয়টি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। আজকের মত ঘোরাঘুরিতে ইস্তফা দিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। পথে থাইল্যান্ডের এক গ্রোসারী স্টোরে গিয়ে লাউ কিনলাম।

সন্ধ্যার পর লাউ রান্না করলাম,কিন্তু লাউয়ের খেসা ফেলতে গিয়ে একটা রেসিপী মাথায় আসলো। তখন খোসা কুচি কুচি কে কেটে বাধাকপির সাথে ভাজি করলাম। এক গ্লাস করলার রস করে নাক,মুখ শিটকে মজা করে খেলাম।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380284
৩০ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পাহাড়ে আস্তে উঠবেন। উপর থেকে নিচের দৃশ্যের ছবি দিলে আরো ভাল লাগত।
০১ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:৩৭
314764
দ্য স্লেভ লিখেছেন : উপদেশ শিরোধার্য জনাব Happy
380291
৩০ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮
রু লিখেছেন : করলার রস খাইলেন ক্যান..?যাক পরিচিত একজন কে খুঁজে পেলাম!
০১ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:৩৭
314765
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এই রসের ভেতর অনেক গুন তাই খেয়েছি যদিও ভালো লাগেনিHappy
380304
৩০ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৩
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : রাত একটায় শুতে যাওয়ার আগে আপনার লেখাটা চোখে পড়লো (আপনাদের তখন রাত এগারোটা মনে হয় )| ঘুম চোখে আপনার সাথে পাহাড়ে উঠতে গিয়ে গড়িয়ে পরে যাই কিনা তাই ভেবে আর পুরো লেখাটা পড়া হয়ে উঠেনি | এখন হলো | ওয়েদারের এডভান্টেজটা ভালোই নিচ্ছেন | আমাদের এখানে স্নো পড়া শুরু হয়েছে | স্নো যখন নেই তখন খুবই ঠান্ডা | আপার পেনিনসুলার যেই দিকটা বেশি পাহাড়ি সেদিকে মনে হয় এখন ছয় -সাত ইঞ্চি স্নো পরে আছে | আমাদের এদিকে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারটা এবারের মত আপাতত বন্ধ | এখন আমরা লক্ষী ছেলের মতো ঘরবন্দি | দিক দর্শনে আপনিই ভরসা !
০১ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:৪০
314766
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাহাহাহাহাহা...তা যা বলেছেন। তবে ঘ্রানে অর্ধ ভোজনের মত আমার দ্বারা আপনি ঘুরছেন,,,ভালো। পুটির মার পক্ষ থেকে দাওয়াত রইলো। পাবদা মাছের ঝোল হবে। শিং মাছ হবে লাউয়ের সাথে। গরুর গোস্তের ঝোল। অঅর মিস্টি হবে বেশুমার....Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
380330
০১ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৩:৩০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনার লেখার মাঝে খাওয়ার গল্প থাকতেই হবে মাশাআল্লাহ। পরদেশে যে ভাবে গুরছেন নিজের দেশে এতোটা কি গুরেছেন..? অনেক ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে আপনাকে ধন্যবাদ
০১ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:৪১
314767
দ্য স্লেভ লিখেছেন : নিজরে দেশও বেশ ঘুরেছি তবে এতটা না। বিদেশ ঘুরতে আমার ভালো লাগে। আগামী বছর ইনশাআল্লাহ ইউরোপের সব দেশগুলো ঘুরব। দোয়া কইরেন।
380396
০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫১
পললব লিখেছেন : পরবর্তি বছরে ইউরোপে সুস্বাগতম।
০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:৩৫
314825
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান ,ইনশাআল্লাহ ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File