আজকের রহমতপূর্ণ দিন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:০৪:৫৮ সকাল
আজ জুম্মাহর নামাজে গেলাম,কিন্তু নামাজের ১ ঘন্টা পূর্বে পৌছানোর কারনে এভারগ্রীন নামক এক ভারতীয় রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। দিনটা পুরোপুরি আমার জন্যে রহমতপূর্ণ। এরা হঠাৎ কখনও খাসির গোস্ত রান্না করে অথবা খাসির বিরিয়ানী তৈরী করে। এটা এ কারনে যাতে নিয়মিত আসা লোকেরা কখনও সেটা পেতে পারে অথবা এটার লোভে প্রতিনিয়ত ঢু মারে।
আমি দেখলাম আজ অনেক আইটেমের ভেতর খাসির বিরিয়ানী আছে। সঙ্গে সঙ্গে বললাম আমি খাব...তারা একটা টেবিল নির্দিষ্ট করে দিল।
আযান দিয়ে টানলাম। একটা প্লেটে হাড়গোড় যা জমা হল,তা দেখে লজ্জা পেলাম....আহারে আমার এক ভারতীয় মুসলিম ভায়ের ব্যবসাটা আজ খানিকটা চুরমার হয়ে গেল ! আবশ্য এরা অনেক মুনাফা করে,কারন মাঝে মাঝে দাড়িয়ে থাকতে হয় টেবিল পাওয়ার জন্যে। ....খাওয়ার সময় মনে হচ্ছিলো ঈমামকে বলে যদিনামাজের টাইম আরও ১৫ মিনিট পিছিয়ে দিতে পারতাম তাহলে আরেক পর্বের খেলা দেখাতাম।
নাহ,,,প্রায় মাথা পর্যন্ত খেলাম,,,চুলের নীচে বিরিয়ানীর অস্তিত্ব আচ করলাম যেন.....!! এবার মসজিদে ঢুকে ২ রাকাত দুখুলুল মসজিদ পড়ে বসে পড়লাম এমন একটা স্থানে যেটা বেশ আকাঙ্খিত...মানে উপরে ছাদের কাছে একটা গ্লাসের জানালা দিয়ে রোদ ছোট্ট ও গোলাকারে একটা স্থানে পড়েছিলো,সেখানে বসলাম,,,অর্থাৎ সানবাথ করলাম। শীতে ভিটামিন ডি এর অভাব হয়। আমি ভিটামিন ডি নিতে নিতে কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকলাম ঈমামের খুতবা শুরু পর্যন্ত। এতক্ষন ছিলাম পেছনে। তরুন ঈমাম দাড়ানোর সাথে সাথে সকলের মাথার উপর দিয়ে একেবারে সামনের কাতারে গিয়ে বসলাম।...আমার কোনো দোষ নেই...রসূল(সাঃ)বলেছেন সামনের কাতারের সওয়াব যদি মানুষ জানতো তবে তারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করত বা প্রতিযোগী করত...
আলোচনার বিষয় ছিলো আল্লাহর পরিক্ষা। তিনি আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়ে বা প্রদান না করে পরিক্ষা করেন। আইয়ুব(আঃ) কুষ্ঠরোগী ছিলেন কিন্তু তিনি আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট ছিলেন যদিও তার সন্তানাদী,স্ত্রীও ছেড়ে গিয়েছিলো...অবশেষে আল্লাহ তাকে মুক্ত করেন। সকল অবস্থায় আল্লাহর উপর সন্তুষ্টা থাকতে হবে এবং হতাশ হওয়া যাবেনা,ধৈর্য হারানো যাবেনা...তাহলে মহা পুরষ্কার এমনভাবে আসবে যে সে লোক অতিরিক্ত বরকতে পাগলপ্রায় হয়ে যাবে।
এখানে বেশীরভাগই শাফী,হাম্বলী মাযহাবের লোক এবং সালাফীও আছে। এরা রাফইল ইয়াদাইন করে এবং আমিন উচ্চস্বরে বলে হাদীস অনুযায়ী। কিছু মানুষ এটা করেনা বা আমিন মনে মনে বলে কিন্তু এসবে সমস্যা হয়না। তবে দারুন লাগে নামাজে একাগ্রতা দেখে এবং সুন্নাহর প্রতি ভক্তি দেখে। নামাজ শেষে পাশের ভাই আমার সাথে পরিচিত হল,নাম ইব্রাহিম। বিলিয়ান পিতা-মাতার আমেরিকান সন্তান। অত্যন্ত সুন্দর চেহারা এবং একটু গোস্ত গোস্ত সুঠাম দেহ। আমরা অনেকক্ষন দুনিয়ার নানান সব বিষয় নিয়ে কথা বললাম। তার মুখে রোহিঙ্গা মুসলিমদের একটা কাহিনী শুনলাম। অল্প কিছু রোহিঙ্গা জীবন বাচাতে আমেরিকায় এসেছে আর এখানকার আরব মুসলিমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করেছে এমনকি কিছু আফ্রিকান ও সিরিয়ান মুসলিম পরিবারও এসেছে। তো জীবন নিয়ে বেচে আসা এক রোহিঙ্গা মুসলিম বলেছে যে,যখন সরকারী মদদে তাদের গ্রাম ঘেরাও করল কয়েক'শ বৌদ্ধ সৈনিক,তখন মাত্র একজন মুসলিম যুবক যার কাছে একটি মাত্র অস্ত্র ছিলো যা সে কোনোভাবে ম্যানেজ করেছিলো,সেটা নিয়ে সে আল্লাহ আকবার বলে গুলি ছুড়তে থাকে শত শত সৈনিকের দিকে এবং সামনে এগিয়ে যায়। অবাক করা ব্যাপার হল শত শত সৈন্য তাদের অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে হঠাৎ পেছন ফিরে দৌড়ে পালায়। এই লোকটি ওই গ্রামেরই লোক।
মুরব্বী ঈমাম আসলে কথা বললাম। এই ঈমাম আমাকে বেশ পছন্দ করে। এরপর বিদায় নিয়ে একটা স্টোর থেকে কেনাকাটা করলাম। তারপর গেলাম লেবানন নামক স্থানে এবং দুটো স্টোর থেকে নানান খাদ্য দ্রব্য কিনে বাসায় ফিরলাম। দিনটা খুব দারুন ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে লেখাগুলোতে মাঝে মাঝে কিছু ভালো উদ্দেশ্য থাকে
কমেন্ট। একমত। এখানের জীবন খুবই
কঠিন। স্লেভ ভাই, গ্লোবের বিভিন্ন পার্টে
খাওয়ার অভিজ্ঞতা খবর জানিয়েছে।
আমরা একেকজন আলাদা মানুষ আমাদের রুচি , জ্ঞান,ব্যক্তিত্ব সবই আলাদা । একেকজনের লিখার বিষয় আলাদা হবে ।
তাছাড়া ব্লগে সব সময় ওজনদার লিখা ভাল ও লাগে না তাই মাঝে মাঝে উনার এই ধরনের লিখা গুলো ভালই লাগে ।
ধন্যবাদ ।
সাহস করে একজন দাড়ালেও অত্যাচারিরা ভয় পায় এটা সত্য। আবার কবে খেতে যাচ্ছেন সেই দোকানে???
আবার পরের সপ্তাহে নিয়ত আছে। তবে অন্য রেস্টুরেন্টে যাব সেখানে নিয়মিত ভেড়ার গোস্ত থাকে
আমেরিকার গরু,ছাগল, মুরগী, গ্রোথ
হরমান দেওয়া। অরগ্রার্নিক নয়। তাই
সাবধান।
হুজুর তার মানে এটা নয় যে আপনি মানুষের মাথার উপর বা ধাক্কা-ঠেলে পিছনে ফেলে প্রথম লাইনে গিয়ে দাড়াবেন !!!!!
পাঁজি হুজুর ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন