বল্ড হিল

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:৪৩:৫২ সকাল

















গুড্ডুর থেকে বিদায় নিয়ে আজ দুপুরে বেশ কিছু খাবার ব্যাকপ্যাকে ভরে কর্ভালিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সাইকেলে। উদ্দেশ্য নও মুসলিম ফরেস্টের সাথে দেখা করা। গতকাল সে পুলিশী ঝামেলার একটা ঘাট পার হয়ে মোটামুটি মুক্ত। পুরোপুরি মুক্ত হতে এখনও দেড় বছর সময় লাগবে। তবে সে বেশ খুশী।

সকালে ব্যাংকে কিছু কাজ করে একটা স্টোর থেকে ফরেস্টের জন্যে একটা হ্যাট কিনলাম আর আমার জন্যে কিনলাম শার্ট। তার জন্যে শার্ট পছন্দ করলাম কিন্তু কোন সাইজ পরে সেটা নিয়ে দ্বিধান্বিত হওয়ায় কিনলাম না। তবে তাকে একটা জ্যাকেট উপহার দেব শিঘ্রই।

প্রায় এক ঘন্টা বাসের জন্যে অপেক্ষা করলাম,তারপর এক ভদ্র মহিলা ড্রাইভার বাস নিয়ে আসল এবং আমি বাসের সামনে বাইক সেট করলাম নির্ধারিত ক্যারিয়ারে। ড্রাইভার ১৫ মিনিটের বিরতিতে গেল কোথাও। তিনি ফিরে আসলে আমরা চলা শুরু করলাম। খানিক পরেই কোর্ট হাউজের সামনে পৌঁছলাম। দেখলাম ফরেস্ট অপেক্ষা করছে। দুজন অনেকদূর হেটে একটা রেস্টুরেন্টের বাইরের পাশে থাকা চেয়ারে বসলাম। এবার তার জন্যে রান্না মুরগীর গোস্তের বড় বক্সটা দিলাম যা সে বাসায় নিয়ে খাবে। আরেক বাক্স বের করলাম,এটা গরুর গোস্তের কিমা ভূনা। বিশেষভাবে তৈরী সালাদ দিয়ে দুজন খেলাম বেশ। ফলমূল বের করলাম,চিবালাম,তরমুজ খেলাম। পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে সফ্ট ড্রিংস কিনলাম। এবার সে তার বাইক নিয়ে আসল। আমার জন্যে এশিয়ান পিয়ার নামক ন্যাশপতি নিয়ে আসলো। বেশ সুস্বাদু।

আমরা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের সুন্দর রাস্তা ধরে বল্ড হিলের দিকে আগালাম। এখানে দেড় মেগা ওয়াটের একটা সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট আছে,যা ক্যাম্পাস তার নিজস্ত প্রয়োজনে ব্যবহার করে। ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে ফসলের ক্ষেতের ভেতর দিয়ে সুন্দর সরু রাস্তা ধরলাম। বিশাল সব ক্ষেত কেবল চাষ করেছে সম্ভবত গম অথবা ঘাস চাষ করবে। বেশ কিছু ফার্ম দেখলাম যেখানে লামা নামক সুদর্শন এক প্রানী রয়েছে। এরা দেখতে উটের মত কিন্তু সাইজে ছোট। খুবই আদুরে চেহারা। দেখলেই গোস্ত খেতে ইচ্ছে করে।

আজ তাপমাত্রা না গরম না ঠান্ডা আর মৃদুমন্দ বাতাশ প্রবাহিত। রাস্তার শুরুতে একটা কাঠের সুন্দর পুল যার উপরে বিশেষ শেড রয়েছে,এখান থেকে ট্রেইল শুরু হয়েছে বল্ড হিলের। পাহাড়টা ততটা উঁচু নয় কিন্তু খুবই সুন্দর। রাস্তাটা তেমন খাড়া নয় তাই সাইকেল চালানো যায়। ইউনিভার্সিটির অনেক শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়রা এদিকে হাটাহাটি,দৌড়াদৌড়ি করে। ব্যায়ামের অতি উত্তম স্থান এটি। একেবারে নির্জন শান্ত এলাকা। মসৃন সরু রাস্তা চলে গেছে পাহাড়ের কাছাকাছি। এই পাহাড়ী এলাকার গাছপালার অধিকাংশই ওক। এটি ডালপালা বিস্তার করে ছাতার মত হয়ে থাকে। বড় গাছগুলোতে শ্যাওলা জমে,নানান পরজীবী উদ্ভীদও রয়েছে। বল্ড হিলের পাশ দিয়ে আরেকটা ছোট টিলায় যাওয়ার পথে দেখলাম বুনো আপেল গাছ,সেখানে বহু আপেল ধরে আছে। আর ব্লাকবেরী তো সর্বত্রই। এখানে পয়জন ওক গাছ আছে অনেক,পাতা লালচে ধরনের, যা শরীরে লাগলে চুলকায় এবং ফোস্কা পড়ে যায়।

এই এরিয়ায় প্রবেশের অনেক পূর্ব থেকেই মোটর বাইক,গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করলে ২৫০ ডলার জরিমানা। এক বা একাধিক পুলিশ সদা টহল দেয়। আমাদের পেছনেও দেখলাম এক পুলিশ গাড়ি নিয়ে ধীর গতিতে আসছে। খুব সযতনে সম্মানের সাথে ধীরে আমাদের পাশ দিয়ে হাসি বিনিময় করে পুলিশ চলে গেল। শুরুতে দেখেছিলাম এই রাস্তার কাছে একটা গাড়িকে থামিয়ে পুলিশ উপদেশ দিচ্ছে চালককে এদিকে না আসার জন্যে।

আমি আর ফরেস্ট পাশাপাশি গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি। পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। রাস্তায় চলার সময় যত লোককে হাটতে ও দৌড়াতে দেখলাম,তাদের কেউ সেভাবে সৌহার্দ্য বিনিময় করল না। কারন ফরেস্ট একেবারে গ্যাং স্টার স্টাইলে এসেছে। আর তার সারা গায়ে নানান সব ট্যাটু আঁকা,যার ভয়ঙ্কর কিছু অর্থ রয়েছে। ফলে মানুষ এড়িয়ে চলছিলো। এরা এমনিতেই ভীতু লোক।

আমরা চলে আসলাম এক পুরোনো বার্ন হাউসে। এখানে এক সময় ঘোড়া পালন করা হত আর তাদের খড় বা ঘাস বার্নের উপরের অংশে উঠিয়ে রাখা হয়। যখন ঘোড়ার খাবার দরকার হয় তখন উপরের মাচা বা স্তর থেকে কপি কলের মাধ্যমে খড়ের বা শুকনো ঘাসের একেকটি স্তুপ নামিয়ে আনা হয়। বিশাল উঁচু বার্ন হাউসটার পুরোটাই বড় বড় চৌ-কাঠের তৈরী। ব্যপক মজবুত করে বানানো।

এখান থেকে কিছু ট্রেইল চলে গেছে বল্ড-হিলের উপরে। এই হিলের চারিপাশে ওক গাছ কিন্তু মাঝখানে ফাকা। হেলিকপ্টার থেকে দেখলে কোনো বুড়োর টাক মাথার মত মনে হয়,এ কারনে এর নাম বল্ড হিল। এখান থেকে ভ্যালীর দিকে তাকালে এত ভালো লাগে যা বলার মত না। সেখানে দেখলাম ঘোড়ার পিঠে উঠে কৃষক চাষবাষ দেখাশুনা করছে। এ অঞ্চলের কাছাকাছি আমার এক সহকর্মীর বিশাল ফার্ম আছে ৮৫ একরের উপর। সে যৌবনে ছিলো ম্যাটাডোর বা ষাড়যোদ্ধা। শতাধিক ষাড় রয়েছে তার আর রয়েছে অনেক ঘোড়া। ঘোড়ায় চলে সে ষাড় চরায়,তবে শখের বশে চাকুরী করছে বছর দশেক হল। সে গল্প পরে একদিন করব।

আমাদের হাতে বেশী সময় ছিলোনা তাই পাহাড়ের উপরে গেলাম না। বার্নের ভেতর বেশ খানিকক্ষন থাকলাম। খুব ভালো লাগল। যদি এখানে একটা বাড়ি হত তবে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেশ মজা উপভোগ করা যেত। চারিদিকে পাহাড়ী টিলা ,এর ভেতর সমতল ভূমী। কোথাও তা সবুজ ঘাসে পূর্ণ,কোথাও সুন্দর ও মসৃনভাবে চাষ দেওয়া হয়েছে আবার কোথাও এমনেই জমি পড়ে আছে। আশে পাশে লোকজনের বালাই নেই। আমার ধারনা শুধু ওরেগনের উর্বরা জমি চাষ করেই অন্তত ১শত কোটি মানুষের খাবার অনায়াসে বন্দোবস্ত করা যায়। কিন্তু এদের সরকার নির্দিষ্ট মাপে ফসল ফলানোর অনুমতি দেয়। নিজেদের বাজার নিয়ন্ত্রনের জন্যেই এটা করে। যদি এমন সরকার হত,যারা রাজনৈতিক বর্ডারের উর্ধ্বে উঠে মানব জাতির কথা ভাববে,তাহলে তারা অন্য জনগনের জন্যেও ফসল উৎপাদনের কথা ভাবত। একটা সুদীর্ঘ সময় পর্যন্ত ইসলামী শাসনে চলা অঞ্চলসমূহ মানুষের কথা ভাবত,তাদের জন্যে কাজ করত আখিরাতের কল্যানের কথা ভেবে।

ফিরতি পথ ধরলাম। উচু স্থান থেকে সাইকেলে প্যাডেল না মেরেই গড়িয়ে অনেক দূর চলে আসলাম। আরও খানিক সাইকেল চালিয়ে চলে আসলাম ক্যাম্পাসে। ফরেস্টের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম। এক পাতিল চিকেন উইং ফ্রাই করে ফ্রাঙ্কের কায়ান পেপার সস নামক এক হট সস দিয়ে সয়লাব করছি,এর কোনো তুলনা নেই। দিনটা বেশ উপভোগ্য ছিলো।

বিষয়: বিবিধ

১১২১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377841
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বাসে করে সাইকেল নেওয়ার ব্যবস্থা আছে!!
ছবিগুলি ভাল লাগল। তাজা একটা লামা ধরে জবাই করে খেতে পারতেন মনে হয়। আমেরিকায় তো প্রকৃতিক কারনে বেশি উৎপাদন হয়ে গেলে প্রতি বছর ই বাজার দর ঠিক রাখতে কয়েক লক্ষ টন শস্য ধ্বংস করা হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১২:২২
313310
দ্য স্লেভ লিখেছেন : লামা এখানে অল্প আর এরা এটা শখ করে পোসে। বানিজ্যিকভাবে কিছু করেনা। আর হ্যা এরা খাদ্য শস্য নষ্ট করে। এমনকি ব্যবসা ঠিক রাখতে বহু চেইনশপ লক্ষ লক্ষ টন খাবার ফেলে দেয়,কিন্তু গরিবকে দেয়না
377844
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:০৯
শেখের পোলা লিখেছেন : লেখাটাও উপভোগ্য কম হয়নি। ধন্যবাদ।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১২:২২
313311
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এই তো চাচা ভাই চলে এসেছে। দেশে ছিলেন নাকি ?? খবর সব ভালো ?
377955
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৩:০৮
আফরা লিখেছেন : এই লিখাটা আমি আগে কেন দেখি নাই ।

না দেখাই ভাল ছিল ----------------বেশি পন্ডিত মানুষের লিখা ।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১২:২৩
313312
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনি দেখেননাই কারন আপনি টিনের চশমা পরেছিলেন। ....আর আমি তো শিয়াল পন্ডিতই Happy
377959
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:৩২
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আপনার লেখা পড়তে পড়তে আমিও কি ইবনে বতুতা বা মার্কোপোলো হয়ে গেলাম নাকি তাই ভাবছি|অনেক বছর পর এবার দুইবার নিউইয়র্ক যাওয়া হলো একই বছরে|মাত্রই চারদিন নিউ ইয়র্ক ঘুরে এলাম | কিছুটা কাজে, কিছুটা বেড়াতে|পুরো সময়টাই প্রায় কাটলো ম্যানহাটনে| থাকা হলো ম্যানহাটনের হোটেলে |তাই ব্লগে যাবার সময় তেমন পাইনি, আপনার লেখাগুলোও পড়া হয় নি|মিশিগানে ফিরে পড়লাম |বল্ড হিলে কোন ইউনিভার্সিটি ?ইউনিভার্সিটি অব ওরিগনের কোনো ক্যাম্পাস?ভালোই লাগছে আপনার এই বেরুনোর সিরিজটা |অনেক ধন্যবাদ |
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১২:২৬
313313
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাহাহাহাহাহা...তা আপনিও লিখে ফেলেন আমার পড়তে ভালো লাগে। আপনি মিশিগানে থাকেন ? ওরেগন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস এর পাশেই। বল্ডহিল তাদের সম্পত্তি নয়। এদিকে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প আছে। সম্ফবত সায়েন্স ফ্যাকাল্টি....এর কাছাকাছি ,,আমার ঠিক জানা নেই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File