রেড উড
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০১:০১:৪১ রাত
সকালে রেডউড ন্যাশনাল ফরেস্টের দিকে যাত্রা করলাম হাইওয়ে ১৯৯ ধরে। ডাচ ব্রাদার্সের কফি আসলেই বেশ উত্তম লাগে। সকালে এটা সেটা আর কফি খেতে খেতে চমৎকার রাস্তা ধরে ড্রাইভ বেশ দারুন। কেভ জংশন থেকে প্রায় আধা ঘন্টা পর পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা শুরু হল। অনেক স্থানে দেখলাম রাস্তার এক লেন বন্ধ করে সংষ্কারের কাজ চলছে। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি এপাশ ওপাশ করছে সিগনাললাইট মোতাবেক। পাহাড়ী স্বর্পীল রাস্তা আমার মোটেও পছন্দ না। এ রাস্তাগুলো এক লেনের হওয়ার কারনে অনেক সময় সমস্যা হয়। সামনে কোনো বুড়ো থাকলে নির্ঘাত পেছনের গাড়িগুলো ধীর গতির হবে। তবে রাস্তায় বেশ কিছুদূর পরপর পাসিং লেন আছে। সেখানে ওভারটেক করা যায়।
খানিক পর এমন একটি পাহাড়ী এলাকায় আসলাম যেখানে দেখলাম চারিদিকে রৌদ্র ঝলমলে পরিবেশ। এটা আসলে সানরাইজ ভ্যালী। খুব দারুন স্থান এটা। চারিদিকে অনেকগুলো টিলা আর সবগুলো রৌদ্র ঝলমল করছে। আরও কিছুক্ষন পর ক্যালিফোর্নিয়া বর্ডারে আসলাম। ক্যালিফোর্নিয়াতে বাইরের স্টেট থেকে ফলমূল নেওয়া নিষিদ্ধ,তবে সেরকম কড়াকড়ি কিছু না। গাড়ি থামিয়ে একজন নিরাপত্তা কর্মী জিজ্ঞেস করল গাড়িতে ফলমূল আছে কিনা ? বললাম কলা আর আপেল আছে। জিজ্ঞেস করলেন এটা কি কোনো স্টোর থেকে কেনা ? বললাম হ্যা। স্বাগত জানিয়ে বললেন-দিনটি আপনার জন্যে শুভ হোক। ফলমূল যদি সরাসরি গাছেরর থেকে পাড়া হয় তাহলে তাতে পোকামাকড় থাকে। স্টোরের ফলে পোকা মাকড় নেই এটা নিশ্চিত করা হয়। তবে আমার ধারনা ,যদি বলতাম গাছের থেকে পাড়া,তাহলে জানতে চাইত পোকা আছে কিনা...যদি বলতাম -নাই। তাহলে হয়ত বলত..আচ্ছা যান,দিনটি শুভ হোক
হাইওয়ে ১৯৯ আঁকাবাঁকা হয়ে সোজা মিলিত হল হাইওয়ে ১০১এ। হাইওয়ে ১০১এর আরেক নাম রেডউড হাইওয়ে। এটি সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের উপর দিয়ে চলেছে। কোথাও এটি বেশ সোজা সাপটা আবার কোথাও ব্যপক পেচালো। খানিক পর চলে আসলাম ক্রিসেন্ট সিটিতে। এটা বেশ বড় আর বেশ ভালো লাগার মত। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে এক খন্ড সুন্দর শহর। সাগর আর পাহাড় মিলিত হয়েছে এখানে। পাহাড়ী পরিবেশে এক সমতল ভূমী। এখানে যাত্রা বিরতি করলাম। সাগরের কিনারে চলে গেলাম। সুন্দর সাগর সৈকত আছে এখানে। খানিক হাটলাম সাগরের পাশে। দেখলাম একটি বাতিঘর রয়েছে এখানে,কিন্তু সেখানে গেলাম না। অনেকে হেটে সেখানে যাচ্ছিলো। আমাকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিত হবে তাই বেশী সময় এখানে ব্যয় করতে চাইলাম না। এবার কাঠের দীর্ঘ যে ব্রীজটা লোকালয় থেকে সাগরের ভেতরে চলে গেছে সেখানে গেলাম হাটতে হাটতে। এটার মাথায় দর্শনার্থীদের সাগর দর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখান থেকে চারিদিকে তাকালে খুব ভালো লগে। একপাশে শহর,আরেকপাশে প্রশান্ত মহাসাগর এবং অন্যপাশে পাহাড়ী বনভূমী। খুব সুন্দর পরিবেশ। দেখলাম বেশ কিছু লোক হুইলে মাছ ধরছে। একজনকে আমার ছবি তুলে দিতে বললে তাদের বয়ষ্ক লোকটা বলল-আমরা কিছু কাকড়া ধরেছি তুমি সেটা হাতে নিয়ে ছবি তোলো,তাহলে ছবিটা বেশ অর্থপূর্ণ হবে। আমি ইতস্তত করাতে উনি বড় বাক্স খুললেন। দেখলাম অনেক বড় বড় কাকড়া সেখানে,সবই জ্যান্ত। এর ভেতর থেকে ছোট সাইজেরটা বিশেষ কায়দায় ধরে আমার হাতে দিলেন এবং যেভাবে ধরতে বললেন সেভাবে ধরে ছবি তুললাম। বেশ দারুন লাগল। ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিলাম। আবারও দক্ষিনে চলতে শুরু করলাম।
বলে রাখা ভালো ক্রিসেন্ট সিটির অনেক পূর্ব থেকেই রেড উড বনের শুরু। অনেক বড় বড় সব গাছের বন এটি। এর ভেতর দিয়ে স্বর্পীল রাস্তা চলে গেছে। গাছগুলো এত সুন্দর যা বলার মত না। ক্রিসেন্ট সিটি থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকা সিটির রাস্তায় বেশ কিছু লুক-আউট আছে,যেখানে কাছ থেকে সাগর দেখা যায়। সেখানে গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে। চলন্ত পথে বিভিন্ন স্থানে রেস্ট রুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এবার ক্লামাথ নামক স্থানে চলে আসলাম,আর এখানেই সেই "ট্রিস অব মিস্টিরী"......বা রহস্যপূর্ণ গাছসমূহ। এ অংশটি একটি ব্যক্তিগত বন,যা কয়েটটি পাহাড়ী টিলা নিয়ে গঠিত।
গেটের সামনে পল বানিয়ান নামক বিশাল এক দাড়িওয়ালার মূর্তী যার উচ্চতা ৪৯ফুট,পাশেই এক ষাড় ৩৫ ফুট উচ্চতার। ১৬ ডলারে টিকেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলাম। শুরু হল রোমাঞ্চকর ভ্রমন। জীবনেও এত বিশাল সাইজের রেড উড বা অন্য কোনো বৃক্ষ দেখিনি। ঢুকেই খানিক পর দেখলাম একটা বৃক্ষ বয়সের ভারে শুয়ে পড়েছে,তবে এখনও পুরো মরেনি কিন্তু মৃত্যু পথযাত্রী। বয়স কম হয়নি,পাক্কা ৩ হাজার বছর। এরপর একে একে বিশাল সব বৃক্ষ চোখে পড়ল। কাছ থেকে দেখেই সঠিক উপলব্ধী আসে এটা কত বড় ! ছোটবেলা থেকেই আমার বিশাল সাইজের বৃক্ষ দেখতে ভালো লাগে। অনেক স্বপ্নও দেখতাম বড় বড় বৃক্ষ সমৃদ্ধ বনে আমি ঘুরছি। আমার সে স্বপ্ন অনেক আগেই পূরন হয়েছে কিন্তু রেড উডের বনে ভ্রমন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। হাজার বছরের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এসব গাছপালা। এদের জীবদ্দশাই কত রথি মহারথি চলে গেছে,কত লোকের দর্প চূর্ণ হয়েছে,অথচ এরা টিকে আছে,মানব জাতিকে অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছে। আত্মত্যাগীদের মৃত্যু হয়না।
এখানে একটা বিশাল গাছের নাম ওয়েডিং ট্রি। এখানে প্রচুর বিয়ে হয়। এই গাছের নীচে তারা মিলিত হয়ে বৌয়ের হাতে আংটি পরায়। পাহাড়ী ট্রেইল ধরে উপরের দিকে গেলাম। যাচ্ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। চারিদিকের পরিবেশ অসাধারন। আরও অনেকে এসেছে দেখতে কিন্তু এত অধিক লোক নয়।
উপরের দিকে দেখলাম রোপওয়ে বা ক্যবল কার স্টেশন। লাইনে দাড়ালাম। প্রবেশ টিকেটেই এতে চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বেশ কিছুক্ষন লাইনে থেকে কারে চড়ে বসলাম। একেকটি কারে ৬ জন বসতে পারে। এরকম ৭টি কার রয়েছে যা মোটা তারের সাথে বিশেষভাবে আটকানো। এটি মেশিনের সাহায্যে নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত ঘোরে এবং নিয়মানুযায়ী যাত্রী ওঠা নামা করে। খুব মজা লাগল এতে চড়ে উপরের পাহাড়গুলোতে চড়তে। অনেক উচুতে থাকা একটি পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে এটি থামল। সেখানে কাঠের দুটি বড় বড় মঞ্চ আছে,যেখানে দাড়িয়ে পাহাড় ও নিকটের সাগর দর্শন করা যায়। এখানে রেস্টরুমও আছে।
উপরের মঞ্চে উঠে আসলাম। এখানে দাড়িয়ে দূর দীগন্ত,পাহাড়শ্রেনী আর সমুদ্র দেখতে সত্যিই অনেক দারুন লাগে। আমি রেলিংয়ে ভর দিয়ে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম। বাইনোকুলারও আছে দূরে দেখার জন্যে। কিন্তু খালি চোখে আরও ভালো দেখা যায়। অসহ্য সৌন্দর্য সহ্য করতে না পেরে আবারও ক্যাবল কারের লাইনে দাড়ালাম। এবার উপর থেকে নীচে ফিরে আসার পালা। নীচে নামলাম এবং আরেক ট্রেইল ধরে হাটতে শুরু করলাম। চারিদিকে বিশাল বিশাল গাছ। গাছগুলো যেন পাথরের মত শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। বড় বড় গাছের গুড়িতে অনেক ভাষ্কর্য তৈরী করা হয়েছে।
এখানে মিউজিয়ামও আছে। গেলাম কিন্তু পাশে দেখলাম হাতে বানানো নানান রকমের চকলেট বিক্রী হচ্ছে । আমি এতেই মনোযোগী হলাম। নানান রকমের চকলেট কিনলাম। টানলাম।
এবার ফুরফুরে মেজারে ইউরেকার পথে চলা শুরু করলাম। কয়েক মিনিট পরেই একটি স্থানে দেখলাম গাছের নীচ দিয়ে ড্রাইভ করার কথা বলে বড় সাইনবোর্ড। গেলাম সেখানে। ৫ ডলারে টিকেট কেটে পৌছলাম। বিশাল একটা গাছ ভেতর থেকে কেটে গাড়ি চলাচলের রাস্তা বানানো হয়েছে। গাছের নীচ দিয়ে বা ভেতর দিয়ে গাড়ি চালালাম,এক দারুন অভিজ্ঞতা এটা। খুব মজা লাগল। মজা নিয়ে রাস্তা ধরলাম।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লোক মরে গেছে। দুঃখ এখানে, আমরা ১০০ বছরের মধ্যে মারা যাব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন