ক্কাবার সত্য ইতিহাস !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:১৩:০৪ রাত
(শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো)
রসূল(সাঃ) আবির্ভাবের পূর্বে আরবের অবস্থাঃ
কিছু সংখ্যক লেখক রসূল(সাঃ)এর পূর্ণাঙ্গ বংশ তালিকা লিপিবদ্ধ করেছেন প্রথম মানুষ হযরত আদম(আঃ) পর্যন্ত,কিন্তু আমরা কোথাও এ সংক্রান্ত সঠিক এবং বিস্তারিত তালিকা পাইনা। পৃথিবীতে ঠিক কত পূর্বে হযরত আদম(আঃ)কে প্রেরণ করা হয়েছিল তার কোনো ইতিহাস নেই। রসূলও(সাঃ) আমাদেরকে সে সময়টি জানাননি। একারনে অনুমান করলে তা ভুল হবে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মানুষের প্রাচীন যত ফসিল পেয়েছেন,তার মধ্যে সবথেকে পুরোনোটার বয়স ৮০হাজার বছর। কিন্তু এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। হতে পারে আগামী দিন আরও কিছু বিশেষজ্ঞ প্রমান করবেন,পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেছিল আরও অনেক পূর্বে। তবে এতে আমাদের কিছু এসে যায় না।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পৃথিবীতে “১লক্ষ ২৪ হাজার”-(মিশকাত) মতান্তরে ২লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসূল(রসূল হলেন সেসব নবী,যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। মিশকাত হাদীস গ্রন্থের বাংলা তরজমা কিতাবের ৫৩৬৭ নং হাদীস অনুযায়ী রসূলের সংখ্যা ৩১০ এর বেশী অথবা ৩১৫ জন) পাঠিয়েছেন। যদিও একইসাথে কখনও কখনও একাধিক নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছিলেন তারপরও তাদের হায়াত একেবারে কম করে ধরলেও মানুষ আগমনের সময়কাল যথেষ্ট বর্ধিত হয়ে যায়।
পূর্বে মানুষ অনেক দীর্ঘ হায়াত লাভ করত। হযরত আদম(আঃ) এবং হযরত নূহ(আঃ)এর ব্যাপারে আমরা সহিহ হাদীস থেকে জেনেছি,তারা হাজার বছর(আদম আ: ৯৬০,নূহ আ: ১০৮০বছর) হায়াত লাভ করেছিলেন। তাদের সময়ে এবং অব্যবহিত পরেও মানুষ দীর্ঘ হায়াত লাভ করতেন। এমনকি পূর্ববর্তীদের দীর্ঘ হায়াত প্রাপ্ত হওয়ায় কতিপয় সাহাবী যখন নিজেরা আলোচনা করছিলেন যে- পূর্ববর্তীরা দীর্ঘ হায়াতের কারনে ভাল কাজ অধিক পরিমানে করার সুযোগপ্রাপ্ত হয়েছেন কিন্তু আমরা তা প্রাপ্ত হয়নি,তখন সূরা ক্কদর নাযিল করা হয়। অর্থাৎ হাদীস থেকে জানতে পারি পূর্ববর্তীরা অধিক হায়াত পেতেন। আর অধিক সংখ্যক নবী-রসূলের কথাও আমরা জানতে পারি। এ থেকে অনুমান করা যায় যে,পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেছিল বহু বছর পূর্বে কিন্তু কতপূর্বে তা আমরা জানিনা। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য নেই। আর অনুমানের ভিত্তিতে অযাচিত তথ্য সংযুক্ত করার কোনো কারণও নেই। রসূলের(সাঃ) সুন্নাহ জানার ক্ষেত্রে এই তথ্য জানা জরুরীও নয়। ফলে কোনো রকম তথ্য উপাত্ত ছাড়া সরল-সোজাভাবে রসূলের(সাঃ) বংশ তালিকা হযরত আদম(আঃ) পর্যন্ত বর্ণনা করা এবং তা সিরাত গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা সমিচীন নয় বলে মনে করি এবং এটার প্রয়োজনও নেই। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ যেভাবে বংশ পরম্পরা নির্ধারন করা হয়েছে তাতে হিসেব করলে পৃথিবীতে মানুষ আগমনের সময়কাল ৫/৬ হাজার বছরের বেশী হয়না। অথচ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হচ্ছে মানুষ আরও অনেক পূর্বে আগমন করেছে। ফলে এসব অসত্য-আজগুবি তথ্য সুন্নাহর কিতাবে সন্নিবেশিত হলে জ্ঞানী পাঠকের হাতে লেখকের নাজেহাল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
“রসূল(সাঃ) বলেন মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম(আঃ)এর বংশে ইসমাইলকে(আঃ) পছন্দ করেছেন,ইসমাঈলের(আঃ) বংশ থেকে কেনানার বংশকে পছন্দ করেছেন,কেনানার থেকে কুরাইশ বংশ নির্বাচন করেছেন আর কুরাইশ থেকে বাণূ হাশিম পরিবারকে পছন্দ করেছেন। আর সর্বশেষ বাণূ হাশিম পরিবার থেকে আমাকে নির্বাচন করেছেন।-(মুসলিম,তিরমিযি) এটাই সঠিক তথ্য, রসূল(সাঃ) তার বংশ তালিকা বর্ণনায় আদনান পর্যন্ত প্রকাশ করেছেন।
ইসলামপূর্ব আরবের সময়কে তখনকার মানুষের নানামুখী কু-সংষ্কার,অন্ধ বিশ্বাস,অনাচার,অত্যাচার,যুলুমের কারনে আইয়ামে জাহেলীয়া বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ বলে। সে যুগ সম্পর্কে জানার জন্যে আমাদের কাছে যেসব মাধ্যম আছে তা হল, আল-কুরআন,রসূলের(সাঃ)হাদীস,সেই যুগের লিখিত পুস্তকাদী,বংশ পরম্পরায় চর্চিত মুখস্ত কবিতাসমগ্র,মৌখিক বর্ণনা,বাইবেল,তাওরাত,গ্রীক লেখকদের লিখিত পুস্তকাদী,প্রাচীন শিলালিপি ইত্যাদী। এখানে সর্বাধিক বিশুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য ইতিহাস আমরা কুরআন-হাদীস থেকেই পেয়ে থাকি। বাকী তথ্য আমরা প্রখ্যাত ইসলামী গবেষক,ইতিহাসবীদদের থেকে বেশী গ্রহণ করব। কারণ তারা আল্লাহর ভয়ে জ্ঞান চর্চা করেছেন এবং মানুষের কাছ থেকে কোনো বিনিময় আশা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই বিনিময় আশা করেছেন। ফলে তাদের ইতিহাস পর্যালোচনায় আস্থা রাখা যেতে পারে। তারা উপরোক্ত সকল বিষয়ে ব্যপক জ্ঞান অর্জন করে বিখ্যাত এবং তথ্যবহুল বিশাল বিশাল কিতাব রচনা করেছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেসব কিতাবসমূহ বিশেষ আস্থা ও গুরুত্বসহকারে পঠিত হয়েছে। অন্যদের ইতিহাস ততটুকু নেওয়া যেতে পারে,যতটুকু প্রাসঙ্গিক,যুক্তিসঙ্গত এবং সুন্নাহ সম্মত। আর প্রাপ্ত শিলালিপি সম্পর্কে বলতে হয়,এক্ষেত্রে অনুমানকে বেশী গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কোথাও কোনো শিলালিপি প্রাপ্ত হলে বৈজ্ঞানিক পরিক্ষার মাধ্যমে সেটার সঠিক সময়কাল সম্পর্কে জানা যেতে পারে,সেখানে উল্লেখিত তথ্য থেকে কিছু জ্ঞান অর্জন করা যেতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে যেটা দেখা যায়,তা হল- কিছু প্রাচীন বস্তু প্রাপ্ত হয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা রকম অনুমান নির্ভর কল্প কাহিনী তৈরী করছেন এবং তা মিডিয়ার কল্যানে অথবা প্রভাব প্রতিপত্তির কারনে মানুষের মনে প্রতিষ্ঠিত করছেন। এতে সত্য-মিথ্যা সহজে মিশ্রিত হতে পারে। মানুষ প্রাপ্ত শিলালিপি দেখে অনুমানের ভিত্তিতে লিখিত কাহিনী সহজে বিশ্বাসও করে। তাই বাড়তি ঘটনা বর্ণনায় আমি সতর্কতার সাথে অগ্রসর হব ইনশাআল্লাহ।
আমি ইসলামপূর্ব আরবের অবস্থা অংশটি লিখতে গিয়ে বিভিন্ন সম্মানিত ইতিহাসবিদ,লেখকের লেখা পড়ে বুঝলাম এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখলে আমার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে,কারণ এটি একটি বিশাল অধ্যায়।
আরব অর্থ হল অনুর্বর ভূমী,বিশুষ্ক প্রান্তর। আরবের পশ্চিমে লোহিত সাগর এবং সায়না উপদ্বীপ,পূর্ব দিকে আরব উপ-সাগর,দক্ষিনে ইরাকের বিরাট অংশ এবং আরও দক্ষিনে আরব সাগর। এটি মূলত: ভারত মহাসাগরের বিস্তৃত অংশ। উত্তরে সিরিয়া এবং উত্তর ইরাকের একাংশ। এর তিন দিকে সাগর থাকায় একে আরব উপদ্বীপও বলা হয়।
জাজিরাতুল আরব এমন একটি স্থানে অবস্থিত যেটিকে স্থলভাগের মধ্যভাগ বলা যেতে পারে। স্থল ও নৌপথে পৃথিবীর সকল প্রাপ্ত থেকেই সহযে এ ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ করা যায় এবং যেত। প্রাচীনকাল থেকেই এই ভূখন্ডটি বহির্দিক এবং আভ্যন্তরিন দিক থেকে শুষ্ক প্রান্তর ও মুরভূমিতে ঘেরা এবং এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে বৃক্ষলতাহীন নগ্ন পর্বতমালা। এর ভৌগলিক অবস্থানের কারনে বর্হিশক্তির হাত থেকে এই ভূখন্ডটি বেশ নিরাপদ ছিল,এ কারনে এখানে বসবাসকারী সম্প্রদায়গুলো ছিল প্রচন্ড স্বাধীনচেতা এবং একরোখা। ফলে তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি রোম ও পারস্য এর প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও এত কষ্টস্বীকার করে দখল করতে চাইত না বা পারত না। আরবকে দখল করতে না চাওয়ার আরেকটি কারণ হল এদের প্রচন্ড স্বেচ্ছাচারিতা,প্রবল স্বাধীনচেতা মনোভাব,কুসংষ্কারাচ্ছন্নতা,হিংস্রতা,আনুগত্য না করার মানুষিকতা,কলহপ্রিয়তা ইত্যাদী। এদের ভূখন্ড দখল করে আনুগত্য আদায় করতে পারবে ,এ ব্যাপারে পার্শ্ববর্তী শাসকগণ,কোনোভাবেই নি:সন্দেহ ছিলনা। তাছাড়া এখানে এমন কোনো মহা মূল্যবান সম্পদরাশীও ছিলনা যার কারনে বহু কষ্ট স্বীকার করে এটাকে দখল করতে হবে। তারপরও রোমান সম্রাটগণ তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার সৈন্য পরিচালনা করে। তবে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। আরবরা ছিল দূর্দমনীয় এবং তারা যুদ্ধে যেসব অপ্রচলিত নীতি ব্যবহার করত তার সাথে রোমান সৈন্যরা অভ্যস্ত ছিলনা। বিশেষকরে বেদুইন সৈন্যরা ভয়াবহ হিংস্র ছিল। তারা প্রতিশোধ গ্রহনে পিছপা হতনা। যখনই তারা বুঝত নিয়মিত সৈন্যরা তাদেরকে আক্রমন করতে আসছে এবং তারা এর প্রতিরোধ করতে পারবে না,তখন তারা পচাঁদপসরণ করত বিশাল মরুভূমীর দিকে। রোমের নিয়মিত সৈন্যরা মরুভূমীতে অভিযানে বেদুইন আরবদের মত অভ্যস্ত ছিলনা। বেদুইনরা অল্প খাদ্য-পানি নিয়ে বহু দূর পর্যন্ত ভ্রমন করতে অভ্যস্ত ছিল। এক একটি উটে তারা প্রায় ৬ সপ্তাহের খাবার নিয়ে ক্লান্তিহীন ভ্রমন করতে পারত। অল্প খাবার আর পানি গ্রহণ করেও তারা মরুভূমীতে তাদের পারদর্শীতা দেখাতে ছিল সিদ্ধহস্ত। তারা অল্প রসদে মরু ভূমীর মধ্যে যুদ্ধে পারদর্শী ছিল। কখনও রোমান সৈন্যরা তাদেরকে আক্রমন করলে তারা চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে সেসব সৈন্যদেরকে ক্ষতির মুখে ফেলে দিত। রাতে তারা শত্র“ বাহিনীর রসদ লাইনে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ব্যপক ক্ষতি সাধন করত। প্রতিশোধ নিতে তারা একযোগে কাজ করত। এবং তাদেরকে ধরতে পারা মোটেও সহজ ছিলনা। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ হয়ে হঠাৎ আক্রমন করত এবং মরুভূমীতে হারিয়ে গিয়ে পূণরায় সেখানে মিলিত হয়ে পরিকল্পনা করে আবারও আক্রমনের জন্যে প্রস্তুত হত। বিশাল মুরভূমীতে রাত দিনের যেকোনো সময়ে সঠিক দিক নির্ণয়ে তাদের পারদর্শীতা ছিল অনন্ন। তাই রোমান অথবা পার্শ্ববর্তী দেশের যোদ্ধারা আরবদেরকে সহযে ঘাটাত না। বরং তারা তাদের নিজস্ব সেনাবাহিনীতে আরব যোদ্ধাদের আলাদা ইউনিট গড়ে তুলেছিল। আরব যোদ্ধারা সাময়িক চুক্তিতেও অন্যের হয়ে যুদ্ধ করত।
আরব কখনই অন্যের অধীনে ছিলনা। সৃষ্টির প্রথম থেকেই এটি ছিল স্বাধীন। বাবেলের অত্যাচারী রাজা বখতে নাসর বনী ইসরাইলকে ধ্বংস করেছিল এবং বিতাড়িত করেছিল। কিন্তু আরবকে ধ্বংস করতে পারেনি। গ্রীক ও রোমকগণ বহু শতাব্দী পর্যন্ত রাজত্ব করলেও তারা আরবকে ব্যপকভাবে আক্রমন করেনি। আলেকজান্ডার ও অন্যান্য রোমক সেনাপতিগণ আরবে আক্রমন পরিচালনা করেনি। আরব পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত হলেও তারা আরবকে আক্রমন করেনি। হাবশীগণ ইয়মেন জয় করে মক্কা আক্রমন করে গজবের শিকার হয়,যা সুরা ফিলে বর্ণিত আছে। ইতিপূর্বেও বেশ কিছু শাসক মক্কা আক্রমন করে গজবের শিকার হয়েছে,তাই বহু শাসক এদিকে আক্রমন পরিচালনা করতে ভয় পেত।
আরবরা সাং®কৃতিকভাবেও স্বাধীন ছিল। তারা নিজেরা যা ভাল মনে করত তা পালন করত। কিন্তু তারা অন্যের সাং®কৃতি গ্রহন করেনি। বুহুকাল যাবত আরবরা বহির্বিশ্বর জ্ঞান থেকে অজ্ঞ ছিল। তারা অজ্ঞানতার অন্ধকারে বসবাস করত। সমগ্র আরবে অল্প কিছু লোক ব্যতীত সকলেই নিরক্ষর ছিল। তারা কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি একত্রে পালন করত না। বরং বহু রকমের বিধিবধান যা তারা নিজেরা রচনা করেছিল সে মোতাবেক পরিচালিত হত। পৃথিবীর অন্য অংশের মত রাজা বাদশাহের কোনো অস্তিত্ব আরবে ছিলনা। যদিও কুরাইশরা সম্মানিত ছিল তার পরও অন্য গোত্ররাও নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ মনে করত। প্রত্যেকে প্রত্যেকের নিজস্ব নিয়মে সন্তুষ্ট ছিল। অন্যের কতৃত্ব না মানার জন্যে তারা দেবদেবীকে পর্যন্ত ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। এবং সেসব দেবদেবীর নামে তারা বিভিন্ন রসম রেওয়াজ চালু করে,তা পালন করত।
আরবের আদী ইতিহাস বর্ণনায় আমাদেরকে আল-কুরআনের সাহায্য নিতেই হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রাচীন কিছু বিষয় সম্পর্কে আবহিত করছেন।
“যখন ইব্রাহিম (আল্লাহর কাছে) দোয়া করল-হে আমার মালিক ! এই (মক্কা)শহরকে নিরাপত্তার নগরীতে পরিণত করুন এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিদেরকে মূর্তীপূজা করা থেকে বিরত রাখুন !”-(আল-কুরআন,১৪:৩৫)
“হে আমাদের মালিক ! আমি আমার কিছু সন্তানকে আপনার পবিত্র ঘরের কাছে এনে আবাদ করলাম,যাতে করে -এরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে,যেন মানুষের অন্তর এদের প্রতি অনুরাগী হয়,আপনি ফলমূল দিয়ে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করুন ! যাতে ওরা আপনার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে।”-( আল-কুরআন,১৪ঃ৩৭)
“ইব্রাহিম এবং ইসমাঈল যখন এই(ক্কাবা)ঘরের ভিত্তি নির্মান করছিল,(তারা দোয়া করল) হে আমাদের মালিক ! আপনি আমাদের কাজকে কবুল করুন,একমাত্র আপনিই সবকিছু জানেন এবং সবকিছু শোনেন।”-(আল-কুরআন,২:১২৭)
“তোমরা কি একথা বলতে চাও যে,ইব্রাহিম,ইসমাঈল,ইসহাক,ইয়াকুব ও তাদের পরবর্তী(নবী-রসূল)সবাই ছিল ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান ? হে নবী ! আপনি বলে দিন, এ ব্যাপারে তোমরা বেশী জানো ,নাকি আল্লাহ বেশী জানেন ? যদি কোনো ব্যক্তি তার কাছে মজুদ থাকা আল্লাহর কাছ থেকে আগত সাক্ষ্য প্রমানসমূহ গোপন করে,তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে ?”-(আল-কুরআন,২:১৪০)
“যখন আমি ইব্রাহিমকে এই(ক্কাবা)ঘরের নির্মানের জন্যে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম,তখন নির্দেশ দিয়েছিলাম-আমার সাথে অন্য কাওকে শরিক করোনা...”-(আল-কুরআন,২২:২৬)
“হে আমার মালিক ! আপনি আমাকে নেক সন্তান দান করুন ! অত:পর আমি তাকে একজন ধৈর্য্যশীল নেক সন্তানের সুসংবাদ দিলাম।.......এরপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দান করলাম,সে হবে নবী ও আমার নেক বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত।......আমি তার(ইব্রাহিম আ এবং ইসহাকের ওপর আমার রহমত বরকত দান করেছি ,তাদের উভয়ের বংশধরদের মাঝে কিছু সৎকর্মশীল মানুষ আছে এবং আছে কিছু নাফরমানও,যারা নিজেদের ওপর যুলুম করে স্পষ্ট অত্যাচারী।-(আল-কুরআন,সূরা সাফ্ফাত: ১০০,১০১,১১২,১১৩)
আল-কুরআনের সূরা ইব্রাহিমের উপরোক্ত বর্ণনায় মক্কা(প্রাচীন নাম ছিল বাক্কা) নগরীর প্রাচীন অবস্থা ফুটে উঠেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিমকে(আ একটি পুত্র সন্তান দান করেছিলেন,যিনি ছিলেন ‘হযরত ইসমাঈল(আ’। এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিক্ষা স্বরূপ তিনি শিশু ইসমাইল এবং তার স্ত্রী হাজেরাকে নির্জন মরুভূমীর একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে এসেছিলেন। “ইব্রাহিম(আবলেন আমি তোমাদেরকে আল্লাহর হেফাজতে রেখে গেলাম। স্ত্রী হাজেরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর বন্ধু ! আপনি কি এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশ লাভ করেছেন ? তিনি(আবললেন-হ্যা ,আমার ওপর আল্লাহ তায়ালার এটাই নির্দেশ। স্ত্রী হাজেরা একথা শুনে বললেন,তাহলে আপনি যান। আল্লাহ নিশ্চয় আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করছি এবং তিনিই আমাদের আশ্রয়স্থল।”-(বুখারী ,তাফসীর-ইবনে কাসীর,প্রথম খন্ড)।
আপন স্ত্রী-পুত্র দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়ার দূরত্ব অতিক্রম করলে হযরত ইব্রাহিম(আ আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন-“ হে আমাদের প্রতিপালক ! আমি এই জনশুণ্য উপত্যকায় আমার বংশধরদের কতকের বসতি স্থাপন করে যাচ্ছি আপনার সম্মানিত ঘরের নিকট,তা এই উদ্দেশ্যে যে-তারা নামাজ কায়েম করবে। হে মহান প্রভূ ! আপনি আরও মানুষের মন তাদের প্রতি আকৃষ্ট করিয়ে দিন। আর ফলমূল খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে পানাহারের সুব্যবস্থা করে দিন,যাতে আপনার নিয়ামত উপভোগ করে মানুষ আপনার শুকরিয়া আদায় করে।-(আল-কুরআন,১৪: ৩৭)
কিছু দিনের মধ্যেই তাদের সাথে থাকা খাদ্য পানীয় শেষ হয়ে যায় এবং ইসমাঈলের(আ মাতা হাজেরা চারিদিকে ছোটাছুটি শুরু করেন খাদ্য-পানীয়ের জন্যে। সহিহ বুখারীর বর্ণনা মতে ইসমাইল(আএর মাতা সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ে উঠে লোকজনের অস্তিত্ব দেখার জন্যে সাত বার দৌড়াদৌড়ী করেছেন,একইসাথে তিনি শিশু ইসমাঈলকে দেখার জন্যে তার কাছে ছুটে আসতেন। শেষেরবার তিনি যখন ইসমাইলের কাছে আসেন তখন একটি আওয়াজ শুনতে পান। হাজেরা বলেন-যদি কোনো উপকার করতে পার তবে কাছে এস। এরপর ফেরেশতা জিবরাইল উপস্থিত হন এবং তিনি হাজেরাকে তার পায়ের গোড়ারী দ্বারা মাটিতে আঘাত করতে বলেন। এরপর সেখান থেকে পানি নির্গত হতে শুরু করে এবং হাজেরা পানির চারিপাশ গর্ত করতে শুরু করেন। তিনি স্থানটি ঘিরে একটি কূপের আকার দান করেন। পরবর্তীতে জুরহাম গোত্রের লোক এদিক দিয়ে অতিক্রমের সময় কূপটি দেখতে পায়,তারা বলাবলি করে,ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার এপথে চলেছি কিন্তু পানির চিহ্ন দেখিনি। (জুরহাম ছিলেন কাহতানের পুত্র,জুরহামীদেরকে কাহতানীও বলা হয়)তারা তখন তাদের গোত্রের সকলকে এই চমৎকার পানির কথা বলেন এবং তাদেরকে নিয়ে আসেন ও মা হাজেরার অনুমতিক্রমে পানি সংগ্রহ করেন এবং .............এরপর ইসমাঈলের(আ মাতার অনুমতিক্রমে এই কূপের আশপাশে বসবাস শুরু করে এবং একটি বসতি গড়ে ওঠে। সেই স্থানটিই হল আজকের মক্কা। হযরত ইসমাইল এবং তার মাতাকে দেখাশুনা করার জন্যে হযরত ইব্রাহিম(আ মাঝে মাঝে ফিলিস্থিন থেকে মক্কায় যেতেন। মোট কতবার তিনি এভাবে ভ্রমন করেছেন তার সঠিক ইতিহাস আমাদের কাছে নেই,তবে হাদীস থেকে চার বারের কথা স্পষ্ট জানতে পারি। ইসমাইল(আঃ) বয়ো:প্রাপ্ত হলে কুরবানীর ঘটনা ঘটে। মহান আল্লাহর একান্ত অনুগত বান্দা হিসেবে তারা পরিক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তির্ণ হন। যখন হযরত ইসমাইল(আ যুবক হলেন এবং বিবাহিতও ছিলেন,সেসময় পিতা-পুত্র মিলে ক্কাবাঘর পূণ:প্রতিষ্ঠা করেন। ‘ইসমাঈল(আএর বিবাহের পর তার মাতা মৃত্যুবরণ করেন’-(বুখারী ১মখন্ড-ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুবাদকৃত)
ক্কাবাঘর মানব জাতির জন্যে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইবাদতের ঘর। আল্লাহর নির্দেশে হযরত আদম(আঃ) এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ক্কাবাঘরের স্থানটি মাটিতে ঢেকে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম(আঃ)কে উক্ত স্থানটি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং তিনি সে স্থানটি খুঁজে পান(আল্লাহ তায়ালা বলেন-শ্মরণ কর, যখন আমি ইব্রাহিমকে এই ঘর নির্মানের জন্যে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং আদেশ করেছিলাম,আমার সাথে কাওকে শরিক করোনা,....”আল-কুরআন,২২:২৬)। স্থানটি ছিল একটি উচু টিলার মত,প্লাবন আসলে পানি স্থানটির দুপাশ দিয়ে প্রবাহিত হত। ইব্রাহিম(আ ক্কাবা পূণ:নির্মান করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-“মানব জাতির (ইবাদতের)জন্যে সর্বপ্রথম যে ঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল,তা হল বাক্কা(মক্কা বা ক্কাবা)-(আল-কুরআন,৩:৯৬)
আল্লাহ তায়ালা ক্কাবা ঘরটির বা মক্কা নগরীর মর্যাদা প্রদান করেছিলেন আসমান যমিন সৃষ্টির সময় থেকেই। রসূল(সাঃ)বলেন-“যখন আল্লাহ তায়ালা ভূমন্ডল ও নভমন্ডল সৃষ্টি করেন,তখন থেকেই এই শহরটিকে মর্যাদাপূর্ণ রূপে বানিয়েছিলেন।...”-(বুখারী,মুসলিম) এ হাদীসটি থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, যেহেতু বহু পূর্বেই ক্কাবার পবিত্রতার ব্যাপারটি নির্ধারিত, তাই পৃথিবীতে প্রথম মানুষ এবং নবী হযরত আদম(আকে দিয়ে আল্লাহ প্রথম ঘর ক্কাবা নির্মান করিয়েছিলেন। তবে এটি একটি যুক্তি এবং এটাকে সত্যের কাছাকাছি মনে হলেও সত্য কিনা আমরা তা পুরোপুরি বুঝতে পারিনা, কারণ আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য নেই। কুরআন অথবা সহী হাদীসে ক্কাবাঘর স্পষ্টভাবে হযরত আদম(আঃ)কর্তৃক নির্মানের বিষয়টি উল্লেখ নেই,বরং হযরত ইব্রাহিম(আকর্তৃক নির্মানের বিষয়টি কুরআন ও হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত। এ বিষয়ে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে,সেগুলোর সনদ খুবই দূর্বল বলে প্রখ্যাত অনেক আলেম মত ব্যক্ত করেছেন। সুবিখ্যাত তাফসীরকার ইবনে কাসীর আদম(আকর্তৃক ক্কাবাঘর নির্মানসংক্রান্ত হাদীসগুলোকে যয়িফ এবং জাল বলেছেন। এ সম্পর্কে তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১ম খন্ডে বেশ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়,যেমন:(১) ক্কাবাঘর ফেরেশতারা তৈরী করেছেন। (২) ৫টি পর্বতের পাথর দ্বারা আদম(আক্কাবাঘর নির্মান করেন,পাচটি পর্বত হল-হেরা,তূরে সাইনা,তূরে যীতা,জাবালে লেবানন এবং জুদী। (৩) আরেকটি বর্ননা হল-হযরত শীশ(আ ক্কাবাঘর নির্মান করেন। আরও বর্নিত হয়েছে যে, ক্কাবা ঘরের ওপর আদম (আ গম্বুজ নির্মান করেন, হযরত নূহ(আএর কিস্তী মহা প্লাবনের সময় ৪০বার ক্বাবাঘর প্রদক্ষিণ করে,হযরত আদম(আথেকে শুরু করে সকল নবী-রসূল ক্কাবা ঘর চিনত ইত্যাদী। কিন্তু এসকল বর্ণনা আহলে কিতাবদের কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে। ফলে এটার ওপর আমরা নির্ভর করতে পারিনা। এগুলোর সত্যতার প্রমান পাওয়া যায় না। আহলে কিতাবদের বর্ণিত কোনো বিষয় সম্পর্কে আমরা সত্যও বলতে পারব না, আবার মিথ্যাও বলতে পারব না। এটাই রসূল(সাএর পক্ষ থেকে আমাদের ওপর নির্দেশ। তবে যা কিছু কুরআন সুন্নাহর সাথে মিলবে,সেটা নেওয়াতে আপত্তি নেই, আর যা কিছু কুরআন-সুন্নাহর সাথে মিলবে না,সেটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রখ্যাত তাফসীরকার ,ঐতিহাসিক এবং সীরাত রচয়ীতা ইবনে কাসীরের মতে ক্কাবার প্রথম নির্মান হযরত ইব্রাহিম(আঃ)এর হাতে হয়। তিনি আয়াত পেশ করেছেন-“আল্লাহ তায়ালার প্রথম ঘর রয়েছে মক্কায়,যা বরকতময় ও সারাবিশ্বের জন্যে হেদায়াত স্বরূপ। তাতে কতকগুলো প্রকাশ্য নিদর্শন রয়েছে যেমন মাকামে ইব্রাহিম(আঃ) ,যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে,সে নিরাপত্তা লাভ করবে।”-(আল-কুরআন,৩:৯৬) মাকামে ইব্রাহিম বলতে পুরো বাইতুল্লাহ শরিফকেও বুঝায় আবার ইব্রাহিম (আ এর স্থানও বুঝায়। সীরাতে ইবনে কাসীর গ্রন্থে উল্লেখিত-হযরত জাবিরের(রাঃ)সূত্রে একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, “তাওয়াফ করার সময় রসূলকে(সাঃ) হযরত ওমর মাকাকে ইব্রাহিম পাথরটি দেখিয়ে বলেছিলেন,এটিই কি আমাদের পিতা ইব্রাহিমের মাকাম ? তিনি(সাঃ)বললেন-হ্যা।” এই আয়াতে প্রথম ঘর হিসেবে পবিত্র ক্কাবার সাথে মাকামে ইব্রাহিমের সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহ আমাদেরকে অবহিত করছেন। অর্থাৎ ক্কাবা ঘরটি প্রথমে হযরত ইব্রাহিমের(আ মাধ্যমে নির্মিত হয়।
হযরত সাঈদ বিন যুবায়ের থেকে বর্ণিত রসূল(সাবলেন- মাকামে ইব্রাহিম হল সেই পাথরখন্ড যার ওপর দাড়িয়ে হযরত ইব্রাহিম(আ ক্কাবাঘর নির্মান করেছিলেন।”-(ইবনে কাসির,১ম খন্ড) । ইবনে কাসীর বলেন, যেহেতু ক্কাবার ব্যাপারে কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে ইব্রাহিম(আএর নামটি সুস্পষ্টভাবে জানতে পারছি,আদম (আ প্রথমে তৈরী করে থাকলেও সেটা যেহেতু স্পষ্টভাবে জানতে পারছি না,তাই আমরা ইব্রাহিম(আকেই ক্কাবা ঘরের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গ্রহণ করব। কিন্তু ইবনে কাসির তার সুবিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’র প্রথম খন্ডে একথাও বর্ণনা করেছেন যে, ক্কাবায় হযরত ইব্রাহিম এবং ইসমাইল(আ হাজরে আসওয়াদ পাথরখন্ডটি পেলেন এবং সেটি যে জান্নাত থেকে হযরত আদম(আ নিয়ে এসেছিলেন সেটাও তিনি লিখেছেন। বলা হয়েছে ‘পূর্বে এই পাথরখন্ডটি সাদা বর্ণের ছিল কিন্তু মানুষের পাপের সংস্পর্শে এটি কালো রং ধারণ করেছে।’
(রসূল(সাবলেন- “হাজরে আসওয়াদ যখন জান্নাত থেকে আনা হয় তখন এটি ছিল দুধ অপেক্ষা বেশী সাদা । পরে আদম সন্তানের গোনাহ তাকে কালো করে দেয়”- (তিরমিযি)
ইবনে কাসীরের এই বর্ণনা অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে যদিও ক্কাবা ঘরের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আদম(আএর নাম স্পষ্ট দেখা যায়না, কিন্তু এখানে যে তার অতীত স্মৃতি রয়েছে তার প্রমান পাওয়া যায়। এছাড়া আল কুরআনের সূরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আদমের(আ দুই পুত্রের বৃত্তান্ত আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দিন। যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল,তখন একজনের কুবানী কবুল হল এবং অন্যজনের কবুল হলনা.....।” বহু সংখ্যক প্রখ্যাত আলিম বলেছেন,হযরত আদম(আ মক্কাতে আবতরণ করেন। আর আমরা এ আয়াতে জানতে পারলাম কুরবানীর প্রচলন প্রথম থেকেই ছিল। ফলে অনুমান করতে পারি যে,হজ্জের ইতিহাস বহু পুরোনো এবং আদম(আএর মাধ্যমে এটার শুরু হয়েছিল। সহী হাদীসে আরও জেনেছি সৃষ্টির সূচনা পর্বেই ক্কাবার স্থানটি মহা পবিত্র হিসেবে নির্ধারিত ছিল। তাই প্রথম নবী হিসেবে আদম(আই এটা নির্মান করেছিলেন বললে অযৌক্তিক হবেনা, যদিও স্পষ্টভাবে মহান আল্লাহ তায়ালা ক্কাবা ঘরের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার (আ নামটি উল্লেখ করেননি। ঈমাম যারকানী বলেন যে,ঈমাম বায়হাকী ‘দালায়িল’ নামক কিতাবে ইবনে ওমর হতে এবং তিনি রসূল(সাহতে ক্কাবাগৃহ আদম(আকর্তৃক নির্মিত হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটি আবু শায়খ এবং ইবনে আসাকীরও ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। ঈমাম শাফি’ঈ(রহ মুহাম্মদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আদম(আ ক্কাবা শরীফে হজ্জ পালন করেন।-(যারকানী-১ম খন্ড)
তবে এটা সত্য যে, ক্কাবার পবিত্রতা রক্ষার মধ্যে আমাদের কল্যান নিহিত রয়েছে,ক্কাবাঘর কে প্রথম নির্মান করেছেন সেটা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কোনো কল্যান নিহিত নেই এবং এ সংক্রান্ত আলোচনা দীর্ঘায়িত করার মধ্যেও কল্যান নেই।
বিষয়: বিবিধ
২২৬৯ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যা কিছু কুরআন সুন্নাহর সাথে মিলবে,সেটা নেওয়াতে আপত্তি নেই, আর যা কিছু কুরআন-সুন্নাহর সাথে মিলবে না,সেটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। একমত। চালিয়ে যান। ব্লগটা বাচিয়ে রেখেছেন।
আরবদের নিয়ে শুরুতে যেটা বললেন তাতে মনে হল - এরা মাথামোটা ও স্থুলবুদ্ধি সম্পন্ন । তাদেরকে গায়ের জোরে নিয়ন্ত্রনে আনার চেয়ে বুদ্ধির বলে বশীভূত করা যায় সহজেই এবং হচ্ছেও সেটাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন