ইহুদী-খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৩৫:৩১ সকাল
একদা এক চোখ বিশিষ্ট(এক চোখ অন্ধ ছিল) ইহুদী আল্লাহ বিন সুরিয়া রসূলকে(সাঃ) বলেন-“আমরাই সঠিক পথে রয়েছি। তোমরা আমাদের অনুসারী হও, তোমরাও সঠিক পথ প্রাপ্ত হবে।” তার এ কথার জবাবে আল্লাহ তায়ালা আয়াত অবতীর্ণ করেন-“এবং তারা বলে যে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রিষ্টান হও,তাহলে তোমরা সুপথ পাবে। আপনি বলুন-আমরাই ইব্রাহিমের(আঃ) দ্বীনের উপর অটল আছি এবং নিশ্চয়’ই তিনি(ইব্রাহিম আঃ) অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।”-(আল-কুরআন,২:১৩৫) “তোমরা বল-আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আর যা হযরত ইব্রাহিম(আঃ),ইসমাইল(আঃ),ইসহাক(আঃ),ইয়াকুব(আঃ) এবং তদীয় বংশধরদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল এবং মুসা(আঃ) ও ঈশাকে(আঃ)যা প্রদান করা হয়েছিল,সেসবের প্রতি ঈমান আনয়ন করছি। তাদের মধ্যে কাওকে আমরা প্রভেদ করিনা এবং আমরা আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণকারী।”
-(আল-কুরআন,২:১৩৬)
এভাবে চলতে থাকে পৃথিবী। হযরত মুসা(আঃ)এর ওফাতের পাচ’শ বছর পর হযরত ঈশা(আঃ) প্রেরিত হন। তাকেও নানামুখী অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হয়। তার ওপর ইঞ্জিল নামক কিতাব অবতীর্ণ হয়। অধিকাংশ মানুষ তাকে গ্রহণ করেনি। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করা হলে, আল্লাহ তায়ালা তাকে আসমানে উঠিয়ে নেন (আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আসল সত্য জানাচ্ছেন- “তাদের উক্তি এই যে, আমরা অবশ্যই মারইয়ামের পুত্র ঈশাকে(আঃ) হত্যা করেছি, যদিও তারা কখনই তাকে হত্যা করেনি। তারা তাকে শুলবিদ্ধও করেনি,মূলত: তাদের কাছে এমনি একটা কিছু মনে হয়েছিল। যারা মতবিরোধ করছিল,তারাও সন্দেহের মধ্যে পড়ে গেল। এ ব্যাপারে তাদের অনুমানের অনুসরণ ছাড়া সঠিক কোনো জ্ঞানই ছিল না। তবে এটা নিশ্চিত যে,তারা তাকে হত্যা করেনি। বরং আল্লাহ তাকে তার নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা মহা পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়।”
আল-কুরআন,সূরা আন্ নিসা,১৫৭-১৫৮)
এরপর একইভাবে তাওরাতের মত ইঞ্জিলকেও বিকৃত করা হয়। যদিও আজও ইঞ্জিল কিতাবের কিছু অংশ অবিকৃত রয়েছে কিন্তু সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রিত হবার কারনে পুরোটা পরিত্যাজ্য। প্রাচীন কালে আজকের মত প্রিন্টিং মিডিয়ার আবির্ভাব না ঘটাতে নবীদের বাণী শিষ্যদের স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকত,অথবা লিখতে জানা কোনো শিষ্য তা কোথাও কোথাও লিখেও রাখতেন। কিন্তু এটির পরিপূর্ণ রূপ না থাকাতে এবং নবীর ওফাত পরবর্তী সময়ে বিধান মানতে না চাওয়ার কারনে সেসব বাণীর অধিকাংশই সঠিকভাবে সংরক্ষিত হতে পারেনি। আর অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ এগুলো সংক্ষিপ্তাকারে জানার কারনে সুবিধাবাদী শ্রেণীদের ক্ষেত্রে কিতাব বিকৃত করা সহজসাধ্য হয়েছে।
হযরত ঈশার(আঃ) ওপর নাযিলকৃত ইঞ্জিল কিতাবকে তার কথিত অনুসারীরা বাইবেল বলে,কিন্তু‘ আজকের বাইবেল কিতাব শতাধিক রকমের। অর্থাৎ সকল বাইবেল একই রকম নয়। একেক জন একেকভাবে লিখেছেন,যেখান থেকে সত্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এটার বিকৃতি যে স্বজ্ঞানে সুস্থ্য মস্তিষ্কে করা হয়েছে তা সূরা আল ইমরানের ৬৯,৭০ এবং ৭১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ আমাদেরকে জানাচ্ছেন এভাবে- “এই কিতাবধারীদের একটি দল তোমাদেরকে কোনো না কোনোভাবে বিভ্রান্ত করে দিতে চায়, যদিও তাদের এ বোধটুকু নেই যে,তাদের নিজেদের ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে তারা পথভ্রষ্ট করতে সক্ষম হবেনা। হে কিতাবধারীরা ! তোমরা জেনে বুঝে কেন আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করছ ? অথচ (এই ঘটনাসমূহের সত্যতার)সাক্ষ্য তো তোমরা নিজেরাই বহন করছ। হে কিতবাবধারীরা ! তোমরা ‘হক’কে বাতিলের সাথে মিশিয়ে মূল বিষয়কে সন্দেহযুক্ত করে দিচ্ছ, অথচ (এটা যে সত্যের একান্ত পরিপন্থী) তা তোমরা ভাল করেই জানো।
(উল্লেখ্য: মুহাম্মদ(সাঃ)রসূল রূপে আবির্ভূত হওয়ার পর ইহুদী-খ্রিষ্টানদের বেশ কিছু পন্ডিত ব্যক্তি তাকে মেনে নিয়েছিল; তাদের কিতাবে রসূলের(সাঃ) আগমনের বিষয়ে এবং তার নিদর্শন সমূহের উল্লেখ থাকার কারনে, কিন্তু বহু পন্ডিত ব্যক্তি এ তথ্য জানা সত্ত্বেও রসূলকে(সাঃ) মেনে নেয়নি বরং বিরোধীতা করেছিল। ইহুদীরা হযরত ইব্রাহিমকেও(আঃ) তাদের নিজেদের নবী উল্লেখ করত এবং বলত- শেষ নবীও বনী ইসরাইল থেকে আসবে। তাদের নির্লজ্জ মিথ্যাচারের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা এখানে আয়াতের মাধ্যমে জানাচ্ছেন যে-
“যাদেরকে আমি পূর্বে কিতাব দান করেছি, তারা মুহাম্মদকে রসূল হিসেবে এমনভাবে চিনে,যেমনভাবে তারা তাদের নিজ পুত্রদেরকে চিনে, নিশ্চয়’ই তারা জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করছে”
-আল-কুরআন,২:১৪৬)
“যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক নিরক্ষর নবীর, যার উল্লেখ আছে তাওরাত ও ইঞ্জীলে(বাইবেল),যা তাদের নিকট আছে তাতেও লিপিবদ্ধ পায় ...( আল-কুরআন,৭ঃ১৫৭) “আল কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে অবশ্যই এর উল্লেখ আছে। বনী ইসরাইলের(ইহুদীদের) পন্ডিতগণ এবিষয়ে অবগত আছে।”-(আল-কুরআন,২৬ঃ ১৯৫-১৯৭)
সূরা আল ইমরানের ৭৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন-“ আহলে কিতাবদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যারা যখন কিতাবের কোনো অংশ পড়ে তখন নিজেদের জিহবা এমন করে এদিক সেদিক করে নেয়,যাতে তোমরা মনে কর যে,তারা সত্যিই বুঝি কিতাবের কোনো অংশ পড়ছে; কিন্তু তা কিতাবের কোনো অংশই নয়। তারা আরও বলে এটা আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে, কিন্তু আসলে তা আল্লাহর কাছ থেকে আসা কিছু নয়। এরা জেনে শুনে আল্লাহর ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চলেছে।”
আহলে কিতাব বলতে তাদেরকে বুঝায়,যারা আল-কুরআনের পূর্বে কিতাবপ্রাপ্ত। পূর্বে কারা কারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছেন সে সম্পর্কে আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই, আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে আমাদেরকে অতি অল্প তথ্য জানিয়েছেন, তবে সাধারনতভাবে আমরা ইহুদী এবং খ্রিষ্টানদেরকে আহলে কিতাব হিসেবে বুঝে থাকি। আর দৃশ্যমানভাবে এরাই জেনে বুঝে তাদের কিতাব বিকৃত করেছে (অন্যরাও করেছিল কিন্তু তাদের ব্যাপারে আমাদের কাছে সু-স্পষ্ট তথ্য নেই)। মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন-
“হে মানুষ , তোমরা যারা ঈমান এনেছ ! তোমরা যদি এই আহলে কিতাবদের কোনো একটি দলের কথাও মেনে চল,তাহলে এরা তোমাদের ঈমান আনার পরও কাফির বানিয়ে ফেলবে।”
(আল-কুরআন,৩:১০০)
হযরত ঈশা(আঃ)এর পাঁচ’শ একাত্তর বছর পর সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্যে প্রেরিত হন হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)। রসূল(সাঃ) বলেন- “আমি দুনিয়া এবং আখিরাতে ঈশা ইবনে মারইয়ামের সবথেকে নিকটতম। নবীগণ পরষ্পরের ভাই,তাদের মাতা ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু তাদের দ্বীন এক,আর আমার এবং তাঁর(ঈশা আঃ) মধ্যে আর কোনো নবী নেই।”-(বুখারী ও মুসলিম)
মুহাম্মদ(সাঃ)এর সময়ে ইহুদীদের তাওরাত এবং খ্রিষ্টানদের ইঞ্জিল বিকৃত অবস্থায় বিরাজমান ছিল(কিছুটা অবিকৃতও ছিল)। তাওরাত এবং ইঞ্জিল দুটোই আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নাযিলকৃত কিতাব ছিল। ইহুদী,খ্রিষ্টানদের অনেকে আল-কুরআনকে গ্রহণ করেছিল আবার অনেকে তাদের নিজেদের কিতাবের ওপর অটল ছিল। আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ রসূল মুহাম্মদ (সাঃ)এর ওপর নাযিলকৃত আল-কুরআন সম্পর্কে অর্থাৎ আল্লাহর মনোনিত একমাত্র জীবন বিধান সম্পর্কে বলেন-
“ এটা হচ্ছে আমার পক্ষ থেকে দেখানো সরল সোজা পথ। অতএব একমাত্র এই পথেরই অনুসরণ কর। কখনও ভিন্ন পথ অনুসরণ করোনা। কেননা তা তোমাদেরকে সঠিক পথ থেকে সরিয়ে দিবে।...... এটিই কল্যাণময় কিতাব, যা আমি নাযিল করেছি, অতএব তোমরা এর অনুসরণ কর এবং তোমরা আল্লাাহকে ভয় কর। হয়ত তোমাদের ওপর অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হবে। তোমরা আর একথা বলতে পারবে না যে, কিতাব তো আমাদের পূর্বের দুটি সম্প্রদায়কে(ইহুদী-খ্রিষ্টান)দেয়া হয়েছিল,তাই আমরা সেই কিতাবের পাঠ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলাম। অথবা একথা বলারও কোনো অজুহাত পাবে না যে, যদি (ইহুদী-খ্রিষ্টানদের মত)আমাদেরকে কোনো কিতাব দেওয়া হত, তাহলে আমরা তো তাদের চাইতে বেশী সৎ পথের অনুসারী হতে পারতাম। আজ তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমান, হেদায়াত ও রহমতসম্বলিত কিতাব এসেছে। তার চাইতে বড় যালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। যারাই এভাবে আমার আয়াতসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,অচিরেই আমি তাদেরকে এই জঘন্য আচরনের জন্যে নিকৃষ্ট শাস্তি প্রদান করব।”
(আল-কুরআন,৬: ১৫৩,১৫৫,১৫৬,১৫৭)
এখানে আল্লাহ তায়ালা বলছেন যে, যদি কোনো সম্প্রদায় এটা বলে যে, আমাদের পূর্ববর্তীদেরকে যেভাবে কিতাব দেওয়া হয়েছিল,সেভাবে আমাদেরকে প্রদান করা হলে আমরা আল্লাহকে মানব,অথবা যদি বলে আমাদের পূর্ববর্তী কিতাব সম্পর্কে তো আমাদের কাছে তথ্য নেই, আমরা কিভাবে তা মানব ? আমাদের কাছে তো এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞান নেই। ইহুদী-খ্রিষ্টানসহ সারা দুনিয়ার সকল সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালা এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, বাক চাতুরতা,যুক্তি-তর্কের আর কোনো মূল্য নেই ; যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে মুহাম্মদ(সাঃ) রসূল হিসেবে এসেছেন এবং আল্লাহর অবতীর্ণ করা আয়াত নিয়ে এসেছেন। যদি এটা প্রত্যাখ্যান কর তাহলে তোমরাই যালিম এবং তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হবে, আর গ্রহণ করলে তোমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করা হবে এবং এই কুরআনে বিশ্বাসীদেরকে যেসকল নিয়ামত প্রদানের কথা বলা হয়েছে তা প্রদান করা হবে। রসূল(সা|)বলেন- “..... আহলে কিতাবদের মধ্যে থেকে-যে ব্যক্তী ঈমান এনেছিল তার নবীর প্রতি, অত:পর মুহাম্মদ(সাঃ)এর প্রতি, তার জন্যে দ্বিগুন সওয়াব।.....”-(বুখারী)
লেখাটা আমার পুরোনো। কিন্তু ইদানিং অমুসলিমদের দাওয়াহ করা নিয়ে ভাবছি। আলহামদুলিল্লাহ পরিকল্পনা চলছে। জীবনে প্রথমবারের মত একজনকে শাহাদাহ পড়িয়ে মুসলিম হতে সাহায্য করছি। খাওয়া নিয়ে অনেক লিখেছি,এবার দাওয়াহ নিয়েও কিছু লিখতে চাই
বিষয়: বিবিধ
১৪৭১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুলত বাইবেল ইন্জিল নয়। বর্তমানে প্রচলিত বাইবেলগুলি হযরত ঈসা(আঃ) অনেক পরে কযেকজন নব্য খ্রিষ্টান এর দ্বারা রচিত। একমাত্র বারনাবাস এর বাইবেল যেটা মুলত হযরত ঈসা(আঃ) এর একজন হাওয়ারি রচনা করেছেন সেখানে সরাসরি ইঞ্জিল এর কিছু অংশ আছে।
০ হতে পারে , তবে তারা ইহুদি নিয়ন্ত্রিত মুসলমান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন