নিউ চায়না ...১১

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ মার্চ, ২০১৩, ১১:৫৬:৪৩ সকাল



পরদিন শাওশিং সিটিতে গেলাম ১নং বাসে চড়ে। আমার হোটেলের অনতিদূরে বাস স্টপ রয়েছে। বাসের জন্যে অপেক্ষা করছি এমন সময় এক চমৎকার চায়নিজ বাচ্চা দেখলাম। তার চোখদুটো বক্র রেখার মত। সে তার মায়ের পিঠে অবস্থিত একটা ব্যাগে অবস্থান করছিল। আমি তাকাতেই হাসল এবং একাটা হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরতে চাইল। বিদেশে বিনা অনুমোতিতে কোনো বাচ্চার গায়ে হাত দেওয়া শোভনীয় নয়,তাই তাকে ধরার চেষ্টা করলাম না। যে কেউ তাকে একবার কোলে নিতে চাইবে।

বাসের ভেতর এক চায়নিজের সাথে পরিচয় হল। তার নাম ওয়ামবিং। সে ইংলিশ জানেনা এবং আমার চায়নিজ ভাষার দৌড় সামান্য। কিন্তু সিটিতে এসে সে আমার সাথে যেতে চাইল। আমি তাকে বললাম আমার কাজ আছে। সে তখন আমার ফেরার সময় জেনে নিল এবং বলল,তাহলে আমি দুপুর ১২টার সময় এই বাসস্টপে তোমার জন্যে অপেক্ষা করব,আমরা একসাথে ফিরব। আমি রাজি হলাম।

আমি এখানে যে কাজের জন্যে এসেছি তা হল হাটাহাটি আর একাজে আমি একাই স্বাচ্ছন্দবোধ করি। এটা হল এই সিটির শপিং জোন। প্রচুর নামিদামী ব্রান্ডের দোকান রয়েছে এখানে। তবে আমি এবার যেহেতু পণ করেছি কিছু কিনব না তাই দেখেই খ্যান্ত হলাম। কয়েকবার মনে হয়েছিল কিছু কিনেই ফেলি কিন্তু নিজেকে সামলেছি। আমি দেখলাম দামী দোকানে মানুষ অনেক কম ঢুকছে আর ঢুকলেও তেমন কিনছে না। এটা বোধহয় সারা দুনিয়ার জন্যে প্রযোজ্য,কারন বেশীরভাগ মানুষই গরিব অথবা মধ্যবিত্ত। আমাকে দেখে অনেক দোকানদার আশান্বিত হল এবং আশাহতও হল।

ফুটপাথ ধরে হাটতে আমার খুব ভাল লাগে। চায়নার রাস্তাগুলো খুব সুন্দর করে তৈরী করা হয় এবং ফুটপাথ হয় বেশ দর্শনীয়। আবহাওয়াও দারুন। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাটার একটা মজা আছে। আমি এ মজা অনুভব করি। আমি মানুষের গতিবিধি লক্ষ্য করি। তাদের আচরণ সাং®কৃতি বোঝার চেষ্টা করি। এখানে আমি কিছু কিছু ভবন দেখেছি যার দিকে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। খুবই দৃষ্টিনন্দন করে তৈরী করা হয়েছে সেগুলো। আর পরিচ্চন্নতায় এদের সুনাম রয়েছে। আমি একটা রাস্তা ধরে হাটলাম যার একপাশে ফুলের বাগান। রাস্তাটা আমাকে প্রবল আকর্ষণ করল। এরা অতিশয় পরিচ্ছন্ন। এর ফুটপাথ বেশ প্রশস্ত। আমি হাটছিলাম আর ভাবছিলাম এখানে হাটলে মানুষের মন ভাল হতে বাধ্য।

বেশকিছুদূর হেটে আমি একটা পার্কে আসলাম। এ পার্কের সাথেই একটি বিশাল স্থাপনা রয়েছে,এখানে হেলীপ্যাডও রয়েছে। এর পাশেই পানির ফোয়ারা তৈরী করা হয়েছে এবং বেশ বড় জলাধরও রয়েছে। একপাশে গার্ডেনের ভেতরকার বড় প্রান্তরে দেখলাম কংক্রিটের মেঝেতে বিভিন্ন রকমের টাইলস দিয়ে আকিবুকি করা হয়েছে। এটা মসৃন নয় বরং ড্রেনের মত খনন করে করে বিভিন্ন চিত্র তৈরী করা হয়েছে। এর সাথেই সিডনী অপেরা হাউসের অনুকরনে একটি বিশাল ভবন নির্মিত হয়েছে। অনুকরন করতে চায়নিজদের জুড়ি নেই। এই পার্কের নীচে রয়েছে একটি বিশাল শপিংমল। শপিংমলের অর্ধেক অংশ জুড়ে আছে ওয়ালমার্ট। সারা চায়নাতে এরা বেশ সস্তায় খুচরা পণ্য বিক্রি করে থাকে। এখানে সবসময়ই প্রচন্ড ভীড় থাকে। আমি বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী কিনলাম। দেখলাম জ্যান্ত কচ্ছপ প্লাস্টিকের বক্সে প্যাক করা রয়েছে। বাংলা টাকায় একেকটার দাম পড়ে দেড় হাজার এবং কিছু কিছু প্রজাতির দাম অনেক বেশী। সাইজ এক কেজীর কম বা বেশী হতে পারে। কাকড়া এবং ব্যাঙ রয়েছে বিশাল বিশাল কাচের পাত্রে। এগুলোও দামী জিনিস। কেউ আমাকে খুন করলেও এগুলো খাওয়া সম্ভব নয়।

১২টা বাজতে ১৫মিনিট বাকী থাকতে রওনা হলাম কারন ওয়ামবিং অপেক্ষা করছে। কিন্তু ১২টার পর আরও ১৫মিনিট অপেক্ষা করার পরও সে আসল না। তাকে এসএমএস পাঠালাম কিন্তু ফিরতি এসএমএস পেলাম না। আমি বাসে উঠে চলে আসলাম। পরে আমি চায়নিজ ভাষায় লেখা একটি এসএমএস দেখে ভাবলাম সে এইমাত্র বাসস্টপে এসেছে। হোটেলে পৌঁছার পর সে ফোন করল,তখন হোটেল ম্যানেজারকে ফোন ধরিলে দিলাম এবং দুঃখ প্রকাশ করলাম। এরপর কয়েকবার সে চায়নিজ ভাষায় এসএমএস করেছে। কিন্তু আমি হ্যাল্লো,হাই ছাড়া আর কিছুই তাকে লিখতে পারিনি। তার ইংরেজী জানা থাকলে অথবা আমার ভাল চায়নিজ জানা থাকলে আমরা ভাল বন্ধু হতে পারতাম।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File