তুরষ্কের অভ্যুত্থান !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ জুলাই, ২০১৬, ১০:০৭:৫২ সকাল
বহির্বিশ্বে অমেরিকার প্রভাব যে ব্যপক পড়ে গেছে তার প্রমান তুরষ্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান। ঘটনাটা অন্তত বছর দশেক আগে হলেও হয়ত অভ্যুত্থানটা সফল হয়ে যেতে পারত। কিন্তু আমেরিকার মূলোতে বেশীরভাগ উচ্চ পদস্থ সামরিক অফিসারই আস্থা রাখেনি। ফলে সুবিধা করা গেলনা। গত এক দশকের বেশী সময় ধরে বহি:র্বিশ্বে আমেরিকার বহু পরিকল্পনাই আশানুরূপভাবে ফলেনি,বরং ইদানিং তাদের হুঙ্কার গর্জন অনেকটাই ম্রিয়মান। বিশ্ব রাজনীতির বাস্তবতায় এসব প্রমানিক হয়েছে। ফলে তাদের প্রতি অন্য জাতি গোষ্ঠীর আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে সামরিক অভ্যুত্থানের এ উদ্যোগটা না নিয়ে তাদের কোনো উপায় ছিলোনা। ১৯২৪ সালে তূর্কী খিলাফতের পতনের পর মুসলিমদের মনস্তাত্ত্বিক জগতে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যদিও সে সময় খিলাফত নিভূ নিভূ করে জ্বলছিলো কিন্তু তারপরও মুসলিমদের মানুষিক একটা ঐক্য বজায় ছিলো। অন্তত তাদের অভিযোগ করার ক্ষেত্র ছিলো। পরবর্তীকালে মুসলিমের মনজগতও ভেঙ্গে চুরমার করা হয় কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে।
সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,সাংষ্কৃতিক সকল ক্ষেত্রেই ইসলামকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ইসলামী দলসহ প্রকাশ্যে ইসলামী আচার আচরনও নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম ভাসমান ধর্মীয় চেতনায় লালিত হতে থাকে। যদিও গোপনে ইসলামী কার্যকলাপ চলেছে কিন্তু প্রকাশ্যে কূফর থাকায় সেটার প্রকাশ ব্যপকতা পায়নি। শিক্ষা,সাংষ্কৃতির ভেতর সরকারী কুফরই প্রতিষ্ঠিত হয়।
বহু বছর পর গোপনে চলা ইসলামী কার্যকলাপসমূহ আস্তে আস্তে প্রকাশ্যতা পায়। সাধারন মানুষের মনের ভেতর ইসলামী চেতনা স্থান করে নেয়। এই পথ ধরে এরদোগান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রবেশ করে। কিন্তু পশ্চিমারা যেটা চেয়েছিলো পুরোপুরি তেমনটা হয়নি। তারা রাষ্ট্রের ইসলামী চেতনার পরিবেশ দেখতে চায়নি। কিন্তু এরদোগানের নেতৃত্বে তুরুষ্ক ব্যপক স্থিতিশীলতা অর্জন করে। ইউরোপ,আমেরিকার ব্যপক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও তুরষ্ক রেকর্ড পরিমান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধী অর্জন করে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসলে মুসলিম জনগনের মাঝে ধর্ম চর্চার প্রতিযোগীতা শুরু হয়। তারা শান্তিতে ধর্ম প্রচার,প্রসার ঘটায়। শিক্ষা,সাংষ্কৃতিতে ধর্মের প্রবেশ ঘটায় ব্যপকভাবে। এই বিষয়টির পরবর্তী রূপ হল শয়তানকে চিনতে পারা এবং তার বিরুদ্ধে ব্যপক শক্তি তৈরী করা। পুরো বিষয়টি ধাপে ধাপে সেদিকে এগিয়ে চলে। তাই এই স্থিতিশীল পরিবেশকে দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া মানেই হল পুরো পশ্চিমা দুনিয়াকে অদূর ভবিষ্যতে চরম মূল্য দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হওয়া। ফলে তারা ব্যপক তাড়াহুড়ো করে অনেকটা মরিয়া হয়ে শাসন উল্টে দিতে চেয়েছে। কারন এরদোগান তাদের জন্যে সরাসরি বিপজ্জনক না হলেও তার শাসনে নি:শব্দে,নিরবে অথবা সরবে লালিত পালিত হওয়া ধর্মপাগল মুসলিম জনতা তাদের জন্যে ভয়ঙ্কর। তাই ঝুকি তাদের নিতেই হল।
এটা একটা ভালো খবর যে বিদ্রোহীরা যথেষ্ট শক্তি তৈরী না করেই নিজেদের স্বরূপ উম্মোচন করে ফেলেছে। শক্তির ভারসাম্য থাকলে হয়ত অবস্থা মোকাবিলা করা সহজ হতনা। আর প্রতিপক্ষ যে মারাত্মক ভুলটা করেছে তা হল এরদোগানের জনপ্রিয়তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারা। তারা যেভাবে ভীতি প্রদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছিলো,ঘটনা ঘটেছে তার হুবহু বিপরীত। জনগন মিশরের সিসির চরিত্র সম্পর্কে পুরো অবগত এবং বিতশ্রদ্ধ , তাই এই মুহুর্তে তুরষ্কে সামরিক শাসনের পরিনাম কি ,তা তারা ভালই জানে। ফলে তারা এরদোগানের আহবানে দেরী না করে তড়িৎ সাড়া দিয়ে রাস্তায় নামে এবং ব্যপক সাহসীকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। যেসব আর্মী মনে করছিলো জনগন ভয়ে ঘরে ঢুকে যাবে,তা হতবাক হয়ে যায়। জনগন বিপথগামী আর্মীদেরকে চোরের মত পিটিয়েছে এবং আর্মী ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে শেষমেষ আত্মসমর্পন করেছে। তাদের সব হিসাব শেষ হয়ে গেছে। জনগন সৎ সাহসী হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলে অভ্যুত্থান তারাই ঘটায়,অস্ত্র দিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করা যায় না। সময়ে অস্ত্রের ক্ষমতা খুবই সীমিত।
ফতহুল্লাহ গুলেনের প্রভাবপুষ্ট বা আমেরিকা ইউরোপের প্রভাবপুষ্ট সামরিক,বেসামরিক যেসব অফিসারকে এরদোগান তোয়াজ করে চলত বা সম্মান করতে বাধ্য হত,চেহারা প্রকাশিত হয়ে যাওয়াতে এবার তাদেরকে কান ধরে বাহি:স্কার করা যাবে বা সরিয়ে দেওয়া যাবে। এবং পরিস্থিতি এতটাই অনুকূলে যে সেসব অফিসারদেরকে হত্যা অথবা কঠোর শাস্তি প্রদান করলেও কেউ প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারবে না। এরদোগানের এই শুদ্ধি অপারেশনের ফল সদূরপ্রসারী হবে বলেই মনে হয়। আল্লাহ যেন সকল পরিবর্তনকে ইসলামের বিজয়ের দিকে ধাবিত করেন !
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৭ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এরদোগানের এই শুদ্ধি অপারেশনের ফল সদূরপ্রসারী হবে বলেই মনে হয়। আল্লাহ যেন সকল পরিবর্তনকে ইসলামের বিজয়ের দিকে ধাবিত করেন ! অনেক অনেক ধন্যবাদ
ষড়যন্ত্র বন্ধ হবেনা। আল্লাহ তায়লা তুরুস্ককে সাহাজ্য করুন।
ষড়যন্ত্র বন্ধ হবেনা। আল্লাহ তায়লা তুরুস্ককে সাহাজ্য করুন।
সুন্দর ভাবনা,, এবং এতে এরদোগান আরো বেশি পপুলার হয়ে গেলেন। আল্লাহ সমস্ত মুসলিম উম্মাহ্ কে ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন।
০ তবুও আমরা আশাবাদী যে আমেরিকা এক সময়ে মুসলমানে ভরে যাবে ?
লাভ কি হবে যদি এরা ইসলামের পক্ষে কাজে না আসে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন