পুটিদের রোজা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ জুন, ২০১৬, ০৫:৪০:২৯ বিকাল
(ব্লগার আফরার পরিবর্তে আমি আজ এখানে খাওয়া দাওয়া করব,অন্যের লেখা ভাজি করব। আফরার পরিবর্তে আমার স্টাইলে গল্পটা লিখলাম)
পুটির বাপ ! রোজা তো সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে, কেনাটাকা কিছু লাগবে না ?
: লাগবে না,তাতো বলিনি গো, ধান বিক্রীর টাকার একটা অংশ তো তুলে রেখেছি
রোজায় পুটিরা ভালোমন্দ খাবে বলে ! ,কি করব বলো পুটিদের দিকে
তাকিয়ে.....
: পুটি পুটি করোনা, গিলবে তো তুমি,,,সব পুটির উপর চাপাও ক্যান ??
:ওই দ্যাখো, আমি কি একা থাবো নাকি !! তুমি বুঝি রোজায় উপোস থাকবে ??
গেলবার মনে নেই, আমার ছিলোনা টাকা,আর তোমাকে আলুভর্তা ডাল খেতে হল প্রায়
পুরো মাস.....
:হয়েছে হয়েছে, যাও বাজারে যাও....
:আচ্ছা বড় পুটির বয়স এবার কত হল যেন ??
:পোড়ামুখোর কথা শোনো,লোকে শুনলে বলবে কি নিজের সন্তানের বয়স জানোনা ??
:জানি জানি, কিন্তু কাহিনী হল....তাদের বয়স তোমাকে শ্মরন করিয়ে দিচ্ছি।
বড়টার বয়স হল ৭। ওরে ধরো......
:ধরেই তো আছি....
:আরে এই ধরা সেই ধরা নারে সোনা মনা....চাদের কনা....গরুর চনা...
:এই কি বললে ????
:না আদর করলাম আর কি,,,,
:তাই বলে গরুর চনা বলবে ??
:তা আবার কখন বললাম,,,,,,,,বলেছি বেশ করেছি.....!!আর গরুর চনা কি খাবাপ নাকি ? জনৈক রাষ্ট্রপতি
পর্যন্ত ভক্তি করে খায়.......
:রাখো তোমার চাড়াল মাড়াল.....খালি উল্টোপাল্টা কথা....যাও বাজারে যাও....
: আচ্ছা ঠিক আছে,তবে বড় পুটির কিন্তু এইবার খবর আছে...
==================
পুটির মা, আখিরাতে সবথেকে ভাগ্যবানদের অন্যতম থাকবে আলিম সন্তানের
পিতা-মাতা। তোমার মনে আছে, বিয়ের পর আমরা ওয়াদা করেছিলাম আমাদের
সন্তানদেরকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় আলিম হিসেবে গড়ে তুলব !
:হ্যা মনে আছে। আর সেজন্যেই তো আমার সাথে বড়টাকে নামাজে দাড় করাই। আর
ছোটটাও ওর দেখাদেখী পাশে দাড়ায়। বলা যায় ছোটটার গতি বেশী।
:হ্যা আমি দেখেছি। এরকম চমৎকার দৃশ্য আর হতেই পারেনা। তুমি আমার অনেক
ভালো পুটির মা গো। সন্তানদেরকে সুন্দর শিক্ষাই দিচ্ছ। তবে মাঝে মাঝে
শাসনও করবে। আর রমজানে বড়টাকে রোজা রাখানোর চেষ্টা করবে এবার। রমজান
মাসটা যে আসলেই রহমতপূর্ণ তা যেন আমাদের আচরনে প্রদর্শিত হয়। পার্থক্যটা
তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। ওদের হাত দিয়ে কিছু দান সদাকাহ করাবে।
সুন্দর করে উপদেশ দিবে। কেউ বকা দিলে ওরা তার বিপরীতে বকা দেওয়া শিখবে
না। পিতা-মাতাকে মান্য করা অবশ্য কর্তব্য এটা তারা শিখবে।এখনই শিক্ষা গ্রহনের সময়। এই বয়সেই ওদের জীবন দর্শন তৈরী হয়। আমার বিশ্বাস
তুমি এই রমজানে অন্তত বড়টাকে পুরো সাইজ করে ফেলবে....
:হ্যা আমি ওকে সাইজ করি আর তুমি দূরে দাড়িয়ে আঙ্গুল চোষো...আল্লাদে বাচিনে.....
:আমি কিছু করব না বলেছি নাকি গো,,,,কথা জিলাপীর মত কও কেন ?
শশা,খেচুর,বেগুনীর মত সোজা বলতে পারোনা.....ওই রে....মনে পড়ে গেল...সব
তোমার দোষ ....পুটির মা সোনামনি...এইবার কিন্তু
বেগুনী,আলুচপ,ঘুগনি,পেয়াজু কিনে আনতে পারব না....একটু কষ্ট করে
বানাইয়ো.....
:এইনা বললে পুটিদের শিক্ষা দিতে...এখন আবার খাই খাই করছ কেন ??
:তা দুটো একসাথেও তো হয়, এটা কি আলাদা করার জিনিস নাকি !!
:আমি দুইটা একসাথে পারব না,সাফ কথা.....
:আচ্ছা আলুচপ,বেগুনীর গুল্লি মারি, তুমি আমার পুটিকে রোজার ট্রেনিং দাও
দক্ষ কমান্ডারের মত...
========================
পুটির মা, ও পুটির মা...সেহরীর সময় হয়েছে উঠে পড়....আস্তে করে ওঠো,পুটি
জেগে যাবে। ....
: কেনো,তুমি না বললে বড়টাকে রোজা রাখানো শেখাতে ?
:বলেছিলাম তাই বলে প্রথম দিন নাকি ? আর বয়স কতই বা হয়েছে, মোটে ৭। এত
বড় দিন সহ্য করতে পারবে ? তাছাড়া ঘুমও পূর্ণ হয়নি.....
:পুটির বাপ ! তোমার কপালে দু:খ আছে,তোমার আদিক্ষেতা দেখাচ্ছি দাড়াও........এই পুটি ওঠ !! কোথায় বড় পুটি.....পুটি !!!
:জি, আম্মা, আমি তো অনেক আগেই উঠেছি,,,জানো রাতে তো দুবার ঘুম ভেঙ্গেছে
আর ভেবেছি এই বুঝি সেহরীর সময় হল !!! এই দ্যাখো হাতের মুঠোয় তোমার ঘড়িটা...
:ওরে আমার মনা সোনা চাদের কনা....তোর বাপ গরুর চনা.......আয় আয় তাড়াতাড়ি আয়,সেহরী খা। দ্যাখ আমি দুধ জ্বাল দিয়ে রেখেছি। একটা মর্তমান কলার অর্ধেকটা তোর.....
:পুটির মা, তুমি লোক ভালো...তোমাকে দিয়ে হবে....কিন্তু তাই বলে তুমি আমাকে গরুর চনা বললে ???
: গরুর চনা কি খরাপ কিছু নাকি ?? জনৈক প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত এটা চুমুক দিয়ে খায়...ভারতবর্ষের কোটি কোটি লোক এটা মহা ভক্তি নিয়ে খায়....ভালোবেসে বলেছি বুঝেছো ??
:হুমম....বুঝলাম, তোমার ভালোবাসায় আমি চনার মত সিক্ত...একেবারে ভেজানো গোয়াল ঘর.....
এসো একসাথে সেহরী খাই....ওরে বাবা ওটা আবার কে ??? আমাদের ছোটটা নাকি রে....তুমিও রোজা রাখবে নাকি হে....এসো....তোমার রোজা সকাল ১১টা পর্যন্ত।
১১টা পার করতে পারলে ২টা চকলেট...পাক্কা...
========================
আহা পুটিটা বেশ শক্ত মনে হচ্ছে,দুপুর হল কিন্তু খাওয়ার নাম নেই। কি হে পুটির মা, বড়টা দেখী বেশ পোক্ত।
:পোক্ত হবে না, জিনিসটা কার দেখতে হবেনা !
:তোমার একার নাকি ? আমারও ভাগ আছে, ,,,
:হ্যা লাভের ভাগ তো পুরোটাই চাও....সাইজ করলাম আমি,আর এখন ক্রেডিট নাও....
:ছোটটার খবর কি ? সকাল ১১টায় কি খেতে দিয়েছো ওকে ?
:ছোটটা ক্ষুধার জ্বালায় বার বার খেতে চাচ্ছিলো,যেই গরম....কিন্তু মা আয়েশার কথা মনে পড়ল। উনি বলেছেন বাচ্চাদেরকে রোজায় খাবার ভোলানোর জন্যে কাপুড় দিয়ে পুতুল বানিয়ে খেলতে দিতেন। এজন্যে আমি খেলার সামগ্রী
দিয়ে ওটাকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রেখেছি। এভাবে আস্তে আস্তে ওকে অভ্যস্ত করে ফেলব। ইনশাআল্লাহ আগামীবারই ওকে দিয়ে ৩/৪টি রোজা রাখাবো.....
:.....আর এই আনন্দে রাইয়ান দরজা দিয়ে আমি এক লাফ দেব....
:দেওয়াবানে...জম্মের মত লাফ দেওয়াবানে.....কষ্ট করলাম আমি আর লাফ দিবে উনি...শখ কত !! লাফ আমি দেব....মানে ইয়ে...দরকার নেই....সে পরে দেখা
যাবে...তবে ফেরেশতাদের বলব...ওই লোকটাকে খাচায় ভয়ে টেনে দরজা পার করতে....
:কেনো গো সোনামনি পুটির মা....আমি কি বান্দর নাকি যে......শোনো ফেরেশতারা তোমার মত না বুঝেছো....।আল্লাহ ঠিকই দেখো আমাদের সব বাধা বিপত্তি মুছিবৎ
সহজ করে কবুল করে নিবেন। আর আমাদের সকল প্রচেষ্টা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে হয়,তবে কবর,হাশর,মিজান,পুলসিরাত কোনো ঘটনাই না রে পুটির
মা.....মজা আর মজা.......ওরে আমি ইফতার কিনতে গেলাম....আজ শরবতও হবে.....লেবু শরবত !!
:চুপচাপ ঘরে যাও। নফল নামাজ আদায় করো আর কুরআন তিলাওয়াত করো। ...
:তাইলে আমাদের ইফতার...??
:ওটা তোমার ভাবা লাগবে না,সব রেডী আছে...
:কি কও রে মনা পাখি......তুমি করেছো ??!!
:না , তুমি করেছো...
:মশকরা করো ক্যান ??আমি আবার কখন করলাম !!
:করোনি তাইলে চুপ থাকো, যাও ঘরে যাও...
:যাচ্ছি যাচ্ছি...তুমি আমার....লাড্ডু গুড্ডুরে......মনে চায় তোমাকে গুলিয়ে খেয়ে ফেলি রে.......নাহ এই মেয়ে আমার পুটিগুলোকে মানুষ বানাচ্ছে গো....তোমার জন্যে দোয়া দোয়া দোয়া.....
বিষয়: বিবিধ
২২৮১ বার পঠিত, ৪২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পুটীর মা আর পুটীমণিদেরকে নিয়ে রমাদানে বেশ মজায় আছেন।
মাশাআল্লাহ। রসালো গল্পের মাঝে সুন্দর শিক্ষণীয় গল্প খুব উপভোগ্য হয়েছে ছোট ভাই।
বাস্তব জীবনেও যেন সবসময় এমন মধুর মুহূর্ত কাটে এটাই প্রার্থনা।
একটানে পড়ে ফেললাম!
কাজের সময়ের মত্তখানি কেড়ে নিলেন!
ব্যস্ত সময়ে এই ভয়েই তো আপনার লেখায় ঢুকিনা!
লেখাটা বরাবরের মতই সুন্দর, বরং আরো বেশী সুন্দর হয়েছে
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ অবশ্যম্ভাবী, সত্যের সাথে
যাক এটাও ভাল কাজ করেছেন কারন আমি গল্প ও লিখতে পারি নাই তার জন্য ধন্যবাদ ।
আর এখন আপনার পুটির মাকে নিয়ে আসেন আমরা দুইজনে মিলে আপনাকে পিটাব । আমি আপনাকে পিটাব আমার প্রক্সি দেয়া গল্পে আপনি পুটির মায়ের প্রসংশা করেছেন সেই কারনে ,জানেন না এক মেয়ে আরেক মেয়ের প্রসংশা শুনতে পারে না ।পুটির মা আপনাকে পিটাবে আফরার প্রক্সি দিয়েছেন তাই ! তখন বুঝেন ইফতার কত মজা
পুটির মা কিন্তু আপনার শত্রু না,আপনি শুধু তার সাথে শত্রুতা কইরেন না ...আমারে মাইর খাওয়ায়েন না...
কোন দিকে যাই। কান্তে কান্তে খাই!!!
এই অসুস্থতা যে ভাই দির্ঘমেয়াদি!!
আন্তরিক দোআ রইলো ১৪৩৮ হিজরীর সিয়াম পুটির মা সহ পালন হউক
হা হা হা , এত্ত সুন্দর লিখেছেন ! অন্তরের রসনা তৃপ্ত হয়ে গেছে .... পুঁটির মা সমগ্র তৈরী হতে আর বাকি নাই বেশি দেখছি !
জোরে হাসলে রোজা ধরে ফেলবে, তাই চুপি চুপি হেসেছি!
এইসব গল্প শুনতে ভাবতে কতইনা মজা লাগে, যদি বাস্তবেও এমন হয় তাহলে তো কথাই নেই।
হাস্য রস পোষ্টটির অনেক অনেক ধন্যবাদ।
রামাদান কারীম।
অনেক দিন পরে ব্লগে এসেছি তাই রমজানের পোষ্টের মন্তব্য এখন করলাম
বড় চমতকার লিখেছেন অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন