যে বিষয়টি আমাদের জানা নেই এবং জানার প্রয়োজনও নেই !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ মে, ২০১৬, ১২:১২:০৫ দুপুর
=======================================
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে তার রসূল(সাঃ)এর মাধ্যমে জানিয়েছেন যে -রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে বা শেষ রাতে আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন আর মানুষকে আহবান করতে থাকেন ইবাদতে,আর তিনি তার ক্ষমা নিয়ে অপেক্ষা করেন.....
এরকম অনেকগুলি হাদীস আমাদের জানা আছে। কিন্তু কারো কারো মাথায় এ প্রশ্ন উদয় হতে পারে যে-"পৃথিবীর সকল প্রান্তে একসাথে দিন ও রাত হয়না। একপাশে দিন ,আরেক পাশে রাত। তাহলে হাদীসটি বাস্তবের সাথে তো মিলছে না......অর্থাৎ
বাংলাদেশে রাত ....এখন আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে এসেছেন। ......আবার আমেরিকায় তখন দিন....তাহলে আল্লাহ প্রথম আসমানে নামেননি ,বা আরশে সমাসীন রয়েছেন। আল্লাহ পুরো পৃথিবীর রাত নেমে আসা স্থানসমূহের ব্যাপারে বলেছেন আর আমরা বাস্তবে দেখছি ২৪ ঘন্টার পুরো সময়েই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও রাত। তাহলে তো হিসাব বলছে -আল্লাহ সবসময় প্রথম আসমানেই থাকেন ! অথচ আমাদের কাছে তথ্য এসেছে যে আল্লাহ আরশে সমাসীন !
বিষয়টা কি গোলমেলে নয় ???
জি, বিষয়টা গোলমেলে তবে তা মানুষের জন্যে,আল্লাহর জন্যে অবশ্যই নয়। প্রথম আসমানে নেমে আসা বলতে আল্লাহ কি বুঝিয়েছেন সেটাও চিন্তার বিষয়। এটা এমনও হতে পারে যে তিনি সে সময় বান্দার প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন। আবার হতে পারে তিনি স্বয়ং তখন ১ম আসমানে অবস্থান করেন। কিন্তু সে সময়ে তিনি আরশ থেকে নেমে আসেন কিনা ! নাকি উভয় স্থানে একই সময়ে অবস্থান করেন !! নাকি সর্বদা আরশেই থাকেন এবং প্রথম আসমানে নেমে আসার বিষয়টি রূপক !!! নাকি তিনি আরশে স্থায়ী থাকেন আর প্রথম আসমানে কিছু সময়ের জন্যে থাকেন !!! কিছু সময়ের জন্যে যদি ১ম আসমানে থাকেন তাহলে তো ২৪ ঘন্টার পুরোটাই থাকেন রাত দিনের আবর্তনের কারনে !!!
উপরোক্ত চিন্তাগুলো যে কোনো মানুষের মাথায় আসতে পারে। কিন্তু এর সমাধানের আগে চিন্তা করতে হবে-মানুষের সকল চিন্তা সীমাবদ্ধ কিন্তু যার সম্পর্কে চিন্তাটি করা হচ্ছে তিনি অসীম,অনাদী,অনন্ত। আল্লাহর বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষন করা মানুষের সাধ্য নয়। এটি আমাদের আওতা বহির্ভূত,তাই এই সীমাবদ্ধ মস্তিষ্কে এটাকে অযৌক্তিকও মনে হয়। এটা মূলত আমাদের চিন্তার ভূল। অসীমের সংজ্ঞাও আমাদের পরিষ্কার নয়।
এ বিষয়ে সমাধান একটিই যা আলকুরআনের একটি আয়াত "শুনলাম এবং মেনে নিলাম"
এ বিষয়ে নিজেদের চিন্তাকে বিচারক মানলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কারন তখন একটিকে বিশ্বাস করে অপর অবস্থানটিকে অবিশ্বাস করতে হবে।
মূল কনসেপ্ট হল: আল্লাহ আরশে সমাসীন। তিনি সেখানে কিভাবে সমাসীন তা জানা নেই,তা জানাননি,প্রয়োজনও নেই,বললেও তা বুঝতে পারতান না। আরশ কেমন ? উত্তর হল, আল্লাহর জন্যে যেমনটি শোভা পায় তেমনই।
আল্লাহ আরশে সমাসীন থেকে তার সকল সৃষ্ট জগৎকে সুস্পষ্টভাবে এবং সকল কালে,অবস্থায় দেখেন ও অনুধাবন করেন,বিচার করেন,ব্যবস্থা গ্রহন করেন। কোনো একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবস্থা,ঘটনা নেই যা তিনি জানেন না। কোনো ক্ষেত্রেই তার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এ জন্যেই তিনি স্রষ্টা।
উপরোক্ত হাদীসে প্রথম আসমানে নেমে আসার অর্থ প্রকৃতই নেমে আসা,নাকি মানুষের ইবাদতের বেশী গুরুত্ব দেওয়া সেটা বিশ্লেষনও আমাদের আওতাভূক্ত নয়। যেভাবে তিনি বলেছেন ,সেভাবে বিশ্বাস করাই কর্তব্য। আমাদের অনুধাবন হবে এমন যে-"গভীর রাতে বা শেষ রাতে উঠে ইবাদত করতে হবে,তাহলে আল্লাহ বেশী খুশী হবেন এবং আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। এটাই বান্দা বা দাসের উপলব্ধী। এটিই মূল বিষয় যা আমাদের দায়িত্ব,কর্তব্য সংক্রান্ত। অন্য বিষয়টি আল্লাহর নিজস্বতা সংক্রান্ত। সেটি নিয়ে গবেষনায় যেই ফলাফলই আসুক না কেন,তা ইবাদতের অংশ নয় ,এতে লাভ নেই,আর এতে বিরূপ ধারনা তৈরী হলে ঈমান নিয়ে টিকে থাকা কষ্টকর। বিষয়টি সরলভাবে বর্ণিত হয়েছে আর সরলভাবেই বিশ্বাস করতে হবে।"
শেষ রাতে আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন এটি সত্য। সে সময়ের ইবাদতকারীকে আল্লাহ অধিক ভালোবাসেন এটিও সত্য। তিনি কিভাবে প্রথম আসমানে নেমে আসেন এটা আল্লাহর ব্যাপার,বান্দার ব্যাপার নয়। আল্লাহ এক স্থানে থেকে সকল অবস্থা পর্যবেক্ষন করেন একইভাবে। আমরা শুধু বলব-"শুনলাম এবং আদেশ মেনে নিলাম"।
বিষয়: বিবিধ
১৬২৩ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর পরিবেশন, জাযাকাল্লাহ..
আর পৃথিবীর সময়ের হিসাবকে তো মানদন্ড ধরা চলেনা। আমাদের গণনার ১০০০ বছর আল্লাহর কাছে একদিন আবার আরো কিছু সময়ের হিসাবের প্রসঙ্গ এসেছে। এগুলো আসলে মানব মস্তিষ্কের সীমানার বাইরে। আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক। এটাই আল্লাহকে মহান, অসীম করে তলে আর আমাদেরকে সমূদ্রে বিন্দুজল।
“নিঃসন্দেহে আসমান জমীনের সৃষ্টির মাঝে, রাত দিনের এই আবর্তনের মাঝে, মহাসাগরে ভাসমান জাহাজসমূহে যা মানুষের জন্য কল্যাণকর দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ( এসবকটিতে) আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন মজুদ রয়েছে, (আরও রয়েছে) আল্লাহ তায়ালা আকাশ থেকে (বৃষ্টি আকারে) যা কিছু নাজিল করেন সেই বৃষ্টির পানির মাঝে, ভূমির নির্জীব হওয়ার পর তিনি এ পানি দ্বারা তাতে নতুন জীবন দান করেন, অতঃপর তিনি এ ভূখণ্ডে সব ধরণের প্রাণীর আবির্ভাব ঘটান, অবশ্যই বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি করার মাঝে এবং সে মেঘমালা যা আসমান জমীনের মাঝে বশীভূত করে রাখা হয়েছে, তার মাঝে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে”। [সুরা বাকারাহ, ২:১৬৪]
জাজাকাল্লাহ খায়রান
এখানেই শেষ। আমরা সন্তুষ্ট। ধন্যবাদ।
এখানেই শেষ। আমরা সন্তুষ্ট। ধন্যবাদ।...ইয়েস চাচাভাই
ধন্যবাদ হুজুর ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন