আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কি ছিলেন আর কি ছিলেন না

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১২ মে, ২০১৬, ০৮:২৮:১৩ সকাল



11 May, 2016

-: স্মৃতিচারণ করেছেন আমার প্রিয় শাইখ ড: আব্দুস সালাম আজাদী :-

বাংলাদেশের ইসলামি জাগরণের কথা ইদানিং খুব বলি। বলি, ইসলামের কোন ভয় নেই বাংলাদেশে। বলি, ইসলাম কে কেও মিটায়ে দিতে পারবেনা ঐ ভূখন্ড থেকে। বলি, বাংলাদেশ থেকে ইসলাম মুছে ফেলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর একটা জাগৃতি বন্যার বেগে ধেয়ে আসছেই।

যখন এই সব কথা প্রগলভতার সাথে বলি, যে মুখটা এসে আমার সামনে এক ফালি চাঁদের হাসি বিকীর্ণ করে, 'সালাম ভাই, ক্যামন আছেন' বলে আশা যোগায় তিনি হলেন ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগির। তাকে দেখে আমি এত কঠিন কথা বলতে সাহস পেতাম।

১৯৮৯ সাল থেকে পরিচয়। তখন তিনি জামিয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ এর মাস্টার্স এর ছাত্র। 'মাশারিকুল আনওয়ার' নামক এক হাদীস গ্রন্থের উপর তিনি ভাষাতাত্বিক স্টাডী করছেন। জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে বোকা বোকা ভাষায় বল্লাম, হাদীসের কেতাব, স্টাডী হচ্ছে ভাষাতাত্বিক?! তিনি হেসে বললেনঃ 'সালাম, ভাই এই যায়গায় তো উম্মাতের সমস্যা। আজকের মুহাদ্দিস রা ভাষা জানেনা, আর ভাষাবিদ রা হাদীস জানেনা'। চোখ খুলে গেল। ইবনে মালিকের দর্শন তিনি বুঝালেন। হাদীস কে কিভাবে যে ইগনোর করা হচ্ছে তা বুঝালেন। আমি আপ্লুত হলাম, চোখে মদীনার সবুজ গম্বুজের হাতছানি খেলতে লাগলো।

দেখা হয়েছে বহু বার, বহু যায়গায়, বহু ক্ষেত্রে কিংবা বহু আনন্দে বিপদে। একবার রিয়াদে বাংলাদেশী দায়ী ইলাল্লাহ গণের মাঝে মারাত্মক এক ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ডঃ তরিক, মাওলানা সাঈদ মিসবাহ, মাওলানা আব্দুর রাক্বীব সহ বেশ কয়েকজন আলিমের মাঝে একটু দুরত্ব তৈরি হয়। জাহাংগির ভাই তখন ছাত্র, কাজ করেন বাংলাদেশ এম্বেসীতে, এবং দাওয়াতি এক সংস্থার সাথে। সেদিন মিমাংসার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিলো এমন যে তার প্রতিটা কথা সবাই মেনে নেন, এবং সকলের মন শান্তিতে ভরে ওঠে। আমি উনাকে বললামঃ ভাইজান, হামযাতুল ওয়াসল এর মত কাজ করলেন, আগের ও পরের শব্দের সাথে নিজকে বিলিয়ে কিভাবে মিলিয়ে দিলেন। উনি আবারো উপহার দিলেন একফালি হাসি।

১৯৯১ সালে মদীনায় যাচ্ছি কিং সাঊদ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে। তিনি খুশী হয়েছিলেন। কিং সাঊদের ইসলামিক স্টাডীজ তার পছন্দ ছিলোনা। তিনি তখন পিএইচ ডি থিসিস শুরু করেছেন। বিদেশিদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত ছড়াতেন। ইংরেজিতে তিনি খুব ভালো ছিলেন বলে আমেরিকান সেনা ছাওনিতে তিনি ইসলাম পৌঁছানোর কাজ করতেন। জিজ্ঞাসা করলামঃ ভাই, কয় জন ইসলাম কবুল করেছেন? তিনি বললেনঃ বলা নিষেধ, তবে আপনাকে একটা কথা বলি, ওদের মাঝে ইসলাম পৌঁছাতে পারলে তারা উন্মুখ হয়ে আছে। ঐ বছরেই শুনেছিলাম ডঃ জগলুল নাজ্জার ও জাহাংগির ভাইদের দাওয়াতে তিন শতাধিক সৈন্য মুসলিম হয়ে যায়। এবং সরকারি হস্তক্ষেপে এই দাওয়াতি কাজ বন্ধ রাখা হয়।

১৯৯৫ সালে মদীনা থেকে রিয়াদে বেড়াতে আসি। শায়খ আব্দুর রহমান মাদানী আর আমি। উদ্দেশ্য এম এ করার জন্য একটা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা। তিনি দাওয়াত দিলেন। ভাবী কে দেশে পাঠায়েছেন। শ্যালক আছেন বাসায়। বাসায় যেয়ে দেখলাম সব খালি। মানে উনার পি এইচ ডি শেষ, তিনি দেশে ফিরবেন। সার্টিফিকেট নিয়ে ও শ্যালকের পরীক্ষা শেষ করিয়ে ফিরবেন। তিনি আমাদের জামিয়াতুল ইমামে নিয়ে গেলেন। শিক্ষক গণের সাথে পরিচয় করালেন। দেখলাম তার শিক্ষকগণ শুধু ভালোবাসেন না তাকে, সম্মান ও করেন ঢের।

ঈমানের সাথে ইলম, ইলমের সাথে আমল এবং আমলের সাথে এত হিলম আমি আর কারো মাঝে পাইনি। তিনি সবার সাথে মিশতে পারার এক দূর্লভ গুণ অর্জন করে ছিলেন। তবে সহীহ হাদীসের এক চুল দূরে যেতে ছিলো তার প্রচন্ড আপত্তি।

"ভাই, জামাআতে ইসলামির সাথে বা তাব্লীগের সাথে, বা কোন অর্গানাইজেশনের সাথে থেকে কাজ করলে কি বেশি ভালো হত না"? আমার এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ "সালাম ভাই, বাংলাদেশে ৯০% মুসলিম, এদের মাঝে দল করা মানে এদের কে বিভক্ত করে ফেলা। বাংলাদেশের সব মুসলমানের সাথেই আমি থাকি, সে ভালো"। আমি বললামঃ "কিন্তু কেও তো আপনাকে মেনে নেবে না, তাছাড়া, কারো না কারো সাথে থাকলে একটু সাহায্য পাবেন"। তিনি বললেনঃ " সবাই মেনে নেবে সালাম ভাই। কারণ কলেমার দাওয়াত এমন যে, ঐটা ব্যাবহার করে দেখেন না একজন ভিক্ষুক ও সব মুসলমানদের দয়া ও সাহায্য পায়। আমি না হয় "ঐক্যের ভিক্ষুক" হই। কলেমা নিয়ে সবার কাছে যাই, তাড়ায়ে দিলেও মারতে পারবেনা কেও। চোখ খুলে দিলেন আমাকে।

জাহাংগির ভাই, বড় অবেলায় চলে গেলেন, বিদ্যুতের যে আলোকচ্ছটা আপনি ছড়িয়ে ছিলেন তা বিকশিত না হতেই এই হতভাগা জাতিকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। আমি আপনার জন্য কী আর দেব। দুচোখের নহরে ভাসা জীর্ণ মলিন মুখ দেখুন, আর রোগাক্রান্ত হৃদয়ের দীর্ণ করা হাহাকার টাই শুনুন............ আল্লাহুম্মা নাক্কিহি মিনায যুনূব কামা য়্যুনাক্ক্বা আসসাওবুল আবয়াদু মিনাদ্দানাস। ও আল্লাহ, তুমি তাকে জান্নাতুল ফিরদাওসের মেহমান বানাও। শাহাদাতের মর্যাদা দাও।

বিষয়: বিবিধ

১৭১৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368820
১২ মে ২০১৬ দুপুর ০২:০৩
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ও আল্লাহ, তুমি তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান বানাও। শাহাদাতের মর্যাদা দাও।আমিন। আমি উনার "হাদিসের নামে জালিয়াতি" গ্রন্থটি পড়েই আল হাদিস এবং জাল হাদিসের পার্থক্য বুঝতে পারি। এর আগে বুঝতাম না। ফলে আমি যে কোন লেখায় হাদিসের ব্যবহারে সতর্ক হতে পারি।..উনার বই গুলো ব্যতিক্রমী। আল্রাহ উনার নেক আমল কবুল করুন। অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাইকে।
১৩ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৩
306195
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমি শুধু লেকচার শুনেছি। আপনার দোয়ায় আমিন
368842
১২ মে ২০১৬ বিকাল ০৫:১৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ঈমানের সাথে ইলম ইলমের সাথে আমল এবং আমলের সাথে হিলম সকল ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত জ্ঞানিদের কাছেই থাকা প্রয়োজন দঃখজনক হলেও সত্যযে তা থেকে আলেম সমাজ বহু দূরে। মুহতারামের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলনা। তিনি আলেম হিসেবে আমি তাহাকে ভালোবাসী তিনি সবার সাথে মিশতে পারার যে দূর্লভ গুণ অর্জন করে ছিলেন এটা তার অমূল্য সম্পদ। সহীহ হাদীসের এক চুল দূরে যেতে ছিলো তার প্রচন্ড আপত্তি যা প্রতিটি জ্ঞানির জন্যই প্রয়োজন।লেখাটি খুবই ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে ভাই ইসলামের ঐক্য আজ বড়ই প্রয়োজন কিন্তু যোগ্য লোকের বড়ই অভাব
১৩ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৪
306196
দ্য স্লেভ লিখেছেন : যে কোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে,শয়তানকে বিজয়ী হতে দেওয়া যাবেনা
368846
১২ মে ২০১৬ বিকাল ০৫:২৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : শাইখ ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী সাহেবর ব্লগ অথবা ফেসবুক আইডি থাকলে দিবেন ধন্যবাদ
১২ মে ২০১৬ রাত ১১:৩৮
306182
সালাম আজাদী লিখেছেন : কুয়েত থেকে, আপনার সাথে আগেও আমার সম্পর্ক ছিলো। দ্যা স্লেভ আমার কুটুম্ব বলে লেখাটা তার ব্লগে ছাপিয়ে আমাকে ধন্য করেছে।
১৩ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৭
306197
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জনাব এটা দুলাভায়ের নিজস্ব ব্যাপার Happy আল্লাহ উনার মহা কল্যান করুক। উনি সুন্দর করে একজন শাইখের বিষয়ে লিখেছেন। তার এই ভালোবাসাপূর্ণ কথার কারনে আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আল্লাহ আপনার উপরও রহম করুন কুয়েত ভাইHappy
368854
১২ মে ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৮
১৩ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৭
306198
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান
368864
১২ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৩
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম,

উনার চাল-চলন দেখলে বোঝা যেত না, উনি এত
গুণসম্পন্ন, কিন্তু যখন যখন কথা বলতেন,
তখন শুধু হা করে শুনতে ই ইচ্ছা করতো,,,
১৩ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৭
306199
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমারও তাই
368892
১২ মে ২০১৬ রাত ০৮:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
১৩ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৮
306200
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
368913
১৩ মে ২০১৬ রাত ০৩:২৮
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন। ফি আমানিল্লাহ।
১৩ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৮
306201
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমিন
368962
১৪ মে ২০১৬ রাত ১২:৩৫
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
১৪ মে ২০১৬ সকাল ১১:৪৩
306270
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
369122
১৫ মে ২০১৬ দুপুর ০১:০১
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আমিন। ফি আমানিল্লাহ।
১০
369205
১৬ মে ২০১৬ সকাল ০৮:২৩
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সম্পর্কে আমার একদমই জানা ছিল না | আপনার লেখা পড়ে জানলাম | আমার কয়েকজন ক্লাসমেট কুষ্ঠিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন | তারাও কখনো বলেননি উনার কথা | আপনার লেখা পরে জানলাম | আল্লাহ উনাকে জান্নাত দান করুন |
১৬ মে ২০১৬ সকাল ১১:৩৭
306466
দ্য স্লেভ লিখেছেন : উনি এক বিরল প্রতিভা। উনি আরবে প্রত্যেক ক্লাশে রেকর্ড পরিমান নাম্বার নিয়ে প্রথম হয়েছেন। অনেকগুলো ভাষায় উনার কিতাব লিখেছেন,অনুবাদও করেছেন। অনেকগুলো মৌলিক কিতাব রয়েছে উনার। উনি আরবী ভাষার উপর বিরাট পন্ডিত। আর বাংলায় চমৎকার ফলে দাওয়াহর ক্ষেত্রে অনেক সফল।

এই সাইটে যেতে পারেন http://www.assunnahtrust.com
১১
369607
১৯ মে ২০১৬ রাত ০৮:৪৩
আব্দুল্লাহ বিন কামরুল লিখেছেন : তাঁর থেকে সবচেয়ে বড় যে শিক্ষাটি আমরা পাই তা হোলঃ মুসলিম ঐক্য বজায় রাখা।
২২ মে ২০১৬ রাত ১২:১৩
306844
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি,উনি আজীবন সেটাই করেছেন। আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File