যেভাবে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:৪৫:৪৯ সকাল
আমি আল্লাহর কাছে যা কিছু চেয়েছি তার বেশীরভাগই পেয়েছি। কিছু পেয়েছি অলৌকিকভাবে। আর আমি আকাশের দিকে তাকাই। আর আমার বিশ্বাস হয় আকাশের অধিপতি আমাকে দেখছেন। আর তখন যে অনুভূতি হয় তখন দোয়া করি।
আমি চিন্তা করি আমি নামক অস্তিত্বই থাকার কথা ছিলো না। অথচ আমাকে তৈরী করে কি বিশাল একটি রহমত করেছেন। যদিও এরপর আর কিছুই চাওয়ার থাকেনা তারপরও আল্লাহ দিতেই পছন্দ করেন...এমনকি জুতার ফিতাটাও চেয়ে নিতে হয়...তার মানে- এ এমন এক স্রষ্টা যিনি দিতেই পছন্দ করেন। কিন্তু বান্দা কিভাবে চাইলে মালিক খুশী হবে !!
সেটাই হল নতজানু হওয়া। এটাই আত্মসমর্পণ,যা হল ইসলামের বাংলা অর্থ। তার মানে নিজেকে আল্লাহর সামনে একেবারে তুচ্ছাতিতুচ্ছ করে ফেলতে হবে,একেবারে মন থেকে। পুরোটাই ফিলিংস...
আমি যখনই নতজানু হয়ে তার প্রতি নিজেকে সপে দেওয়ার চেষ্টা করি,তখনই মনে হয় তিনি খুশী হচ্ছেন। এই অনুভূতি আল্লাহ তৈরী করেন। আর আমি তখন খুজি কিভাবে আরও নিজেকে ছোট করা যায় ! তখন বাক্য তৈরী করি। ....মাথায় থাকে আল্লাহ অহংকার করতে পছন্দ করেন,,,এটা তার চাদর। তাই নিজেকে মাটি চাপা দিতে হবে,,মানে ফকির বানিয়ে ফেলতে হবে।
নিয়ামতসমূহ সুক্ষ্ণভাবে বিশ্লেষন করলে আল্লাহর প্রতি ধারনা এমন উচু হয়,যে ধারনাই হল সর্বোচ্চ দোয়ার অংশ। তখন মনে হয় আল্লাহ যেন বলছেন, এই বান্দা ! আমার কাছে যা খুশী চেয়ে নে....তোকে সময় দিলাম।
বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহই অভিভাবক। আর অভিভাবকত্বের মানে হল তিনি আমার ভালো মন্দ নিয়ন্ত্রন করবেন। সেই নিয়ন্ত্রন তার হাতে তুলে দেওয়ার সিস্টেম হল আত্মসমর্পন। অতএব মহা অভিভাবক যদি চাওয়া অনুযায়ী না দেন,তার মানে হল-সেটা আমার জন্যে শূভ ছিলোনা। শিশু পিতার কাছে সিগারেট চাইলে নিশ্চয়ই তিনি দিবেন না। এতে শিশুর প্রতি পিতার ভালোবাসা কমে গেছে ভাবলে শিশু ভুল করল। বরং এর অর্থ সেটি পাওয়ার ছিলোনা। আর আল্লাহ প্রার্থনা ফিরিয়ে দেন না মানে হল, ভুল করে খারাপ/হারাম কিছু চাইলে তিনি অনুগত বান্দাকে তা দেননা ,তবে তার এই অনুনয় বা প্রার্থনার পুরষ্কার জমা করে রাখেন। আবার হালাল কিছু চাইলেও তা নাও দিতে পারেন। তবে প্রার্থনার পুরষ্কার দিতে পারেন। কারন চাওয়ার পদ্ধতি সঠিক ছিলো। আবার চাওয়ার বিষয়টি দুনিয়াতে না দিয়ে আখিরাতেও দিতে পারেন।
অভিভাবক মানে হল তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। নিশ্চয়ই আখিরাতের প্রাপ্তীই আসল প্রাপ্তী। ধরুন আমি টাকা চাচ্ছি, এটা হালাল। কিন্তু অভিভাবক আল্লাহ আমার কল্যান চাওয়ার অর্থ এই নয় যে তিনি টাকাটা পাঠিয়ে দিবেন। বরং না পাওয়ার অর্থ এই যে- ওটা পেলে হয়ত আমি সেটা ভুল পথে খরচ করতাম। আল্লাহকে অভিভাবকত্ত দেওয়ার কারনে তিনি অভিভাবকের মতই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মুমিনদের সর্বোত্তম অভিভাবক।
প্রার্থনা করার সময় যদি এটা মনে হয় যে- এটা দিতেই হবে,না দিলে চলবে না, তাহলেও সমস্যা নেই। কারন অভিভাবকের কাছে আমরা এভাবেই আশা করি। কিন্তু সেটা না দিলে আশাহত হওয়াটাই আস্থাহীনতার পরিচায়ক। আর এটাই দোয়া কবুল না হওয়ার কারন হতে পারে। চেয়ে না পেলেও একই রকম আনন্দ নিয়ে আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে হবে। আস্থার স্থানটি দোদুল্যমান হলে বান্দা শেষ। এটা সরাসরি ঈমানের উপর বজ্রাঘাত করে। এটা কঠিন কিন্তু পরিনাম ভয়াবহ সুন্দর। আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। বিশেষ করে খুশীর সময় সর্বপ্রথম আল্লাহর কথা শ্মরণ করতে হবে। এতে রহমত বেড়ে যাবে।
তো আল্লাহর কাছে নিজের আবেদন পেশ করতে হলে সর্ব প্রথম নিজেকে ঠিক আল্লাহর বান্দা বা বেতনভূক্ত দাস হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। বেতনটিও বাকী। আচরনে ও চিন্তায় এটি প্রকাশিত হবে। অন্তর হবে স্বচ্ছ। আমলের আধিক্য ভিন্ন বিষয়। আল্লাহ দোয়া কবুল করতে আমলের আধিক্য বিবেচনা করেন না। আশা রাখতে হবে দোয়াটি আল্লাহ কবুল করবেন। আল্লাহর সম্পর্কে আল্লাহর জন্যে শোভা পায় এমন উঁচু ধারনা পোষন করতে হবে। তার কাছে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। চিন্তায় ও আচরনে সরল হতে হবে। আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে অন্তর দিয়ে। এর অর্থ হল সুসময়ে ও দু:সময়ে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কোনো চিন্তা, বক্তব্য ,অভিব্যক্তি আল্লাহর উপর অভিযোগ চাপাচ্ছে কিনা অনুধাবন করতে হবে। এরপর নিজের চাওয়াটি প্রকাশ করতে হবে। যদিও আল্লাহ জানেন আমি কি চাইব,কিন্তু তিনি বেশী খুশী হন নামাজে সেজদাহর সময় চাইলে।
যা কিছু বললাম নিজের অনুভূতি ও চিন্তা থেকে। সকল ভুল ভ্রান্তি আমার পক্ষ থেকে। আল্লাহ ক্ষমা করুন !
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৭ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকুমুল্লাহ খায়ের।
মন্তব্য করতে লগইন করুন