রডোডেনড্রন গার্ডেন

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০২:১৪ দুপুর









১৬ই এপ্রিল,২০১৬, শনিবার।

ইচ্ছা হচ্ছিলো কোথাও ঘোরার ,তাই নেটে সার্চ করে ইউজিনের একটা পার্ক বের করেছিলাম গত সপ্তাহে। কিন্তু আজ মনে করতে পারলাম না ইউজিনের ঠিক কোন পার্কটায় যেতে চেয়েছিলাম। আবারও সার্চ করে ঠিক পূর্বেরটার মত পেলাম না। তবে যেটা পেলাম তাতেই চলবে মনে হল।

হাইওয়ে ৫ এর পরিবর্তে বাইপাস রোড ধরলাম। ট্যানজিন্ট এর সুন্দর সব ফার্ম হাউজের রাস্তা ধরে হলজি হয়ে এগিয়ে চললাম। বেশ কয়েকটি শহর পার হয়ে চলে আসলাম হাইওয়ে ৫ এ। এখান থেকে ইউজিন ডাউনটাউন। প্রথমে গেলাম ইউজিন এশিয়ান স্টোরে। এটা নামেই কেবল এশিয়ান,কামে পুরো চায়নিজ। সারা স্টোর ঘুরেও কেনার মত কিছু পেলাম না। চলে আসলাম সেটার-ডে মার্কেটে।

আহা এটা আসলেই চমকপ্রদ। পাশাপাশি ৩টি ব্লক নিয়ে এই মেলা বসন্ত ও গৃষ্ম কাল জুড়ে চলতে থাকে। এটা সত্যিকার অর্থেই একটা মেলা। অস্বভাবিক সুন্দর লাগল। শত শত বিভিন্ন রকমের দোকানপাট। হাজার হাজার রকমের পণ্য সামগ্রী আর হাজার হাজার মানুষে মুখরিত এলাকা। গাড়িঘোড়া সব সতর্কতার সাথে ধীরে ধেরে চলছে কারন মানুষ রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করছে।

শুরতেই দেখলাম এক বড় গাছের ছায়ায় মজমা বসেছে। বিশাল জটাধর বাবা মাথা নীচু করে বেহালায় সূর তুলেছে। সে যে ভালো বাজায় তা বোঝা গেল। অনেক লোক গোল হয়ে দাড়িয়ে শুনছে। তবে আমি থাকলাম না,কারন এই শিল্পীসহ এর পেছনে একপাল মারিজুয়ানা খোরের দম নেওয়ার ঠেলায় টেকা দায়।

এগিয়ে রাস্তা পার হয়ে অন্য পাশে আসলাম। এখানে বিখ্যাত এক খাবারের পল্লী দেখলাম। এরা নানান রকমের ব্রেড,ও ব্রেড জাতীয় মিষ্টান্ন তৈরী করে। অনেকে লাইন ধরে কিনছে। আছে একেবারে ফার্ম ফ্রেশ মধু,আরও নানান খাবার। আরেক পাশে বহু সংখ্যক শাক সব্জী,তরকারীর বাজার। আছে ফুলের অনেকগুলো দোকান। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র,নানান তৈজসপত্র,শোপিছ,হস্তশিল্প,জামা কাপুড়সহ নানান রকমের সব পণ্য সামগ্রী। মানুষেরা হাসি তামাসা করছে। মানুষের উপচে পড়া ভীড় আমার ভালো লাগে।

এক ছোট্ট মাঠে দেখলাম একদল এক্রোবাট নানান সব ক্রীড়া,কসরত করছে। খানিকক্ষন দাড়িয়ে সেটা দেখলাম। বেশ কারিশমা দেখালো তারা। চলে আসলাম এরপর।

ইউজিনের রাস্তায় গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা আছে। ফুটপাথের পাশে দাগ টানা আছে। পাশেই লাইন ধরে ম্যাশিন বসানো। এর ভেতর ১ ডলার প্রবেশ করালে ১ ঘন্টা পার্ক করা যায়। বেশীক্ষন রাখলে জরিমানা গুনতে হয়। এটা সস্তা পার্কিং বলা যায়। যাইহোক এবার আসলাম স্কিনার বিউট পার্কে। এটা মোটামুটি প্রশস্ত অলামেট নামক এক খরস্রোতা নদীর তীরে অবস্থিত। স্বশব্দে প্রবাহিত নদী বেশ আকর্ষণীয়। এই নদীর তীরে বহু পার্ক রয়েছে।

আজ তাপমাত্রা ২৫ সেলসিয়াসের মত। আকাশে ঝলমলে সূর্য। অনেক বাচ্চারা দেখলাম খেলা করছে। পার্কের চারিপাশে বাইক পাথ রয়েছে। বহু সংখ্যক বাইকার বাইক চালাচ্ছে। আমি নদীর কিনারে অঅসলাম। নদী দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে,তবে ভদ্রতা বজায় রেখেছে। নদীর ধারেই বড় বড় বৃক্ষ। পরিবেশটা সত্যি শান্ত শিষ্ট ভদ্র,মার্জিত,চমৎকার।

সবই ঠিক ছিলো তবে বেশী ভালো ,ভালো নয় তাই অন্য পার্কের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। কিন্তু পথিমধ্যে ক্ষুধা আমাকে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট খুজতে অনুপ্রানিত করল। এভারগ্রীন রেস্টুরেন্ট কাছাকাছি আছে দেখলাম গুগল চাচার মাধ্যমে। মেন্যুতে খাশির গোস্ত দেখে গতি বাড়িয়ে দিলাম। গেলাম সেখানে।

আসলেই ক্ষুধা লেগেছে। একেবারে সত্যি করে বলছি ৩ বারে পুরো খাশির গোস্ত যা ছিলো ডিশে সব খেয়ে ফেললাম। খানিক বিশ্রাম নিয়ে উঠে ৪র্থ বার গিয়ে দেখলাম রিফিল করেনি। জিজ্ঞেস করলাম ভদ্র মহিলাকে-রিফিল করবেন না ? উনি মুখ চুন করে বললেন, না, খাসির গোস্ত ফুরিয়ে গেছে।

মনে মনে বললাম-তোর ঘরে হাতি ঢুকেছে ....একটু সেরে সামলে রাখবি না !! বাড়ির পাশে থাকলে তো তোর ব্যবসা চান্দে তুলে দিতাম রে !! আমার মত কয়েক জনের ঠেলায় কর্ভালিশের এভার গ্রীন রেস্টুরেন্ট শাখা তাদের মেন্যু থেকে ভেড়া/খাশি সব তুলে দিয়েছে। ....পরের বার আসলে খাওয়ার আগে-পরে আমার ওজন করে টাকা নিবি !....যাইহোক মনের কথা মনেই থাকল....সব কথা প্রকাশ করতে নেই, মানুষ মন্দ কয় !!

এবার আসলাম হেন্ডরিক পার্কে। এক অসাধারন ফুলের বাগান এটি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৬ সালে। বেশ কয়েকটি পাহাড়ের পাদদেশে নানান কারুকার্জে এটি বিভিন্ন রকমের ফুলের সমাহারে তৈরী হয়। জীবনে প্রথমবারের মত দেখলাম নানান রঙের রোডোডেনড্রন ও ম্যাগনোলিয়া। এ গাছগুলো অনেকটা পেয়ারা গাছের মত। তবে অত বিশাল বড় না হলেও যথেষ্ট। আর এটি দীর্ঘ সময়ে বাড়ে। গাছের ডাল খুব শক্ত। পার্কটা সত্যিই দারুন। সবুজ ঘাসযুক্ত মাঠে খানিক বসে থাকলাম। প্রকৃতি আসলেই মানুষকে প্রভাবিত করে। বেশ কিছু মানুষ নিরব ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করছে। মনে হল তাদের বেশ আনন্দ হচ্ছে। অনেক নাম না জানা ফুল রয়েছে এখানে। হাটাহাটি করে চলে আসলাম বিশাল শপিং জোনে। এখানে সাতারের জন্যে নাইকীর একটা গগলস কিনলাম বিরাট মূল্যহ্রাসে ৫ ডলারে,যার পূর্ব মূল্য ৬০ ডলার। আর এদিক সেদিক তেমন তাকাইনি,কারন বেশী তাকালেই পয়সা উড়ে যায়। ৬০/৭০ ডলারের দারুন সব জামা কাপুড় মূল্যহ্রাসে ১২ ডলারে বিক্রী হচ্ছে দেখলাম।

এবার ফেরার পালা। ফিরলাম। রাতে কিছুই খেলাম না,প্রয়োজন নেই, যেই টানা টেনেছি রে বাবা !!!

বিষয়: বিবিধ

১৪১৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366080
১৮ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০২:০১
নেহায়েৎ লিখেছেন : টানার ব্যাপারতো বটেই ভাল লাগল নদী-পার্ক-ফুলের বর্ণনা। স্কুলে থাকতে অথবা এইচএসসিতে একটা কবিতা পড়েছিলাম দ্যা রডোডেনড্রন।
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১০:০৬
303749
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এই পুলের নাম কবিতায় পড়েছি ইংরেজী বইতে কিন্তু দেখিনি। ফুল অনেক রকম্ সবগুলো ভালো লেগেছে
366099
১৮ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৫
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : গরিব মানুষ আর থাকি গরিব দেশে ধুলা বালি আবর্জনার মাঝে এসব গল্প কেমন জানি স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে। বৈদেশের মানুষ গাড়ি, বাড়ি, খাওয়া, ঘুরা ঘুরি- টাকা পকেটে থাকলে মানুষের কত শখ যে হয়!! এই গল্প গুলো পুটির মায়েরা বেশি উপভোগ করবে আর জীবিকা ও জীবন সংগ্রামে অতিষ্ঠ তরুনরা এসব পড়ে মন খারাপ করবে। আমি তো কোন দলেই না তাই আমার অনুভুতিটা একটু চিন্তা করে নিই।
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১০:০৯
303750
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আসলে আল্লাহ আমার উপর প্রচন্ড রহমত করেছেন। আল্লাহ আমাকে স্বচ্ছল পরিবারে পাঠিয়েছেন। আর আমি আলহামদুলিল্লাহ সবসময়ই ভালো আছি। শরীর যেমন ভালো,পকেটও স্বচ্ছল। আর আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারো মুখাপেক্ষী নই
366110
১৮ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৫:০৮
আফরা লিখেছেন : খাওয়া হল প্রধান কাজ , খাওয়া ছাড়া পোষ্ট নাই । সে হল আমাদের বিস্বখাদক দ্য স্লেভ ভাইয়া ।
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১০:১১
303751
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহেহেহেে মনে হচ্ছে উনি জীবনেও কখনই খাননি। লোকে জানে আপনি ফুল ফল সব খান। বিভিন্ন পোস্টে বেশী খাবারের পোস্ট আপনিই দেন....এর মানে হলRolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১১:০৫
303765
আফরা লিখেছেন : আমি খাই না তা কি কখনো বলেছি তবে আমি বাঁচার জন্য খাই আর আপনি খাওয়ার জন্য বাঁচেন । বিশ্ব খাদক পুটির বাপ আমার ভাইয়া Rolling on the Floor Rolling on the Floor
১৯ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:১১
303809
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমি বিশ্ব খাদক ক্যামনে ???আমি কি বিশ্বকে খেয়ে ফেলেছি নাকি Smug Smug Smug Smug Smug
366125
১৮ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আসলেই ক্ষুধা লেগেছে। একেবারে সত্যি করে বলছি ৩ বারে পুরো খাশির গোস্ত যা ছিলো ডিশে সব খেয়ে ফেললাম। খানিক বিশ্রাম নিয়ে উঠে ৪র্থ বার গিয়ে দেখলাম রিফিল করেনি। জিজ্ঞেস করলাম ভদ্র মহিলাকে-রিফিল করবেন না ? উনি মুখ চুন করে বললেন, না, খাসির গোস্ত ফুরিয়ে গেছে।নো রিফিল!!
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১০:১২
303752
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor উনি রিফিল না করলে সে দোষ কি আমার !!!Surprised Surprised Surprised
366167
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১১:০৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : কিযে মন্তব্য লিখবো এতো খাবার, পেট খারাপ হয়নি তো Surprised Surprised Surprised Surprised Eat Eat Eat Eat Eat Eat Eat Eat
একেবারে সত্যি করে বলছি ৩ বারে পুরো খাশির গোস্ত যা ছিলো ডিশে সব খেয়ে ফেললাম। খানিক বিশ্রাম নিয়ে উঠে ৪র্থ বার গিয়ে দেখলাম রিফিল করেনি। জিজ্ঞেস করলাম ভদ্র মহিলাকে-রিফিল করবেন না ? উনি মুখ চুন করে বললেন, না, খাসির গোস্ত ফুরিয়ে গেছে।

মনে মনে বললাম-তোর ঘরে হাতি ঢুকেছে ....একটু সেরে সামলে রাখবি না !! বাড়ির পাশে থাকলে তো তোর ব্যবসা চান্দে তুলে দিতাম রে !! আমার মত কয়েক জনের ঠেলায় কর্ভালিশের এভার গ্রীন রেস্টুরেন্ট শাখা তাদের মেন্যু থেকে ভেড়া/খাশি সব তুলে দিয়েছে। ....পরের বার আসলে খাওয়ার আগে-পরে আমার ওজন করে টাকা নিবি !....যাইহোক মনের কথা মনেই থাকল....সব কথা প্রকাশ করতে নেই, মানুষ মন্দ কয় !!


Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Eat Eat Eat Eat Eat Eat Eat Eat Eat Eat Day Dreaming Day Dreaming Day Dreaming
১৯ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:১২
303810
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
366189
১৯ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০১:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মাত্র একডিশ খাসি!! কোন কিপটার রেস্টুরেন্ট???
রডোডেনড্রন আমাদের বান্দরবন এ ও আছে।
১৯ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:১৩
303811
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি চলে আসার পরই রিফিল করেছে। ইন্ডিয়ানরা এসব ক্ষেত্রে চালাক Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File