উডেন সু টিউলিপ ফার্ম
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৪১:৫২ দুপুর
বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকেই ভাবছিলাম ওরেগনের সবথেকে বড় টিউলিপ ফার্মে যাব। কিন্তু এটা যে এরকম তা ধারনাই ছিলোনা।
সকালে রওনা হলাম। লোকে আমাকে খাদক বললেও আমি আসলে সবসময় খাইনা। গতকাল দুপুরেই রাতের খাবার খেয়েছি। এরপর টুকটাক এটা সেটা দিয়ে চালিয়েছি। সকালে এক কাপ কফি আর ক্রুসন্স নামক এক ধরনের ফাপা ও অনেক লেয়ার বিশিষ্ট বাটার ব্রেড খেয়েছি। সে আমার গলা বেয়ে নীচে নামতে নামতেই ফুরিয়ে গেছে। যাইহোক খানিক ক্ষুধা নিয়েই চললাম।
ব্রুকস এর রাস্তা ধরে পূর্বদিকে চললাম। নানান সুন্দর সুন্দর ও বিশাল কৃষিক্ষেতের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। মাইলের পর মাইল ফল ফসল। এটা বসন্তের শুরু তাই গাছপালায় রঙের বাহার। খুব দ্রুত এ সময় ফুল আসে। এবার অবশ্য বসন্ত আগেভাগে শুরু হয়েছে। কৃষকরা এত সুন্দর করে চাষাবাদ করে যে ক্ষেত দেখেই মনে হয় আইলে কাকতাড়ুয়া হয়ে দাড়িয়ে থাকি। মসৃন মখমলের মত সুন্দর ক্ষেতগুলো। যে কৃষক ঘাস উৎপাদন করে সে মাইলের পর মাইল ঘাসই বুনেছে। যে লোক মিন্ট,আঙ্গুর,গম চাষ করে,সে মাইলের পর মাইল সুন্দর করে তার চাষ করেছে। এত বিশাল ক্ষেত কিন্তু শ্রমিক বলতে মাত্র দু একজন। বিশাল বিশাল সব যন্ত্রপাতি দিয়ে এরা চাষাবাদ করে। অনেক যন্ত্রপাতি নিজেরা অর্ডার দিয়ে তৈরী করিয়ে নেয়।
খানিক দূর থেকে দেখী হাজার হাজার গাড়ি এক মাঠে পার্ক করা। হাজারে হাজারে মানুষ গিজগিজ করছে। একেবারে এলাহী কান্ডবান্ড। ভেতরে প্রবেশ করলাম । এরা ক্ষেত দেখতে আসা মানুষ থেকে মাথাপ্রতি ৫ ডলার করে নিচ্ছে। দূর থেকে দেখলাম দীগন্ত বিস্তৃত শত শত রকমের টিউলিপ লাইন ধরে ফুটে রয়েছে। সে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য। এখানে পুরো বসন্ত জুড়ে মেলা চলছে। ফুলের মেলা। তবে বাচ্চাদের জন্যে খেলাধুলার বহু ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। পাহাড়ে ওঠা,রোপওয়েতে ঝুলে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া,বিশাল বিশাল বাতাশভর্তি রাবারের ঘরবাড়ি,বাঘ ভাল্লুক বানানো হয়েছে যার ভেতর শিশুরা লাফালাফি করছে। কোথাও ঝুল খাওয়া,চক্রাকারে ঘুরতে থাকা সুন্দর ছোট ছোট বামন জাতের ঘোড়ার পিঠে শিশুরা মজা করে চড়ছে। অন্তত ৭/৮টি ঘোড়া চক্রাকারে ঘুরছে। গরুর অকৃতিতে তৈরী ছোট ছোট বগির লম্বা গাড়িতে বাচ্চারা চড়ছে। আরও কত কি যে তামাশা !
আমি ফুলের ক্ষেতের দিকে এগিয়ে গেলাম। সত্যি অসাধারন ! ফুলের সমারোহ। মিলিয়ন মিলিয়ন ফুল। আমাকে রং বলতে বললে কিছুতেই পারব না। কারন আমার জানার বাইরেও অনেক রং রয়েছে এবং সেসব রঙের টিউলিপ ফুটে রয়েছে বিশাল বিশাল লাইন ধরে। কোনো কোনো টিউলিপ আবার অনেক রঙের সমাহারে ফুটে আছে। আমি হাটতেই থাকলাম। কিন্তু পুরো ক্ষেত হেটে দেখা অসম্ভব ব্যাপার। চোখে পড়ার মত ব্যাপার হল বহু সংখ্যক মুসলিম নারী,পুরুষ দেখলাম,পরিবার দেখলাম,যা সচরাচর দেখা যায়না।
ফুল বিক্রীর জন্যে অনেকগুলো আউটলেট আছে। এছাড়া অনলাইনে অর্ডর করা যায় আবার ওরেগনে অনেক স্থানে এদের ফুল বিক্রী হয়। ভাবছিলাম এত বিশাল বাগান,দাম নিশ্চয় কম হবে। কিন্তু না সর্বনীম্ন ৮ ডলার থেকে ৪০ ডলার পর্যন্ত দাম। বিভিন্নভাবে তোড়া বানিয়ে এরা বিক্রী করছে। ছোটছোট টবসহও বিক্রী করছে। আর মেলা উপলক্ষে অন্তত ১০টা খাবারের দোকান আছে কিন্তু খাইনি। কারন ভিন্ন।
এরা অনেক পূর্ব থেকেই কৃষক। দেখলাম ৪টি স্টিম ইঘ্জিন চালিত ট্রাকটর রয়েছে যা তৈরী হয়েছিলো ১৭৬১ সালে। প্রদর্শনীর জন্যে সেগুলো সচল অবস্থায় রাখা হয়েছে। এগুলো দিয়ে এখনও চাষ করা যাবে। বিশাল আকৃতির ট্রাকটর। পুরোটাই লোহার তৈরী।
এক অসাধারন স্থান ভ্রমন করলাম। আমার জীবনে এটাই প্রথম। মন ফুরফুরে হয়ে গেল। তারপরও কি যেন হয়নি,কি যেন লাগবে বা লেগেছে মনে হল। হঠাৎ মনে পড়ল,আরে আমার তো খাওয়া হয়নি....তবে ক্ষুধাই লেগেছে ! দিলাম দৌড় ৬০ কি:মি: দূরের পোর্টল্যান্ডে। উদ্দেশ্য ফুটপাথে খাওয়া। ডাউনটাউনের ফুডকার্টে মিশরীয় জিরো বা জাইরো নামক খাবার আমার দারুন পছন্দ। একটা বড় নান রুটির ভেতর ভেড়ার গোস্ত আর সালাদ দিয়ে মুড়ে দেয় খিলি পানের মত। কিন্তু গিয়ে দেখলাম মিশরীয় দোকান বন্ধ। তখন ইরানী দোকানে অর্ডার করলাম। যদিও স্বাদ মিশরীয়টার মত নয় তবুও ২ খিলি টানলাম। আরেক রকম খেলাম বড় পরোটায় পেচানো ভেড়ার গোস্ত। পরোটাটা পেচিয়ে অন্তত এক ফুট লম্বা করা হয়েছে। পেটে ক্ষুধা থাকলে টেনে মজা আছে।
পোর্টল্যান্ডে আসলে এশিয়ান স্টোর থেকে জ্যান্ত তেলাপিয়া আর লাউ না কিনে বাসায় ফেরা লোক আমি না। পোর্টল্যান্ডের কাছেই একটা শপিংমলে ঢুকে হাটাহাটি করলাম। ইলেকট্রনিক পণ্য সামগ্রী দেখলাম। এসব দেখতে বেশ মজা লাগে। না কিনলেও দামটা চেক করি। বলা যায় এটা আমার বাতিক।
যাইহো দিনটা বেশ কাটালাম। এখন লাউ দিয়ে ভাত খেয়ে পড়ে আছি। বেশ ভালোই লাগছে।
বিষয়: বিবিধ
২১০১ বার পঠিত, ৬৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসম্ভব সুন্দর।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, আসলে ভ্রমনে জ্ঞান বাড়ে এটাই বাস্তবতা।
জ্যান্ত তেলাপিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে৷ ওর গতি কবে হবে?
ধন্যবাদ খাদক ভাইয়া ।
স্টিকি পোষ্টে অভিনন্দন বিশ্ব খাদক
আমি সব খাই চপচপ....
বাসের ড্রাইভারের ঘুম না ভাংগলে ঝুলে ই থাকতে হবে
ড্রাইভিং সীটে ....
সন্ধাকে নিয়োগ করা আছে
আপনাকে জাগিয়ে দিতে
আমিতো প্রথমে ভাবছিলাম,
খাওয়া বন্ধ কেন??
পেট কি ডাইরেক হয়ে গেলো নাকি?
একটু পরে ই বুঝলাম, আরে নাহ,
যেই লাউ, সেই কদু
পেটে ক্ষুধা থাকলে টেনে মজা আছে।
পড়ে তো মনে হল সাথেই ছিলাম।
তবে তাদের চোখজোড়ানো সমৃদ্ধি দেখে এই হাদিসটা মনে পরে গেল। রাসূল(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ ইরাক-সিরিয়ার মাঝ থেকে এক অতিপ্রাকৃত শক্তিমান ব্যক্তি বের হবে এবং ডানে-বামে বিশৃংক্ষলা সৃষ্টি করবে। তার গতি হবে বাতাসে ভেসে চলা মেঘের ন্যায়। সে এক সম্প্রদায়কে তার দিকে আহবান করবে এবং সে সম্প্রদায় তার প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করবে, তার নেতৃত্ব মেনে নেবে। খুশি হয়ে এই ব্যক্তি আকাশকে নির্দেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণ করতে এবং ভূমিকে হুকুম দিবে অধিক পরিমাণে শস্য-ফলাদি উৎপাদন করতে। তাদের গবাদিপশুগুলি অধিক হ্রষ্টপুষ্ট হয়ে উঠবে এবং অধিকহারে দুধ উৎপাদন করবে। সুখ-সমৃদ্ধি তাদের মাঝে নেমে আসবে। ( ( মুসলিম, অধ্যায় ৫৪/ফিৎনা ও কিয়ামতের আলামত, হাদিস নং: ৭১০৬, ইফাবা)
ষ্টিকি পোষ্টে অনেক অনেক অভিনন্দন।
আপনার লেখা পড়ে আমারও ভালো লেগেছে তবে লাউ দিয়ে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়বো না। লাউ মাত্র কিনে আনলাম এখনো রান্না হয়নি।
২১ এপ্রিল এর মধ্য দরকার
আর সাথে অনেক পুরুনো ব্লগার উঁকি মারা ফ্রি তে পেলাম।
সব মিলে অনেক ভাল্লাগ্ল।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
সুবহান আল্লাহ! আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুন্যতার বিশালতা শুধু মনোমুগ্ধকর ই নয় বরং কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁকে আত্ন- সমর্পনের ও কারণ !
জাযাকাল্লাহু খাইর। অভিনন্দন স্টিকিতে
দারুণ উপভোগ্য! হয়তো সেটা আপনার বর্ণনা করার কারিশমা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন