হাই ডেজার্ট মিউজিয়াম বরাবর

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:১৯:৪১ রাত

এপ্রিল ৩,২০১৬,রবীবার।

সুন্দর সটি বেন্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আজ সূর্যমামা বেশ ঝমকাচ্ছে। ব্যাগ হাতড়ে সানগ্লাসটা পেলাম না। ভ্রমনের সাথী আমার ব্যাগপ্যাকটা। নানান জিনিস থাকে এর ভেতর,বেশীরভাগ যে খাবার,তা তো বলাই বাহুল্য। লেবাননের ডলার ট্রি নামক স্টোরে আসলাম। এখানে জিনিসপত্রের দাম নিনামবালার মত ৬ আনা না হলেও একই কায়দায় ১ ডলার। যা নেবে তাই ১ ডলার। এর ভেতর নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু জিনিস রয়েছে এবং মানও খারাপ নয়। অনেক জিনিসের দাম বাংলাদেশের চেয়েও কম। যাইহোক আমি ১ ডলারে একটি সানগ্লাস কিনলাম,আজকে চললেই হয়। যদিও এরকম সানগ্লাস সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মী ঠেকাতে পারেনা কিন্তু কিছুটা ঝাঝমুক্ত করে। শেল কোম্পানীর তেল ভরলাম গাড়িতে,খানিক দূর গিয়ে দেখী অন্য প্রায় সকলেই প্রতি গ্যালনে ১০/১২ সেন্ট কমিয়ে বিক্রী করছে। লেবাননের মত একটি ছোট্ট এলাকায় অন্তত ১০টি তেলের পাম্প। এর ভেতর শেল এবং শেভরন সবচেয়ে বেশী দাম রাখে। কেন তা জানিনা, যদিও এরা বিশাল কোম্পানী এবং সরাসরি তেলের খনির চুক্তিভিত্তিক মালিক। আন্তর্জাতিক বাজারে এরা দৈত্য দানবের মত আচরনের সহিত ব্যবসা করে। এদের থেকে ডিলাররা তেল কিনে কমে বিক্রী করলেও এরা সস্তায় বিক্রী করেনা। আজব !!





সুইটহোমের এই হাইওয়ে ২০ আমার ব্যপক পছন্দ। এ এক অসম্ভব সুন্দর রাস্তা। এদিকটাতে কতগুলো যে সুন্দর সুন্দর স্পট আছে দেখার জন্যে তার গোনা গুনতি নেই। বলা যায় প্রত্যেকটা স্থানই চরম দর্শনীয়। যারা প্রকৃতি প্রেমী তাদের জন্যে উৎকৃষ্ট। খানিকপর পাহাড়ী আকাবাকা রাস্তায় চলে আসলাম। রাস্তার ডানে এক অসাধারন চমৎকার দৃশ্য দেখলাম। পাহাড়ী ঢালে ছোটবড় বৃক্ষ আর সেসব বৃক্ষের গায়ে সবুজ শ্যাওলা বা মস। মনে হল প্রাগৈতিহাসিক যুগে চলে এসেছি। প্রাচীন বনের ভেতর দিয়ে গমন করছি। সূর্যের আলো সবুজ শ্যাওলাকে খানিকটা উজ্জ্বল করে দিয়েছে। শান্ত সুনবিড় মসৃন পথ। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়ার বংশ তেমন চোখে পড়েনা। এ অংশে দুপাশে মাত্র দুটি লেন। স্থানে স্থানে পাসিং জোন আছে,যেখানে একটি গাড়ি অপরটিকে অতিক্রম করতে পারে। পেছনে কখনও কোনো গাড়ি দেখলে আমি ডানে থামিয়ে তাকে আগে যেতে দেই,যাতে তাকে পেছনে না থাকতে হয় এবং প্রকৃতি দর্শনে ব্যাঘাত না ঘটে। এটা অবশ্য সবাই করে। সিঙ্গেল লেইনে চলার সময় পেছনের গাড়িকে একটু দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করতে দেখলে সকলে তাকে আগে যেতে দেয়,এটাই ভদ্রতা।



ক্যাসকেডিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় আরও দারুন লাগল। রাস্তা কোথাও বেশ সোজা আবার কোথাও ঘুরপ্যাচ। এখানে একটি পাহাড়ী নদী আছে অসম্ভব সুন্দর। নদীর একটি পয়েন্টে রাস্তা বরাবর বিশাল কাঠের গুড়ি দিয়ে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। এখানে অগেও ২বার এসেছি। কিন্তু এর উপর দাড়িয়ে সামনে তাকালে যে কোনো লোক সুন্দর অনুভূতিতে ভুগবে। নীচে স্রোতস্বীনি নদী। সামনে পেছনে সুন্দর পাহাড়। বিশালসব গাছপালা। চারিদিক সবুজ শ্যাওলার কারুকাজ। এদিকটাতে মানুষ ক্যাম্পিংয়ে আসে। অনেকে আরভি বা গাড়ির সাথে সেট করা আধুনিক থাকার ঘর নিয়ে আসে। এর ভেতর সবকিছু আছে। তারা কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ এখানে থাকে। নানানভাবে জীবন উপভোগ করে। বেশীরভাগ অবসরপ্রাপ্ত মানুষ একাজটি করে থাকে।

চলতে শুরু করলাম। ওদিকে কফিসহ নানানসব খাদ্য খাবার খাওয়া চলছে। এটা বসন্তের শুরু,এদিকটাতে তুষারপাত হয়। কিন্তু সব বরফ গলে গেছে। এখন শুধু পাহাড়ের মাথায় সেগুলো রয়েছে। একটি লেক দেখলাম পুরোটাই যা বরফ হয়ে গিয়েছিলো,তার মাঝ বরাবর বরফ গলে পানি দেখা যাচ্ছে। তুষারপাত হলে বিশেষ গাড়ি দিয়েতা সরিয়ে রাস্তার দুপাশে জমা করা হয়। তখন সেগুলো একেবারে বিশাল দেওয়ালের আকার ধারন করে। এটা ১২ফুট উচ্চতায় অবস্থান করে। রাস্তায় চলার সুবিধার্তে ঝকমকে রঙের বিশেষ খুটি পোতা থাকে যাতে মানুষ রাস্তা ভুল না করে। একস্থানে দেখলাম ব্লু লেক,সত্যিই ব্লু। এটা ছিলো তুষারমুক্ত। আকাশে সূর্য ঝলমল করছে আর চারিদিকের পাহাড় জুড়ে সাদা বরফ,এ দৃশ্য সত্যিই উপভোগ্য। আল্লাহ আমাকে এ সুন্দর দৃশ্য উপভোগের সুযোগ দিয়েছেন,আলহামদুলিল্লাহ।





চলে আসলাম থ্রি ফিঙ্গার জ্যাক নামক উচু পাহাড় ছাড়িয়ে হুডু মাউন্টেন এরিয়ায়। এখানে না থেমে উপায় নেই। এটা হল প্রসিদ্ধ স্কি জোন। আশপাশের বেশ কয়েকটি পাহাড়ে স্কি করা হয়। আমেরিকানদের এটা সবচেয়ে মজার খেলার একটি। আমার মতে আসলেই এটি একটি মজা। ছোটবেলায় বৃষ্টির মধ্যে পিছলা মাটির উপর পিছলা-পিছলি খেলতাম। সেটা ছিলো সবথেকে মজার একটি ব্যাপার। বরফের উপর স্কি ব্যাপারটাও এরকম।

এখানে কয়েকটা পাহাড়ের মিলন হয়েছে বরফের মাধ্যমে। বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে পাহাড়ের চুড়া পর্যন্ত গিয়ে তুষার সমান করা হয় এবং স্কির উপযোগী করা হয়। পাহাড়গুলোর মাথা পর্যন্ত কেবল কার চলাচল করে। প্রতিদিন মাথাপিছু ৪৮ ডলারের টিকেট রয়েছে। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কি করা যায় যত খুশী। বিশেষ পোষাক পরে কেবল কারে করে পাহাড়ে মাথায় গিয়ে নামতে হয়,তারপর দ্রুত গতিতে একে বেকে নীচে নেমে আসা। দেখতেও মজা লাগে। বাচ্চাদের জন্যে কম ঢালু একটি স্থানে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে তাদেরকে স্কী শেখানোও হয়। আমার হাউসমেট জিম একজন সুদক্ষ স্কীয়ার। পেশায় কেমিস্ট কিন্তু নানান কাজে পটু। এ পাহাড়ে সে বহুবার স্কী করেছে।

এখানে একটি লজ রয়েছে। যারা সারাদিনের জন্যে স্কী করতে আসে,তারা এখানে সুন্দর একটা সময় কাটায়। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। বিশাল লজটি অনেক পয়সা খরচ করে বানানো হয়েছে বোঝা যায়। আধুনিক সকল সরঞ্জামই আছে এখানে। আমি বরফের উপর খানিক হাটাহাটি করলাম,বেশ মজা।

আবারও চলতে শুরু করলাম। রাস্তা সিঙ্গেল লেইন থেকে পাবল হল। এখানে একটা পয়েন্ট থেকে রাস্তা অনেক মাইল পর্যন্ত ঢালু। বেশ মজা পেলাম। চলে আসলাম থ্রি সিস্টার্স পাহাড় ছাড়িয়ে সিস্টার্স সিটিতে। এটা ছোট্ট ও প্রাচীন শহর। দেখতে খুব দারুন। আমেরিকানরা কাঠের ব্যবহার করে তাদের বাড়ি ঘরে,এটা খুব দারুন লাগে। এখানে খানিক হাটলাম। বিখ্যাত এক বেকারী থেকে কিছু কিনলাম। আবার যাত্রা। এবার আসলাম সিস্টার্স থেকে ২২ মাইল দূরের বেন্ড সিটিতে। এটা বেশ সমৃদ্ধ নগরী। এখানে ধনীদের অনেক বাগানবাড়ি,ফার্ম হাউস রয়েছে। বহু লোক শখ করে ঘোড়া পালন করে। রয়েছে গর্লফ ক্লাব। আরও নানান সব মজার ব্যবস্থা। আমি গেলাম ফাইভ গাইস নামক রেস্টুরেন্টে এটা সেটা খেয়ে মজা নিলাম। আমার মজা ওই একটাই।

বেন্ড এমন একটি স্থান যেখানে বছরের বেশীরভাগ দিনই সূয্যের আলো থাকে। এর অনতিদূরেই আছে মরুভূমী। এটি সমুদ্র সমতলের থেকে অনেক উপরে অবস্থিত। এবার অনতিদূরের হাই ডেজার্ট মিউজিয়াম বরাবর যাত্রা করলাম। এটা একটা সুন্দর স্থানে সুন্দর করে সাজানো মিউজিয়াম। যেখানে মরুভূমির জীবন ও জীব বৈচিত্র নিয়ে সবকিছু সাজানো হয়েছে।









১২ ডলারে টিকেট কেটে প্রবেশ করলাম। ভেতরে ঢুকে মনে হল পয়সা উসুল। কারন ভেতরে কিছু প্রাচীন জিনিস পত্র আছে,এটাই আমার ভালো লাগে। শুরুতে দেখলাম ব্রিটিশরা যখন এখানে এসেছিলো কোথায় কিভাবে তারা বাস করত,তাদের নানান সরঞ্জামসমূহ। ইন্ডিয়ানরা কিভাবে বাস করত,তাদের নানান জিনিসপত্র। সোনার খনি থেকে যেসব যন্ত্র দিয়ে কাজ করা হত সেসব যন্ত্রপাতি। শত বছর পূর্বের শহর তৈরী করা হয়েছে ভেতরে। খুব ভালো লাগল দেখে।

মরুভূমীর কিছু প্রানীও রয়েছে। সজারু এবং ছোট বাঘ দেখলাম। অনেক পাখী ও প্রানীর রেপ্লীকা রয়েছে। আদী আমেরিকান বা এদের ভাষায় ইন্ডিয়ানদের জীবনধারা নিয়ে নানান বিষয় রয়েছে। ভালো লাগল। মরুভূমির সবথেকে বিষাক্ত সাপ হল রাটল স্নেক। কাছ থেকে দেখলাম ভয়াবহ বিষাক্ত সাপটাকে। এর বিষ শরীরে প্রবেষের কিছুক্ষনের ভেতর মৃত্যু হতে পারে। আবার এটা শরীরে পচন ধরায় তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা না নিলে। বিকেল হয়ে আসছে। এবার ফেরার পালা।

আসার পথে ভাবছিলাম সেলাম সিটি হয়ে যাব কিনা,কারন সেখানে দুটো হালাল রেস্টুরেন্ট আছে ,কিন্তু সময় বেশী লাগবে ভেবে আবারও সুইটহোমের রাস্তা ধরে ফিরলাম। মোট ৪০০কি:মি:এরও বেশী ভ্রমন হল। তবে খুব মজা পেলুম। ৃ

বিষয়: বিবিধ

১১৯৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364774
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৪:২৩
আকবার১ লিখেছেন : সুন্দর বর্ননা,চালিয়ে যান। সাথে আছি।
০৭ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:০৩
302692
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ চালাচ্ছি Happy
364775
০৬ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৫:২৮
শেখের পোলা লিখেছেন : বাঃ বেশ বেশ৷ পোলায় দেখি খাওয়া আর ঘোরা ছাড়া আর কিছু চায়না৷ আমার লাভ সুন্দর ছবি আর তার গপ্প৷ ধন্যবাদ৷
০৭ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:০৩
302693
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি চাচা এই পুলা একটু বাউন্ডুলে টাইপের। পুটির মা হলে ঠিক হয়ে যাবে...Rolling on the Floor Rolling on the Floor
364784
০৬ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৬:৩১
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : একদিনেই ৪০০ কিলোমিটার! অভাবনীয়।
০৭ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:০৫
302694
দ্য স্লেভ লিখেছেন : কি কন ভাই এর অাগে তো একদিনে ১১০০ কি:মি: ভ্রমন করেছিলাম। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত। এর ভেতর কত কিছু করলাম...। সেটা ছিলো সিয়াটল ভ্রমন। এবারকারটায় পাহাড়ী আকাবাকা রাস্তা থাকায় বেশী দূর যাওয়া যায়নি।
364801
০৬ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:২০
নকীব কম্পিউটার লিখেছেন : ভ্রমণ পিপাসু বাংলার শেখ সাদী।
০৭ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:০৫
302695
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাহাহাহা অঅমি তো জানতাম ইবনে বতুতা Rolling on the Floor Rolling on the Floor
364809
০৬ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০১:১৪
আফরা লিখেছেন : আমি ও ঘুড়ে আসলাম সূর্যের সংসার । সেটা নিয়ে লিখব কিন্তু সময় পাচ্ছি না । ধন্যবাদ ।
০৭ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:০৬
302696
দ্য স্লেভ লিখেছেন : লিখে ফেলেন তারার জগত,সূর্যের সংসার,চাদের আলো নিয়ে.....জাতি অপেক্ষায় থাকবে....
364861
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১১:৩৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam little brother. Beautiful travelling experience!! Jajakallahu khair.
০৭ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:০৮
302697
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস সালাম। সিস্টার আপনাকে ধন্যবাদ। বিয়েতে কিন্তু আপনি থাকছেন ব্যটেলিয়ান সহ। কথা ফাইনাল। তখন দেখাবো আমি কেমন খাই।
365644
১৩ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৫
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : চমতকার ভ্রমন কাহিনী
চালিয়ে যান
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৪ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:০৬
303400
দ্য স্লেভ লিখেছেন : পড়ার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File