আত্মীয়তা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৬ মার্চ, ২০১৬, ১১:৩০:৩৯ রাত
আত্মীয় এমন একটি সম্পর্কের নাম যা ইচ্ছা করলেই মোছা যায় না,অস্বীকার করা যায় না তবে সম্পর্ককে মলিন করা যায়। আপনি বিপদে পড়লে তারা আপনার পাশে থাকার চেষ্টা করে,যদিও সম্পর্ক খারাপ থাকুক না কেন। সম্পর্ক খারাপ থাকলে তারা বিরক্তি নিয়ে পাশে থাকে,আর সম্পর্ক ভালো থাকলে তারা খুশীমনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়,আত্মত্যাগ করে। কখনও অন্য আত্মীয়ের সমালোচনার ভয়েও সাহায্যের হাত বাড়ায়। আর আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে সত্যিই তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে পাশে থাকে। আত্মীয়তার সম্পর্ক সুন্দর না থাকলে ব্যক্তি বন্ধুকে পাওয়া সত্ত্বেও বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করে। দূর্দিনে সঙ্গীহারা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-"আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"
নিজেকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হিসেবে তৈরী করতে হলে সবসময় একধাপ সামনে এসে চিন্তা করতে হয় এবং আচরন করতে হয় ।নিজে এগিয়ে এসে আত্মীয়দের খবর নিতে হয়। তাদের সমস্যাসমূহ সম্পর্কে খবরাখবর নিতে হয়। অপ্রতুল হলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। তাদের সাথে সুআচরণ করতে হয়। বিনিময়ে তারাও একই আচরণ করে। অপরিচিত মানুষের সাথে যে পরিমান সুআচরণ করে তার মন পাওয়া যায়,আত্মীয়দেরকে তার থেকে অনেক কম সার্ভিস দিয়ে তাদের অন্তর জয় করা সম্ভব,কারন তারা আত্মীয়। আত্মীয়রা বিশ্বাস করে যে,আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হয়। কিন্তু নানান প্রতিকূলতা,যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারনে অনেক সময় কারো কারো পক্ষে খোজ খবর করা সম্ভব হয়না। কিন্তু মন চায় সম্পর্ক তৈরী করতে। কিন্তু একটা বাধা কাজ করে। কখনও লজ্জাবোধ কাজ করে। তাই সেই উত্তম,যে আগে এগিয়ে এসে সম্পর্ক সুন্দর করে। অার এই কাজটি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে হয়,তবে এই লোকটির মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক উপরে। এটি একটি ফরজ ইবাদত,যা আমরা বুঝিনা।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা যেমন জাহান্নামের কারন,তেমনিভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করাও জান্নাতে যাওয়ার কারন। পিতা-মাতার সাথে সু-আচরনের পরেই নিকট আত্মীয়দের হক আদায় করা জরুরী। আমরা সদাকাহ এর অর্থও জানিনা। মনে করি কেবল গরিব,মিসকিনদের দান করলেই সেটাকে সদাকাহ বলে। আমরা মনে করি আমাদের উপার্জিত অর্থ পিতা-মাতা,ভাই-বোন,সন্তানদের পেছনে খরচ করলে সাদাকাহ হয়না। কিন্তু উপার্জিত হালাল অর্থ নিজ পরিবারে খরচ করলেও সেটি উত্তম সদাকাহ। আর অসহায় বিধবা,মিসকিন,ইয়াতিমদেরকে দেখাশুনা করলে তা হবে জান্নাতুল ফিরদাউস পাওয়ার উপায়। নীচে কিছু আয়াত ও সহি হাদীস পেশ করা হল অনুধাবনের জন্যে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার তাওফিক দান করুন,আশপাশের অসহায় মানুষদেরকে সহায়তা করার তাওফিক দান করুন !
" লোকে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) তারা কী ব্যয় করবে? আপনি বলে দিন, তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য হওয়া চাই।"
-সূরা বাকারা (২) : ২১৫
(বরং পূণ্য এই যে,) নিজ সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির ও সওয়ালকারীদের দান করবে।"
-সূরা বাকারা (২) : ১৭৭
আল্লাহ তাআলা জান্নাতীদের প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করে বলেন,"
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাবার দান করে। (এবং তাদেরকে বলে,) আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আমরা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।"
-সূরা দাহর (৯৮) : ৮-৯
ইয়াতীম, মিসকীন ও বিধবাদের প্রয়োজন পূরণে সহযোগিতা করা হাদীসের ভাষায় জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ এবং দিনের বেলায় রোযা রাখা ও রাত্রিবেলায় নফল নামায আদায়ের সমতুল্য।
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি স্বামীহীন নারী ও মিসকীনদের সহযোগিতার জন্য পরিশ্রম করে সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো এবং সেই ব্যক্তির সমতুল্য যে দিনের বেলায় রোযা রাখে এবং রাত্রিবেলায় নফল নামায আদায় করে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৫৩, ৬০০৬-৭
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় রয়েছে, যে নিরবচ্ছিন্ন রোযা রাখে এবং নিরলস নফল নামায পড়ে তার সমতুল্য।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৯৮২
হযরত সাহল ইবনে সা’দ হতে বর্ণিত অন্য এক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি এবং ইয়াতীমের ভরণপোষণকারী জান্নাতে এভাবেই থাকব। এ কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলী একত্র করে ইঙ্গিত করলেন।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬০০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৯৮৩
বিষয়: বিবিধ
১৪১০ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান রব আমাদের সকলেই ইয়াতীম, মিসকীন ও বিধবাসহ সকলের খেদমত করার তৌফিক দান করুণ। আমীন।
লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
এটি মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদীস। তাই "রাসূল সাঃ বলেছেন" হবে।
আসলে এমনই হয়। জাযাকাল্লাহু খাইর। খুব প্রয়োজনীয় একটা বিষয়ে লিখেছেন।
মূল বক্তব্যের সাথে পোস্টের ছবির সংযোগ কি বুঝতে পারলাম না, তবে জাতী জানতে চায়.......
আল্লাহ আমাদরর নেক কাজে অগ্রগামী করে তুলুন। আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন