সম্পত্তিতে নারী অধিকার 2:1 কতটুকু যৌক্তিক ?
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৬ মার্চ, ২০১৬, ০১:১৫:১৬ দুপুর
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(অধ্যাপক হাদীস বিভাব কুষ্টিয়া ইসলামি বি:বিদ্যালয়)
(শেষ পর্ব ) আমরা আগেই বলেছি, শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকতে নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করা হয় নি। বরং নিজের বেঁচে থাকা ও অধিকার বুঝে নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমৃদ্ধ পৃথিবীর জন্য তৈরি করা মানুষের অন্যতম দায়িত্ব। আর এ দায়িত্বের জন্যই নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দিয়েছে প্রকৃতি। মনোবিজ্ঞানিগণ একমত যে, জন্মের পর থেকে বয়প্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত শিশু ও কিশোরদেরকে পিতামাতার স্নেহ ও যত্নের মধ্যে লালন করা তার স্বাভাবিক মানসিক ভারসম্য ও মানবীয় মূল্যবোধের বিকাশের জন্য জরুরী। যত প্রাচুর্য ও আয়েসের মধ্যেই লালন করা হোক, যদি শিশু ও কিশোর পিতামাতার স্নেহ ও যত্ন থেকে বঞ্চিত হয় তবে তার মধ্যে হিংস্রতা ও ভারসম্যহীন মানসিকতা গড়ে উঠবেই। এজন্য পিতা ও মাতা উভয়কে অথবা একজননেক শিশু-কিশোর সন্তানের জন্য বিশেষভাবে সময় ব্যয় করতে হবে। প্রকৃতি এজন্য মাতাকেই নির্বাচন করেছে। সমান অধিকার প্রদান করে যদি সমান দায়িত্ব না দেওয়া হয় তবে যাকে অধিক দায়িত্ব প্রদান করা হবে তার উপর জুলুম করা হবে। আর সমান অধিকারের নামে পিতা ও মাতা উভয়কেই সমান অর্থনৈতিক দায়িত্ব প্রদান করলে উভয়কেই সন্তানের জন্য উপার্জন করতে হবে এবং কেউই সন্তানের জন্য বিশেষ সুবিধা পাবেন না। এ জন্য পাশ্চাত্য সমাজে মায়েরা সন্তান ধারণ করতে মোটেও আগ্রহী হন না। পিতামাতা উভয়ের ব্যস্ততা বা দেখাশোনার অভাবে আমাদের দেশে উঠতি বয়সের অগণিত মেধাবী ছেলেমেয়ে মাদকাসক্ত বা অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষার জন্য ইসলামে নারীকে এক্ষেত্রে বিশেষ অধিকার ও সুযোগ প্রদান করেছে। বর্তমান যুগে মায়েরা শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান করান না। এর একটি কারণ হলো আধুনিক ভোগবাদী সভ্যতার প্রভাবে “সৌন্দর্য” রক্ষা ও বিলাসিতার মানসিকতা। এর চেয়েও বড় কারণ হলো বৈষম্য দূর করার নামে নারীদেরকে নারী প্রকৃতি বিরোধী পুরুষালি কর্ম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে সন—ানের বুকের দুধ পান করানোর মনোদৈহিক প্রস্তুতি থাকে না। মনও অপ্রস্তুত, দেহও অপ্রস্তুত। দুধ নেই। সর্বোপরি কর্মব্যস্ততার কারণে সময় নেই। ফলে বাধ্য হয়ে পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে বিকল্প গুড়া দুধের উপর নির্ভর করতে হয়। যা শিশুদের মনোদৈহিক বিকাশের জন্য ও সুস্থতার জন্য মারাত্মক হুমকি বলে স্বীকৃত।
মনে করুন একজন পিতা ১০ লক্ষ টাকার সম্পদ এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্য রেখে গেলেন। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পুত্র সাড়ে ৬ লাখ টাকা ও কন্যা সাড়ে তিন লাখ টাকার সম্পদ লাভ করবে। বিবাহের সময় পুত্র আনুমানিক এক লক্ষ টাকা মোহর তার স্ত্রীকে দিবে এবং কন্যা ১ লক্ষ টাকা তার স্বামী থেকে মহর হিসেবে লাভ করবে। ফলে পুত্রের সাড়ে ৫ লাখ ও কন্যার সাড়ে ৪ লাখ টাকার সম্পদ থাকবে। একটি ছোট্ট পরিবারের স্বাভাবিক ব্যবয়ভার মাসিক ৫ হাজার টাকা হলে পুত্রকে তার সাড়ে ৫ লাখ টাকা থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। পক্ষান্তরে কন্যাকে একটি পয়সাও খরচ করতে হবে না; কারণ ইসলামী ব্যবস্থায় স্ত্রী ও সন্তানদের যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব স্বামীর। কখনো বিধবা বা পরিত্যাক্তা হলে নারীকে শুধু তার নিজের ব্যয়ভার বহন করতে হবে, তার সন্তানদের খরচের দায়িত্ব স্বামীর পরিবার বা রাষ্ট্রের। এভাবে আমরা দেখছি যে, ইসলামে নারীকে পুরুষের প্রায় সমান অর্থনৈতিক অধিকার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সকল অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেবে মুক্ত রাখা হয়েছে। এভাবে পারিবারিক অর্থ ব্যবস্থায় নারীকে বিশেষ অধিকার ও অতিরিক্ত সুযোগ (privilage) প্রদান করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য যেন নারী সকল অর্থনৈতিক দায়ভার থেকে মুক্ত রেখে পরিবার ও সন্তানদের দুনিয়া ও আখিরাতের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেন। কিন্তু যদি কোনো নারী যদি ইসলামের দেওয়া সুবিধাদি গ্রহণ করেন, নিজের ও পরিবারের সকল খরচপত্র স্বামী থেকে আদায় করেন, কিন্তু নিজে পরিবার ও সন্তানদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত না করে নিজের উচ্ছলতা, স্বাধীনতা ইত্যাদির নামে চাকরী, সমাজ, গল্প ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তবে তা নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর খিয়ানত বলে গণ্য, যেজন্য তাকে দুনিয়ার জীবনের ও আখিরাতে আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্ম, চাকরী ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন, সঞ্চয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের সমান অধিকার প্রদান করা হয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধু নারী হওয়ার কারণে তার প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য করা হয় নি বা কোনো কর্ম, চাকরী, ব্যবসা তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয় নি। ইসলামের বিধানের মধ্যে থেকে নারী প্রকৃতির সাথে সুসমঞ্জস যে কোনো কর্ম তারা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রের অধিকার ও সুযোগের সাম্য নিশ্চিত করা হলেও দায়িত্বের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অধিকার বা privilage প্রদান করা হয়েছে। পরিবার ও মানব সভ্যতার প্রতি নারীর প্রাকৃতিক দায়িত্ব পালনের সাথে সঙ্গতি রক্ষার জন্য নারীকে পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত করা হয়েছে এবং তার সকল প্রয়োজন মেটাতে তার স্বামীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য পরিবারের প্রয়োজন ছাড়া চাকরী বা কর্ম করার অর্থ হলো সন্তান ও পরিবারের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা ত্র“টি করা। -------খতবাতুল ইসলাম
বিষয়: বিবিধ
১২০৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সংসারে ব্যয় করতে করতে প্রায় ধার দেনাগ্রস্থ হয়ে যাওয়া পুরুষের দান খয়রাত করার কোনই সুযোগ নেই । ফলে সওয়াবও কামাই হয় না ।
নেকি অর্জনের ক্ষেত্রে কি পুরুষেরা এখানে পিছিয়ে নেই?
আলোচনা ভালই লাগছিল কিন্তুু আগে পরে মিস কর লে যা হয় আর কি
গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন