স্বপ্নের কাছে ফেরা !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১১:৫০:৪০ সকাল
আমার পুটির মা সোনামনিটা কি করছে গো ? ...ওগো, কেমন আছো গো ? কি হল কোথায় গেলে গো......ওগো...
: বদের বদ....উল্লুকের হাড্ডি ...
:এই কি কও ..মাথা ঠিক আছে ??
:গরুর শিং, ভেড়ার লোম...বান্দরের লেজ....
:এই এসব কি কথা গো...
:ইশরে...এসব কি কথা মানে!!....গতকাল আমি এতবার নক করলাম ছিলে কোন চুলায় ??
: ও তাই বলো,রাগ করেছো...তা থাকব আর কোন চুলায়,আমার চুলা তো একটাই...
:তার মানে....আমি চুলা...??
:ওরে না তুমি নও চুলা,আমার আলাভোলা,,,,আমার পদ্মলোচন,আমার রাধা,..আমার শিরি....বুড়োর বিড়ি....
:এই ফাইজলামী করবা না কিন্তু...হামান দিস্তায় ছ্যাচা দেব বলে দিলাম.. ..
: ওরে না, মানে চুলায় তরকারী...রান্না করছি এই আর কি.....তোমাকে না বললাম- গতকাল ট্যাক্স রিটার্ণ নিয়ে একটু ঝামেলা আছে,তাই দূরে যেতে হবে ট্যাক্স অফিসারের কাছে। ...
: করো রান্নাই করো, সারা জীবন রান্না করেই কাটাও। অফিস আদালত না করে একটা রেস্টুরেন্ট খুলে বসলেই পারো। রাস্তার পাশে চুলায় রান্না বান্না করবে মানুষকে অখাদ্য খাইয়ে জেলে যাবে...তারপর রান্না ছাড়াই আরামে খেয়ে পরে জীবন পার করবে....
: ওরে আমার ময়না পাখি,কবুতরের ডিম,,,শখ কত !! তোমাকে আমি আরামে রেখে জেলে গিয়ে খানাপিনা করব,,,এত সোজা নাগো !! এ সুখ তোমার কপালে নেই।
:কেন তুমি কি করবা আমাকে নিয়ে...
:কিচ্ছু না, এই ধরো প্রতিদিন একবার পিঠটা একটু চুলকে দিবা, মজার মজার খাবার বানাবা আর মিস্টি...ওহ তুমি তো আবার মিস্টি বানাও ভারী সুন্দর...ওরে মনাপাখি....মিস্টি খেয়ে আমি চিৎ হয়ে শুয়ে থাকব গো........তখন তুমি আমার পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিবা....
:কেন ?
:ওরে গলা পর্যন্ত ...না মানে মাথা পর্যন্ত খেলে কি ওঠা যায় নাকি .....আর চিৎ হলে পড়ে থাকলে পাশে সুড়সড়ি দিলে ভারী মজা লাগে গো.....আমাকে কিন্তু পাশে বসিয়ে যত্ন করে খাওয়াতে হবে.......
: আইসো জম্মের খাওয়া খাওয়াবো.....
:মারবা নাকি ?
:নাহ... আদর করব.....
:এই কি করছ তুমি ?
:লাঠিটা খুজছি.....
:কেন ?
:ওই যে বললে আদর করতে.....
:সর্বনাশ !!
:সর্বনাশের কি দেখেছো....এমন আদর করব পালাবার পথ খুজে পাবানা...
:হায় আল্লাহ ! এ কি চিজ..
:চিজের কি দেখেছো...হাতির ৫ পা দেখাবো...
:ইয়া আল্লাহ...!!!
:আহাজারি করে লাভ নাই...এখনও সময় আছে কেটে পড়ো...
:নারে ময়না, পিটাও যা করো কাছে রেখো.....
:তাইলে মাইর খাবা...??
:হুমম খাবো....সারাজীবন আমাকে ধরে পিটাবা.....কম খেতে দিবা যাতে কেউ খাদক বলতে না পারে।
:আমাকে কি তোমার এতটাই নিষ্ঠুর মনে হয় গো ?
:না, তুমি কি, তা আমার চাইতে বেশী আর কে জানে গো ময়না ! তোমার মনটা যে আমি চিনে ফেলেছি...
:তাইলে আর মারব না...
:কেনো... তোমার মন চাইলে মারবে...আমি তো তোমারই....
:না মারব না গো...
:কেনো মারবা না কেন....মারবা একশ বার মারবা...হাজার বার মারবা....
:এই দাঁত তুলে ফেলব কিন্তু....
:এই ! কথায় কথায় হুমকি দিয়ে কথা বলবা না কিন্তু ...দাঁত তুলে নিয়ে বুকড়া লোকের সাথে সংসার করবা নাকি ?
:হ্যা করব....হামান দিস্তা কিনে দেব..সারাদিন খাবার দাবার বেটে বেটে খাবা..
:কেনো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে খেলে ক্ষতি কি...!!
:ওতে তোমার কষ্ট কম হবে.....
:ওরে ,তাইলে আমাকে কষ্ট দেওয়াই তোমার উদ্দেশ্য....
:কেনো তুমি না বললে,,আমাকে চিনেছো...তাইলে এইটা বুঝতে পারোনি কেন ? বলদ কোথাকার !!
: এই গালাগালি দিবানা বলে দিচ্ছি....
:গালাগালি কখন দিলাম...বলদকে বলদ বললাম,এইটা গালি হল...!! বান্দর কোথাকার...!!
:ইয়া আল্লাহ এ আমি কার পাল্লায় পড়লাম !!
:এখনও বোঝোনি....এজন্যেই তো বললাম পালাও সময় অাছে...
:ওগো নাগো...তুমি আমার সোনা বউ, আমার অন্তরের আখি,পরান পাখি.....ও আমার ময়না গো....
:এই ফাজিল থামো, আমাকে অফিসে যেতে হবে এক্ষুনি...
:এই শোনো....এই কই গেলে.....আরে আসল কথাই তো বলা হলনা.....আরে...এই তুমি আছো ??
এই হল আমার পুটির মা। ফেসবুকে আমাদের পরিচয়। আমার ছোটছোট কথা পুটির মায়ের খুব ভালো লাগত। ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে...গভীর থেকে গভীরতর হয়। কিন্তু আমরা লেখালিখি করেই ২ বছর পার করেছি। আমরা মনে করেছিলাম শুরু থেকে স্কাইপীতে কথা বললে উভয়ের প্রতি উভয়ের আকর্ষন কমে যেতে পারে। তাই ধৈর্য ধারন করেছি,যদিও তা কষ্টকর ছিলো। স্কাইপীতে তখনই তাকে যুক্ত করেছি যখন উভয়ের পরিবার উভয়ের বিষয়টি মেনে নিয়েছে। আমরা সাধ্যমত ইসলাম মেনে চলি,যদিও এভাবে যোগাযোগ শরিয়ত অনুমোদন করেনা কিন্তু উপায় নেই,দুজন দু-দেশে। যোগাযোগ না থাকলে সম্পর্ক থাকবে না। আমরা কেউ কাওকে কোনোভাবেই হারাতে চাইনা। একসাথে বাঁচতে চাই। কিন্তু উভয়ের পরিস্থিতি উভয়কে এক হতে দেয়নি। পুটির মায়ের সাথে আমার বয়সের ব্যবধান বছর দশেক হবে। বিষয়টি তার পরিবারের আপত্তির কারন ছিলো। কিন্তু পুটির মা খুব জেদী, শেষ পর্যন্ত ম্যানেজ করে ফেলেছে। আমরা আলোচনা করে মোহরানা পর্যন্ত ঠিকঠাক করে ফেলেছি।
আমি কখনও কারো সাথে প্রেম করিনি। বিরাট একটা জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিলেও কোনো মেয়ের সাথে প্রেম হয়নি। ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত। কখনও কোনো মেয়ের কাছাকাছি ইচ্ছাকৃতভাবেই যাওয়া হয়নি। অনেককে কঠোরভাবে উপেক্ষাও করেছি। ভাবতাম নিজেকে নিয়ন্ত্রন করলে আল্লাহ একসময় না একসময় উত্তম কাওকে মিলিয়ে দিবেন। বুঝিনি সেটা হবে আমার পুটির মা। আমার পুটির মায়ের নামই পুটির মা। তার অন্য কোনো নাম আমি স্বীকার করিনা। আর এটাই আমার দেওয়া নাম।সেও নিজেকে পুটির মা'ই ভাবে। বিয়ের পর আমরা কঠোর প্রেম করব। একে অপরকে ছেড়ে যাবনা কখনও। কত শত পরিকল্পনা যে রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই...। পুটির মা জেদী হলেও মানুষ ভালো। ভেতরটা একেবারে ফকফকা সুন্দর। আর সে জেদ করে যুক্তিসঙ্গত কারনেই।
কিভাবে যে পুটির মা এতটা ভেতরে ঢুকে পড়ল বুঝতেই পারিনি। এখন তো আমার সবকথা তাকে না জানালে ঘুমই হয়না। অপরদিকে পুটির মা'ও তাই। তার সবকিছু আমার সাথে বলবেই। কখনও কখনও কোনো বিষয়ে পরামর্শ চায়। আমি নিজের জন্যে যা উত্তম মনে করি,অপরের জন্যেও তাই। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কাজ করি,যদিও ভুলভ্রান্তির অন্ত নেই। তবে ভেতরে এই অনুভূতি সদা জাগ্রত রাখার চেষ্টা করি যে,আল্লাহ দেখছেন।
আমরা সারাক্ষন বিয়ের পরের নানান পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলি। অনেক বাচ্চাকাচ্চা আর কিভাবে দুজনে অমুসলিমদের ভেতর ইসলাম প্রচার করব তার নানান কলা কৌশল নিয়ে কথা বলতে থাকি। আমি খুব স্বপ্নবাজজ। অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখতে থাকি। আর আমার প্রত্যেক স্বপ্নের ভেতর সে থাকবেই থাকবে।
আমি বরাবরই কর্ম জীবনে খুবই ব্যস্ত ছিলাম তাই বিয়ের জন্যে প্রস্তুত হতে পারিনি। একইসাথে আমাকে অনেক কিছু দেখতে হয়েছে। পাশাপাশি দেশে থেকেও আমরা গত ২ বছরে একবারও দেখা করতে পারিনি। কিন্তু আমার কোম্পানী আমাকে খুব শিঘ্রই পুটির মায়ের দেশে কোম্পানীর শাখা অফিসে ট্রান্সফার করবে। সংবাদটা শোনার পর থেকে দুজনই খুব উত্তেজিত।
পুটির মায়ের খাওয়া দাওয়াই যেন উঠে গেছে। সারাক্ষন শুধু নানামুখী পরিকল্পনা। কথা হয়েছে যতদিন নতুন বাসা না পাই ততদিন ওদের বাসায়ই থাকব। আর প্রথম মোলাকাতটা যেন হালাল হয় তার জন্যে আসার দিনক্ষন ঠিক হলেই স্কাইপীতে আমরা পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়েটা সেরে নেব। আমার পরিকল্পনা অত্যন্ত সুক্ষ্ণ না হলেও খারাপ হয়নি কখনও। আল্লাহ ভরসা....
জেনেছি মোলাকাতের দিনটি এবছরই যেকোনো সময়ে। কোম্পানীর চিঠি পেলেই নির্দিস্ট দিনক্ষন ওকে জানাবো। কিন্তু তার আগে তো পুটির মায়ের অনেক কাজ। ফুলের বাগানটায় নতুন কিছু ফুল গাছ লাগাতে হবে। আমার পছন্দ বেলী ফুল। সে বারান্দায়,ঘরে,বাগানে সবস্থানে এই ফুলগাছ লাগাবে। পুরোনো ফার্নিচার বদলে নতুন ফার্নিচার,নতুন বালিশ,বেডশীট,নতুন কিচেন সামগ্রী। বাড়ির কিছু স্থানে নতুন করে রং করতে হবে,তার কত কাজ ! আরো আছে আমাকে চমকে দেওয়ার জন্যে নানান সব আয়োজন,যার কিছুই সে এখনও প্রকাশ করেনি। সবকিছু মিলে সে চরম উত্তেজিত। আমাকে সে প্রানের চেয়ে বেশী ভালোবাসে কিন্তু তা সে প্রকাশ করতে চায়না। আমিও তাকে অনেক ভালোবাসি। পুটির মাকে ভালো না বেসে পারা যায় না,সে এমনই একটা মেয়ে।
========
=====================
: ওগো শুনছো ! আছো নাকি গো ?
:হুমম..
:হুমটুম রাখো....
:রাখলাম, তুমি কেমন আছো ?
:ভালো আছি...ব্যপক উত্তেজিত....আচ্ছা কাল তোমাদের দুপুরে খাবারের মেন্যু কি হবে বলো তো ? না মানে আজ কি খেয়েছো ??
:এই পাগল, কথা হুশ করে বলো..কি সব যা তা বলছ...কি রান্না হবে তা দিয়ে তোমার কি ?
:না মানে আচ্ছা তুমি পাশে বসে খাওয়াবে তো ?? মনে করে দ্যাখো তুমি কিন্তু এটা বলেছিলে...
:হ্যা বলেছিলাম...তা এরকম কাঁপছো কেন ??
:সোনামনি আমি আগামীকাল সকালে আসছি, সকাল ১০টায় ল্যান্ড করব ইনশাআল্লাহ....তুমি আমাকে নিতে আসবে না ??
:এই শুনিনি..আরেকবার বলো..কি বললে ?? কাল সকালে তুমি কি ???
:আমি আসছি সোনামনি কাল সকাল ১০টায়...
:বলো কি !! ওরে তাই নাকি গো !! এই আগে বলোনি কেন ?
:গতকাল এটা বলতে গিয়েই তো তুমি এটা ওটা বলে সময় নষ্ট করলে আর যখন বলতে চাইলাম তুমি চলে গেলে...
:ওরে ,তা এরকম খবর তুমি আগেই বলবা না !! তুমি আস্ত একটা উল্লুক.....বলদ...
:হ্যা অামি সবকিছু....তা তুমি কখন আসবে এয়ারপোর্টে ??
:শোনো আমি সকাল ৯টায় ওখানে পৌছে যাব। আমার মাথায় থাকবে সোনালী রঙের স্কার্ফ,হাতে থাকবে টকটকে লাল গোলাপের তোড়া.....
+++++++++++++++++++++++++++
ওইতো আমার পুটির বাপকে দেখা যাচ্ছে.....আস সালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ...
:ওয়া আলাইকুম আস সালাম বৌ....চিনতে কষ্ট হলনা...বর্ণনা নিখুঁত হাহাহাহাহাহা..
:এই অামার নাম ধরে ডাকো...
:কোনো নাম নয় শুধু বৌ...গোল্ডেন কালার স্কার্ফ তাই সোনা বৌ...
:এই মানুষের মধ্যে জড়িয়ে ধরবে না...
:আমার বৌকে জড়িয়ে ধরব নাতো কি অন্য মানুষের.......শোনো তুমি আমার বৌ...বিয়ে সেরেই এসেছি,যাতে এখানে তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি।
:ইয়া আল্লাহ ! এ কি পাগলরে বাবা...
:পাগলামীর দেখেছো কি.....
:আমার পুটির বাপ ! তুমি কেমন ছিলে গো ? আমি কেন যেন বিশ্বাসই করতে পারছিনা যে তুমি এসেছো। সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখুনি ঘুম ভেঙ্গে যাবে আর তোমাকে দেখতে পাব না। আমার গায়ে একটু চিমটি কাটো তো...
: ওরে বাবা এত জোরে কেউ চিমটি কাটে নাকি !!!!
:জোরেই দিলাম,,,,তুমি স্বপ্নের ভেতর নেই গো..স্বপ্নের দিন শেষ....এখন সবই বাস্তব....
:পুটির বাপ ! তোমাকে অনেক ভালোবাসি....তোমার জন্যে পুরো বাড়ি অপেক্ষা করছে......দেখো কত রঙ বেরঙের ফুল সারা বাড়িতে,আমাদের ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়েছি....আর আমার সাদা কাকাতুয়াটাকে তোমার নাম শিখিয়েছি ...দেখো সে কি বলে......খুব মজা হবে গো.....আর তোমার পছন্দের খাবারগুলো অপেক্ষা করছে.....
:ওগো তাই নাকি গো....আমার যে এখন পেটের মধ্যে আনন্দ হচ্ছে গো....
: ধুর....খাদক কোথাকার !!! শুধু খাই খাই করে !!!
--------------------------------------
-----------------------
------------
---
বিষয়: বিবিধ
১৯৫০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঘটনা কি সত্য ???
তোমার অপেক্ষার প্রহর শেষ
স্বপ্নটির সাথে দেখি এই স্লেভ ভাইজানের স্বপ্নটি বেশ মিলে যায় ,
তোমরা কি মিল্লা -ঝিল্লা স্বপন দেখো নাকি !!!
তুমি আগে লিখ্ছ আর ওনি পরে
নাহ এই পুরুষ মানুষ গুলো কে নিয়ে আর পারে গেল না ,
স্বপ্নবাজ থেকে শেষ পর্যন্ত নকলবাজ
এই বার ঠিক আছে আপুনিটা ???
আরো লেখেন
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন