আল্লাহর সাহায্য কখন আসে !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ মার্চ, ২০১৬, ১১:৩৬:১৩ সকাল
১. হযরত মূসা(আঃ) যখন বনী ইসরাঈলদেরকে নিয়ে লোহিত সাগরের প্রান্তরে এবং পেছনে ফিরাউন ও তার সৈনিকরা হত্যার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হচ্ছে,তখন আল্লাহ মূসা(আঃ)কে তার হাতের লাঠি দ্বারা পানিতে আঘাত করতে বললেন এবং পানি বিভক্ত হয়ে রাস্তা তৈরী হল।
২. হযরত ইব্রাহিম(অাঃ) তাওহীদ প্রচারের দায়ে ধৃত হলেন নমরূদের লোকজনদের দ্বারা। কোনোভাবেই মহা ক্ষমতাধর শাসক নমরুদের নিকট নাথা না নোয়ানোর কারনে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় তাকে বিশাল অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের। বিশাল আগুনে তাকে নিক্ষিপ্ত হতে হল কিন্তু সে আগুন নিভে গেল ও পরিস্থিতি তার জন্যে শান্তিদায়ক হল।
৩. ইসমাইল (আঃ)বয়:প্রাপ্ত হলে পিতা ইব্রাহিম(আঃ)এর উপর আল্লাহর আদেশ হল সন্তানকে যবেহ করতে হবে। তিনি আল্লাহর হুকুম পুত্রকে জানালেন ,পুত্র স্বানন্দে রাজি হল। অত:পর পুত্রের গলায় ধারালো ছুরি চালালেন পিতা কিন্তু আল্লাহ পুত্রকে যবেহ হতে দিলেন না। তার বদলে উক্ত স্থানে একটি পশু পাঠিয়ে দিলেন যা পুত্রের বদলে যবেহ হল।
৪. হযরত ইউসুফ(আঃ) বাদশাহর স্ত্রীর লালসার শিকার হয়েছিলেন। প্রাসাদে তার দ্বারা অাক্রান্ত হয়ে নিজেকে নিরাপদ করতে বন্ধ দরজার দিকে পালালেন। আর তখনই বন্ধ দরজা তার জন্যে উম্মুক্ত হয়ে গেল।তিনি নিরাপদে বের হয়ে গেলেন।
৫. রসূল(সাঃ)কে যখন কাফিররা হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ি ঘেরাও করল। তিনি এক মুঠো বালি নিয়ে ছুড়ে দিলেন,তা কাফিরদের চোখে গেল এবং খানিক সময়ের জন্যে তারা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ল এবং বেষ্টনী ভেঙ্গে গেল,রসূল(সাঃ)নিরাপদে বের হয়ে গেলেন।
এরকম হাজার হাজার বিষয় বা ঘটনা রয়েছে,যা ঘটেছে নবী-রসূল,সাহাবাদের জীবনে এবং হয়ত উম্মতদের ভেতর অনেকের জীবনে। আসুন উপরোক্ত ঘটনাসমূহ বিশ্লেষন করি।
উপরোক্ত প্রত্যেকটি ঘটনায় সুমহান আল্লাহর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিলো। এটাকে অলৌকিক ঘটনা বলে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখব,এটার প্রত্যেকটাতেই বান্দাকে প্রথম পর্বের কাজটি সম্পন্ন করতে হয়েছে। মূসা(আঃ)কে জীবনের ঝুকি নিয়ে তার উম্মতকে নিয়ে বের হয়ে আসতে হয়েছে । তার আশা ছিলো আল্লাহ তার ওয়াদা অনুযায়ী তাকে নিরাপদ করবেন। আল্লাহ ইচ্ছা করলেই ফিরাউনকে গজব দিয়ে ধ্বংস করতে পারতেন এবং মূসাকে(আঃ)স্বস্থানেই নিরাপদ করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ তার পরিক্ষা নিলেন এবং তাকে ঝুকির ভেতর ফেলে দিলেন, একইসাথে অলৌকিকভাবে তাকে উদ্ধার করলেন। তিনি জানতেন না,আল্লাহ তাকে কিভাবে নিরাপদ করবেন কিন্তু যখন তার সাধ্যের সীমা শেষ হল তখনই আল্লাহর সাহায্য আসল।
২. আল্লাহ ইব্রাহিম(আঃ)কে এমনিতেই সাহায্য করতে পারতেন। কিন্তু তাকে আল্লাহর উপর নির্ভর করে শেষ সময় পর্যন্ত নির্ভিক থাকতে হয়েছে। তিনি নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময়ও জানতেন না যে আগুন তার জন্যে শান্তিদায়ক হবে। নিক্ষিপ্ত হওয়াটাই ছিলো তার পরিক্ষা ও নিজের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ।এরপরই আল্লাহর সাহায্য।
৩. ইসমাইল(আঃ)আল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ হতে রাজি হলেন,তার পিতাও প্রস্তুত। এটাই ছিলো পরিক্ষা এবং এরপর আর পরিক্ষার প্রয়োজন নেই,ফলে আল্লাহ তার সাহায্য পাঠিয়ে দিলেন। যদি সত্যই যবেহ হয়ে যেত,তবুও ইসমাইল(আঃ)এই যবেহতে ব্যাথা অনুভব করতেন না। যেমন রসূল(সাঃ)আমাদেরকে জানিয়েছেন-যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে শহীদ হয়,তারা কোনো ব্যাথা অনুভব করে না। শহীদদের নিহত হওয়ার কষ্টকে তিনি পিপড়ায় কামড়ানোর ব্যাথার থেকেও কম কষ্টকর বলেছেন।
৪. ইউসুফ(আঃ) আক্রান্ত হয়ে আল্লাহর উপর নির্ভর করেছিলেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। একইসাথে বাচার জন্যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। সেটাই ছিলো পরিক্ষা। আল্লাহ তাকে নিরাপদ করলেন। কিন্তু ইউসুফকে(আঃ) আল্লাহর সাহায্যের দিকে অগ্রসর হতে হয়েছিলো,এরপর সাহায্য।
৫. রসূল(সাঃ)কে শত্রুর বেষ্টনী ভেদ করতে বালি ছুড়ে দিয়ে হয়েছিলো। আল্লাহ সে বালিকে শত্রুর চোখে প্রবেশ করিয়ে দেন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে বালি ছাড়াই তার রসূলকে(সাঃ)নিরাপদে বের করতে পারতেন। অথবা শত্রু আসার পূর্বেই ওহী নাযিল করে তাকে চলে যেতে বলতে পারতেন। অথবা শত্রুকে ধ্বংস করেও তাকে(সাঃ)নিরাপদ করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ সবসময়ই তার বান্দাকে আগে এগিয়ে আসা অবস্থায় দেখতে চান। এরপর আল্লাহ তার সাহায্য প্রদান করেন।
উপরোক্ত অলৌকিক ঘটনাগুলো এমন ,যা স্বাভাবিকভাবে ঘটতে গিয়েও ঘটেনি। উপরোক্ত বিষয়গুলো অলৌকিক না হয়ে যদি লৌকিকও হত অর্থাৎ যদি মূসা(আঃ)সাগরে ডুবে শহীদ হতেন,অথবা যদি ইব্রাহিম(আঃ)আগুনে পুড়ে শহীদ হতেন,অথবা যদি ইসমাঈল(আঃ)যবেহ হতেন,অথবা ইউসুফ(আঃ)বাদশাহর স্ত্রীর ক্রোধপূর্ণ ইশারায় সৈন্য কর্তৃক শহীদ হতেন,অথবা যদি রসূল(সাঃ)শত্রু কর্তৃক শহীদ হতেন ,তবুও তারা সকলেই সফল হতেন।
এখানে ঘটনার ভয়াবহতা উল্লেখযোগ্য নয়, বরং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলটাই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর উপর আস্থা এতটাই কঠিন হবে যে জীবনের পরোয়া থাকবে না। সে অবস্থায় আল্লাহর ইচ্ছা হলে তিনি ঘটনা প্রবাহ থামিয়ে বান্দাকে অলৌকিকভাবে সাহায্য করে বিজয়ী করবেন আর নয়ত তিনি ঘটনা প্রবাহ বজায় রাখবেন এবং বান্দাকে ঘটনার শিকার হতে দিবেন। এই উভয় পর্যায়'ই সফলতা। আল্লাহ তার পরিক্ষাটি কিভাবে চান,সেটা আল্লাহর একান্ত বিষয়। কিন্তু বান্দা তাতে সফল হওয়ার জন্যে সর্ব প্রথম আল্লাহর উপর নির্ভর করে সামনে অগ্রসর হবে এবং শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে। কতদূর অগ্রসর হলে তার সাহায্য চলে আসবে সেটি বান্দার চিন্তার বিষয় নয় এবং তার এখতিয়ারভূক্ত বিষয়ও নয়। তবে সফলতা নিশ্চিত। সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
আল্লাহ তার বান্দার উপর অত্যন্ত দয়ালু। আল্লাহর রহমত বান্দার জন্যে অপেক্ষা করে। কিন্তু বান্দাকে সেই রহমত,নিয়ামত অগ্রসর হয়ে গ্রহন করতে হয়। বান্দা অল্প অগ্রসর হলেই আল্লাহ খুশী হয়ে যান এবং তার ধারনার চাইতেও অনেক বেশী নিয়ামত,বরকত দান করেন এবং তাকে সফল করেন।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলে আকরাম ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ বলেছেন,” বান্দাহ যখন আমার দিকে আধ হাত পরিমান এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত পরিমান এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।”
[বুখারী,হাদীসে কুদসী]
বিষয়: বিবিধ
২০১৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ হুজুর ।
একদিন তাহাজ্জুদ পড়তে পারলে নিজেকে অনেক ধণ্য মনে করতে শুরু করি। বার বার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, যেন বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাই।
মানে চেষ্টা তো নেই, উপরন্ত ফাউ খাওয়ার চাহিদা করতেই থাকি। সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর
এমন লেখা স্টিকি প্সোত হওয়া খুব দরকার। অনেক মানুষ হেদায়েত হতে পারতো।
আল্লাহ আপনার কষ্টের বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
লেখা স্টিকি হওয়ার জন্য মডুদের প্রতি অনুরোধ রইলো।
চমৎকার ঈমান জাগানিয়া পোস্টের জন্য শুকরিয়া!
আল্লাহ আপনাকে এর জাযা দিক
আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন