তালাকটি সংঘটিত হয়নি
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১১:৩৬:৫৩ সকাল
তালাক সংঘটিত হয়েছে নাকি হয়নি?
ইমাম মালেক (রহ) বনাম ইমাম শাফেয়ী (রহ)
ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (র) এই ঘটনাটি তার কিতাবে লিখেছেন,
একদিন ইমাম শাফেয়ী (রহ) ইমাম মালেকের (রহ) এলমী মজলিশে উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় ইমাম শাফেয়ীর (রহ) বয়স ১৪ বছর ছিল। ইতিমধ্যে জনৈক এক ব্যাক্তি ইমাম মালিকের (রহ) কাছে এসে বললেন, হে আব্দুল্লার পিতা, আমি বড় চিন্তায় পরেছি। আমি তোতা পাখির কেনা-বেচা'র ব্যাবসা করি।আজ আমি এক ব্যাক্তির নিকট তোতা বিক্রয় করেছিলাম। কিছুক্ষন পরে ক্রেতা ফিরে এসে বললো, তোমার তোতা কথা বলেনা। এই বিষয়ে তার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হল। আমি জোর গলায় তাকে বললাম, আমার তোতা কখনো নির্বাক থাকে না। যদি নির্বাক হয় তাহলে আমার স্ত্রীর উপর তালাক। আমার এখন কি হবে?
ইমাম মালেক (রহ) সব বিষয় শুনে বললেন: তোমার স্ত্রীর উপর তালাক সংঘটিত হয়েছে।
লোকটি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বিলাপ করতে করতে বাড়ির দিকে চলে গেল। আর বালক শাফেয়ী (রহ) দার্স থেকে বেরিয়ে চুপি চুপি লোকটির অনুসরন করতে লাগলেন। কিছুদুর গিয়ে বালক শাফেয়ী (রহ) তোতার ব্যাবসায়ীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার তোতা অধীকাংশ সময় ''সবাক'' থাকে না ''নির্বাক'' থাকে?
লোকটি বললো, বেশির ভাগ সময় আমার তোতা কথা বলে থাকে তবে কখন কখন চুপ হয়ে যায়।
বালক বয়সী ইমাম শাফেয়ী (রহ) বললেন, যাও তোমার স্ত্রীর উপরে তালাক সংঘটিত হয় নাই।
এ কথা বলে ইমাম শাফেয়ী (রহ) ফিরে এসে দার্সে যোগদান করলেন। সেই লোকটিও তার সাথে সাথে এসে ইমাম মালেক (রহ) দার্সে এসে বলতে লাগলেন: জনাব আমার বিষয়টি দয়াকরে একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখুন।
ইমাম মালেক (রহ) কিছুক্ষন চিন্তা করে বললেন: আমি তোমাকে পূর্বে যা বলেছি সেটাই সঠিক জবাব।
লোকটি বললো: আপনার ছাত্র মন্ডলির মাঝে একজন আমাকে বললো যে, তালাক হয় নাই?
ইমাম মালেক (রহ) বললেন: সেই ছাত্রটি কে?
লোকটি ইমাম শাফেয়ী (রহ) দিকে দেখিয়ে বললেন: ঐ বালক ছাত্র এ কথা বলেছে।
ইমাম মালেক একটু রাগ হয়ে বললেন: তুমি এই অবৈধ রায় কি ভাবে প্রদান করলে?
ইমাম শাফেয়ী (রহ) বললেন: আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমার তোতা বেশিরভাগ সময় চুপ থাকে না কথা বলে? সে বললো তার তোতা অধীকাংশ সময় সবাক থাকে। এজন্য আমি এই রায় প্রদান করেছিলাম।
ইমাম মালেক (রহ) রাগ হয়ে বললেন: সবাক বা নির্বাক থাকার সময়ের সল্পতা ও আধীক্যর সাথে এই তালাকের সম্পর্ক কি?
ইমাম শাফেয়ী (রহ) বললেন: আপনি সয়ং উবায়দুল্লাহ বিনে যিয়াদের থেকে বর্নণা করে রসুল (সা) থেকে হাদিস শুনিয়েছেন যে, ফাতিমা বিনতে কায়েস (রাঃ) রসুল (সা) এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল (সা) আবু জাহাম এবং মুআবিয়া উভয়েই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। আমি তাদের দুই জনের মধ্যে কাকে বিবাহ করব? রসুল (সা) বললেন, মুআবিয়া দরিদ্র ব্যাক্তি আর ''আবু জাহাম কোন সময়ই তার কাধ হতে লাঠি নামায় না।''
ইমাম শাফেয়ী (রহ) বললেন: অথচ, রসুল (সা) নিশ্চই এটা অবগত ছিলেন যে, আবু জাহাম পানাহর করেন এবং নিদ্রা যান (সে সময় তাকে লাঠি নামাতে হয়)। এই হাদিসটির সাহায্যে আমি বুঝলাম যে, আবু জাহম কোন সময় তার কাধ হতে লাঠি নামান না এর দ্বারা রসুল (সা) এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে,তার অধিকাংশ সময়ের আচরনকে রসুল (সা) সর্বকালিন আচরন রুপে অভীহিত করেছেন। এই হাদিসের অনুসারে তোতা বিক্রেতার কথা, আমার পাখি কখনো চুপ থাকে না আমি এই তাৎপর্য গ্রহণ করেছি যে, কখনো চুপ না থাকার অর্থ অধীকাংশ সময় চুপ না থাকা।
ইমাম মালেক (রহ) দলিল সহ এই ফাতাওয়া শুনে অত্যন্ত খুশি হলেন এবং ইমাম শাফেয়ীর (রহ) কথাই বলবৎ রাখলেন।
আল্লাহু আকবার! ইমাম মালেক (রহ) হাদিসকে মেনে নিলেন তার নিজের মতামতকে উপেক্ষা করে। তাও আবার নিজ ছাত্রের কাছ থেকেই! এটাই হওয়া উচিত খাটি মুসলিমের চরিত্র।
¤ ফিরকা বন্দি ও অনুসরনীয় ইমামদের নীতি ১০৬ পৃস্টা হতে সংগ্রীহিত ¤
নিজে দেখুন, পড়ুন, জানুন এবং শেয়ার করে অন্যকে দেখার, পড়ার ও জানার সুযোগ দিন
সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
১২১৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যুক্তি এবং কুরআন-হাদিস কেই তারা গ্রহন করতেন।
যাঝাক আললাহ খাইরান ,
মন্তব্য করতে লগইন করুন