নারীদের পিরিয়ড বা মাসিক ও কিছু উন্মাদের প্রলাপ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:০২:৫৮ সকাল
নারী জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ঋতুচক্র/মাসিক/হায়েজ/পিরিয়ড । এই বিষয়টি বা প্রক্রিয়াটি নিয়ে নতুন করে বলার অবকাশ নেই । এ সম্পর্কে সবাই কম বেশি অবগত । ঋতুচক্র/মাসিক/হায়েজ শুরু হওয়ার মাধ্যমে একজন নারী সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করে থাকে । আর এই কারণেই নারী শুধু নারী ই নয়, বরং নারী একজন মা । পুরো গর্ভ কালীন সময়ে একজন নারীর পিরিয়ড বন্ধ থাকে। কেননা সে সময় পিরিয়ডের রক্ত গুলো পেটে থাকা অনাগত বাচ্চার খাবার সরবরাহ করে।এটাই মহান আল্লাহর অসীম কুদরতী সিস্টেম।সুতরাং পিরিয়ড সময়ে একজন নারীকে শুধুমাত্র বিকারগ্রস্তরাই ঘৃণা করতে পারে।
কিছুদিন থেকে অনলাইনে নারীদের পিরিয়ড বিষয়ে কিছু উন্মাদ ও বেহায়া কিছু মেয়ে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছে। তাদের লেখনীর মূল টার্গেট ইসলামকে হেয় করা এবং তুচ্ছ করা। ইসলাম নারীকে পিরিয়ড অবস্থায় ঘৃণা করতে শিখিয়েছে। অপবিত্র করেছে। ছালাত ছিয়াম নিষিদ্ধ করেছে। ইত্যাদী ... ইত্যাদী।
প্রথমে বলতে হয়, ইসলাম ও মুসলিম ছাড়া সব ধর্মে ও জাতি গোত্রের মাঝে নারীদের পিরিয়ড সময় নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার বিরাজ করে। যেমন প্রাক ইসলামী যুগে ঋতুচক্রের সময়কালে নারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত । তাদেরকে পাশে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা সব কিছু থেকে দূরে থাকত সেই সময়কার মানুষেরা । এমন অনেক জাতি আছে যাদের নিয়ম অনুযায়ী পিরিয়ড অবস্থায় মেয়েদেরকে গোয়াল ঘর বা ঘোড়ার আস্তাবলে কাটাতে হয়।
ইসলাম এই নিকৃষ্ট বৈষম্যকে পদদলিত করেছে । ইসলাম নারী কে মায়ের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে এবং সন্তানের জান্নাত মায়ের পদতলে ঘোষণা করেছে । শুধু তাই নয় একজন মেয়ের পিরিয়ড টাইমে তার সাথে স্বামীর ব্যবহার কেমন হওয়া উচিৎ তা মুহাম্মাদ (ছা প্রাকটিক্যালী শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে একটি হাদীছই আশা করি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত
আয়েশা (রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন
عَنْ عَائِشَةَ - رضى الله عنها - قَالَتْ كُنْتُ أَشْرَبُ وَأَنَا حَائِضٌ وَأُنَاوِلُهُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعِ فِىَّ فَيَشْرَبُ وَأَتَعَرَّقُ الْعَرْقَ وَأَنَا حَائِضٌ وَأُنَاوِلُهُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعِ فِىَّ.
তথা: আমি পিরিয়ড অবস্থায় পনি পান করতাম এবং পানির পাত্রটা রাসূলের দিকে এগিয়ে দিতাম। তিনি পানির পাত্রে সে জায়গায় মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন যে জায়গায় মুখ লাগিয়ে আমি পানি পান করেছি। আমি পিরিয়ড অবস্থায় হাড্ডি থেকে গোশত ছিড়ে খেতাম অত:পর তা রাসূলকে দিতাম তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে গোশত ছিড়তেন যেখানে মুখ লাগিয়ে আমি গোশত ছিড়েছি।
মুসলিম- ৭১৮।
হায়েজ অবস্থায় একজন নারীর সাথে কেমন ব্যবহার হওয়া উচিৎ সে বিষয়ে দুনিয়ার কোন ধর্ম এর চেয়ে ভাল দৃষ্টান্ত পেশ করার ক্ষমতা রাখেনা। এটা শুধু মুখের কথা নয়। চ্যালেন্জ ... ।
এছাড়া নারীর সাথে এ সময়ে উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, একই বিছানায় ঘুমানোতে কোন বাধা নেই ।
ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে মেলামেশা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ( اصْنَعُوا كُلَّ شَيْءٍ إِلا النِّكَاحَ )
“সহবাস ব্যতীত তার সাথে সবকিছু কর।” মুসলিম :(৩০২)
আয়েশা (রা-এর পিরিয়ড অবস্থায় রাসুল (ছা তার সাথে একই বিছানায় ঘুমিয়েছেন এর হাজার হাজার প্রামণ হাদীছের বই গুলোতে আছে।
হ্যাঁ প্রশ্ন উঠতে পারে ইসলাম যদি পিরিয়ড অবস্থায় একজন মেয়েকে এতই সম্মান দিয়েছে তাহলে কেন ইসলামে হায়েজ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে? কেন পিরিয়ড অবস্থায় একজন মেয়ে ছালাত ছিয়াম আদায় করতে পারবেনা?
অত্র প্রশ্নগুলো মূলত ইসলাম সর্ম্পকে নিজের অজ্ঞতা ও স্বল্পজ্ঞানের পরিচয় বহন করে। তারা ঋতু চক্রকালে ইসলাম নারীদের কে অপবিত্র বলেছে মর্মে কুর’আনের সূরা বাকরার ২২২ নং আয়াত নিয়ে যে টানা হেচড়া করছে সে বিষয়টি আগে স্পষ্ট করতে চাই ।
মহান আল্লাহ বলেন
“আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা ‘আযা’। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন”।
অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ হায়েজকে ‘আযা’ বলেছেন। যার অর্থ হচ্ছে কষ্টদায়ক। এই শব্দের অর্থ বুঝতে গিয়েই ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক চক্র ভূল করে ফেলেছে। তারা ‘আযা’ এর অর্থ করেছে অপবিত্রতা। যা চরম ভূল। আরবী না বুঝে ইসলাম বিরোধিতা করতে যাওয়াও এক প্রকার মানসিক দৈন্যতা। আর বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে এ সময় নারীরা অনেক কষ্টে থাকে। তাদের সাথে সহবাস করাও এ সময় অনেক কষ্টদায়ক। এই জন্যই মহাবিজ্ঞ আল্লাহ এ সময় সহবাস করাকে নিষিদ্ধ করেছেন।
প্রশ্ন উঠবে তাহলে কেন নারীদের পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত ছালাত ছিয়াম নিষিদ্ধ? জবাব হচ্ছে, এমনও অনেক সময় আছে যখন মহান আল্লাহ পুরুষদের জন্য ছালাত আদায় করা নিষিদ্ধ করেছেন যতক্ষন না তারা পবিত্র হয়। সেটা হচ্ছে পুরুষের বীর্যপাত হলে। তাহলে কি আপনি বলবেন পুুরুষকে ইসলামে ছোট করা হয়েছে? ইসলামে পুরুষের অধিকার দেয়া হয়নি? ইসলামী জ্ঞান সর্ম্পকে অজ্ঞতা থাকলে যা হয়।
স্ত্রী সহবাসের পর স্বামী, স্ত্রী উভয়ে যেমন অপবিত্র হয়, মেয়েদের এই মাসিকের অপবিত্রতা সেই ধরনের একটি অপবিত্রতা । এই অপবিত্রতা থেকে মুক্তি জন্য ছেলেদের যেমন গোসল করতে হয় তোমনি মেয়েদের গোসল করতে হয় । অন্যান্য অপবিত্রতার কারণে যেমন নারী, পুরুষ উভয়েই সালাত আদায় করতে পারে না। ঠিক তেমনি ঋতুচক্রের সময়কালে নারীদের সালাত, ছিয়াম আদায় থেকে বিরত থাকতে হয় । এটা কোন বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নয়। বরং মহান আল্লাহর ইবাদাতের জন্য নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়মগুলোর একটি।
বরং এখানে আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলতে হয়, ইসলাম নারীদের বিষয়টা এতটাই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে যে, অপবিত্র অবস্থায় পুরুষের কোন ছালাত কাযা হলে তাকে সেটা পূণরায় আদায় করতে হয়। কিন্তু পিরিয়ড অবস্থায় নারীর কাযা হওয়া ছালাতগুলো তাকে আর আদায় করতে হয়না। মহান আল্রাহ মাফ করে দেন। আল্লাহু আকবার। সত্যি বলতে কি ইসলামের মহত্ব বুঝার মত বিবেকই নাই এ সমস্ত উন্মাদের।
পরিশেষে বলতে চাই, নারীদের আসল আকর্ষণ হচ্ছে তাদের গোপনীয়তা। একজন নারীর সবকিছুই গোপন। এই গোপনীয়তা তাকে অপরুপ করে তোলে। তার মান সম্মান ও ইজ্জত আকাশ ছোঁয়া করে দেয়। যখনি এই গোপনীয়তা নষ্ট হয়ে যায় তখনি একজন নারী বাজারের পণ্যে পরিণত হয়। অন্য দশটা পণ্যের সাথে তাদের কোন পার্থক্য থাকেনা। লুচ্চ্যা পুরুষরা তাই সবসময় চায় নারীদের গোপনীয়তা ছিনিয়ে নিতে। আর তাদের সাথে সাথ দেয় বিবেক হীনা কিছু পণ্যহয়ে যাওয়া নারী। নারীদের অন্যান্য গোপনীয়তার অন্যতম একটি হচ্ছে তাদের পিরিয়ড বা মাসিক। এ বিষয়ে বংশ পরম্পপরায় মেয়েরা অটোমেটিক সঠিক ধারণা ও করণীয়র দিক নির্দেশনা পেয়ে আসে। এই যুগে এসে কিছু বেহায়া মেয়ে বা কিছু লুচ্চ্যা পুরুষ অনলাইনে বসে নারীদের এই গোপনীয়তা ছিনতাই করার নিকৃষ্ট চেষ্টায় লিপ্ত। এরা অধিকার আদায়ের নামে আমাদের মা ও বোনদের অপমাণ করছে। আমাদের স্ত্রীদের ইজ্জত নিয়ে অনলাইনে ছিনিমিনি খেলছে।
এ সমস্ত ভাগাড়ী মস্তিস্কের উন্মাদগুলোকে আল্লাহ সঠিক বুঝ দান করুন সেই দুয়াই করি।
(আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক )সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
৩০৬৪ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার বিষয় শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ খাইর
ধন্যবাদ আপনাকে
এধরনের অপপ্রচার তারা অজ্ঞতার কারণে করে না, কুৎসা বা বিরোধিতার জন্য করে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন