প্রীতিকর আত্মার বন্ধন !!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:০৪:০৪ রাত



(পুটি-১)



(পুটি ২)



(পুটি ৩)



(পুটি ৪)



(পুটি ৫, বাকী পুটির ছবি পরে আসবে Happy )

এক ভিন্ন ধরনের লেখা লিখছি। উপলব্ধীটা একটু আগেই আসল। শিরোনামটা অপ্রীতিকর আত্মার বন্ধন দিয়ে আবার তা কেটে দিলাম,কারন আমি কখনও নেগেটিভ চিন্তা করতে চাইনা। আর এর ফলও আল্লাহ দিয়েছেন। অনেক অসম্ভবকে আল্লাহ আমার ক্ষেত্রে সম্ভব করেছেন।

আমি একসময় ঢাকার গুলশান পার্কে বাস্কেটবল খেলতাম ও অন্যভাবে শরীর চর্চা করতাম। সেখানে একটা গ্রুপও ছিল আমার। সে সময় দেশ বিদেশের বিভিন্ন বয়সী অনেকের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। আজকের বিষয়ের সাথে একজনকে সংযুক্ত করা যায়, তার নাম মেহেক। মেহেকের ভায়ের নাম মনে নেই ,যখন প্রথম দেখী তখন মেহেকের বয়স সম্ভবত ৩, আর ওর ভায়েরর বয়স ৫ হবে। এরা হল ভারতীয়। ওর পিতা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রী করেছিলো এদেশে। আমি লক্ষ্য করতাম মেহেকের মা তার সাথে ইংরেজীতে কথা বলে,আবার তার পিতা কখনও হিন্দীতে কথা বলে। আর তাদের কাজের মেয়েটার সাথে মেহেক ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় কথা বলে।

আমি চিন্তায় পড়ে যেতাম। ভাবতাম এতটুকু একটা মেয়ে ৩টা ভাষার পার্থক্য কিভাবে বুঝতে পারে ! পরের বছর দেখলাম মেহেক পূর্বের চাইতে ভালো বাংলা বলছে। আমি আমার খেলার ফাকে অনেক বাচ্চার সাথে মজা করতাম ও খেলা করতাম। তারা আমার আচরনে আনন্দিত হত। আর আমি তাদের সাথে আনন্দ করার মাঝেই তাদেরকে স্ট্যাডী করতাম। একের সাথে অন্যের নানান পার্থক্য, মিল এসব বোঝার চেষ্টা করতাম।

সেখানে সব বাচ্চারাই ধনী পরিবারের ছিল আর লক্ষ্য করতাম তাদের পিতামাতা তাদেরকে ইংরেজীর প্রতি আগ্রহী করছে। অবশ্য শুধু পরিবেশের কারনেই বাচ্চারা বাংলা শিখে যায়,কারন দেশের সকলেই বাংলায় কথা বলে। তবে মেহেক ও তার ভাই ছিলো আমার কাছে ভিন্ন রকমের।

আমি কিছু অনুমানে ও কিছু দেখে উপলব্ধী করলাম তার ৩টি ভাষা শেখার পেছনে তার মায়ের অবদানই প্রধান। তিনিই তাকে গাইড করতেন। কিভাবে করতেন তা আমার জানা নেই কিন্তু বাচ্চারা সব কিছুই আত্মস্থ করতে পারে।

আজকের লেখাটি একটি বিশেষ কারনে লিখলাম। একটি ভাষা একজন মানুষকে কি দিতে পারে সেটা নিয়ে ভাবছিলাম। যদি কোনো বাঙ্গালী মায়ের সন্তান বাংলা না জানে অথবা বাংলা অল্প জানে(যেমন আমরা বিদেশী ভাষা জানি)। তাহলে ওই সন্তানের সাথে মায়ের স্বাভাবিক ভাবের আদান প্রদান সম্ভব হলেও মায়ের সঠিক আবেগ তার কাছে পৌছবে না,আবার তার আবেগ অনুভূতিও মায়ের কাছে সঠিক মাত্রায় পৌছবে না। শুধু এ কারনেই তাদের মাঝে সাংষ্কৃতিক ব্যবধান তৈরী হবে। মা সন্তানকে যে কথা বলে যা বোঝানোর চেষ্টা করবেন, সেটা শুনে সন্তান সে বিসয়টি উপলব্ধী করতে সক্ষম হবেনা। ফলে উভয়ের মাঝে কালক্রমে বড় গ্যাপ তৈরী হবে। কথা হচ্ছে এটি গুরুত্বপূর্ণ কেন !!

মূল বিষয়ে আসি। ধরুন আমি আমার সন্তানকে ইসলাম শেখাতে চাই এবং আমার নিজের আবেগে তা শেখাতে চাই। তাহলে আমার অাবেগটি প্রকাশে ভাষার সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু যে ভাষায় সন্তানের সাথে যোগাযোগ হবে সেটিতে যদি উভয়ের সমস্যা থাকে,তাহলে সন্তান আমার অনুভূতি বুঝতে ব্যর্থ হবে। এতে আমার ইসলামের বিষয়টিও সে সঠিক আবেগে গ্রহনে ব্যর্থ হতে পারে। মূলত এটি প্রবাসীদের ক্ষেত্রেই বেশী ঘটে থাকে। ইউরোপ আমেরিকায় বহু বাচ্চা আছে যারা ইংরেজী বা অন্য ভাষায় কথা বলে। মায়ের ভাষায় তারা পারদর্শী নয়। সেসব বাচ্চাদের একটা বিরাট অংশই এসব দেশের সাংষ্কৃতি আত্মস্থ করেছে। আর পিতা-মাতার দেশের সাংষ্কৃতিকে তারা ভালো চোখে দেখেনা বা হাস্যকর মনে করে। এতে এসব পিতা-মাতা সন্তানদের থেকে মানুষিকভাবে দূরে অবস্থান করে। অনেক পিতা-মাতা নিজেদেরকে দোষারোপ করেন এবং গোপন কষ্টে জীবন পার করেন। আমি নিজে এমন কিছু মানুষ দেখেছি। আবার এমন মানুষও দেখেছি যারা এরূপ ক্ষেত্রে সন্তানকে নিজেদের মত করেই গড়ে তুলেছেন।

আসলে কোনো সন্তান যেখানেই জন্মগ্রহন করুক না কেন তার পিতা-মাতাকে কেন্দ্রকরেই তার সবকিছু গড়ে ওঠে। পিতা-মাতা তাকে যে শিক্ষা দেয় ,সেটাই তার অন্তরের শিক্ষা। পিতা-মাতা যেটাকে ভালো বলে,সেও সেটা ভালো জেনে বড় হয়। আর তার জীবন দর্শনের মধ্যে পিতা-মাতা প্রদত্ত শিক্ষাটা অন্তরে গেথে থাকে। পরবর্তীতে চারিপাশে সেটার ব্যতিক্রম দেখে তার ভেতর প্রশ্ন তৈরী হয়। সেসময়টাই হল অভিশাপ অথবা আর্শিবাদের সময়। এই সময়ে যদি পিতা-মাতা তার সন্তানকে সঠিকভাবে গাইড করতে পারে,তাহলে উক্ত সন্তানটি তার পিতা-মাতার শিক্ষাটির সাথেই জীবনকে পরিচালিত করবে। আর সে সময় যদি পিতা-মাতা অবহেলা করে,অন্যদের উপর নির্ভর করে বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে উক্ত সন্তান স্থানীয় সাংষ্কৃতির উপর গড়ে উঠবে।

যেসব পিতা-মাতা বেড়ে ওঠা বাচ্চাকে সঠিক সময়ে নিজের আবেগ প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়,তারাই বাকী জীবন কেদে কাটায়। আর শুরুতে যেটা সহজ,পরে সেটা অনেক কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে পিতা-মাতার একাডেমিক শিক্ষা সহায়ক হলেও সেটিই একমাত্র নিয়ামক নয়। বরং তাদের নীতি,তৈনিকতা,আদর্শ,ইচ্ছা আকাঙ্খাটাই প্রধান। তাই প্রায় নিরক্ষর পিতা-মাতার সন্তানও তাদের ছায়ায় তাদের মনের মতই গড়ে ওঠে,আবার উচ্চ শিক্ষিত পিতা-মাতার অনেক সন্তানই তাদের চিন্তা বিরুদ্ধ আচরনে অভ্যস্ত হয়ে গড়ে ওঠে।

আমি দেখেছি ভারতীয় সেই মেয়েটি মেহেক, যখন দশ বছর বয়ষ্কা, তখন অবলীলায় ৩টি ভাষায় কথা বলছে। সাবলিলভাবে সে চারিপাশের মানুষের সাথে ভাবের আদান প্রদান করছে। তারা হিন্দু কিন্তু মুসলিমদের সাথে কিভাবে আচরন করতে হয়,কোন কথা কখন বলা যায়,কখন যায় না,সেটাও তারা পুরোপুরি জানে। অবাক হয়েছি অনেক। তবে তার মাকে দেখলাম সন্তানদের পেছনে লেগে থাকত। একটা সময় পর্যন্ত তিনি শ্রম দিয়েছেন আর তাই সন্তানরা তার মনে মত হতে পেরেছে। এখানে আমি কোনটা প্রকৃত ভালো,কোনটা মন্দ সে প্রসঙ্গ আনিনি, বরং দেখানোর চেষ্টা করেছি কিভাবে সন্তান তার পিতা-মাতার চিন্তার অনুরূপ হয়।

রসূল(সাঃ)বলেন-প্রত্যেক মানব শিশুই ফিতরাতের উপর বা ইসলামের উপর জন্মগ্রহন করে, পরবর্তীতে তার পিতা-মাতা পরিবেশের কারনে সে ভিন্ন ধর্মের হয়।....

পিতা-মাতার সহচর্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেসব মুসলিম পিতা-মাতা চান তাদের সন্তান তাদের চিন্তার অনুরূপ হোক। ইসলাম পালিত হয়না এমন সমাজে তাদেরকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়। কারন তারা যা শিক্ষা দেন,পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠান থেকে তার বিপরীতমুখী বিষয় সন্তানরা শিখে থাকে। তাই ছোট থেকেই নিজের ভাষাটা শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। নিজের দেশের সাংষ্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এতে উবয়ের অন্তরের বন্ধন,আবেগ সঠিক মাত্রা পাবে। এভাবে তাকে সঠিক শিক্ষাটি দেওয়া সহজ। এতে তার সঠিক ভিত্তি তৈরী হবে। আর সেটা আত্মস্থ করতে পারলে সঠিক আবেগে ইসলাম ইনপুট করানো সম্ভব। পিতা-মাতা যে আবেগে যা বলবেন,তারা সেটা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারবে। কোনো বিধান ভালো হলেই মানুষ গ্রহন করেনা,যতক্ষন না সেটার গুরুত্ব উপলব্ধী করে সঠিক নিয়মে। পিতা-মাতাকে খুশী রাখা কেন জরুরী,সেটা বুঝতে পারলে তারা সারা জীবনেও পিতা-মাতার প্রভাব বলয়ের বাইরে যেতে চাইবে না। বসবাসকারী দেশকে তারা বিদেশ হিসেবেই অনুধাবন করবে,যদিও সেখানেই তাদের জন্ম। আর যদি নিজের দেশও মনে করে,তবে পিতা-মাতা ও তাদের দেশকে সম্মান করবে।

ইসলাম অঞ্চলগত জাতীয়তার নাম নয়,বরং এটি একটি আইডোলজী বা জীবনাদর্শ। কিন্তু দেশের বিষয়টি বা স্থানীয় সাষ্কৃতির বিষয়টি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তার সঠিক আবেগ তৈরীতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। একজন আদর্শ পিতা-মাতা সন্তানকে সঠিক শিক্ষাই দিয়ে থাকেন। তাই পিতা-মাতাকে পূর্বেই প্রস্তুত থাকতে হবে ভবিষ্যতের জন্যে।

আখিরাতে সর্বোচ্চ সম্মানিতদের অন্তর্ভূক্ত হবে আলিম সন্তানের পিতা-মাতা।

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৯ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355041
২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০২:২০
শেখের পোলা লিখেছেন : সহমত৷ সঠিক কথাই বলেছেন৷ কানাডাতেও দেখি অনেক বাবা মা তাদের বাচ্চাদের সাথে ইংরাজীতে কথা বলে৷ আমি বলি এটা ঠিকনা৷ তার সাথে বাংলা বলাই উচিৎ৷ যাতে যোগাযোগে ফাঁক সৃষ্টি হবে না আর তার মাতৃ ভাষাটাও শেখা হবে৷ ধন্যবাদ৷
২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:১৪
294846
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ চাচাভাই....উপলব্ধী সঠিক। সেইসব পিতামাতা এমন এক সময় বোঝে যখন চারা চারা বিশাল গাছে পরিনত হয়েছে...তখন আর ওসব সার টার কাজ করেনা...কারন তার শেকড় অন্য কিছু পাচ্ছে...
355056
২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টটটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাদের দেশে অনেক বাবা মা ই সন্তানের ইংরেজিতে কথা বলতে পরা এবং বাংলা না জানা কেমনে করেন কৃতিত্বের লক্ষন!
২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৫
294874
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। জাজাকাল্লাহ খায়রানHappy
355076
২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৬
আবু জান্নাত লিখেছেন :
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আগে তো সন্তানের পিতা হোন।
মা-শা আল্লাহ, আপনার চিন্তাধারা খুব সুন্দর।
বাস্তাবায়নের অপেক্ষায় থাকুন। এখনকার সাজেশান্স তখনকার বা্স্তবায়ন। দারুন।

২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫৪
294948
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি আমার ধারনা আমাকেও এমন একটা পরিস্থিতিতে আসতে হবে যখন সন্তানকে অন্তত ৩টা ভাষা মিখতে হবে। তাই বিষয়টা চিন্তায় আছে Happy
355092
২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৩৮
আফরা লিখেছেন : লিখাটা ভাল যদিও বাস্তবতা একটু কঠিন ।তবে শিশু বয়স থেকে গাইড করলে একটা বাচ্চা ১০টা ভাষা আয়ত্ব করতে পারে ।

ধন্যবাদ ।
২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫৬
294949
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি এটা সহজ নয়,তবে বাচ্চাদেরকে গাইড করলে তারা অনেক ভাষা শিখতে পারে দক্ষতার সাথে। বাচ্চার মাকে অনেক বেশী দক্ষ হওয়া জরুরী। কারন বাপ হল বদের বদ.....
355139
২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:০৩
ছালসাবিল লিখেছেন :
২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫৬
294950
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহ আমাকে সুন্দর সুন্দর সন্তান দান করুন,যারা আমার আখিরাতের খাতায় নেকী উঠাতে থাকবে...
355154
২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১২
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:৩১
295005
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান
355176
২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫১
ঝিঙেফুল লিখেছেন : পুটি পরিবারের ছবিগুলো ভালো লেগেছে।
২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:৩২
295006
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি মোটে ৫ টা হয়েছে। আরো ৫ টা বাকী আছে। কিন্তু সম অধিকারের কথা বলে পুটির মা সবগুলোর নাম নিজের পছন্দে রাখল...Surprised Surprised Surprised
355456
২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:১৪
গন্ধসুধা লিখেছেন : মাশা আল্লাহ।সুন্দর উপলব্ধি।আমার জন্য রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করবে।জাজাকাল্লহু খইরান।
২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫২
295176
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। সন্তানদেরকে লালন পালন করতে পারলে তারা নাযাতের ওছিলা হতে পারে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File