নিউ চায়না.....৬
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৩১:০০ সকাল
কাপু(উঁচু স্থান) নামক একটি চমৎকার স্থানে সরকার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরী করেছে। আমাকে একা আসতে দেখে কর্মকর্তারা অবাক হল। এখানে ঘন্টাদুয়েক মিটিং করলাম। তারপর তাদের উপাদেয়(!) খাবার খেলাম। এরা সর্বপ্রথম আপ্যায়ন করে গ্রিন টি দিয়ে। গ্লাসে বা কাপে গ্রিন টি দিয়ে গরম পানি ঢেলে দেয়,এটাই হল চা। স্বাদ তিতা তবে শরীরের জন্যে ভাল। চা শেষ হলে আবারও গরম পানি ঢেলে দেয় সেখানে ,সেটা শেষ হলে আবারও এবং সেটা শেষ হলে আবারও। এভাবে বহুবার গরম পানি ঢাললেও চা পাতা থেকে রস বের হতে থাকে। গ্লাসের পানি শেষ হলেও তা গরম পানিতে পূর্ণ করা এদের রীতি। এ থেকে নি®কৃতি পাওয়ার উপায় হল, শেষেরবার গ্লাসে চুমুক না দেওয়া,তাহলে তারা বুঝবে,আমার চা পান শেষ হয়েছে। দুপুরে এখানকার ম্যানেরজার মি: এ্যালেন উ আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিলেন।
বিকেলে ট্রাউজার,টি শার্ট এবং কেড্স পরে বের হলাম। একটা রেস্টুরেন্টে লা-মিয়ান বা স্যুপ নুডুলস খেলাম। এক গামলা নুডুলসের সাথে ছিল মাশরুম,সবুজ শাক সব্জী,ডিম। সাথে খেলাম বাদাম। বের হয়ে হাটতে থাকলাম। আগামী পরশু আমার একজন কাস্টমার আসবে এখানে। তাকে ট্রেন স্টেশন থেকে রিসিভ করতে হবে,তাই ট্রেন স্টেশনটি পায়ে হেটে চিনতে চাই। হাটতে থাকলাম। গতকাল রিক্সায় উঠে যেদিক দিয়ে এসেছিলাম সেদিক ধরেই হাটলাম। হাটতে ভাল লাগছিল। ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে যখন হাটছিলাম তখন কেন জানি খুব ভাললাগা কাজ করছিল। একবার মনে হল ফ্লাইওভার মাথার ওপর ভেঙ্গে পড়লে কেমন হবে ! কিন্তু পরক্ষনেই আবার মনে হল এতটা শক্তিশালী জিনিস ভেঙ্গে পড়ার আগে একটু আওয়াজ তো দিবে,তাতেই সরে যাব। এক লোককে দেখলাম খুব যন্ত করে রাস্তা পরিষ্কার করছে,আমি খানিকক্ষণ দাড়িয়ে তার রাস্তা পরিষ্কার করা দেখলাম। হাতের ডানে কংক্রিটের খাল এবং বায়ে একটি পাহাড়। অতি সবুজ এই পাহাড়। খুবই পরিকল্পিতভাবে এটা তৈরী করা হয়েছে। ডানের খালটি দিয়ে শহরের পানি প্রবাহিত হয়। এটা খুবই মনোরম করে তৈরী করা হয়েছে। বেশ গভীর এই খালে নৌকা,ছোট ট্রলারও চলে। খালের পাশ ধরে অনেকদূর বিস্তৃত মনোরম পার্ক। সেখানেও আছে কৃত্তিম জলাধর এবং বহু রকমের বৃক্ষরাজি।
হাটতে থাকলাম। একটা ছোট ব্রিজের ওপর উঠে মনে করতে পারলাম না গতকাল কোনদিক থেকে এসেছিলাম। একজনকে ট্রেনের ছবি দেখিয়ে বললাম- নালি(কোথায়) ? তিনি ইশারায় পথ দেখালেন। খানিক পর আমি ট্রেন স্টেশন দেখতে পেলাম কিন্তু সেখানে না গিয়ে আশপাশে ঘোরাফিরা করতে লাগলাম। এখানে রাস্তার পাশে যে সুন্দর ড্রেন দেখলাম তার সৌন্দর্যও আমাকে মুগ্ধ করল। পাথরের কারুকাজ করা পরিষ্কার পানির সে ড্রেনের পাশে বসে রইলাম খানিকক্ষণ।
এবার অসলাম পাহাড়ের বিপরীত পাশে। এখানে দেখলাম প্রচুর লোকজন গিজগিজ করছে। খানিক পর বুঝতে পারলাম এটা বাচ্চাদের স্কুল এবং তাদের কোনো বিশেষ পরিক্ষা চলছে। তাদের পিতা-মাতা,দাদা-দাদীরা ভীড় করেছে। রাস্তার পাশে বরই বিক্রি হতে দেখলাম। দুই পকেট ভর্তি করে কিনলাম কিন্তু স্বাদ তেমন ভাল লাগল না। বরই খেতে খেতে হাটছিলাম। বাচ্চারা স্কুল থেকে বের হয়ে বিভিন্ন দোকান থেকে খাবার জিনিস কিনছে। এটা বিশ্বের সব শিশুর স্বভাব। স্কুল থেকে বের হলে তাদেরকে কিছু না কিছু কিনে দিতেই হবে। স্কুলটি সাংঘাতিক চমৎকার। পাহাড়ের পাদদেশে এক সবুজ ছায়াঘেরা পরিবেশে সুন্দর শৈল্পিক অট্টালিকাটি একটি স্কুল। এখানে ঢুকলেই বাচ্চাদের ভাল লাগবে। ভাল পড়াশুনার জন্যে ভাল পরিবেশ অপরিহার্য্য। বাচ্চারা খুবই হাশিখুশি। কেউ কেউ এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে,কেউ আবার কৌতুক প্রবন। কেউ তাদের অভিভাবকদের হাত ধরে ঝুলে পড়ছে। কেউ তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দোকানে। কেউ আমার দিকে বিশ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকছে,কারন আমি দেখতে তাদের মত নই। আমি হাটাহাটি করছি সামনের বিশাল প্রাঙ্গনে। সামনের পুরোটাই টাইলসে মোড়া। ছোট ছোট জলাশয়ের ওপর ছোট ছোট ব্রিজ। বেশ কিছু পুকুর দেখলাম তাতে পদ্মফুল। আমার দেশের কিছু পুকুরের কথা মনে পড়ল,যেখানে পদ্ম ফুটে থাকত। ভাল লাগল। পাহাড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।
এবার পাহাড়ের অন্যদিক দিয়ে পাহাড়িয়া পার্কে প্রবেশ করলাম। সবুজ আর সবুজ,এর মাঝে চমৎকার করে তৈরী করা রাস্তা। হাটতেই ভাল লাগে । কিছু লোকজনও হাটতে এসেছে। আমি সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের ওপরে উঠতে লাগলাম। বহুদিক থেকে সিড়ি ওপরের দিকে উঠে গেছে। মাঝে মাঝে বিশ্রামের স্থান। দুস্থানে দুজোড়া কপত কপতীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেছি। এরা পূর্বে এরকম ছিলনা। এবার দেখছি এদের সাং®কৃতিক উন্নতি বেশ খানিকটা ঘটেছে। রাস্তাঘাটে এক অপরকে জড়িয়ে নির্দিধায় চলাচল করছে।
পাহাড়ের মাথায় উঠে আসলাম। একটি বিশাল মন্দীর রয়েছে এখানে। গম্বুজের ওপর গম্বুজ দিয়ে এটি গড়া। গোলাকার স্থাপনাটি আকাশ ছুয়েছে। কিন্তু মন্দীরটি সচল নয়। এগুলো এখন পুরাকীর্তির মর্যাদা নিয়ে দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে। বেশ খানিকক্ষন এখানে হাটাহাটি করলাম। রাতে যখন রাস্তায় হাটাহাটি করছিলাম তখন হঠাৎই পাহাড়ের ওপর এক বিশাল আলোকবর্তিকা আবিষ্কার করলাম। একটি সুউচ্চ মন্দীর যা নানারকম আলোয় আলোকিত। বুঝলাম এটি বিকেলে দেখা সেই মন্দীর; যাকে ধনীরা টাকার সদ্যবহারের মাধ্যমে ইবাদত বন্দেগী করছে।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন