খাদক ইন ওয়াশিংটন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:৪১:৪২ রাত
আজ রবীবার ২২শে নভেম্বর। গতরাতে পরিকল্পনা করছিলাম কোথায় যাওয়া যায়,কিন্তু কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছিলাম না। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন সহকর্মীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বেশ কয়েকটি স্থানের নাম জেনেছি কিন্তু সেগুলো এমন স্থানে যেখানে যেতে ৪/৫ ঘন্টা সময় লাগবে ,সেটাও ব্যাপার ছিলনা কিন্তু শীতের আগমনে সেসব রাস্তায় ব্যপক তুষারপাত হয়েছে তাই সেসব পরিকল্পনা বাদ দিলাম।
রাতে গুগলের থেকে তেমন কোনো আওয়াজ না পেয়ে যখন চিন্তায় পড়ে গেলাম,তখন খাদকের মাথায় খাদ্য সংক্রান্ত চিন্তা ঢুকে গেল আর অমনি ওয়াশিংটনের ভ্যাঙ্কুভারের আশপাশে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট খোজা শুরু করলাম। এটা করতে গিয়ে কামাস ও ওয়াসুগাল নামক দুটি ছোট ও পুরোনো শহর পেয়ে গেলাম ভ্রমনের জন্যে।
রাতে ঠান্ডা পড়েছিলো বেশ,সকাল প্রায় ৯টায় বের হলাম,তখনও তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের খানিকটা নীচে। শীতে ঘাসের উপর সাদা তুষার জমে,এরকম তুষার রাস্তার উপরও পড়ে,যা দেখা যায় না। এটাকে ব্লাক স্নো বলে। এর ফলে রাস্তা খানিকটা পিচ্ছিল হয়ে যায়। গাড়ী ব্রেক করলে অনেক সময় না থেমে পিছলে যায়। কিন্তু আজ রোদ ঝলমলে দিন,বেশ ভালো লাগল।
হাইওয়ে ৫ ধরে পোর্টল্যান্ড এয়ারপোর্ট অভিমূখে রওনা হলাম। হাইওয়ে ২০৫ দিয়ে এয়ারপোর্টকে রেখে সামনে গেলাম এবং কলাম্বিয়া নদীর উপর অবস্থিত বড় ব্রিজটি পার হয়ে ভ্যাঙ্কুভারে পৌছলাম। সেখানথেকে হাইওয়ে ১৪ ধরে কামাস নামক শহরে পৌছলাম। এই ছোট্ট শহরটা বেশ পুরোনো। শহরের রাস্তায় হাটাহাটি করলাম। মনে হচ্ছিলো পুরোনো লোক আমি। রবীবার হওয়ায় প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ। কিন্তু হাটতে ভালো লাগছিলো। সত্যি বলতে কি আমার এরকম পুরোনো শহরগুলো খুবই ভালো লাগে। আধুনিক ধহরের চাইতে পুরোনোটা বেশী টানে। কেন তা জানিনা কিন্তু আমার পুরোনো জিনিসপত্র দেখতে ভালো লাগে।
এবার এখানকার নদীর ধারে গেলাম। কামাস ও ওয়াসুগাল হল ক্লার্ক কাউন্টির দুটি শহর,যা পাশাপাশি অবস্থিত। পোর্ট অব ওয়াসুগাল গিয়ে একটু হাটতেই ঠান্ডা অনুভূত হল। প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস ঝড়ের বেগে প্রবাহিত হতে থাকল। এটা মূলত ব্যক্তিগত ছোট ছোট নৌযানের পোতাশ্রয়। রয়েছে শখের মাছ ধরার ছোট ছোট আধুনিক নৌযান ,স্পিডবোট,প্রমোদ তরী ইত্যাদী। পাশেই রয়েছে সুন্দর সুন্দর বাড়ি। সাধারনত ধনীরা এরকম বাড়ী পছন্দ করে যা নদী,সাগর বা লেকের ধারে সুন্দর করে গড়ে তোলা। নদীর উপর ভাসমান একটা ক্যাফে ছিলো কিন্তু ঠান্ডা প্রোকোপে যাওয়া হলনা,আর সেখানে যেহেতু খাওয়ার নিয়ত নেই তাই সেটাই মূল কারন হিসেবে ধরলাম।
ওয়াসুগাল অভিমূগে যাত্রা করলাম। এখানকার শহরের ভেতর এক ঐতিহ্যবাহী উল কারখানা আছে। কারখানার সাথে তাদের পণ্য বিক্রীর দোকানও আছে,প্রবেশ করলাম। এরা নারী,পুরুষের বিভিন্ন রকমের,বিভিন্ন ঋতুর পোষাকসহ উলের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরী করে। একটা কম্বলের দাম দেখলাম হাজার ডলারের উপরে। উলের তৈরী ব্লেজার এবং কিছু শার্টের দাম দেখলাম ৫শত ডলারের উপর। এসব দেখে আর থাকতে মন চাইলো না। বেশীরভাগ মানুষই দেখলাম আমার মত দেখেই বিদায় নিচ্ছে। আমিও বিদায় নিলাম।
এর পাশেই একটি টানেল রয়েছে যা হাইওয়ের নীচ দিয়ে ওপাশে কলাম্বিয়া নদীর ধারে চলে গেছে। সুন্দর টানেল দিয়ে গেলাম ওপাশে। আহা খুব সুন্দর নদীর এপাশের দৃশ্য। প্রশস্ত নদীর একপাশে বেশ সুন্দর গাছগাছিপূর্ণ ভূমী,পাশে রয়েছে সবুজ পাহাড় । নদীর এপাশে রয়েছে খাড়া পাথরের পাহাড়। অসম্ভব সুন্দর লাগল। এখানে একটি ভাসমান পন্টুন রয়েছে,যা কাঠ স্টিলের তৈরী। এটির নীচে রয়েছে বিশেষ শক অবজরভার,যার কারনে পন্টুনটি ঢেউয়ের তালে দুলতে থাকে। পানির লেভেলের থেকে মাত্র এক হাত উপরে এটি। আমি যখন তার উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম,প্রচন্ড বাতাশে তৈরী হওয়া ঢেউয়ে তা দুলছিলো। আমার বেশ ভালো লাগল। এখানে কোনো নৌযানই ছিলনা। এক কোনে এক লোককে সারা শরীর জ্যাকেটে মুড়ে হুইলে মাছ ধরার চেষ্টায় রত দেখলাম। মাছ কেমন পাচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই একগাল হেসে জানালো চেষ্টায় রত আছে,এখনও মিলেনি কিছুই। ঢেউয়ের তালে দোদুল্যমান রাস্তা সদৃশ পন্টুনের উপর হাটতে থাকলাম,খালো লাগছিলো। কিন্তু বেরসিক ঠান্ডা হাওয়ায় টেকা দায়। চলে আসলাম।
এবার আসলাম স্যান্ডী সুইমিং হোল নামক স্থানে আসলাম। এটা হল ওয়াসুগাল নদীর একটি স্থান। আশপাশে পাহাড়ের উপর সুন্দর সুন্দর বাড়ি দেখলাম। বহু মানুষ প্রকৃতির সান্নিধ্যে এভাবে থাকতে পছন্দ করে। পাহাড়শ্রেনীর ভেতর দিয়ে সুন্দর নদী প্রবাহিত। নদীর দুপাড়ে দেখলাম চমৎকার সব বাড়ী নির্মিত হয়েছে। তীব্র স্রোতস্বিনী নদীর তীরে ছোট ছোট নূড়ী পাথরের সহাহার। তার উপর দিয়ে হাটলাম। বিশাল বিশাল বক দেখলাম মাছের তপস্যার রত। এরকম একটি লম্বা গলার বক জবাই করলে আমার ৩/৪ দিন অনায়াসে চলে যেত,কিন্তু আইনকানুন বড্ড বেরসিক।
এবার গুগলে দেখলাম এই এলাকার আশপাশে আর কি কি আছে। দেখলাম ডোগান জলপ্রপাত ও স্যামন জলপ্রপাত। রওনা হলাম পাহাড়ের আকা বাকা রাস্তা ধরে। সুন্দর সুন্দর পাহাড় আর ফার্ম হাউস দেখলাম। অনেক স্থানে বড় বড় গরু চরতে দেখে খুব ভালো লাগলো। কিন্তু ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যাওয়ার পর নেটওয়ার্ক ফ্রিকোন্সেীর জটিলতায় জিপিএস বন্ধ হয়ে গেল। বেশ খানিকটা পাহাড়ী পথে এদিক সেদিক করলাম। ইতিমধ্যেই দুপুর একটার বেশী বাজে। গতকাল দুপুরে নুডুলস খেয়েছিলাম,এরপর এটা সেটা খেয়ে রাত পার করেছি। আজ সকালে চলার পথে অল্প কিছু এমন্ড আর কফি। ক্ষুধায় পেটে আওয়াজ করছে। আর তো থাকা যায় না !
ফিরতি পথ ধরলাম। পরিকল্পনা ছিল টেস্ট অব ইন্ডিয়া নামক রেস্টেুরেন্টে লাঞ্চ করব,কিন্তু ঘটনাচক্রে আগে চলে আসলাম ভ্যাঙ্কুভারের চাটনী'স নামক আরেকটা ভারতীয় রেস্টেুরেন্টে। মাত্র ৯.৯৫ ডলারে বুফে লাঞ্চ,বেশ সস্তা। আইটেমগুলো অসাধারন। ভাত ও নান রুটির সাথে বেশ কয়েক রকম সব্জী,আস্ত বুটের ডাল,কয়েক রকম চিকেন,ভেড়ার গোস্ত আর ৩/৪ রকমের মিস্টান্ন। আমি এক প্লেট ঝেড়ে দিলাম ,আর মনে হল এক অসাধারন জিনিস খেলাম। চিলি চিকেন নামক আইটেমটি বহুদিন মনে থাকবে। এটি একটু বেশী মশলাদার চিকেন,যা বেল পেপার বা ক্যাপসিক্যামের সাথে রান্না হয়েছে ভোনা ভোনা করে। এই জিনিস আর ভেড়ার গোস্ত ৩ প্লেট টানলাম। এরপর গোলাপজাম নামক মিস্টি দেখে শরীরে অন্যরকম গতি অনুভব করলাম। সেই গতিতে ৪পিছ টেনে ক্ষ্যান্ত হলাম,কারন আনুভব করলাম পেট থেকে মাথা পর্যন্ত পূর্ণ হয়েছে। আরেকটু বেশী টানলে সবটাই বের হয়ে আসবে,কিছুই আর সাথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবেনা।
রেস্টুরেন্টের মালিক তার পরিবার নিয়েই এটি চালান। আমেরিকানরা দেখলাম এদের খাবারের স্বাদ বেশ পছন্দ করছে। ব্যবসা জমজমাট। পাশেই আছে ছোট্ট একটা স্টোর। এক বোতল খাটি সরিষার তেল কিনলাম আর ৪০০গ্রামের প্যাকেটে থাকা তেতুল কিনলাম ২কেজী। প্রায় প্রতি রাতেই তেতুল খাই। এ জিনিস আমার অনেকটা নেশার মত। একেবারে ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগে।
আসলেই আজকের ভ্রমনটা ছিল অসাধান,কারন হল দুপুরের এই খাবারটা। আসার পথে রাস্তায় একটা গাড়ি নষ্ট হয়ে দাড়িয়ে থাকার কারনে কলাম্বিয়া নদীর উপর অবস্থিত পোর্টল্যান্ড ঢোকার ব্রিজটির প্রবেশ মুখে প্রায় ৩০ মিনিট ট্রাফিক জ্যাম ছিলো। মাত্র কয়েক মিনিট একটি লেন বন্ধ থাকলেই মাইলের পর মাইল জ্যাম লেগে যেতে পারে,কারন এই রাস্তাটি বেশ ব্যস্ত। ফেরার পথে কোরিয়ান স্টোর থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফিরলাম। এখন রাত ১২টা বাজে কিন্তু এক মগ দুধ ছাড়া কিছুই খাইনি। একটুও ক্ষুধা লাগেনি, এবার বোঝেন কি টানা টেনেছি......
বিষয়: বিবিধ
১৬২৬ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব টানলেন তাইলে। ওখানে গিযা একটা রেস্টুরেন্ট দিলে কেমন হয়!!
জিন্দাবাদ খাদক !!!
মা-শা আল্লাহ মা-শা আল্লাহ মা-শা আল্লাহ
এত খাবার খেয়েছেন???????
আপনার জায়গাগুলো গুগলে গিয়ে আমিও ঘুরে এলাম।
খেতে ইচ্ছা করছে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন