এস্টোরিয়া টু লং বীচ পেনিনসুলা

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪২:৪৩ সকাল



বেশ কয়েকদিন ঘোরাঘুরি না হওয়াতে নিজের ভেতর কেমন যেন করছিলো। আশপাশের অধিকাংশ স্থানেই যাওয়া হয়েছে। শীত চলে আসছে তাই তার আগেই ঘোরাঘুরিটা ঝালাই করতে হবে। ঠিক করলাম এস্টোরিয়া যাব।

রবীবার ১৫ই নভেম্বর,২০১৫, কিন্তু ভেবে কুল পেলাম না আকাশ হঠাৎ ফুটো হল কিভাবে !! গত কয়েক মাসে এরকম বৃষ্টি হয়নি। সারারাত বৃষ্টি তো হয়েছেই,সকালেও থামছে না। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র আমি না। এর মধ্যেই দৌড় দিলাম। পুরো ওরেগন জুড়ে বৃষ্টি চলছে।

হাইওয়ে ৫ ধরে পোর্টল্যান্ড হয়ে হাইওয়ে ২৬ দিয়ে যাত্রা করলাম। এরপর একটি সুন্দর স্থানে যাত্রাবিরতী করলাম। এটি যে কোন স্থান তা মনে করতে পারছি না তবে সুন্দর পাহাড়ী নদীর প্রেমে পড়লাম। বৃষ্টি তখন থেমেছে । খরস্রোতা নদীটি আরও তীব্রতর হয়েছে। সুন্দর বনভূমির ভেতর দিয়ে চলমান নদীর সৌন্দর্য দেখে অসহ্য হয়ে আর দাড়াতে পারলাম না। রাস্তা ধরলাম । এবার রাস্তার বামে একটি এলাকা দেখলাম নাম তার ক্যাম্প ১৮। নামের মধ্যে আর্ট আছে আর একটু পুরোনো আবহ দেখে ভাবলাম ভালই তো ! কিন্তু চলে গিয়েও আবার ফেরৎ আসলাম।









এ এক অদ্ভূত সুন্দর স্থান। এটি অবস্থিত উত্তর ওরেগন কোস্টের ক্লাটশপ কাউন্টিতে। এখানে রয়েছে একটি পুরোনো রেস্টুরেন্ট এবং লগ মিউজিয়াম। প্রায় শত বছর পূর্বে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করে বিশাল বিশাল গাছ কাটা হয়েছেছিলো সেসব যন্ত্রপাতিও এখানে রাখা আছে। একটি ট্রেনের ইঞ্জিন দেখলাম যা ১৯০৩ সালের। পুরোনো ক্রেন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ রয়েছে। তবে যে দৃশ্য দেখে থামতে বাধ্য হয়েছিলাম সেটি হল এই লগ রেস্টুরেন্ট। এটি তৈরী করতে বিশাল বিশাল বৃক্ষ ব্যবহার করা হয়েছে। বাইরে বড় বড় গাছের গুড়ি খোদাই করে জীবজন্তুর মূর্তি তৈরী করে রাখা হয়েছে। দরজার হাতল হিসেবে আছে আস্তু একটা কুড়াল। কাঠের দরজার একেকটি পাল্লার ওজন ৫০০ পাউন্ড। ভেতরে বাইরের প্রায় সবকিছুই কাঠের। ছাদে সুবৃহৎ গাছের কান্ড ও মোটা মোটা তক্তা ব্যবহার করা হয়েছে। একটি ডাইনিং টেবিল দেখলাম পুরোটাই গাছের কান্ড দিয়ে তৈরী। অন্তত এক হাত পুরু কাঠের টেবিলের পায়াটাও মূল কান্ডকে কেটে বানানো হয়েছে।

উপরের সিলিংয়ে কয়েকটি বড় হরিনের শিং একত্রিত করে ঝুলানো হয়েছে। এখানে সেখানে বাঘ,ভাল্লুক বানানো। ভেতরে আরেকটি ফ্লোর রয়েছে ,সেখানে মদের বার তৈরী করা হয়েছে। রেস্টুরেন্টটির কারুকাজ অামাকে খুব মুগ্ধ করল। যাত্রাপথে অামি চিপস,বিশেষভাবে রোস্টেড এ্যামন্ড,সিদ্ধ ডিম,জুস এসব রেখেছিলাম,খেয়েছিলামও। সাধারনত বাইরে আমি তেমন একটা খাইনা। আর এখানে আমার খাওয়ার মত খাবারও ছিলনা। হঠাৎ মনে হল না খাই, অন্তত রেস্টুরেন্টের টয়লেটটা একটু ঘুরে না গেলে মানুষ কি ভাববে ! ভেতরে গিয়ে বসলাম......আহা টয়লেটও ব্যপক সুন্দর। ভেতরের দেওয়ালে ওয়ালম্যাট রাখা হয়েছে। খেয়াল করলাম এগুলোর গায়ে দাম লেখা, মানে বিক্রীর উদ্দেশ্যে রাখা। মার্কেটিং এর বুদ্ধি ভালোই। মানুষকে চাপমুক্ত রেখে ব্যবসা করাই উত্তম।



পিটপিট বৃষ্টি হচ্ছিলো,এর মধ্যেই আশপাশটা ঘুরে দেখলাম। পেছনেই প্রবাহিত নেহালেম নদী। এটি পাহাড়ী খরস্রোতা নদী। অসম্ভব রূপবতী নদী এটি। বনের ভেতর দিয়ে প্রবল বেগে ও স্বশব্দে প্রবাহিত হচ্ছে। পেছনের অংশটিও এরা অত্যন্ত মনোরম করে তৈরী করেছে। সর্বত্রই কাঠের কারুকাজ। নদীর ধারে খানিকক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম। ভাবছিলাম আজকের দিনটি আর ফিরে অাসবে না। এভাবেই সামনে এগিয়ে যাব। মূলত জীবন এরকমই। সময়কে ফিরে পাওয়া যায় না। পুরো জীবনটাই মুসাফীরের.....



এবার হাইওয়ে ১০১ হয়ে বহুদূর আসলাম। ওয়ারেংটন এলাকায় একটা স্টোরে যাত্রাবিরতী করলাম এবং এক রেস্টুরেন্টে ধুমধাম খেলাম। এ সময়ের একটি বিশেষ আইটেম পামকিন আইসক্রিম খেলাম। মিস্টি কুমড়া দিয়ে আইসক্রিম বানানো যায় জীবনে প্রথমবার দেখলামও উপভোগ করলাম,খারাপ না।

এদিকে পাহাড়ী নদী দিয়ে প্রচুর বৃষ্টির পানি নেমেছে। একটি পার্ক দেখলাম খানিকটা পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তার কিছু অংশে পানি উঠে গেছে। রাস্তার পাশ ধরে চিকন খরস্রোতা নদী প্রবাহিত দেখলাম। সি সাইড সহ অনেক গুলো ছোট ছোট শহর পার হলাম। তবে সি-সাইড শহরটি বেশ পরিপূর্ণ ও পরিপাটি। এদিকে প্রচুর হোটেল,মোটেল,রিসোর্ট রয়েছে। মোটরহোম,আরভি পার্ক করার স্থান রয়েছে। বহু অবসরপ্রাপ্ত লোকের কোনো কাজ থাকেনা,তখন তারা মোটরহোম কিনে ভ্রমন করতে শুরু করে। এর ভেতর একটা পরিবার ভালোবাবেই বসবাস করতে পারে। আবার একই জিনিসের ছোট ভার্সন হল আরভি। এটা পিকআপ ভ্যান(আমেরিকাতে ট্রাক বলে)এর পেছনে সেট করে টেনে নিয়ে বেড়ায়। সুবিধামত স্থানে সেট করে কয়েকদিন সেখানে থাকে। এতে হোটেল ভাড়া তারা বাচাতে পারে,তবে পার্কিং ফি একেবারে কম না।

এবার আসলাম এস্টোরিয়া নামক সিটিতে। এটা পশ্চিম ওরেগনের সর্বশেষ শহর। এটা অবস্থিত পাহাড় ও সমতলের একটি অংশে। এর দুদিকে পানি। দূর থেকে দেখতে বেশ দারুন লাগে। কলম্বিয়া নদী এখানে সুপ্রশস্ত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পতিত হয়েছে। নদীর ওপারে ওয়াশিংটন।

নদীর মোহনায় একটি বিশাল ব্রিজ রয়েছে,যা ওরেগনের এ অংশের সাথে ওয়াশিংটনের ইলওয়াকো নামক স্থানের সংযোগ ঘটিয়েছে । ওরেগনের অংশের ব্রিজের অংশটি বিশাল উচু। এর কারন হল বিশাল বিশাল জাহাজ যাতায়াত করে। এখানে বেশ কিছু ইন্ডাষ্ট্রিও আছে। সেতুটি ৬কি:মি: এরও অধিক লম্বা। এর উপর দিয়ে ড্রাইভ করার মজা ঠিক তখনই বেশী অনুভূত হল,যখন ব্রিজটি নীচু হতে হতে পানির সমান্তরালে আসল। দুদিকে পানি আর মাঝ দিয়ে সেতু।

এপাশে সাগরের মুখ,আর তার পাশেই সুন্দর রাস্তা। বড় বড় পাথরের ব্লক রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে,যার উপর ঢেউ আছড়ে পড়ছে। পানির স্তর আর এক ফুট উপরে উঠে আসলে এই রাস্তা প্লাবিত হবে মনে হল। সামনে এগিয়ে গেলাম। এখানকার বাড়ীগুলো সুন্তর। সাগরের কিনার ঘেষা বাড়িগুলোর দাম একটু বেশী হয়। একটি পোর্টও আছে এখানে,যেখান থেকে জাহাজে করে পণ্য আনা নেওয়া করা হয়। আরও সামনে একটি মিউজিয়াম দেখলাম-"কলাম্বিয়া-প্যাসিফিক হেরিটেজ মিউজিয়াম"। ভেতরে গেলাম, এটি ১০৬ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো,তবে ভেতরে দেখার কিচ্ছু তেমন নেই। অযথা সময় নষ্ট মনে হল। শহরের বুক চিরে ওপাশে উটু পাহাড়ী এলাকায় গেলাম,যা সাগরের কিনার ঘেষে দাড়িয়েছে। এটি হল -কেপ ডিজএ্যাপয়েন্টমেন্ট স্টেট পার্ক। মূলত লং বীচ পেনিনসুলার অংশ। ম্যাপে দেখলে বোঝা যায় ওয়াশিংটনের এই লংবীচ পেনিনসুলা মূল ভূখন্ডের সমান্তরালে সরলরেখার মত লম্বা হয়ে সাগরের ভেতরে প্রবেশ করেছে। একটি হাইওয়ে এই উপদ্বীপের শেষ পর্যন্ত চলে গেছে। এটি লম্বায় ২৮ মাইল বা ৪৫ কি:মি:।

এই পার্কের রাস্তা সুপ্রশস্ত নয়,কারন একি একটি লুপ। যেকোনো রাস্তা ধরে আগালে আবার একইভাবে ফেরত আসা যাবে। এদিক দিয়ে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানে নামা যায়,সবটাই সুন্দর গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ পাহাড় ও সাগর সম্পর্কিত। সুন্দর স্বর্পীল রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলাম। শেষের দিকে একটি বাতিঘর আছে,যার নাম- নর্থহেড লাইটহাউস। কয়েকটি লুকআউটে থামলাম। মারাত্মক ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া প্রবাহিত হওয়ার কারনে দেখে সুবিধা করতে পারলাম না,তবে খুবই সুন্দর। অনেক উপরের পাহাড়ের চূড়া থেকে উম্মত্ত প্রশান্ত মহাসাগরের জলরাশির তীরে আছড়ে পড়া দেখলাম। পানির ভেতর খাড়া পাহাড়ের বলিষ্ঠ দাড়িয়ে থাকা দেখলে নিজের ভেতর ধৈর্য আর শক্তির অনুপ্রেরণা জাগে। কিন্তু ঠান্ডার প্রোকোপে দাড়ানো দুষ্কর।



ফিরে আসলাম একই পথ ধরে। ইলওয়াকোর ভেতর দিয়ে ১০১ হাইওয়ে ধরে এবার লং বীচ উপদ্বীপের মূল অংশের দিকে যাত্রা করলাম। এখানকার প্রথম শহর সি-ভীউ থেকে শুরু করে শেষ মাথা অল্লাপা ন্যাশনাশ ওয়াইল্ডলাইফ পার্ক পর্যন্তই মূলত উপদ্বীপ ,আর ইলওয়াকো হল এর গোড়ার অংশ। ইলওয়াকোর পাশে চিনুক পয়েন্টে তিমি মাছ দেখা যায়। সেটার জন্যে আলাদা জাহাজে যেতে হয়। এখানে হেলিকপ্টারে করেও সবগুলো দর্শনীয় স্থানে ঘোরা যায়।



সি-ভীউ শহরটি অত্যন্ত সুন্দর। ধনীরা এখানে অনেক চমৎকার বাড়ি নিয়ে থাকে। শহরটা সুন্দর পরিপাটি। একটি লোকাল মিউজিয়ামে ঢুকলাম। প্রায় একশত বছর ধরে একটি পরিবার নানান রকম জিনিস সংগ্রহ করে এটি তৈরী করেছে। তবে এটা নামে মিউজিয়াম হলেও,আসলে এটি একটি দোকান। এরা নানান রকমের জিনিস বিক্রী করে। সাগরে প্রাপ্ত বিভিন্ন শামুক,ঝিনুক,প্রাচীন ইন্ডিয়ানদের ব্যবহুত জিনিসপত্র ও তার আদলে তৈরী পন্য সামগ্রী,বিভিন্ন পুরোনো জিনিস ও সেসবের রেপ্লিকা বিক্রী হয়।

এবার আসল লং বীচে প্রবেশ করলাম,মানে সাগরের ভেতর প্রবেশ করলাম। একটি গেইটের উপর লেখা আছে পৃথিবীর সবথেকে লম্বা বীচ। কিন্তু আমি শুনেছি বাংলাদেশের কক্সবাজার এর বীচই পৃথিবীর সবথেকে লম্বা। কি জানি, কোনটা সঠিক তবে এ বীচ কাজের বীচ নয়। একটি বড় নোটিশ টাঙ্গানো হয়েছে ,সেখানে সাগরে সার্ফিং করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারন এ অংশে বিশেষ গর্ত থাকায় প্রকান্ড ঢেউ তৈরী হয় এবং সে ঢেউ ফিরে যাওয়ার সময় অন্তর্মূখী স্রোত তৈরী করে,ফলে কেউ সেখানে পড়লে বেচে ফেরা প্রায় অসম্ভব। সাগরের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে তাই ভেজা বালু। কিন্তু এত প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া বইছে যে সেই জমাট বালিও উড়তে শুরু করেছে। আর প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থা হল। ঘোরার জন্যে এদিনটি মোটেও উপযুক্ত নয় জেনেও বের কয়েছি। সমস্যা নেই ,ভালো আবহাওয়াইও একই জিনিসই দেখতাম ,হয়ত তখন গায়ে জ্যাকেট থাকত না,এটাই পার্থক্য।

একবার এক রসকষহীন লোক জীবনে প্রথমবারের মত বহু শখ করে সাগর দেখতে গিয়েছিলো। সেখানে পৌছে বলল-এ কোথায় আসলাম, এখানে দেখার কিচ্ছু নেই, শুধু বালি আর পানি !! আমার অবস্থাও তাই হল, বালি আর পানি দেখে ফিরে আসলাম মিনিট পাচেকের মধ্যেই। এবার লং বীচের হাইওয়ে ধরে ভেতরের দিকে যাত্রা করলাম। লইস লেক স্টেট পার্কে থামলাম। এখানে ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ একটি রাস্তা খুব ভালো লাগল। সে রাস্তা ধরে সামনে গিয়ে আবারও সাগরের সাক্ষাৎ পেলাম। সাগরের গর্জন শুনে আসলেই ভয় করে। চলে আসলাম। এবার আর সামনের দিকে গেলাম না,কারন শেষ মাথা পর্যন্ত বেশ কিছু পার্ক,শহর আর তার ভেতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে সাগরের দিকে,মানে বালি আর পানি। আমি ফিরতি পথ ধরলাম,তবে এবার নিয়ত হল ওরেগনের নিউপোর্ট বে সাইড হয়ে ফেরা।



ব্রিজ পার হয়ে এস্টোরিয়া শহরে প্রবেশ করলাম। শহরের ভেতর খানিক ঘুরলাম। এবার ফিরলাম। এখানে কমাম্বিয়া নদীর উপর একটি বাধ রয়েছে,যা মূলত একটি প্রশস্ত রাস্তা। সেটি পার হয়ে সিসাইড,ওয়ারেংটন হয়ে টিলামুখ অভিমূখে রওনা হলাম। পথিমধ্যে পড়ল ক্যানন বীচ, এ বীচে একটি বিশাল পাথর খন্ড খাড়া হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে,যা দেখতে বহু দর্শনার্থী আসে। এটি একটি খাড়া পাহাড়ের মত, যা পানির উপর নি:সঙ্গ দাড়িয়ে অাছে। টিলামুখ অভিমূখে চললাম।

টিলামুখ কাউন্টির টিলামূখ শহরের টিলামূখ চিজ ফ্যাক্টরীতে যাব। এদের ব্রান্ডের নামও টিলামূখ। অত্যন্ত খ্যাতনামা এই প্রতিষ্ঠান তার চিজের জন্যে। এদের আরও শত শত প্রডাক্ট আছে কিন্তু চিজ দিয়েই শুরু করেছিলো,সেটাই প্রধান। এটি প্রায় শত বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান। এর মালিকানা কৃষকদের হাতে। এই পাহাড়ী সমভূমীতে বিশাল বিশাল কৃষি খামার হয়েছে। সেখানে বড় বড় গরু লালিত পালিত হয়। সে দুধ প্রতিদিন বিশেষ ট্যাঙ্কযুক্ত গাড়িতে করে এই ফ্যাক্টরীতে আনা হয়। প্রতিদিন এই ফ্যাক্টরী শুধু চিজ তৈরী করে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার পাউন্ড বা ৭৬ হাজার কেজী বা ৭৬ টন।

প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ফ্যাক্টরী পরিদর্শন করে। উপর থেকে দেখলাম কিভাবে দুধের বড় বড় সাইলো থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন যন্ত্রপানি ঘুরে কিভাবে চিজ তৈরী হয় এবং কিভাবে তা কেটে ওজন করা হয়,প্যাকেট করা হয়। পুরোটাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়। অত্যন্ত ঝকঝকে তকতকে এই ফ্যাক্টরীটি। আমাদের দেশের অনেক ফ্যাক্টরী প্রকাশে একরকম অার গোপনে আরেক রকম। সাধারণ পণ্য তৈরী করলেও ব্যপক গোপনয়িতা রক্ষা করে। সম্ভবত এর কারন- সেখানকার পরিবেশ ও খাদ্য উপাদান মানসম্মত নয়। কিন্তু এরা তাদের প্রক্রিয়াটি উম্মুক্ত করে রাখে,যদিও প্রযুক্তির বিষয়টি ভিন্ন। তবে ক্রেতা যদি এরকম চমৎকার একটি পরিবেশ অবলোকন করে এবং সকল প্রকিয়া স্বচক্ষে দেখে ,তবে তার সন্তুষ্টি থাকবে ১৬ আনা। এটাই সবথেকে বড় মার্কেটিং। সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। সুন্দর মোড়কে পচা জিনিস ভরে নর্ততী দিয়ে নাচিয়ে টিভিতে প্রকাশ করলেই সেটাকে মার্কেটিং বলেনা। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে কসম থেয়ে পণ্য সামগ্রী বিক্রী না করতে,পণ্যের দোষ গোপন না করতে,মিথ্যার অাশ্রয় না নিতে। ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে নিজের জন্যে যেটি পছন্দ করব, অন্যের জন্যেও সেটি পছন্দ করব। এ কটি বিষয় ঠিক রাখলেই সৎ ব্যবসায়ী হওয়া যায়,আর এই বিষয়টি অন্যের সামনে প্রকাশিত হলে তাকে ব্যবসায়ীকভাবে লোকসানের সম্মুখিত হতে হয়না। কিন্তু খারাপ পণ্য মিথ্যা কথা বলে বিক্রী করলে,মানুষের ক্ষতি করলে ব্যবসায়িকভাবে সর্বদা অনিশ্চয়তার মাঝে বসবাস করতে হয়। সর্বদা রাখঢাক করতে হয়। অতিরিক্ত টেনশনে থাকতে হয়। আর আল্লাহ এসব অসৎ ব্যবসায়ীর মানুষিক শান্তি উঠিয়ে নেন। ফলে তারা দুনিয়াতেও সফল হতে পারেনা।

যাইহোক নীচতলায় নামলাম এবং এখানে তাদের সকল পন্যের ডিসপ্লে করা আছে। ফ্রি স্যাম্পল খেলাম। এবার আসলাম আইসক্রিম খেতে। এরা শত শত রকমের আইসক্রিম তৈরী করে। লাইন ধরে কিনতে হয়। আমিও খেলাম সুপার আইসক্রিম।

সন্তুষ্টচিত্তে ফিরতি পথ ধরলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। নিউপোর্ট বে হয়ে বাসায় ফিরলে অন্তত আড়াই শত কিলোমিটার রাস্তা চলতে হবে। গুগল ম্যাপ থেকে একটি বাইপাস রাস্তা খুজে পেলামযিা পাহাড়ের ভেতর দিয়ে চলমান। সেদিক দিয়ে রাস্তা সেলামের সাথে মিলেছে। হিসেব করে দেখলাম পুরো ১২ ঘন্টা ড্রাইভ করেছি,তবে আমি ক্লান্ত হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ একটি চমৎকার দিন অতিবাহিত করেছি।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

350018
১৭ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:১৬
শেখের পোলা লিখেছেন : লং বীচটা হাত মেপে আসলে আাদেরটার সাথে মিলিয়ে ট্রাইবুনালে কেস দিলে ওরা জব্দ হয়েযেত৷ তা যাক৷ সত্য চাপ বিহীন মানুষের কাছে পন্য বিক্রী শুনলাম৷ পুঁটির মায়ের জন্য দুঃখ হয়, ছেলেটা তাকে অবহেলাই দিয়ে গেল৷ বয়স হলে বুঝবে হয়ত৷
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৩
290487
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহে,,,কথা হল ক্সবাজার বীচ তো শত মাইল লম্বা,আর ওটা মাত্র ২৮ মাইল...তাইলে ক্যামনে কি !!! যাইহোক পুটির মা অবহেলা দিয়ে আর যাবে কই...আমার খাচায়ই ঢুকতে হবে...Happy
350029
১৭ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫৩
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : লেখাটি বেশ লম্বা হলেও পড়লাম। মনে হলো আমিও সাথে ঘুরছি, তবে চাক্ষুস দেখার মজাই আলাদা। বেশ ভালো লাগলো।
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৪
290488
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হ্যা কথা ঠিক,সরাসরি দেখলে মজা বেশী লাগে। আমি অনেক ছাটকাট করেও যা দিলাম তা বড় হয়ে গেল। রাস্তায় দওটো টানেল পার হয়েছিলাম তা লিখিনি Happy
350030
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বৃষ্টি ভেজা ভ্রমন কাহিনিটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমেরিকায় নাকি বিভিন্ন জায়গায় এমন লেখা থাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বা উঁচু! একটু ভাল করে দেখলে বোঝা যায বিশেষ ক্রাইটেরিয়ায় সবচেয়ে বরে তবে ওই বৈশিষ্টগুলি ওইটার ছাড়া আর কিছুর সাধারনত হয়না!! লংবিচ সম্ভবত ওই ধরনের কোন ক্রাইটেরিয়াতে সবচেয়ে লং। কক্সবাজার কোন বাধা ছাড়া সবচেয়ে লম্বা সৈকত হিসেবে স্বিকৃত। লংবিচ সম্ভবত আমেরিকায় আরো অনেক আছে। দেশিয় ফ্যাক্টরি গুলা প্রচন্ড নোংরা রাখাই অনেক মালিক মনে করেন উৎপাদন হওয়ার চিন্হ!! একটা মোটর হোম কিনে ফেলেন!
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৬
290489
দ্য স্লেভ লিখেছেন : লং বীচ,লং আইল্যান্ড এরকম বেশ কিছু আছে যা কমন। আর ক্সবাজার বীচ এর অন্তত কয়েকগুন লম্বা। এখানকার কোম্পানীগুলোর মান নিয়ে তেমন প্রশ্ন হয়না
350032
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০৯
মুসলমান লিখেছেন : ইউরোপ আমেরিকার ব্যবাসায়ীদের মতো আমাদের ব্যবসায়ীরা যদি সৎ হতো!
১৮ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৪
290599
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ইউরোপ আমেরিকার সকলেই সৎ নয় আবার আমাদের দেশের সকলেই অসৎ নন। ভালো মন্দ কম বেশী সবখানেই আছে। তবে আমাদের দেশে অসততা শিল্পে পরিনত হয়েছে। আল্লাহ ক্ষমা করুন
350043
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:১৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : চমৎকার ঘোরাঘুরি থেকে ভ্রমন কাহিনী। আসলে গরীবদের ঘোরাঘুরিই হল বড়দের ভ্রমন কাহিনী। দারুন লেগেছে। ধন্যবাদ।

১৮ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৪
290600
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্যে
350046
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৪২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশা'আল্লাহ খুবই ভালো লাগলো লেখাটি পড়তে পড়তে মনে হলো নিজেই গুরছি আপনার সাথে ভ্রমনে। লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
১৮ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৫
290601
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি বিনা পয়সায় ভ্রমন হল...Happy
350057
১৭ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৮
আফরা লিখেছেন : এত------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------বড় লিখা !!!
১৮ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৫
290602
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এত ছোট কমেন্ট !!!Smug Smug Smug Smug Smug
350069
১৭ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। অন্নেক রুচিশীল ভ্রমণ। সেইসাথে মনোমুগ্ধকর ছবি এবং বিশ্লেষণ। ভীষণভাবে আমোদিত হলাম। তবে দুঃখ হল পুটীর মায়ের জন্য। আর কতদিন একাকী ভ্রমণ? ছোট ভাই।
১৮ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৬
290603
দ্য স্লেভ লিখেছেন : পুটির বাপ সময়ের শেষ দিকে আছে,ইনশাআল্লাহ আপনার দাওয়াত পাকা হবে । হতাশ হবেন না। দুটো ডাল ভাতের বন্দেবস্ত হবে...Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
350079
১৭ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
১৮ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৭
290604
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
১০
350213
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪১
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : দেখা যাচ্ছে আনি বড়ই ভ্রমণ পিপাসু ম্যান। এ যুগের ইবনে বতুতা নাকি? অনেক ধন্যবাদ
১৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১২:০০
290718
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাহাহাহা....ইবনে বতুতার ছোটভাইRolling on the Floor Rolling on the Floor
১১
350298
১৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:২৯
এটোম বোম লিখেছেন : ভ্রমন করা যতটা না ভালোবাসি তার চেয়ে বেশী ভালোবাসি ভ্রমন কাহিনী শুনতে। ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৪
290803
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনার ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগল

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File