জীবনে প্রথমবারের মত হরিনের গোস্ত রান্না করে খেলাম !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:২৫:০৫ দুপুর
বো-ম্যান ব্রেন্ট আমার সহকর্মী। লম্বা দাড়ী আর হালকা চুলের মাথা দেখে মনে করেছিলাম বয়স ৪০ এর কাছাকাছি হবে,কিন্তু পরে জানলাম বয়স ৩০এর নীচে। বিশাল শক্তিশালী শরীর তার ,উচ্চতাও অনেক। নির্ভীক প্রকৃতির লোকটি এসেছে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে। তার একটাই মাত্র শখ,আর তা হল শিকার।
অনেক রকমের প্রানী শিকার করার লাইসেন্স তার আছে। আমেরিকাতে রাইফেল,সেমি-অটোমেটিক রাইফেল কিনতে কোনো লাইসেন্স লাগেনা। প্রত্যেক এলাকাতেই এটি সহজলভ্য। আমার ছোট শহরটাতেও ৩টি আর্মস শপ রয়েছে। গুলির দামও বেশী নয়। এসব কারনে আভ্যন্তরিন সন্ত্রাসও কম নয়।যাইহোক,ব্রেন্ট বেশ দক্ষ শিকারী,মোটামুটি নির্ভূল তার নিশানা। ৩০০ মিটার দূর থেকে প্রায় নির্ভূল নিশানা করতে পারে।
এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম প্রানী শিকারের অনুমতি দেওয়া হয়। অঞ্চলভেদে এর তারতম্য হতে পারে। ওরেগন বিখ্যাত হরিন,বড় হরিন বা এল্ক এর জন্যে। এছাড়াও অনেকে ভাল্লুক,পাহাড়ী সিংহ,কুগার নামক এক ধরনের হিংস্র বাঘ,আরেক ধরনের ছোট বাঘ ইত্যাদী শিকার করে থাকে। সূর্যাস্তের ৩০ মিনিট পর থেকে সূর্যদয়ের ৩০ মিনিট আগ পর্যন্ত হল শিকারের সময়। উল্লেখ্য উপরোক্ত প্রানীসমূহ রাতেই বেশী চলাচল করে। এল্কসমূহ গভীর রাতে পাহাড়ী ভূমী থেকে সমতলে নেমে আসে দলবেধে। তারা সমতলের ঘাস খায়,আবার কখনও কখনও সমুদ্র তীরে তারা দলবেধে হাটাহাটি করে। চাদনী রাতেও তাদেরকে আনন্দে চলাচল করতে দেখা যায়,কিন্তু রাতে তাদেরকে শিকার করা নিষেধ হওয়ার কারনে সে সময়ে তারা নিরাপদ। এরা অন্তত এসব ক্ষেত্রে আইন মেনে চলে। তাছাড়া এই আইন লঙ্ঘন করলে হাজার হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হতে পারে,সেটাও একটা কারন বটে।
অনেক মানুষ চাকুরী থেকে অবসরে গিয়ে সময় কাটাতে শিকারে বের হয়। বেশীরভাগই দলবদ্ধভাবে শিকারে যায়। তবে অনেকে একা একাও যায়।শিকার খুব জনপ্রিয় হওয়ার কারনে, শুধুমাত্র শিকারের নানান সামগ্রী বিক্রয়ের আলাদা স্টোর রয়েছে। সেখানে মাছ,বন্যপ্রানী শিকারের নানান সরঞ্জাম পাওয়া যায়।
ব্রেন্ট খুব সাহসী হওয়াই সবসময় একা একাই শিকারে যায়। একটানা ১০/১৫ দিনও জঙ্গলের ভেতর তাবু টাঙ্গিয়ে বসে থাকে। সে রাইফেল তাক করে একটানা ৬ঘন্টা বসে থাকে নিরলস। এ সময় বেশী নড়াচড়া করা যায়না। এটা হল একটা সাধনা। আর খুব বেশী আগ্রহ না থাকলে এটা বেশ অসম্ভব। এরমধ্যে নানান নিয়ম কানুন রয়েছে। পশুদের ঘ্রানশক্তি মানুষের চাইতে অনেক বেশী। তাই দেখতে হয় কোন দিকে রাইফেল তাক করা হয়েছে।বাতাসের গতিবিধি দেখেই তবে সাধনায় বসতে হয়। বাতাসের বিপরীতে না বসলে বাতাসে মানুষের গায়ের গন্ধ হরিন বা অন্য প্রাণী পেয়ে যায়,আর তারা এলাকাটি এড়িয়ে চলে। এসব প্রাণী মানুষ খেকো নয়,সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার হলে গন্ধে পালিয়ে না গিয়ে সাক্ষাৎ করে ধন্য করত। অবশ্য মানুষের খাবার খাওয়ার লোভ রয়েছে ভাল্লুকের। কোনো বনে কেউ তাবু গেড়ে রান্নাবান্না করে কিছু উচ্ছিষ্ট ফেলে দিলে তা খেতে রাতে ভাল্লুকের আগমন ঘটা বিচিত্র নয়।
ব্রেন্ট এবছর তার ১৫দিনের ছুটি কাটিয়েছে ওরেগন কোস্টের কাছের এক বনে। পুরোটা সময় হরিনের পেছনে ব্যয় না করে স্যামন মাছ শিকারেও সময় দিয়েছিলো কিন্তু তার ভাগ্যে শিকার জোটেনি নিরলস পরিশ্রমেও। বর্ষার সময়ই হল হরিন ও স্যামন শিকারের উপযুক্ত সময়। হরিন সাধারনত থাকে পাহাড়ের উচু স্থানে। বৃষ্টি নামলে তারা সমতলের দিকে নামতে থাকে। সে সময়ে তারা শিকারীদের নিশানা হয়। তবে হালকা বৃষ্টির দিনের ব্রেন্ট শিকার পায়নি।
বাতাসে নিজের শরীরের গন্ধ ঢাকতে সে বনের লতাপাতা,মাশরুম সারাগায়ে মেখে বসেছিলো,এমনকি বিশেষ স্প্রে মেখেছিলো যা শরীরের গন্ধকে ছড়াতে দেয়না। তারপরও শিকারের দেখা মেলেনি। তবে শিকার না পেলেও নানান রকমের মাশরুম সে পেয়েছিলো বনে। সে তাতেই বেশ খুশী দেখলাম।
সেদিন সাপ্তাহিক ২দিনের ছুটিতে কি করবে তার পরিকল্পনা করছিলো সে। সে ইউজিনের কাছাকাছি অলামেট ন্যাশনাল ফরেস্টের কোনো একটা পয়েন্টের কথা বলল। আমি তাকে বললাম আজ তুমি একটা হরিন পেতে যাচ্ছ। আমাকে খানিকটা গোস্ত দিও,আমি কখনই হরিনের গোস্ত খাইনি। আমার কেন জানি মনে হল সে আজ একটা শিকার পাবে।
দুদিন পর শুনলাম সেদিনই সে একটা বড় সাইজের হরিন পেয়েছিলো। হরিনটা তার অনতিদূরে এসে দাড়িয়েছিলো,সহজ শিকার। এসব শিকার পেলে জবাই করে পায়ে দড়ি বেধে টেনে আনতে হয়। একাধীক মানুষ থাকলে গোস্ত কেটে নিয়ে আসা যায়। যদি কেউ ভাবে অল্প অল্প করে কেটে নিয়ে আসব,তাহলে এক অংশ কেটে নিয়ে এসে পরের বার গিয়ে সেখানে বাঘের সাক্ষাৎ পেতে পারে। কারন রক্তের গন্ধ তারাই বেশী দ্রুত পায়। তাই শিকার একবারে টেনে অানাই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্রেন্টের জন্যে এটা অবশ্য তেমন সমস্যা নয়।
ব্রেন্ট আমাকে বলল-হেই ম্যান, আমি হরিন পেয়েছি। আমিও বেশ আনন্দ করলাম,কারন আমি তাকে এটা বলেছিলাম। বললাম-আমাকে অল্প একটু গোস্ত দিও,স্বাদ নিতে চাই। আজ ব্রেন্ট আমাকে এক টুকরো গোস্ত দিল। একটু আগে ভুনা করলাম এবং সাদা ভাতের সাথে খেলাম। স্বাদ একেবারে গরুর গোস্তের মত। বেশ মজা লাগল। ভাবছিলাম মজার হবেনা। দু একজন বলেছিলো হরিনের গোস্তের স্বাদ ভালো না কিন্তু আমার কছে ভালো লেগেছে। একটা নতুন স্বাদ পেলাম। আমার অনেক দিনের আশা ছিল হরিনের গোস্ত খাব। আমি তা খেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৯ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্রেন্ট কি মুসলিম নাকি খৃষ্টান? হরিন কি জবাইকৃত নাকি গুলিতে নিহত? আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছিল কি না? মৃত প্রাণী খান নি তো!
হরিন? শুনলেই মনটা ভারাক্রান্ত হয় যদিও হালাল! তবু খুব কিউট আর নিরীহ এই প্রাণীটার জন্য মায়া হয়!
মন্তব্য করতে লগইন করুন