মক্কার সুন্নাহভিত্তিক সঠিক ইতিহাস

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:০৩:৫৪ রাত



আরবের আদী ইতিহাস বর্ণনায় আমাদেরকে আল-কুরআনের সাহায্য নিতেই হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রাচীন কিছু বিষয় সম্পর্কে আবহিত করছেন।

“যখন ইব্রাহিম (আল্লাহর কাছে) দোয়া করল-হে আমার মালিক ! এই (মক্কা)শহরকে নিরাপত্তার নগরীতে পরিণত কর এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিদেরকে মূর্তীপূজা করা থেকে বিরত রাখ !”-(আল-কুরআন,১৪:৩৫)

“হে আমাদের মালিক ! আমি আমার কিছু সন্তানকে আপনার পবিত্র ঘরের কাছে এনে আবাদ করলাম,যাতে করে -হে আমাদের মালিক ,এরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে,যেন মানুষের অন্তর এদের প্রতি অনুরাগী হয়,আপনি ফলমূল দিয়ে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করুন ! যাতে ওরা আপনার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে।”-( আল-কুরআন,১৪ঃ৩৭)

“ইব্রাহিম এবং ইসমাঈল যখন এই(ক্কাবা)ঘরের ভিত্তি নির্মান করছিল,(তারা দোয়া করল) হে আমাদের মালিক ! আপনি আমাদের কাজকে কবুল করুন,একমাত্র আপনিই সবকিছু জানেন এবং সবকিছু শোনেন।”-(আল-কুরআন,২:১২৭)

“তোমরা কি একথা বলতে চাও যে,ইব্রাহিম,ইসমাঈল,ইসহাক,ইয়াকুব ও তাদের পরবর্তী(নবী-রসূল)সবাই ছিল ইহুদী কিংবা খ্রিষ্টান ? হে নবী ! আপনি বলে দিন, এ ব্যাপারে তোমরা বেশী জানো ,নাকি আল্লাহ বেশী জানেন ? যদি কোনো ব্যক্তি তার কাছে মজুদ থাকা আল্লাহর কাছ থেকে আগত সাক্ষ্য প্রমানসমূহ গোপন করে,তাহলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে ?”-(আল-কুরআন,২:১৪০)

“যখন আমি ইব্রাহিমকে এই(ক্কাবা)ঘরের নির্মানের জন্যে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম,তখন নির্দেশ দিয়েছিলাম-আমার সাথে অন্য কাওকে শরিক করোনা...”-(অঅল-কুরআন,২২:২৬)

“হে আমার মালিক ! আপনি আমাকে নেক সন্তান দান করুন ! অত:পর আমি তাকে একজন ধৈর্য্যশীল নেক সন্তানের সুসংবাদ দিলাম।.......এরপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দান করলাম,সে হবে নবী ও আমার নেক বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত।......আমি তার(ইব্রাহিম আHappy এবং ইসহাকের ওপর আমার রহমত বরকত দান করেছি ,তাদের উভয়ের বংশধরদের মাঝে কিছু সৎকর্মশীল মানুষ আছে এবং আছে কিছু নাফরমানও,যারা নিজেদের ওপর যুলুম করে স্পষ্ট অত্যাচারী।-(আল-কুরআন,সূরা সাফ্ফাত: ১০০,১০১,১১২,১১৩)

আল-কুরআনের সূরা ইব্রাহিমের উপরোক্ত বর্ণনায় মক্কা(প্রাচীন নাম ছিল বাক্কা) নগরীর প্রাচীন অবস্থা ফুটে উঠেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিমকে একটি পুত্র সন্তান ‘হযরত ইসমাঈলকে(আHappy’ দান করেছিলেন। এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিক্ষা স্বরূপ তিনি শিশু ইসমাইল এবং তার স্ত্রী হাজেরাকে নির্জন মরুভূমীর একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে এসেছিলেন। “ইব্রাহিম(আHappyবলেন আমি তোমাদেরকে আল্লাহর হেফাজতে রেখে গেলাম। স্ত্রী হাজেরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর বন্ধু ! আপনি কি এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশ লাভ করেছেন ? তিনি(আHappyবললেন-হ্যা ,আমার ওপর আল্লাহ তায়ালার এটাই নির্দেশ। স্ত্রী হাজেরা একথা শুনে বললেন,তাহলে আপনি যান। আল্লাহ নিশ্চয় আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করছি এবং তিনিই আমাদের আশ্রয়স্থল।”-(তাফসীর-ইবনে কাসীর,প্রথম খন্ড,বুখারী)। আপন স্ত্রী-পুত্র দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়ার দূরত্ব অতিক্রম করলে হযরত ইব্রাহিম(আHappy আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন-“ হে আমাদের প্রতিপালক ! আমি এই জনশুণ্য উপত্যকায় আমার বংশধরদের কতকের বসতি স্থাপন করে যাচ্ছি আপনার সম্মানিত ঘরের নিকট,তা এই উদ্দেশ্যে যে-তারা নামাজ কায়েম করবে। হে মহান প্রভূ ! আপনি আরও মানুষের মন তাদের প্রতি আকৃষ্ট করিয়ে দিন। আর ফলমূল খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে পানাহারের সুব্যবস্থা করে দিন,যাতে আপনার নিয়ামত উপভোগ করে মানুষ আপনার শুকরিয়া আদায় করে।-(আল-কুরআন,১৪: ৩৭) কিছু দিনের মধ্যেই তাদের সাথে থাকা খাদ্য পানীয় শেষ হয়ে যায় এবং ইসমাঈলের মাতা হাজেরা চারিদিকে ছোটাছুটি শুরু করেন খাদ্য-পানীয়ের জন্যে। সহিহ বুখারীর বর্ণনা মতে ইসমাইল(আHappyএর মাতা সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ে উঠে লোকজনের অস্তিত্ব দেখার জন্যে সাত বার দৌড়াদৌড়ী করেছেন,একইসাথে তিনি শিশু ইসমাঈলকে দেখার জন্যে তার কাছে ছুটে আসতেন। শেষেরবার তিনি যখন ইসমাইলের কাছে আসেন তখন একটি আওয়াজ শুনতে পান। তিনি বলেন-যদিও কোনো উপকার করতে পার তবে কাছে এস। এরপর ফেরেশতা জিবরাইল উপস্থিত হন এবং তিনি হাজেরাকে তার পায়ের গোড়ারী দ্বারা মাটিতে আঘাত করতে বলেন। এরপর সেখান থেকে পানি নির্গত হতে শুরু করে এবং হাজেরা পানির চারিপাশ গর্ত করতে শুরু করেন। তিনি স্থানটি ঘিরে একটি কূপের আকার দান করেন। পরবর্তীতে জরহাম গোত্রের লোক এদিক দিয়ে অতিক্রমের সময় কূপটি দেখতে পায়,তারা বলাবলি করে,ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার এপথে চলেছি কিন্তু পানির চিহ্ন দেখিনি। (জরহাম ছিলেন কাহতানের পুত্র,জরহামীদেরকে কাহতানীও বলা হয়)তারা তখন তাদের গোত্রের সকলকে এই চমৎকার পানির কথা বলেন এবং তাদেরকে নিয়ে আসেন ও মা হাজেরার অনুমতিক্রমে পানি সংগ্রহ করেন এবং .............এরপর ইসমাঈলের(আHappy মাতার অনুমতিক্রমে এই কূপের আশপাশে বসবাস শুরু করে এবং একটি বসতি গড়ে ওঠে। সেই স্থানটিই হল আজকের মক্কা। হযরত ইসমাইল এবং তার মাতাকে দেখাশুনা করার জন্যে হযরত ইব্রাহিম(আHappy মাঝে মাঝে ফিলিস্থিন থেকে মক্কায় যেতেন। মোট কতবার তিনি এভাবে ভ্রমন করেছেন তার সঠিক ইতিহাস আমাদের কাছে নেই,তবে হাদীস থেকে চার বারের কথা স্পষ্ট জানতে পারি । ইসমাইল(আঃ) বয়ো:প্রাপ্ত হলে কুরবানীর ঘটনা ঘটে। মহান আল্লাহর একান্ত অনুগত বান্দা হিসেবে তারা পরিক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তির্ণ হন। যখন হযরত ইসমাইল(আHappy যুবক হলেন এবং বিবাহিতও ছিলেন,সেসময় পিতা-পুত্র মিলে ক্কাবাঘর পূণ:প্রতিষ্ঠা করেন। ‘ইসমাঈল(আHappyএর বিবাহের পর তার মাতা মৃত্যুবরণ করেন’-(বুখারী ১মখন্ড)

ক্কাবাঘর মানব জাতির জন্যে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইবাদতের ঘর। আল্লাহর নির্দেশে হযরত আদম(আঃ) এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ক্কাবাঘরের স্থানটি মাটিতে ঢেকে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম(আঃ)কে উক্ত স্থানটি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং তিনি সে স্থানটি খুঁজে পান(আল্লাহ তায়ালা বলেন-শ্মরণ কর, যখন আমি ইব্রাহিমকে এই ঘর নির্মানের জন্যে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং আদেশ করেছিলাম,আমার সাথে কাওকে শরিক করোনা,....”আল-কুরআন,২২:২৬)। স্থানটি ছিল একটি উচু টিলার মত,প্লাবন আসলে পানি স্থানটির দুপাশ দিয়ে প্রবাহিত হত। ইব্রাহিম(আHappy ক্কাবা পূণ:নির্মান করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-“মানব জাতির (ইবাদতের)জন্যে সর্বপ্রথম যে ঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল,তা হল বাক্কা(মক্কা বা ক্কাবা)...-(আল-কুরআন,৩:৯৬) আল্লাহ তায়ালা ক্কাবা ঘরটির বা মক্কা নগরীর মর্যাদা প্রদান করেছিলেন আসমান যমিন সৃষ্টির সময় থেকেই।

রসূল(সাঃ)বলেন-“যখন আল্লাহ তায়ালা ভূমন্ডল ও নভমন্ডল সৃষ্টি করেন,তখন থেকেই এই শহরটিকে মর্যাদাপূর্ণ রূপে বানিয়েছিলেন।...”-(বুখারী,মুসলিম) এ হাদীসটি থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, যেহেতু বহু পূর্বেই ক্কাবার পবিত্রতার ব্যাপারটি নির্ধারিত, তাই পৃথিবীতে প্রথম মানুষ এবং নবী হযরত আদম(আHappyকে দিয়ে আল্লাহ প্রথম ঘর ক্কাবা নির্মান করিয়েছিলেন। তবে এটি একটি যুক্তি এবং এটাকে সত্যের কাছাকাছি মনে হলেও সত্য কিনা আমরা তা পুরোপুরি বুঝতে পারিনা,কারন আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য নেই। কুরআন অথবা সহী হাদীসে ক্কাবাঘর স্পষ্টভাবে হযরত আদম(আঃ)কর্তৃক নির্মানের বিষয়টি উল্লেখ নেই,বরং হযরত ইব্রাহিম(আHappyকর্তৃক নির্মানের বিষয়টি কুরআন ও হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত। এ বিষয়ে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে,সেগুলোর সনদ খুবই দূর্বল বলে প্রখ্যাত অনেক আলেম মত ব্যক্ত করেছেন। সুবিখ্যাত তাফসীরকার ইবনে কাসীর আদম(আHappyকর্তৃক ক্কাবাঘর নির্মানসংক্রান্ত হাদীসগুলোকে যয়িফ এবং জাল বলেছেন। এ সম্পর্কে তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১ম খন্ডে বেশ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়,যেমন:(১) ক্কাবাঘর ফেরেশতারা তৈরী করেছেন। (২) ৫টি পর্বতের পাথর দ্বারা আদম(আHappyক্কাবাঘর নির্মান করেন,পাচটি পর্বত হল-হেরা,তূরে সাইনা,তূরে যীতা,জাবালে লেবানন এবং জুদী। (৩) আরেকটি বর্ননা হল-হযরত শীশ(আHappy ক্কাবাঘর নির্মান করেন। আরও বর্নিত হয়েছে যে, ক্কাবা ঘরের ওপর আদম (আHappy গম্বুজ নির্মান করেন, হযরত নূহ(আHappyএর কিস্তী মহা প্লাবনের সময় ৪০বার ক্বাবাঘর প্রদক্ষিণ করে,হযরত আদম(আHappyথেকে শুরু করে সকল নবী-রসূল ক্কাবা ঘর চিনত ইত্যাদী। কিন্তু এসকল বর্ণনা আহলে কিতাবদের কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে। ফলে এটার ওপর আমরা নির্ভর করতে পারিনা। এগুলোর সত্যতার প্রমান পাওয়া যায় না। আহলে কিতাবদের বর্ণিত কোনো বিষয় সম্পর্কে আমরা সত্যও বলতে পারব না, আবার মিথ্যাও বলতে পারব না। এটাই রসূল(সাHappyএর পক্ষ থেকে আমাদের ওপর নির্দেশ। তবে যা কিছু কুরআন সুন্নাহর সাথে মিলবে,সেটা নেওয়াতে আপত্তি নেই, আর যা কিছু কুরআন-সুন্নাহর সাথে মিলবে না,সেটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

প্রখ্যাত তাফসীরকার,ঐতিহাসিক এবং সীরাত রচয়ীতা ইবনে কাসীরের মতে ক্কাবার প্রথম নির্মান হযরত ইব্রাহিম(আঃ)এর হাতে হয়। তিনি আয়াত পেশ করেছেন-“আল্লাহ তায়ালার প্রথম ঘর রয়েছে মক্কায়,যা বরকতময় ও সারাবিশ্বের জন্যে হেদায়াত স্বরূপ। তাতে কতকগুলো প্রকাশ্য নিদর্শন রয়েছে যেমন মাকামে ইব্রাহিম(আঃ) ,যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে,সে নিরাপত্তা লাভ করবে।”-(আল-কুরআন,৩:৯৬) মাকামে ইব্রাহিম বলতে পুরো বাইতুল্লাহ শরিফকেও বুঝায় আবার ইব্রাহিম (আHappy এর স্থানও বুঝায়। সীরাতে ইবনে কাসীর গ্রন্থে উল্লেখিত-হযরত জাবিরের(রাঃ)সূত্রে একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, “তাওয়াফ করার সময় রসূলকে(সাঃ) হযরত ওমর মাকাকে ইব্রাহিম পাথরটি দেখিয়ে বলেছিলেন,এটিই কি আমাদের পিতা ইব্রাহিমের মাকাম ? তিনি(সাঃ)বললেন-হ্যা।” এই আয়াতে প্রথম ঘর হিসেবে পবিত্র ক্কাবার সাথে মাকামে ইব্রাহিমের সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহ আমাদেরকে জানাচ্ছেন। অর্থাৎ ক্কাবা ঘরটি প্রথমে হযরত ইব্রাহিমের(আHappy মাধ্যমে নির্মিত হয়।

হযরত সাঈদ বিন যুবায়ের থেকে বর্ণিত রসূল(সাHappyবলেন- মাকামে ইব্রাহিম হল সেই পাথরখন্ড যার ওপর দাড়িয়ে হযরত ইব্রাহিম(আHappy ক্কাবাঘর নির্মান করেছিলেন।”-(ইবনে কাসির,১ম খন্ড) । ইবনে কাসীর বলেন, যেহেতু ক্কাবার ব্যাপারে কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে ইব্রাহিম(আHappyএর নামটি সুস্পষ্টভাবে জানতে পারছি,আদম (আHappy প্রথমে তৈরী করে থাকলেও সেটা যেহেতু স্পষ্টভাবে জানতে পারছি না,তাই আমরা ইব্রাহিম(আHappyকেই ক্কাবা ঘরের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গ্রহণ করব। কিন্তু ইবনে কাসির তার সুবিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার প্রথম খন্ডে একথাও বর্ণনা করেছেন যে, ক্কাবায় হযরত ইব্রাহিম এবং ইসমাইল(আHappy হাজরে আসওয়াদ পাথরখন্ডটি পেলেন এবং সেটি যে জান্নাত থেকে হযরত আদম(আHappy নিয়ে এসেছিলেন সেটাও তিনি লিখেছেন। বলা হয়েছে পূর্বে এই পাথরখন্ডটি সাদা বর্ণের ছিল কিন্তু মানুষের পাপের সংস্পর্শে এটি কালো রং ধারণ করেছে।

(রসূল(সাHappyবলেন- “হাজরে আসওয়াদ যখন জান্নাত থেকে আনা হয় তখন এটি ছিল দুধ অপেক্ষা বেশী সাদা । পরে আদম সন্তানের গোনাহ তাকে কালো করে দেয়”- তিরমিযি)

ইবনে কাসীরের এই বর্ণনা অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে যদিও ক্কাবা ঘরের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আদম(আHappyএর নাম স্পষ্ট দেখা যায়না, কিন্তু এখানে যে তার অতীত স্মৃতি রয়েছে তার প্রমান পাওয়া যায়। এছাড়া আল কুরআনের সূরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আদমের(আHappy দুই পুত্রের বৃত্তান্ত আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দিন। যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল,তখন একজনের কুবানী কবুল হল এবং অন্যজনের কবুল হলনা.....।” বহু সংখ্যক প্রখ্যাত আলিম বলেছেন,হযরত আদম(আHappy মক্কাতে আবতরণ করেন। আর আমরা এ আয়াতে জানতে পারলাম কুরবানীর প্রচলন প্রথম থেকেই ছিল। ফলে অনুমান করতে পারি যে,হজ্জের ইতিহাস বহু পুরোনো এবং আদম(আHappyএর মাধ্যমে এটার শুরু হয়েছিল। সহী হাদীসে আরও জেনেছি সৃষ্টির সূচনা পর্বেই ক্কাবার স্থানটি মহা পবিত্র হিসেবে নির্ধারিত ছিল। তাই প্রথম নবী হিসেবে আদম(আHappyই এটা নির্মান করেছিলেন বললে অযৌক্তিক হবেনা, যদিও স্পষ্টভাবে মহান আল্লাহ তায়ালা ক্কাবা ঘরের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার (আHappy নামটি উল্লেখ করেননি। ঈমাম যারকানী বলেন যে,ঈমাম বায়হাকী ‘দালায়িল’ নামক কিতাবে ইবনে ওমর হতে এবং তিনি রসূল(সাHappyহতে ক্কাবাগৃহ আদম(আHappyকর্তৃক নির্মিত হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটি আবুশশায়খ এবং ইবনে আসাকীরও ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। ঈমাম শাফি’ঈ(রহHappy মুহাম্মদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আদম(আHappy ক্কাবা শরীফে হজ্ পালন করেন।-(যারকানী-১ম খন্ড)

তবে এটা সত্য যে, ক্কাবার পবিত্রতা রক্ষার মধ্যে আমাদের কল্যান নিহিত রয়েছে,ক্কাবাঘর কে প্রথম নির্মান করেছেন সেটা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কোনো কল্যান নিহিত নেই এবং এ সংক্রান্ত আলোচনা দীর্ঘায়িত করার মধ্যেও কল্যান নেই।

বি:দ্র: রসূল(সাঃ)এর জীবনী গ্রন্থ লিখতে এসে ক্কাবার ইতিহাস বর্ণনা করা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। কিন্তু আমি রসূল(সাঃ)এর আগমনের পূর্বের আরবের অবস্থা উল্লেখ করার স্বার্থে আরবের ইতিহাস সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি এবং যেহেতু আরবের মানুষের ইতিহাস ক্কাবা কেন্দ্রীক,তাই ক্কাবার ইতিহাসও উঠে এসেছে।

“এবং সেই সময়কে শ্মরণ কর, যখন ক্কাবা ঘরকে মানব জাতির মিলনকেন্দ্র এবং নিরাপত্তার স্থান করেছিলাম এবং বলেছিলাম,তোমরা ইব্রাহিমের দাড়াবার স্থান মাকামে ইব্রাহিমকে সালাতের স্থান রূপে গ্রহণ কর। ইব্রাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ করেছিলাম ক্কাবা ঘর তাওয়াফকারী,ইতিকাফকারী,রূকু ও সেজদাকারীদের জন্যে আমার এ ঘরকে পবিত্র রাখতে......(আল-কুরআন,২:১২৫)

হযরত ইব্রাহিম(আঃ) নির্জন মরুভূমীতে শিশু ইসমাইল এবং স্ত্রী হাজেরাকে রেখে আসার পর সেখানে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয় এবং আল্লাহ যমযম কূপের সৃষ্টি করেন। এটার পানি এমন যে, তাতে পিপাসা মেটার পাশাপাশি খাবারের কিছু চাহিদাও পূরণ হয়। এমনই একটি বরকতময় কূপের পাশে বা কূপকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে জনবসতী গড়ে ওঠে। (ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের অন্য স্ত্রী সারাহ’র গর্ভে আরও একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেন,তিনি ছিলেন হযরত ইসহাক(আঃ),সারাহ ছিলেন বন্ধ্যা এবং বৃদ্ধা কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের গৃহে মানব রূপে বিশেষ ফেরেশতা পাঠিয়ে পুত্র ইসহাকের সুসংবাদ দান করেন এবং একইসাথে ইসহাকের(আHappy পুত্র পুত্র ইয়াকুব(আঃ)এরও সুসংবাদ দান করেন। -সূরা যারিয়াত,২৪-৩০) (তাওরাত আদী পুস্তক,অধ্যায় ১৬,পদ ২১ অনুযায়ী সেসময় ইব্রাহিম (আHappy এর বয়স ছিল ১০০, আর বাইবেল অনুযায়ী তার বয়স ছিল ৯৯। তাওরাতের একই অধ্যায়ের ১৬ পদ অনুযায়ী হাজেরা যখন ইসমাইলকে(আHappyপ্রসব করেন,তখন ইব্রাহিমের(আHappyবয়স ছিল ৮৬।)

উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে, যখন ইব্রাহিম এবং ইসমাইল(আঃ) আল্লাহর আদেশে ক্কাবা নির্মান করলেন এবং এই কাজটিকে গ্রহণ করার জন্যে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন,তখন তা গৃহিত হল এবং আল্লাহ তায়ালা এই স্থানটিতে বরকত দান করলেন। এটাকে নিরাপদ নগরী বানালেন এবং মানব জাতির জন্যে এটাকে মিলনকেন্দ্র বানালেন। ক্কাবাকে ঘিরে ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতার জন্যে এখানে লোকে লোকারণ্য হতে শুরু করল। এ স্থানটি ব্যবসা বাণিজ্যেরও স্থান হয়ে উঠল। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম(আঃ)কে মানব জাতির নেতা হিসেবে ঘোষনা করেছিলেন এবং তার অনুসারীদেরকে মুসলিম হিসেবে নামকরণ করেন। তাকে(আঃ) মানব জাতির নেতা হিসেবে মনোনিত করা হলে তিনি আল্লাহর কাছে তার বংশধরদের নের্তৃত্ব-কর্তৃত্ব পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চান। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জানান,যারা যালিম নয় তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। ইব্রাহিমের(আঃ) পুত্রদ্বয় ইসমাইল(আঃ) এবং ইসহাক(আঃ) এর বংশধর বাড়তে থাকে এবং পরবর্তীতে তারা বিশাল প্রভাবশালী হিসেবে জাতি গঠন করে। (উল্লেখ্য হযরত ইসহাকের(আঃ) বংশ থেকে বহু সংখ্যক নবী-রসূল এসেছেন কিন্তু ইসমাইল(আঃ) এর বংশ থেকে একমাত্র মুহাম্মদ(সাঃ) এসেছেন)

যদিও কিছু বর্ণনায় দেখা যায় মক্কার ইতহাস শুধুমাত্র ইব্রাহিম(আঃ)পর্যন্ত নয় ,বরং পৃথিবীর প্রথম মানব ইতিহাস এখান থেকে শুরু কিন্তু আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য নেই। আল-কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি এটিই মানব জাতির জন্যে নির্ধারিত প্রথম ঘর। আর যেহেতু প্রথম মানব এবং নবী ছিলেন হযরত আদম(আঃ),তাই অনুমান করা যায় তার সন্তানগণ এ অংশেই ছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন দিকে তারা ছড়িয়ে পড়েছেন। তবে আদম(আঃ) থেকে হযরত ইব্রাহিম(আঃ) পর্যন্ত ইতিহাস আমাদের কাছে নেই। তাদের উভয়ের মাঝে কত সময় অতিবাহিত হয়েছে ,তার কোনো তথ্য নেই। এমনকি সে সময় সম্পর্কে অনুমান করারও কোনো উপায় নেই। আর তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল(বাজারে শত রকমের ইঞ্জিল বা বাইবেল পাওয়া যায়) কিতাবসমূহ বিকৃত হওয়ার কারনে আমরা সেখান থেকে সঠিক তথ্য প্রাপ্ত হতে পারছি না। তবে যখন ইব্রাহিম(আঃ) ক্কাবার মূল স্থানটি প্রাপ্ত হন,তখন ক্কাবার আশপাশ জনশূণ্য ছিল। আমরা কুরআন সুন্নাহর বর্ণনা থেকে বুঝতে পারি এটি বহু বছর থেকেই বিরান ভূমী ছিল। পরবর্তীতে এটি হয়ে ওঠে একটি বিশাল জাকজমকপূর্ণ স্থান।

“রসূল(সাঃ) বলেন, হে আরববাসীগণ ! এই(ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের স্ত্রী) হাজেরাই তোমাদের আদী মাতা।”-(বুখারী-মুসলিম)



পরবর্তীতে ইব্রাহিম (আঃ)এর বংশধররা বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের দ্বারা বিরাট বিরাট রাজত্বও প্রতিষ্ঠিত হয়। “আমি তো ইব্রাহিমের বংশধরদেরকে কিতাব এবং জ্ঞান বিজ্ঞান দান করেছিলাম,আর আমি তাদেররকে এক বিশাল পরিমান রাজত্বও দান করেছিলাম।”-(আল-কুরআন,৪:৫৪)

বিষয়: বিবিধ

২২৬৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348874
০৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৫০
রফিক ফয়েজী লিখেছেন : ধন্যবাদ সুন্দর করে ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্যে।
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:২৬
289584
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
348883
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:৫৩
নাবিক লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো।
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:২৬
289585
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ
348908
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
দূর্বল ঈমানদার লিখেছেন : আপনার লেখায় [আঃ], [সাঃ] প্রথম বন্ধনীগুলো ঠিক করে দিন, ইমু দেখাচ্ছে ।
০৮ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:২১
289671
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি, ধন্যবাদ জনাব
348998
০৮ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
তবে প্রত্নতাত্বিক বিবেচনায় মক্কা আরো আগেই ছিল বলে অনুমিত হয়। কারন আরাফার ময়দানেই হযরত আদম(আঃ) ও মা হাওয়া এর পুর্নমিলন এর বিষয়ে বলা হয়।
১০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:২২
289830
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি আমি সে বিষয়টি উল্লেখ করেছি যে,ইব্রাহিম(আঃ)কাবা পূণ:প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।আল্লাহ তাকে সে স্থানটি দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তবে আলকুরআনে শুধু ইব্রাহিম(আঃ)এর বিষয়ে এসেছে। কারন যেটুকু জানানো দরকার সেটুকুই আমাদের জানানো হয়েছে। আলেমরা এ বিষয়ে দুরকম মন্তব্য করেছেন বটে তবে কাবাঘর(আঃ)এর মাধ্যমে তৈরী হতে পারে বলেও তারা মনে করেন। উপরের বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, মা হাজেরা শিশু ইসমাইলকে নিয়ে সেখানে অবস্থানের সময় জুরহাম গোত্রের লোকের সাথে দেখা হয়.....অতএব আরও আগে মানুষ এর আশপাশে ছিল। ইব্রাহিম(আঃ)পুরোনো ভিত্তির উপর কাবা তৈরী করেন। তবে আল্লাহই ভালো জানেন। কাবার পবিত্রতা রক্ষার মধ্যে কল্যান নিহিত।...মুলত: আমার মূল বক্তব্য রসূল(সাঃ)এর জীবনী

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File