নারীর মূল্য কত !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩১ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:৪৭:৫৫ সকাল
ইদানিং হঠাৎ করে আপেলের প্রতি আবেগ উথলে উঠেছে। এটা আপেলের সিজন আর দামেও সস্তা ,এ কারনেই বোধহয় এত পিরিত। আজ এক ফার্মহাউস থেকে ১২ লিটার আপেলের জুস কিনলাম। স্টোরেও এটা পাওয়া যায় কিন্তু সেসব জুস ফিল্টার করা এবং সংরক্ষনের জন্যে কিছুটা কেমিকেলের আশ্রয় নিতে হয়। সরাসরি ফার্ম থেকে কিনলে একেবারে খাটিটা পাওয়া যায়,যা চেপে রস তৈরী করা হয়েছে। এটা তারা এক গ্যালনের কন্টেইনারে ভরে মুখ সিলগালা করে রাখে। এর কোনো ব্রান্ড নেই,দরকারও নেই। তবে এর স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়.......আমার এই এক স্বভাব কি লিখতে বসে কি লিখছি খেয়ালই করিনি আর সব কথায় খাবারের গন্ধ.......একটু আগে পরোটা বানিয়ে সব্জী দিয়ে খেলাম। খেয়াল করেছি-এসব করতে আমার কষ্টও তেমন হয়না.....
যাইহোক, গতকাল অফিসের বিশ্রামাগারে বসে যখন গ্রিন টি খাচ্ছি,তখন টিভিতে একটা প্রগাম চলছিলো,এটা এম টিভির একটা শো,নাম হল-রিডিকিউলাসনেস.....মানে হাস্যকর রসাত্মক বিষয়। এরা যেসব বিষয়কে হাস্যকর বলে সেটার বেশীরভাগই আমাদের সমাজে মোটেও চালানো যাবেনা। এদের ফান তৈরীর ক্ষেত্রে কোনো রকম সীমারেখা নেই। যাইহোক অনুষ্ঠানের একটা পর্বে মনে হল ইউরোপ-আমেরিকার নারী-পুরুষের দাম আমাদের মত গরিব দেশের পাড়াগায়ের অশিক্ষিত মানুষদের থেকেও অনেক কম।
এক স্ট্রিট শো-তে অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে এক লোক হাতে ৫০ ডলারের একটি নোট নিয়ে ব্যস্তভাবে চলমান এক নারীকে থামালো। জিন্স পরা সেই মেয়েটাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করল-আপনি কি আন্ডারওয়ার পরেছেন ? এমন প্রশ্ন পৃথিবীর যে কোনো দেশেই অসভ্যতা। নারীটি এতে খানিকটা রাগান্বিত হল এবং বলল-এটা তোমার জানার বিষয় নয় ! খুবই উত্তম জবাব। কিন্তু ঘটনা ভিন্ন। তার সামনে ৫০ ডলারের নোটটা ধরে বলা হল আমরা একটা অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাস্তায় ফান করছি। এটা টিভিতে প্রচার করা হবে। তুমি যদি তোমার আন্ডারওয়ারটা প্যান্টের উপর দিয়ে ছিড়ে যেকোনোভাবে বের করে আনতে পারো,তাহলে তোমার জন্যে ৫০ ডলার থাকল।
ভাবলাম এবার লোকটা একটা থাপ্পড় খাবে। কিন্তু উক্ত নারী খুশীতে বাকবাকুম করতে করতে মহা কষ্টে তার অন্তর্বাষটি ছিড়ে বের করে এনে বিজয়ীর হাসি দিল। তার এই বিষয়টি দেখে অনেকে হাসল,আমি মনে মনে হাসলাম,কিন্তু এ হাসি অতি করুনার। মুহুর্তেই মনে আসল আহা এত উন্নত এক দেশের নাগরিক তুমি। সারা বিশ্বে তোমাকে কতই না সম্মান করা হয়। তোমার সম্পর্কে মানুষের ধারনা আকাশচুম্বী অথচ তুমি নিজেই সে ধারনা ভেঙ্গে প্রমান করলে তোমার দাম ৫০ ডলারের আশপাশে। আরও কিছু নারী-পুরুষ এভাবে ডলার জিতে নিল। আরও অনেক ধরনের অনুষ্ঠানে এরকম কিছু কাজ করা হয়,যার অর্থ দাড়ায় এসব দেশের কিছু নারীদেরকে সস্তা পণ্য মনে করা হয়,আর কিছু নারীকে দামী পণ্য মনে করা হয়। দামের বেশ কম যাই হোক না কেন, নারী এদের কাছে পণ্য ছাড়া কিছু নয়।
আমার মনে হয়না আমাদের পাড়া গায়ের কোনো গরিব মেয়েও এই ধরনের কাজ করবে জনসম্মুখে। আর হিজাব পরা মুসলিম মেয়ের দাম কত বেশী তা এরা খানিকটা হলেও বোঝে। লন্ডনসহ বিশ্বের বেশ কিছু বড় শহরের অনেক রাস্তায় একটা বিষয়ে পরিক্ষা করা হয়েছে,তা হল-দু রকমের পোষাক পরিয়ে একই মেয়েকে রাস্তায় হাটানো। প্রথমে সে আঠোসাটো ,ছোট পোষাক পরে রাস্তা দিয়ে হাটল, দেখা গেল প্রচুর তরুন,যুবকরা তাকে দেখে ইচ্ছা করে গায়ে পড়তে চাচ্ছে,কথা বলতে চাচ্ছে,আপত্তিকরভাবে তাকিয়ে থাকছে,কেউ এসে পরিচিত হতে চাচ্ছে,আবার অনেকে বাজে মন্তব্য বা ইভটিজিং করছে,আবার অনেকে স্বাভাবিক থাকছে।
খানিক পর একই মেয়েকে হিজাব পরিয়ে একই রাস্তা দিয়ে হাটানো হল। দেখা গেল মানুষ খুব একটা তার দিকে তাকাচ্ছে না,তাকালেও একবারের বেশী নয়। আর সেসব দৃষ্টির মধ্যে আপত্তিজনক কিছু পাওয়া গেলনা। কেউ তাকে বিরক্ত করল না এবং কটুবাক্যও ছুড়ে দিলনা। অর্থাৎ একটি শালীন পোষাক একজন নারীকে যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে পারে এবং অন্যের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র করতে পারে তা এসব ফ্রি-মিক্সিংয়ের দেশেও প্রমানিত হল এবং বারবার প্রমানিত হয়েছে। (উল্লেখ্য: পরিক্ষাটি চালানো হয়েছিলো অমুসলিম একজন মডেলকে দিয়ে,এরকম অনেক পরিক্ষা চালানো হয়েছে। ইউটিউবে বেশ কিছু পেতে পারেন)
হিযাব অথবা শালীন পোষাক পরা একজন ইসলাম চর্চাকারী নারীকে যদি উক্ত হাস্যরস সৃষ্টিকারী অনুষ্ঠানের কোনো লোক অর্ন্তবাস সম্পর্কে প্রশ্ন করত,তাহলে আমার ধারনা পথচারীদের হাতে অনুষ্ঠানের লোকদেরকে অপমানিত হতে হত। আর বাস্তবতা হল এই যে,এসব অনুষ্ঠানের লোকেরা হিজাব পরা অথবা লম্বা বোরখা পরা খ্রিষ্টান নানদেরকে নিয়ে এসব করেনা। শালীন পোষাকেই নারী বেশী সম্মানিত কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে এবং একদল বর্ণহীন,বর্ণচোরা শয়তানের দালালের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত যা প্রচার করা হচ্ছে তাতে হিজাব অথবা শরীর ঢাকা শালীন পোষাক পরা নারীরা নিজেদেরকে তুচ্ছ কিছু ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। এরা সভ্য,শালিন,ধর্মপরায়ন,উন্নত নারীদেরকে উপরোক্ত ৫০ ডলার মূল্যমানের নারীতে রুপান্তরিত করার এক মহা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। আমাদের দেশে এই প্রক্রিয়া বেশ আগেই অপ্রকাশ্যে শুরু হয়েছিলো,এখন অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে।
অন্তত পাতি শয়তানদের গুরুরা আদর্শ মুসলিম নারীর মর্যাদার ব্যাপারে সম্পুর্ণ ওয়াকিবহাল। আর একারনেই তারা ইসলামকে বহু আগে থেকেই টার্গেট করেছে। আমাদের নারীরা আমাদের কাছে মহা মূল্যবান। যেহেতু সস্তা নয় তাই আমরা তাদেরকে প্রদর্শন করিনা।
বিষয়: বিবিধ
১৯৩১ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো
অনেক ধন্যবাদ
প্রথমেই খাদকের মূল খরব।
অতঃপর দুখজনক ঘটনা।
সত্যিই ইসলাম নারীকে অনেক অনেক সম্মান দান করেছে। হিজাব নারীকে দিয়েছে আত্মমর্যাদা ও শ্রদ্ধায় ভালোবাসা।
চমৎকার লিখাটির জন্য শুকরিয়া।
কতো অপ কৌশলে মেয়েদের যে নাস্তানাবুদ করা হচ্ছে তা অধম জাতীর মস্তিষ্ক আজ টের পায় না !আফসোস!
সুন্দর গুছানো লিখাটির জন্য শুকরিআ ভাই! জাযাকাল্লাহ ।
এর মানে হল উক্ত অনুষ্ঠানে নারী এবং পুরুষ উভয়েই একই কাজ করে পয়সা নিয়েছিলো। পুরুষেরটা বেশী হাইলাইট করিনি কারন পুরুষ একটু বেহায়া হয় নারীদের তুলনায়। তাই তাদের এরকম আচরনে মানুষ অবাক হতনা......কিন্তু নারী তো ভিন্ন ধরনের। তারা নারী পুরুষ সমান করতে করতে বেশী সমান করে ফেলেছে....
আগে খানা, পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা
খানার কথা পড়ে পাঠকেরও মন ঠান্ডা,
পরেরটুকু পড়তে আর কষ্টবোধ হবেনা
কৌশলটা ভালই!!!
আমাদের দেশের গেঁয়ো মেয়েও ঐ টিভিওয়ালাকে থাপ্পড় দিতে না পারলেও, কষে কয়টা গালি যে দিতো- তাতে কোন সন্দেহ নেই!!
থাঁটি আপেলের রস খাওয়ার খুব ইচ্ছা কিন্তু কোথাও পাইনা।
হিসাব করেছি ১ গ্যালন রস তৈরী করতে অন্তত ১০ কেজী আপেল চাপতে হয়েছে....দেশে ১০ কেজী আপেলের দাম অনেক । এখানেও অনেক কিন্তু যারা এটা চাষ করে তারা রস করলে তুলনামূলক সস্তা হয়।
তবে ওই যে বলেছি, আপনার বক্তব্য সঠিক। এরা খুব অল্পতেই নিজেকে সহজলভ্য করে তোলে। এদের মুল্য আসলেই খুব কম।
এখানে আমি ৫০ ডলার উল্লেখ করলেও মূলত এটা ৫০ ডলারের বিষয় নয়। এরা সবকিছুকে ডলার দিয়ে বিবেচনা করে এবং এর কাছে বিক্রিী হয়,সেটাই মূখ্য। জীবনের দর্শনটাই খাও,দাও ফুর্তি করো এটা সম্পর্কিত...জাজাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন