রসূল(সাঃ) আবির্ভাবের পূর্বে আরবের অবস্থাঃ (সীরাত-৭)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৪৩:১৬ সকাল
কিছু সংখ্যক লেখক রসূল(সাঃ)এর পূর্ণাঙ্গ বংশ তালিকা লিপিবদ্ধ করেছেন প্রথম মানুষ হযরত আদম(আঃ) পর্যন্ত,কিন্তু আমরা কোথাও এসংক্রান্ত সঠিক এবং বিস্তারিত তালিকা পাইনা। পৃথিবীতে ঠিক কত পূর্বে হযরত আদম(আঃ)কে প্রেরণ করা হয়েছিল তার কোনো ইতিহাস নেই। রসূলও(সাঃ) আমাদেরকে সে সময়টি জানাননি। একারনে অনুমান করলে তা ভুল হবে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মানুষের প্রাচীন যত ফসিল পেয়েছেন,তার মধ্যে সবথেকে পুরোনোটার বয়স ৮০হাজার বছর। কিন্তু এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। হতে পারে আগামীদিন আরও কিছু বিশেষজ্ঞ প্রমান করবেন,পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেছিল আরও অনেক পূর্বে। তবে এতে আমাদের কিছু এসে যায় না।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পৃথিবীতে “১লক্ষ ২৪ হাজার”-(মিশকাত) মতান্তরে ২লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসূল(রসূল হলেন সেসব নবী,যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। মিশকাত হাদীস গ্রন্থের বাংলা তরজমা কিতাবের ৫৩৬৭ নং হাদীস অনুযায়ী রসূলের সংখ্যা ৩১০ এর বেশী অথবা ৩১৫ জন) পাঠিয়েছেন। যদিও একইসাথে কখনও কখনও একাধিক নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছিলেন তারপরও তাদের হায়াত একেবারে কম করে ধরলেও মানুষ আগমনের সময়কাল যথেষ্ট বর্ধিত হয়ে যায়।
পূর্বে মানুষ অনেক দীর্ঘ হায়াত লাভ করত। হযরত আদম(আঃ) এবং হযরত নূহ(আঃ)এর ব্যাপারে আমরা সহিহ হাদীস থেকে জেনেছি,তারা হাজার বছর(আদম আ: ৯৬০,নূহ আ: ১০৮০বছর) হায়াত লাভ করেছিলেন। তাদের সময়ে এবং অব্যবহিত পরেও মানুষ দীর্ঘ হায়াত লাভ করতেন। এমনকি পূর্ববর্তীদের দীর্ঘ হায়াত প্রাপ্ত হওয়ায় কতিপয় সাহাবী যখন নিজেরা আলোচনা করছিলেন যে- পূর্ববর্তীরা দীর্ঘ হায়াতের কারনে ভাল কাজ অধিক পরিমানে করার সুযোগপ্রাপ্ত হয়েছেন কিন্তু আমরা তা প্রাপ্ত হয়নি,তখন সূরা ক্কদর নাযিল করা হয়। অর্থাৎ হাদীস থেকে জানতে পারি পূর্ববর্তীরা অধিক হায়াত পেতেন। আর অধিক সংখ্যক নবী-রসূলের কথাও আমরা জানতে পারি। এ থেকে অনুমান করা যায় যে,পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেছিল বহু বছর পূর্বে কিন্তু কতপূর্বে তা আমরা জানিনা। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য নেই। আর অনুমানের ভিত্তিতে অযাচিত তথ্য সংযুক্ত করার কোনো কারণও নেই। রসূলের(সাঃ) সুন্নাহ জানার ক্ষেত্রে এই তথ্য জানা জরুরীও নয়। ফলে কোনো রকম তথ্য উপাত্ত ছাড়া সরল-সোজাভাবে রসূলের(সাঃ) বংশ তালিকা হযরত আদম(আঃ) পর্যন্ত বর্ণনা করা এবং তা সিরাত গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা সমিচীন নয় বলে মনে করি এবং এটার প্রয়োজনও নেই। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ যেভাবে বংশ পরম্পরা নির্ধারন করা হয়েছে তাতে হিসেব করলে পৃথিবীতে মানুষ আগমনের সময়কাল ৫/৬ হাজার বছরের বেশী হয়না। অথচ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হচ্ছে মানুষ আরও অনেক পূর্বে আগমন করেছে। ফলে এসব অসত্য-আজগুবি তথ্য সুন্নাহর কিতাবে সন্নিবেশিত হলে জ্ঞানী পাঠকের হাতে লেখকের নাজেহাল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
(বি:দ্র: ইতিহাস থেকে রসূল(সাঃ)এর বংশ তালিকা পরের দিকে প্রকাশ করব)
“রসূল(সাঃ) বলেন-মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম(আঃ)এর বংশে ইসমাইলকে(আঃ) পছন্দ করেছেন,ইসমাঈলের(আঃ) বংশ থেকে কেনানার বংশকে পছন্দ করেছেন,কেনানার থেকে কুরাইশ বংশ নির্বাচন করেছেন আর কুরাইশ থেকে বাণূ হাশিম পরিবারকে পছন্দ করেছেন। আর সর্বশেষ বাণূ হাশিম পরিবার থেকে আমাকে নির্বাচন করেছেন।-(মুসলিম,তিরমিযি) এটাই সঠিক তথ্য, রসূল(সাঃ) তার বংশ তালিকা বর্ণনায় আদনান পর্যন্ত প্রকাশ করেছেন।
এই কিতাবটিতে আমি অতিরিক্ত ঘটনা বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেছি যাতে কিতাবটির আকৃতি বড় না হয়ে যায়। কিছু বিষয়ে সংক্ষেপে এবং কিছু বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। মানুষ যাতে সঠিক দিক নির্দেশনা লাভ করে,সেটি চিন্তা করেই এই কিতাবটি লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
ইসলামপূর্ব আরবের সময়কে তখনকার মানুষের নানামুখী কু-সংষ্কার,অন্ধ বিশ্বাস,অনাচার,অত্যাচার,যুলুমের কারনে আইয়ামে জাহেলীয়া বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ বলে। সে যুগ সম্পর্কে জানার জন্যে আমাদের কাছে যেসব মাধ্যম আছে তা হল, আল-কুরআন,রসূলের(সাঃ)হাদীস,সেই যুগের লিখিত পুস্তকাদী,বংশ পরম্পরায় চর্চিত মুখস্ত কবিতাসমগ্র,মৌখিক বর্ণনা,বাইবেল,তাওরাত,গ্রীক লেখকদের লিখিত পুস্তকাদী,প্রাচীন শিলালিপি ইত্যাদী। এখানে সর্বাধিক বিশুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য ইতিহাস আমরা কুরআন-হাদীস থেকেই পেয়ে থাকি। বাকী তথ্য আমরা প্রখ্যাত ইসলামী গবেষক,ইতিহাসবীদদের থেকে বেশী গ্রহণ করব। কারণ তারা আল্লাহর ভয়ে জ্ঞান চর্চা করেছেন এবং মানুষের কাছ থেকে কোনো বিনিময় আশা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই বিনিময় আশা করেছেন। ফলে তাদের ইতিহাস পর্যালোচনায় আস্থা রাখা যেতে পারে। তারা উপরোক্ত সকল বিষয়ে ব্যপক জ্ঞান অর্জন করে বিখ্যাত এবং তথ্যবহুল বিশাল বিশাল কিতাব রচনা করেছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেসব কিতাবসমূহ বিশেষ আস্থা ও গুরুত্বসহকারে পঠিত হয়েছে। অন্যদের ইতিহাস ততটুকু নেওয়া যেতে পারে,যতটুকু প্রাসঙ্গিক,যুক্তিসঙ্গত এবং সুন্নাহ সম্মত। আর প্রাপ্ত শিলালিপি সম্পর্কে বলতে হয়,এক্ষেত্রে অনুমানকে বেশী গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কোথাও কোনো শিলালিপি প্রাপ্ত হলে বৈজ্ঞানিক পরিক্ষার মাধ্যমে সেটার সঠিক সময়কাল সম্পর্কে জানা যেতে পারে,সেখানে উল্লেখিত তথ্য থেকে কিছু জ্ঞান অর্জন করা যেতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে যেটা দেখা যায়,তা হল- কিছু প্রাচীন বস্তু প্রাপ্ত হয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা রকম অনুমান নির্ভর কল্প কাহিনী তৈরী করছেন এবং তা মিডিয়ার কল্যানে অথবা প্রভাব প্রতিপত্তির কারনে মানুষের মনে প্রতিষ্ঠিত করছেন। এতে সত্য-মিথ্যা সহজে মিশ্রিত হতে পারে। মানুষ প্রাপ্ত শিলালিপি দেখে অনুমানের ভিত্তিতে লিখিত কাহিনী সহজে বিশ্বাসও করে। তাই বাড়তি ঘটনা বর্ণনায় আমি সতর্কতার সাথে অগ্রসর হব ইনশাআল্লাহ।
লেখার এই অংশটি মাত্র কয়েক পর্বে শেষ হবে,আশাকরি অধৈর্য্য হবেন না.......
বিষয়: বিবিধ
১৭২০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বাগতম
এই কথাটি সঠিক নয়। কোন কাউন্ট নাই। অগণিত পাঠিয়েছেন সেটাই সহিহ ভাবে প্রমানিত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন