পুটির মায়ের ঝগড়া
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:০৩:১৮ দুপুর
পুটির বাপ, অামার কথা তো তোমার কানে যায় না। বার বার বললেও শোনো না। যখনই কিছু বলি তা আর ভেতরে যায় না.....এ কান দিয়ে শুনে ওকান দিয়ে বের করে দাও।
: আর তুমি তো দু-কান দিয়ে শুনে মুখ দিয়ে বের করে দাও....
: কি !!! কি বললে তুমি ??? আবার বলো শুনি....
:যা বলার বলেছি...
: না, আবার বলো...আমি কি করি ?
: তুমি কিছু করোনা...তুমি তো ভালো.....
: না , আমি ভালো হতে যাব কেন ? ভালো তো তুমি। অামি ভালো না, আমি খারাপ, মহা খারাপ...পাজি আমি...
: আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি পাজি, এবার অন্তত থামো.....
: কি !! কি বললে তুমি ?? আমি পাজি ?? আবার বলো শুনি...
: ওরে তুমি পাজি হবে কেন ? পাজি হলাম আমি...
: না, স্পষ্টভাবে বলেছো আমি পাজি...
: আল্লাহরে,,,এ কার পাল্লায় পড়লাম এ তো শুধু লেজে পা দিয়ে ঝগড়া করে.....
: কি !! অামি তোমার লেজে পা দেই,,,তুমি কি বান্দর নাকি ?
:হ্যা আমি বান্দর আমার ১৪ গুষ্টি বান্দর, এবার একটু থামো...
: থামবো মানে ? তুমি আমাকে পাজি বলবে আর আমি থামব ? আর আমি দুকান দিয়ে কথা শুনে মুখ দিয়ে বের করে দেই ? আমি পাজি ? ..
: না, তুমি পাজি হবে কেন ? তুমি কি একটু থামবে ? আজ আমার ছুটির দিন...
: তোমার ছুটির দিন তাতে আমি কি করব,,, নাচব ?
: হ্যা নাচো দেখী,তবে মুখ বন্ধ করে নাচবে।
:কি আমার মুখ খারাপ ?
: তা কখন বললাম ?
:ওই যে আমার মুখ বন্ধ করতে বললে......আমি মুখ বন্ধ করব আর তুমি যা তা বলে যাবে ভেবেছো !!!
: হায় আল্লাহ এ কার পাল্লায় পড়লাম....এ কি চিজ !!....নারী জাতি তো ঠিকই বাকা হাড় !!!
: কি ? আমি বাকা হাড় ???
: ওরে না, তাই কি বলেছি ? নারী-পুরুষ সকলেরই বুকের হাড় বাকা.......ওগো সোনা মনা পুটির মা....একটু থামা যায় না ?
: না এসবে কাজ হবেনা,,,তুমি পাজি বলেছো....
: ওগো পুটির মা সকাল থেকে এই যে মুখ চালাচ্ছ,,,,তোমার ক্লান্তি লাগেনা ? আমার তো ক্ষধু লেগে গেল....রাতেও তো তেমন কিছু খাইনি....
:ক্লান্তি লাগবে কেন? আমি তো পাজি...আমি তো খারাপ....আজ চুলা বন্ধ.....কোনো রান্না হবেনা.....আর রান্না করলে দুজন আলাদা রান্না করব।....আমাকে পাজি বলার মজা দেখাব...
: জি জ্বালা রে বাবা.....জোর করে ঝগড়া বাধালো আবার এখন আমার খাওয়া বন্ধ করে দিল.....একা একা আমি এখন কি রান্না করি...!!! ...ঠিক আছে আমিও রাগ করলাম...খাব না ভাত.......
========================
দুপুর গড়িয়ে বিকেল
-----------------------
: শালার বেগুন একখান পুড়ালাম....কি যে কি করলাম...আগে তো অনেকবার বেগুন পুড়িয়ে ভর্তা করে খেয়েছি কিন্তু এরকম তো পুড়ে যায়নি !! ভাতও হালুয়া পাকিয়ে ফেললাম....... তোমার চিন্তা নেই...তুমি ভেবোনা যে তোমার রান্না খাওয়ার ধান্দা করছি......আমি যা পারি তাই খাব....
: তুমি চাইলেও তোমাকে দিচ্ছে কে ?
তুমি তোমার মত রান্না করে খাবে,আর আমি আমার মত....
===================
: মা জননী চারটা ভিক্ষা দাও গো মা....
:অচ্ছা আসছি,,,,আরে বুড়ি মা আপনি ! শরীর কেমন ? দাড়ান আপনার জন্যে একটা কাঠাল আছে। তার অাগে চালগুলো রাখেন। ভাত খাবেন ?
: না মা, ও বাড়ি থেকে খেয়েছি।
:আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে শুক্রবারে আসবেন, সেদিন আমি কিছু মানুষকে খাওয়াব।
: কেউ মারা গেছে নাকি ? চল্লিশার খাওয়া ?
: আরে না, আমরা ওসব কুসংষ্কার,বিদয়াত মানিনা। সুন্নাহতে সদকায়ে জারিয়ার যেসব বিষয় রয়েছে সেসব মেনে চলি। আসলে আমার পুটির বাপকে আল্লাহ একটা বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন,তাই আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া স্বরূপ কিছু দান সদাকাহ করব আর মানুষকে খাওয়াব। আপনি কিন্তু আসবেন শুক্রবারে..
: আচ্ছা ঠিক আছে।
=====================
: ওদিকে কে যায় ! আজগর নাকি ? এই আজগর, তোকে তো খুজছি, আমার ৫টা গাছে নারকেল ঝুনা হয়েছে, পেড়ে দিবি ?
:দেব, কিন্তু আমাকে কিন্তু গাছপ্রতি ১টা নারকেল দিতে হবে আর একটা বখশিশ দিতে হবে মোট ৬টা নারকেল চাই।
: আচ্ছা তোকে গাছ প্রতি ২ টা নারকেল দেব আর ২টা বখশিশ দেব। ...
:সত্যি ???
: হ্যা সত্যি....
:তাহলে আমি আর বাজারে গেলাম না...এই আমি নারকেল গাছে উঠলাম...
: আরে দাড়া, গাছে ওঠার দড়িটা নিয়ে আসি....
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
:অাগে ওই গাছটায় ওঠ....আর শোন পরের গাছটায় বেশ কিছু ডাব আছে, এক কাদি পাড়িস কিন্তু....পুটির বাপ ডাবের পানি পছন্দ করে।
.....................................
....................................................
.................................................................
:এই নে তোর ১২টা নারকেল, এবার খুশী ??
:অনেক অনেক খুশী...
:আচ্ছা তোর বোনটার বিয়ে দিয়েছিস ?
: না গো চাচি ,তবে এবার দেব......সম্বন্ধ চলছে....
:আচ্ছা ঠিক আছে, তুই যা,ভালো থাকিস।
=========================
==============================
: আজ থেকে কোনো রান্না বান্নার কাজ নাই। ওসব আমি করব না......আর করলে একাই করব ,,কারো জন্যে কোনো রান্না বান্না নেই। কেউ পারলে খাক, না খেলে না খাক....
:ঠিক আছে তাই হবে....
:ঠিক আছে বললেই হল ! আমি দেখে নেব.....
:আচ্ছা দেখে নিও....
: (আরে ! নেতিয়ে পড়ল নাকি লোকটা, গলায় জোর দেখা যাচ্ছেনা)....ওসবে কাজ হবেনা.....খাওয়া দাওয়া বন্ধ...
:আচ্ছা বন্ধ...
:দেখা যাবে কতদিন চলে...
:আচ্ছা দেখা যাবে...
: ওসব দেখা যাবে দিয়ে কাজ হবেনা....দুদিনে যখন শুটকো হয়ে যাবে তখন এমনিতেই পাজি না বলে ভালো ভালো বলা শুরু করবে.....
: (...........আহা কেন যে আমি পুটির মাকে পাজি বলতে গেলাম....!! অন্তত ৩০ বার ভাবা উচিৎ ছিলো যে নির্ঘাৎ একটা প্যাচে পড়তে যাচ্ছি).........এ কি লোক !!!
:এই আমি লোক মানে ?
:কেন তুমি লোক না ?
:না, অামি লোক না,,,আমাকে লোক বলবা কেন ?? আমি কি লোক ?
: তবে কি তুমি অলোক?
:কি, তুমি আমাকে হিন্দু বলে গালি দিলে ?..
:ইয়া আল্লাহ এ অামি কোথায় !!! এই, আমি হিন্দু বললাম কখন ?
: অলোক কি হিন্দুদের নাম নয় ??
:হ্যা, তা ঠিক...কিন্তু অামি কি বললাম আর তুমি কি বুঝলে !!!
:আমি যা বুঝার বুঝেছি...ওসবে কাজ হবেনা....
:আচ্ছা কাজ না হয় না হোক,, আমিও ভাত খাব না....এই গেলাম আমি চলে.....ভাতই খাব না........যদি খাই,তবে আমার নামে কুত্তা পুষবে.....
:এই কোথায় চললে ?
:যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে চললাম...তোমার দরকার আছে?
:হ্যা আছে...
:আমি গেলাম, তোমার সাথে কোনো কথা নেই....
:ওগো শোনো.....আরে লোকটা সত্যি সত্যি চলে গেল নাকি...ও পুটির বাপ দাড়াও....
==========================
=================================
: নাহ, লোকটার সাথে বোধহয় এতদূর করা ঠিক হয়নি। রাতে তেমন কিছু খায়নি। সকালেও তো খাওয়া হলনা। দুপুরে গন্ডগোল বাধালাম। না খেয়েই লোকটা চলে গেল !! আমার যে মাঝে মাঝে কি হয় !!! না খেয়ে লোকটা কোথায় চলে গেল ! দূর অামিও খাব না......শুধু কাঁদব...
...................................
:হায় লোকটা তো তার মাখানো বেগুন পোড়া খায়নি !!.....এত সুন্দর করে লাউ আর শিং মাছ রান্না করলাম,পুটির বাপের খুব পছন্দ এটা। এসব এখন কে খাবে.......আমি এখন কাঁদব,,লোকটা না ফেরা পর্যন্ত আমি কাঁদতেই থাকব.......
..........................................
===========================
: কি গো তোমার কান্না শেষ হল ? শেষ হয়ে থাকলে ঘরে এসো......................
:কি, তুমি ঘরে !!! কখন এসেছো ?...
:আসব কি ! আমি আবার গেলাম কখন ??
:কেন তুমি যে রাগ করে চলে গেলে !!!
:হ্যা তা তো গেলাম...কিন্তু বাড়ির পেছন দিয়ে ঘুরে আবার ঘরে এসে শুয়েও থাকলাম......কি করব বলো ,,,,ইচ্ছে ছিলো নদীর ধারে গিয়ে বসি....কিন্তু তোমার যা রান্না,,,,ওহ !! অদ্ভূত সুন্দর ! বেশীদূর হাটতে পারলাম না...
:আমার রান্না তো তুমি খেলেই না ,,,সুন্দর বুঝলে কিভাবে....
: হায় হায় পুটির মা কয় কি !! তোমার তরকারীর অর্ধেক ঝেড়ে দিলাম তাও বোঝোনি !! রান্না ঘরে ডুকলে দেখলাম...আমি তো ভাবলাম,,তুমি দেখেছো....
: ওরে শয়তান,,,বজ্জাত,,,,, এই কাজ কখন করলে !!
: কেন, তুমি যখন আজগরের সাথে,ফকিরের সাথে কথা বলছিলে....কোন গাছ থেকে কতটা নারকেল পাড়তে হবে...তার বোনের বিয়ে,মায়ের খবর সব নিচ্ছিলে,,,,তখন তো আমি নাকে মুখে গিলছিলাম....
:হাহাহাহা......আর তুমি গলা পর্যন্ত গিলে রাগ দেখিয়ে চলে গেলে !! পাজি কোথাকার....
: চলে গেলাম কোথায়....ঘরের পেছন দিয়ে আবারও ঘরে .....হেহেহেহে...
:দাঁত সব তুলে ফেলব....হেহেহেহে করে হাসছে, বেহায়া কোথাকার.....
:আমি বেহায়া....আর তুমি কি ?
:আমি হলাম...পাজি,,,তোমার পাজি...তোমার পুটির মা পাজি...
: আবারও পাজি !!! না ,আবারও এই গর্তে পড়তে চাইনা গো পুটির মা....
:না ,পড়েই দ্যাখো না, সত্যি বলছি রাগ করব না.......
:আচ্ছা আমার পাজি পুটির মা......আমার সোনা মনি মানিক,লোহা,তামা,পিতল,কাসা,,,,,প্লাস্টিক....
:আরো বলো....বলতেই থাকো....
বিষয়: বিবিধ
২১৮৫ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যার তার সাথে ডেটিং করে স্লেভ কে চিনে না।
এত সুন্দর লেখা পড়তে খুব মজা পাইছি , যেমন ভাব তেমন লেখার ভঙ্গিমা তেমন ভাষা সব কিছু চমতকার
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
শুকরিয়া
মন্তব্য করতে লগইন করুন