আমেরিকার ডাক্তার সমাচার
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৪৩:৩৬ সকাল
মূল কথা বলার আগে গত রাতের হাসির ঘটনাটা বলে নেই। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আঙ্গুল গুনে যেসব দোয়া দুরুদ পড়তে হয় সেসব পড়তে থাকার সময় হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ঘুমের ঘোরে বলছি-"স্কুল ফাকি ! স্কুল ফাকি,,,,,স্কুল ফাকি....." জ্ঞান ফেরার সাথে সাথেই শয়তানের বুকের খাচার লাথি মারলাম.....শয়তান তাড়ালাম, কিন্তু শনি তো অন্যখানেও...
আমেরিকা এসে কিছু বিষয় এখনও বুঝে উঠতে পারিনি,এর একটি হল চিকিৎস্যা ব্যবসা। এ এক বিরাট প্যাচালো কাহিনী। একেবারে অক্টোপাসের চাইতেও বলবৎ। এ বছরের শুরু দিকে হঠাৎ চুল পড়তে থাকলে এবং .....কষা হয়ে যাওয়ার কারনে নিকটস্থ এক হাসপাতালে গেলাম। সেখানকার ডাক্তার আমার নিকটস্থ একজন বিশেষজ্ঞকে রেফার করলেন। টেলিফোনে সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত হল পরের সপ্তাহে। গেলাম তার কাছে। উনি খানিকক্ষন আমার কথা শুনে বললেন এটা স্বাভাবিক বিষয়। আপনি বেশী করে পানি পান করেন। বললাম কিছু টেস্ট করা কি প্রয়োজন ? উনি তখন কিছু ব্লাডের টেস্ট দিলেন। সে সময়ে কিছু পয়সা দিলাম ডাক্তারের চেম্বারে।
ঘটনার বহু পরে ভিন্ন কোম্পানীর পক্ষ থেকে ডিফল্ট নোটিশ পেলাম। আমি নাকি তাদের বিল পরিশোধ করিনি। আসলে আমি কোনো বিলই পাইনি। যোগাযোগ করলাম হাসপাতালে,যেখানে ব্লাড টেস্ট হয়েছিলো। তারা পরে আরেকটা বিল পাঠালো,কিন্তু বিল দেখলাম হাজার ডলারের কাছাকাছি।
উন্সুরেন্স কোম্পানীকে ফোন করে জানলাম -যখন কোনো লোক সাধারন কারনে ডাক্তারের কাছে যায় ,তখন ডিডাকটেবল নামক একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়তে হয়। এটি প্রতিষ্ঠান ও চাকুরীর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। আমার ক্ষেত্রে ৫০০ ডলার প্রতি বছর। অর্থাৎ চিকিৎস্যা বিলের প্রথম ৫০০ ডলার আমাকে দিতে হবে, বাকী বিলের ৬৫ থেকে সর্বোচ্চ ৮০% ইন্সুরেন্স কোম্পানী বহন করবে। এই ফেরে পড়ে অামি গতকাল অনেকগুলো ডলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতে বাধ্য হলাম আর কানে মোড়া দিলাম সাধারন কারনে ডাক্তারের কাছে যাব না। আল্লাহ যেন আমাকে সর্বদা সুস্থ্য রাখেন।
ওদিকে আরেক কাহিনী। ৭/৮ মাস আগে এক ডেন্টাল ক্লিনিকে গিয়েছিলাম, কারন একটি দাতে শিরশির করছিলো ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে। ডাক্তার সমস্ত মুখে প্রায় ৩৫টা এক্সরে করল। এবং ৪টি দাতে সমস্যা বের করল। এটাকে দুভাবে ভাগ করল এবং এক পাশের দুটি দাতে ফিলিংএর জন্যে দিন তারিখ নির্ধারন করা হল। কয়েক'শ ডলার ব্যয়ে আমি তা করলাম। বাকী থাকল আরও দুটি দাত। আমাকে এক্সরে দেখিয়ে বলা হল,তাড়াতাড়ি এদুটোতে ফিলিং করে নাও নইলে সমস্যা হবে। এর একটি দাত ছিল শিরশির করা দাত,কিন্তু আমি এটা ঠিক করার আর সময় পাইনি,যদিও এটার জন্যেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া।
এদিকে চুল পড়া ডাক্তার ওষুধ পথ্য না দিয়ে বেশী পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়াতে মেজাজ বিগড়ে গেল এবং আমি ন্যাচারোপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে গেলাম। সেই ডাক্তার আবারও বহু রকমরে টেস্ট করতে দিল,যা প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু বহু টাকা খরচ করে সেসব টেস্ট করার পর দেখা গেল কোথাও কোনো সমস্যা নেই। এই ডাক্তারও আমাকে বেশী করে পানি পান করতে বললেন এবং রেড মিট কম খেতে বললেন,সব্জী বেশী খেতে বললেন। আমাকে এক বোতল হোমিও প্যাথিক ওষুধ দিয়ে কয়েকশত ডলার নিলেন।
এরপর আমি নিজেই নিজের ডাক্তারি শুরু করলাম। আমি রেড মিট একেবারে কমিয়ে দিলাম। প্রচুর ফ্রেশ সব্জী এবং ফল খাওয়া শুরু করলাম। নানান ফলে স্মুথী তৈরী করে খেতে লাগলাম। দুধ,ডিম নিয়মিত খেতে থাকলাম। কিছুদিনের মধ্যেই আবিষ্কার করলাম আমার সব সমস্যা তো মিটে গেছেই ,উপরন্তু সেই শিরশির করা দাতটাও ভালো হয়ে গেছে। আমি বুঝলাম আমার ভিটামিনের ও নানান খনিজের অভাব ঘটেছিলো।
আজ দাতের ডাক্তারের কাছে গেলাম দাত পরিষ্কার করার জন্যে। বছরে ২ বার ইন্সুরেন্স কোম্পানীর পক্ষ থেকে ফ্রি সার্ভিস এটা। ১ ঘন্টা ধরে অনেক সুন্দর করে দাতহুগুলো পরিষ্কার করে পলিশ করে দিল। বিল আসল ১৬০ ডলার,যেটা কোম্পানী প্রদান করবে। কিন্তু অবাক কান্ড হল আমার পূর্বের রেকর্ড বের করা হল এবং নতুন করে মুখের ভেতরে অনেকগুলো এক্সরে করা হল। ভাবছিলাম পূর্বের বাকী থাকা সেই দাত দুটো মেরামতের বিষয়ে তারা পরামর্শ দিবে। কিন্তু তারা সেই দাতদুটোতে কোনো সমস্যাই পেলনা। সেটা নিয়ে কোনো কথাই বলল না। বরং অন্য আরেকটা দাত দেখিয়ে বলল,এটাতে ফিলিং করা উচিৎ। পূর্বের সেই ডাক্তার আসল কিন্তু তিনি এসে বললেন কোনো সমস্যা নেই। তবে নিয়মিত চেকআপের মধ্যে থাকা ভালো। আমি বুঝলাম পূর্বে বিনা কারনে তারা আমার ফিলিং করা দাতের ফিলিং উঠিয়ে নতুন করে ফিলিং করে অনেক টাকা নিয়েছিলো।
যেহেতু তাদের চিত্র আমার কাছে পরিষ্কার হল, তাই আর ওমুখো হবনা। আল্লাহ চাহে তো এদেরকে বিদায় জানাবো শিঘ্রই।
বিষয়: বিবিধ
১৯৭৭ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মরতে তো একদিন হবেই । রোগে ভুগেও মানুষ মরে , আবার সুস্থ থাকা অবস্থাতেও মরে ।
তবে অসুস্থ হয়ে অন্যের কাছে বার্ডেন হওয়া মরার চেয়েও ভয়ংকর।
আপনি কুসুম কুসুম গরম পানি খাবেন প্রচুর কারণ আপনার যে খাদ্যাভ্যাস এটা শরীর থেকে পানি টানে । ফলে কোষ্টকাঠিন্য হয় ।
তাই তারা আপনাকে আমাকে জবাই না করলে ঐ টাকা কিভাবে উসূল করবে।
এখানে পারসোনাল ডাক্তারের ভিজিটটাই শুধু ফ্রী আর বাকি সব নগদ ইউরোতে! তবে কেনো জানি এখানের ডাক্তাররা রোগ আবিষ্কার করতে করতে রোগী একেবারে ওপাড়ের শেষ প্রান্তে এসে পড়ে!
পরিমিত খান, নিয়ম মেনে চলুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো!!
সফদার ডাক্তার, মাথা ভরা টাক্ তার
ক্ষিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে।
চেয়ারেতে রাতদিন, বসে গুনে দুই তিন,
পড়ে বই আলোটারে নিবিয়ে।"
এই বসে বসে দুই তিন গোনাটাই বলে দিচ্ছে সেই বৃটিশ আমল থেকে্ই ডাক্তাররা কমার্শিয়াল চিন্তাভাবনার অধিকারী, কি বলেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন