লস-এঞ্জেলেস থেকে ফিরলাম(শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:১২:৩৯ সকাল
ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে সারা বিশ্ব থেকে প্রতিদিন পর্যটক আসে দেখতে। আমি মূল গেইট এর ডান পাশ ধরে পার্শ্ববর্তী শপিং জোনে প্রবেশ করলাম। প্রচন্ড গরমে এবং প্রচুর খাওয়ার কারনে আমার ব্যপক পানি পিপাসা লাগল। এমন পানি পিপাসা সহসা লাগেনা। এই গরমের মধ্যে আমি হাতা লম্বা পাতলা সুয়েটারটা কেন পরলাম সেটা আমি নিজেও জানিনা। আসলে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল পরের দিন কিন্তু কি মনে করে হাটতে হাটতে এসে ট্রেনে চড়ে বসেছি।
যাইহোক এখানকার এক দোকান থেকে কোমল পানীয় খেলাম,এখানে দামটা একটু বেশী। যে কোনো পন্য সামগ্রীর দাম দেখলাম অনেক। বিশ্বের বিখ্যাত কোম্পানীসমূহের পোষাক ও নানান পণ্য সামগ্রীর দোকান রয়েছে এখানে। একপাশে একটি স্বচ্ছ টিউবের ভেতর দেখলাম এক লোক উড়ছে। কাছে গিয়ে দেখলাম নীচ থেকে প্রচন্ড বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে আর সেই বাতাসে লোকটা শূন্যে উড়ছে। সে উপরে উঠছে,নীচে নামছে। বাতাসে সাতার কাটছে,ঘুরছে,ডিগবাজি খাচ্ছে। একে একে অনেকেই এটা করল। কেউ বিশেষ পোষাক পরা আবার কেউ সাধারন পোষাকেই উড়ছে,তবে মাথায় একটি হেলমেট রয়েছে। বেশ মজা পেলাম দেখে।
ঘড়িতে বিকেল ৩টা বাজে ,এতক্ষন ভাবছিলাম যেহেতু বিকে ৬টায় স্টুডিও বন্ধ হবে তাই আগামীকাল সকালে আসলেই ভালো কারন ৩ ঘন্টায় এত বিশাল এলাকা দেখা সম্ভব না। কিন্তু কি মনে করে ৯৫ ডলারের টিকেটটা কেটেই ফেললাম। লস-এঞ্জেলেসে অধিকাংশ স্থানে ক্রেডিট কার্ডে পে করলে সাথে সাথে আইডি কার্ড চেক করে। এর কারন এখানে ব্যপক চুরি হয় এ ব্যাপারে। কিন্তু ওরেগনে এরকম চেক করা হয়না। লস-এঞ্জেলেসে বিশাল সংখ্যক মেক্সিকান লোক থাকে,যার কারনে স্পানিশ ভাষা বেশ চলে। স্প্যানিশ অবশ্য আমেরিকার ২য় সরকারী ভাষা। যাইহোক আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম।
প্রথমে গেলাম ওয়াটার ওয়ার্ডে। অন্তত হাজার খানেক লোককে অপেক্ষমান দেখলাম বিশেষ শো এর জন্যে। এটি এমন একটি স্থান যেটাকে পুরোনো দিনের আবহে সাজানো হয়েছে। চারিদিকে পচা টিন দিয়ে ঘেরা। টিনের প্রাচীরটি অন্তত ৫০ ফুট উচু। আসলে এটা দেখতে পুরোনো হলেও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বেশ।
চারিদিকে গ্যালারী,আমি সামনেরটিতে বসলাম। ৩ জন জোকার নানান কৌতুক করে দর্শক হাসালো,আসলে তারা ভালো অভিনেতা। তারা বিভিন্ন কথার ছলে বালতিতে পানি নিয়ে দর্শকদেরকে ভেজাতে লাগল। দর্শকও ভিজে খুশী। খানিকপরই একটি ১৫ মিনিটরে মুভি শুরু হল। একটি মারদাঙ্গা শো। পাশের একটি বিশাল গেট খুলে গেল এবং সেদিক দিয়ে নায়িকা একটি পুরোনো দেখতে স্পিড বোটে প্রবেশ করল। অল্প পানির ভেতর ব্যপক স্পিডে সেটা চালিয়ে সেখান থেকে পানির মাঝে থাকা কৃত্তিম দ্বীপে নামল। কাহিনী করে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করল। কখনও সিড়ি দিয়ে উঠে উপরের দড়িতে ঝুলতে লাগল,ঝুলে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত গেল। নায়িকাকে এক ভিলেন কিডন্যাপ করল। নায়ক একটি চোট স্পিডবোট নিয়ে এমন সব কাজ করল যা বিশ্ময়কর। ছো্ট্ট এরিয়ার মধ্যে নিয়ন্ত্রন রেখে কখনও পানির নীচে ডুব দিচ্ছে,কখনও স্টেজের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে পার হচ্ছে। ভিলেনের সাথে ফাইট হল। অনেক উপরে থাকা ভিলেনের সাগরেদরা সুনিপুনভাবে পানিতে আচড়ে পড়ল। কখনও গুলির আঘাতে উপরে টিনের দেওয়াল ধ্বসে পড়ছে। আসলে বন্দুকে বিশেষ গুলি থাকে যা শব্দ করে এবং আগুন বের করে কিন্তু একই সময়ে উক্ত দেওয়ালটি ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। পুরো এলাকাটি এভাবেই তৈরী। ভিলেন একটি উচু স্টেজকে বোমা মেরে ধ্বংস করল, এবং সত্যিই মনে হচ্ছিলো বোমা মারা হয়েছে। পুরো স্টেজটি আগুনে জ্বলে উঠল,সেটার তাপও অনুভূত হচ্ছিলো। ভারী মেশিনগান চলছিলো,তখন বারুদের গন্ধও নাকে আসছিলো। আর যেখানে গুলি লাগছিলো সেখানে ক্ষতি হচ্ছিলো তা বুঝাতে বিশেষ ব্যবস্থায় বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছিলো। যেমন একটি বিশাল পানির ট্যাঙ্গে ফুটো ফুটো হয়ে গেল এবং পানি ছিদ্র দিয়ে বের হতে লাগল। মূলত: গুলির সাথে সাথে সেই ছিদ্রগুলো একটিভ করা হয়,আর একইসাথে সেখানেও বিছু গোলাবারুদ ফোটানো হয় যাতে মনে হয় সত্যিই গুলি লেগেছে।
অভিনেতারা দারুন অভিনয় করল। মনে হল অনেক বেশী প্রশিক্ষিত না হলে আহত হওয়া স্বাভাবিক। মূলত: এরা সিনেমার স্ট্যান্টম্যান ,যারা সিনেমায় ঝুকিপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয় করে থাকে। পাশের একটি স্টেজ ধ্বসে পড়ল। চারিদিকে আগুন জ্বলতে লাগল। মূল ভিলেন আর নায়কের ফাইট হল এবং শেষে ভিলেন অনেক উপর থেকে পানিতে উল্টো হয়ে পড়ে গেল আর সাথে সাথে পানিতে আগুন ধরে গেল। ওদিকে দেওয়াল ভেদ করে বড় এক সি প্লেন এসে পড়েছে। সাথে সাথে আগুন ধরে উঠল চারিদিকে। এক বিভিষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হল। ১৫ মিনিটের একটি উপভোগ্য মুভি তারা উপহার দিল। তবে তারা সবসময় একই বিষয় দেখায় না। অভিনেতা ও অভিনয়ের বিষয় পরিবর্তিত হয়,কারন দর্শকদের পকেটের পয়সাটা এরা উসুল করে দিতে চায়।
এবার ভেতরে হাটাহাটি করলাম। চারিদিকে বিভিন্ন রকমের স্টেজ বানানো হয়েছে এদের প্রয়োজনে। এরপর গেলাম ইউনিভার্সাল স্টুডিও ট্যুরে। একটি ট্রেন স্টেশন থেকে খোলা ট্রেনে করে দর্শকদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরো স্টুডিওর বিশেষ বিশেষ অংশ দেখানোর জন্যে। আমি চড়ে বসলাম। সাথে থ্রি-ডি দেখার জন্যে বিশেষ চশমা দেওয়া হল। প্রতি ট্রেনে একজন করে গাইড। ট্রেন অবশ্য রেল লাইন ছাড়াই চলে রাস্তা ধরে।
হলিউডের সূচনা থেকে যত ছবি তৈর হয়েছে এখানে সেগুলোর ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা দিতে লাগল গাইড। সেসব সিনেমার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধারনের জন্যে এখানে নানান সেট তৈরী করা হয়েছে।
কিছু এলাকার উপর দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হল কোনো প্রাচীন নগরীতে এসেছি। একটা এলাকাকে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের নিউইয়র্ক সিটির মত করে বানানো হয়েছে। আমি অবশ্য হলিউডের ছবির ভক্ত নই,এমনকি এ সম্পর্কে আমার তেমন জানাশোনাও নেই। ফলে অনেক কিছু বুঝতে পারিনি বা অন্য দর্শকের মত উৎফুল্ল হতে পারিনি। তবে এদের শৈল্পিক দিকটি উপলব্ধী করে ভালো লাগছিলো। যখন কোনো সেটে উপস্থিত হচ্ছিলাম তখন পর্দায় সেখানে তৈরীকৃত মুভিটির অংশ বিশেষ প্রদর্শিত হচ্ছিলো। সেটা যেহেতু আমার দেখা ছিলনা তাই ঠিক উপলব্ধীটি আসছিলো না। গাইড ভদ্র মহিলা বেশ রসিয়ে রসিয়ে কথা বলছিলো।
একটি পুকুর ধরনের স্থানে এসে দেখলাম রাস্তা পানির নীচে ডুবে আছে,খানিক পর দেখলাম পানি দুপাশে সরে গেল এবং একটি ব্রীজ উঠে আসল। এখানে মোজেস বা মূসা(আঃ) এর উপর ভিত্তি করে একটি সিনেমা হয়েছিলো।
খানিক পর আরেকটা বড় পুকুরের পাশে এসে থামলাম। সেখানে হাঙ্গর নিয়ে কোনো একটা বিখ্যাত সিনেমার শুটিং হয়েছিলো। রোবট হাঙ্গর দেকলাম একজন রোবট মানুষকে পানিতে নিয়ে গেল,রক্ত ভেসে উঠল। খানিকপর এক পাশে আগুন ধরে উঠল ,এর ভেতর দিয়ে বিশাল একটা রোবট হাঙ্গর হা করে লাফিয়ে উঠল। আমরা সামনে এগিয়ে গেলাম।
এবার এক ভুতুড়ে টানেলে প্রবেশ করলাম। ট্রেন থামল ,চারিদিকে অন্ধকার। হঠাৎ দুপাশ থেকে ডাইনোসরের আক্রমন।সিাথে সাথে ট্রেনটা্ও ব্যপক দুলছিলো। আসলে ট্রেনটা বিমেষ ট্রাকে ছিল যেটা এরকমটা ঘটাচ্ছিলো। থ্রি-ডি চরিত্রকে একেবারে বাস্তব মনে হচ্ছিলো। ডাইনোসরের মুখের আলা এসে আমাদের গায়ে লাগল। আসলে সে সময় বিশেষ ব্যবস্থায় আমাদের উপর পানি স্প্রে করা হয় চরিত্রের সাথে মিলিয়ে। এরপর কিংকং নামক বিশাল আকারের গোরিলা আসল এবং ডাইনোসরের সাথে ফইট করল। সেটা এতটাই ভয়াবহ হল যে মনে হচ্ছিলো ট্রেন থেকে পড়েই যাব। ট্রেন আন্দোলিত হয়ে এমন হয়ে যাচ্ছিলো যেন ভূমিকম্প হওয়া এক বিপজ্জনক ব্রিজের উপর আছি। এই টানেলের বিশাল এলাকা জুড়ে স্ক্রিন ছিল। আর সেখানেই এসব ঘটছিলো। কিংকং ডাইনোসরকে মেরে ফেলল,আমরা চলে আসলাম।
আরেক টানেলের ভেতর দেখলাম থ্রি-ডি মুভিতে গোলাগুলির দৃশ্য চলছে। এক চলমান গাড়িতে থাকা লোককে পেছন থেকে ব্যপক গুলি করা হচ্ছে। ট্রেনও সেটার সাথে চলছে,মনে হচ্ছে আমাদেরকে গুলি করছে। হঠাৎ মনে হল ট্রেনটা উপর থেকে নীচে আছড়ে পড়ল। ভয়াবহ দৃশ্য ,মূলত কাহিনী এবং বাস্তবতার সমন্বয়ে এটা তৈরী।
এভাবে আরও বহু স্থান ঘুরে একটি অন্ধকার টানেলে প্রবেশ করলাম। এখানে ছবি ও ভিডিও করতে নিষেধ করল,ক্যামেরার ফ্লাশ মারতেও নিষেধ করল। ডানে দেখলাম একটি স্টেজ এবং সেখানে নানান সরঞ্জাম। এই স্টেজে কোনো স্ক্রিন ছিলনা। স্টেজটি ছিল আমাদের থেকে মাত্র ৪/৫ ফুট দূরে। হঠাৎ সেই স্টেজে দেখলাম থ্রি-ডি ছবি। কিছু সংখ্যক অভিনেতা অভিনেত্রী আসল এবং নাচ গান ও নানান আচরন করল। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না কিভাবে শূন্যের মধ্যে স্টেজের মাঝ বরাবর এভাবে চলমান চিত্র আনা সম্ভব। একেবারে চোখের সামনে শূন্যের মাঝেসিনেমা চলছে। সেসব অভিনেতারা বাস্তবে থাকা বিভিন্ন উপকরন নাড়া চাড়া করছে। তবে সেগুলোর নাড়াচাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবেই করানো হচ্ছিলো তা বুঝলাম কিন্তু ছবির কারিশমা বুঝলাম না। এরকম স্টেজ পাশাপাশি বেশ কয়েকটা ছিল সকলের সমানভাবে দেখার সুবিধার্তে। ঘটনার এই পর্যায়ে মাথায় প্যাচ লেগে গেল। এখনও বুঝতে পারছি না।
এক স্থানে এসে দেখলাম বিশাল বিশাল প্লেন ভেঙ্গে পড়ে আছে।সিনেমার একটি দৃশ্যের কারনে এটা করেছে এরা। পাশেই একটা নতুন সিমোর জন্যে বিশাল একটা প্লেন দাড়িয়ে আছে। মূলত : প্লেনের কবরস্থান থেকে এরা এসব কিনে আনে। এগুলো এমন যে এটা মেরামত করে আকাশে ওড়ানো যায় কিন্তু এরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই কেবল সেগুলো ব্যবহার করে,তারপর কবরস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সবমিলে প্রায় ৫০ মিনিটের মত ছিল এই ট্যুর। এরপর মনে হল পয়সা উসুল হয়ে গেছে। এখানে প্রবেশের জন্যে ২৪৯ ডলারেরও টিকেট আছে,কিন্তু সেসব টিকেটে কি কি দেখানো হয় জানা নেই,হয়ত আরও রোমাঞ্চকর কিছু হবে।
ট্রেন ট্যুর শেষ করে এবার একটা বিল্ডিংএ আসলাম। এখানে থি-ডি ট্যাক্সী রাইডিং আছে। নোটিশ দেওয়া আছে যাদের হার্টে সমস্যা,নশা বা দুলুনিতে যাদের সমস্যা হয় অথবা যাদের চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা আছে তারা যেন না প্রবেশ করে। আমি গেলাম। অনেকগুলো রুম রয়েছে,প্রত্যেক রুমে একটি করে ট্যাক্সি। প্রত্যেকটাতে ৬ জন করে বসতে পারে। বসলাম। এরপর ট্যাক্সি ছাদ ফুড়ে উপরে উঠে গেল। দেখলাম একটা বিশাল গোলাকার ছাদ,যা সামনে থেকে নীচে নেমে গেছে। এর পুরো অংশ জুড়ে থ্রি-ডি মুভি চলছে। চোখে চশমা ছাড়াই অনুভূত হচ্ছে আমরা ট্যাক্সি নিয়ে ঘটনার ভেতরে ঢুকে পড়েছি।
খানিক পর শুরু হল দ্রুত বেগে চলা। রোলার কোস্টারে চড়া,ভাঙ্গা ব্রিজের উপর দিয়ে শত শত মাইল বেগে চলা,তারপর সাগরে আছড়ে পড়া হাঙ্গরে এসে আক্রমন করছে। পুরোটাই এতটাই শৈল্পিকভাবে করা যে কোনোভাবেই বোঝার উপাই নেই যে বাস্তবে ওটা ঘটছে না। আমার বেশ অস্বস্তি লাগতে লাগল। গত রাতে ঘুমাইনি তারপর প্লেন জার্নি তারপর অনেক হাটাহাটি,প্রচন্ড গরমে সিদ্ধ হওয়া, সবমিলে বোধহয় একটু ক্লান্ত ছিলাম। ৫ মিনিটরে অধিক সময় ধরে মনে হল কেউ আমাকে ড্রামে ভরে উলোট-পালোট করছে। চারিদিক থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসতে থাকল। এক সময় শান্ত হল । আমি টলতে টলতে বের হয়ে আসলাম। মনে হচ্ছিলো এটানে না উঠলেই ভালো হত। খানিক হাটার পর ঠিক হয়ে গেল।
ভেতরে বানানো বেশ কিছু কৃত্তিম শহরের রাস্তায় হাটলাম। অনেক ছবি উঠালাম,তারপর ফিরতি পথ ধরলাম। এক রাস্তার পাশ ধরে হাটতে হাটতে দেখলাম একটা বাঙ্গালী রেস্টুরেন্ট। ভেতরে ঢুকে দেখলাম নানান তরি তরকারী আর মিস্টি। ভাবলাম পরে আসা যাবে।চলে আসলাম। ৪/৫শত মিটার আসার পর হঠাৎ মনে হল আমার দুনিয়া অন্ধকার করে ফেললাম,,ওরে আমি এ কি করলাম ! এক দৌড়ে সেই রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। দেখী বিশাল সাইজের কৈ মাছ, ভাতের সাথে তার অর্ডার দিলাম। সেখানে আরও অনেক বাঙ্গালী ছিল। আমি চামুচ বাদ দিয়ে হাত দিয়ে গো-গ্রাসে খেতে শুরু করলাম। চারিদিকের মানুষ তাকিয়ে থাকল,তাতে আমার বয়েই গেল। এরপর সন্দেশ,মিস্টি খেলাম।
এশার নামাজ পড়েই ঘুমিযে পড়লাম। শেষ রাত থেকে ব্যপক বৃষ্টি শুরু হল। সকাল প্রায় ৯টা পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি হল। সকাল ১১টার আগে হোটেল ছেড়ে বের হলাম এবং একটা বাঙ্গালী রেস্টুরেন্ট থেকে ব্যপক খেলাম,এখানে সুন্দর মিস্টি দৈ ছিল,২ কাপ ঝাড়লাম। বড় দুই প্যাকেট তেতুলও কিনলাম। এবার খানিকদূর হেটে একটা মেট্রোতে ঢুকে ড্রাইভারকে বললাম -এয়ারোপার্ট যেতে চাই এটাতে যাওয়া যাবে ? উনি বললেন উঠে বসো, আমি এমন স্থানে নামিয়ে দিব সেখান থেকে তুমি এয়াপোর্ট যেতে পারবে।
উনি যেখানে নামিয়ে দিলেন সেখানে দেখলাম একটা চমৎকার মসজিদ। খুব ভালো লাগল। স্থানটার নাম সম্ভবত ভারমন্ট এক্সপেডিশন। আমি মসজিদে গেলাম কিন্তু এটা নামাজের ৩০ মিনিট আগে খোরল আর বন্ধ হয় নামাজের ৩০ মিনিট পর।
রাস্তার অপর পার্শে দেখলাম বিশাল এক ঐতিহাসিক মিউজিয়াম। সেখানে প্রবেশ করে শুনলাম কোনো এক দূর্বোধ্য কারনে আজ ফ্রি কিন্তু ইচ্ছা করলে কিছু ডোনেট করতে পারি। আমি ১ ডলার ডোনেট করে ভেতরে ঢুকলাম। এখানকার প্রবেশ ফি ১২ ডলার। বোধহয় আমার আগমনে তারা ধন্য হয়ে সকলের জন্যে জন্যে তারা প্রবেশ ফ্রি করে দিয়েছে।
মিউজিয়ামের ভেতরের জাকজমক নজর কাড়ে। একটি বিশাল এলাকায় নয়নাভিরাম ফুলের বাগানের সাথে এটি তৈরী করা। মোট ৩টি ফ্লোর নিয়ে এটি তৈরী। গ্রাউন্ড ফ্লোরে বিভিন্ন প্রাচীন মমি রাখা হয়েছে। এখানে যেতে আলাদা টিকেট কাটতে হয়,আমি গেলাম না। উপরে গেলাম, একটি কৃত্তিম জঙ্গল তৈরী করা হয়েছে। বাঘ,ভাল্লুক,হরিন,ছাগল আরও বহু প্রানীর রেপ্লিকা তৈরী করা হয়েছে তাদের মুল চামড়া দিয়ে এবং মূল অবয়বে। বহু প্রানীর ফসিল দেখলাম। বহু প্রানীর হাড়গোড় দেখলাম। ডায়নোসরের নানান হাড়গোড় দেখলাম যা ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছর পূর্বেকার। একটা ল্যাবে প্রবেশ করলাম এবং দেখলাম ৩ জন বিজ্ঞানী ফসিলের উপর গবেষনার কাজ করছে। অনেক যত্নের সাথে তারা কাজ করছে। ডায়নোসরের একটা হাড় দেখলাম যা ছোট পিলারের মত,এটা পেছনের পায়ের হাড়। দেখলাম মায়া,ইনকা,এ্যাজটেক সভ্যতার বিভিন্ন নিদশন। ২ ঘন্টা থেকে চলে আসলাম এয়াপোর্ট। বিকেলের প্লেনে চড়ে বসলাম,সিট জানালার পাশে কিন্তু ভাগ্য আবারও পূর্বের মত। আবারও আলাস্কান গিজলী বেয়ার সাইজ মাঝে,তবে ইনি মহিলা । নিয়তি স্বীকার করে ফিরলাম। রাতে বাসায় ফিরে খাওয়ার কিছু না পেয়ে পুরোনো ভাতকে পান্তাভাত বানিয়ে পেয়াজ মরিচ দিয়ে খেলাম। বুঝলাম-আমি পান্তাখোর।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার না গিয়েও যাওয়া হল৷ তা পাশপোর্টের কি হল৷ বাঙ্গালী কনসূলেট কর্মচারীদের যে বর্ণনা পেলাম তাতে অবাকই হলাম৷ কারণ অটোয়ায় যারা আছেন,তাদের আচরণ একেবারে দেশী৷ বখশীশ প্রত্যাশা করে তবে মুখে বলতে পারেনা তাই হেনস্থাটা ঠিকই করে৷ ধন্যবাদ৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন