আনকেনী হিল টু বনভিস্তা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:১৯:৫৭ রাত
গতকাল শনিবার ছিল ছুটি। সকালে সেলাম গেলাম। সেলাম হল ওরেগনের রাজধানী। মাঝে মাঝেই যাওয়া হয়। এখানে একটা মিউজিয়াম আছে যা হল একটি পুরোনো উলের ফ্যাক্টরী। এই উল কারখানাটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভেড়ার লোম থেকে উল তৈরী হয়। পুরো ফ্যাক্টরীটা চলত এর নীচ দিয়ে প্রবাহিত একটি খাল থেকে তৈরী বিদ্যুতে। প্রাচীন ফ্যাক্টরীটা দেখে মনে হল এটা এখনও চালানো সম্ভব। যদিও এটা দীর্ঘকাল ধরে বন্ধ আছে। হাতে তৈরী উলের বিভিন্ন পোষাক,হান্ডিক্রাফটও দেখলাম একটি শোরুমে।
এবার গেলাম তাজমহল নামক ভারতীয় এক রেস্টুরেন্টে কিন্তু শনিবারে লোক কম আসে বলে তারা তেমন কিছু তৈরী করেনা,ফলে চলে আসলাম এক পরিচিত লোকের বাসায়। আগেই কথা হয়েছিলো তার গাছের প্লাম এবং আঙ্গুর,আপেল বস্তা ভরে আনব। সাথেও ছিল একটা ছোট বস্তা। আযান দিয়ে তুললাম। তার গাছগুলো ফলের ভারে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম।
তার থেকে তথ্য নিয়ে এবার গেলাম ফিলিস্থিনের একটি রেস্টুরেন্ট আল আকসায়। পঞ্চাশোর্ধ এক দম্পতি এটা পরিচালনা করে। ফিলাফেল নামক এক ধরনের বড়া খেলাম,খুব সাংঘাতিক দারুন লাগল। আর খেলাম ভেড়ার মাংসের শর্মা ,এটাকে মিশরীওরা জিরো,বা ইউরোও বলে। ব্যপক মজার জিনিস।
এবার আনকেনী হিল এলাকায় চলে গেলাম। সুন্দর সুন্দর টিলার ভেতর দিয়ে চমৎকার রাস্তা। সেখানে আছে মাইলের পর মাইল ফার্ম হাউস। কোথাও কোথাও ভেড়া ও ঘোড়ার ফার্ম। কোথাও আবার লামা দেখলাম। খুব সুন্দর এলাকা। এবার চললাম বন ভিস্তা এলাকায়। এখানে যেতে অলামেট নদী পাড়ি দিতে হয়। এই প্রথম ফেরী পার হলাম। নদীটা এই অংশে ১০০ মিটারের মত পওড়া হবে,তবে প্রচন্ড খরস্রোতা। ফেরী যাতে সোজা সুজি চলতে পারে তার জন্যে নদীর দুই পাড়ে বিশাল দুটি টাওয়ার বানানো হয়েছে এবং সেই টাওয়ার দুটি বড় বড় কেবল দ্বারা সংযুক্ত। এই কেবলের সাথে ফেরীটি আটকানো। অপরপাশেও একটি কেবল আছে পানির উপর দিয়ে প্রবাহিত এবং সেটিও ফেরীকে আকড়ে রেখেছে। ফেরী চলমান হলে ফেরীর সাথে আটকানো কেবলটিও বিশেষ মোটর যুক্ত চাকার সাথে চলতে থাকে। ফেরীটি ছোট। এতে ৬ অথবা ৮টি কার ধরবে। এটি নির্জন এলাকা। আমি ছাড়া ফেরীতে আর কেউ ছিলনা। ৩ ডলার ফি প্রদান করে পার হলাম।
এপারে বন ভিস্তা নামক ছোট্ট একটি এলাকা। পুরোটাই ফার্ম হাউস। অসম্ভব সুন্দর লাগল। একটি মিস্টি কুমড়ার ক্ষেত দেখলাম এর শেষ কোথায় তা বোঝা গেলনা,কারন উচু নীচু ভূমি। তবে যতদূর চোখ গেছে মনে হয়েছে কেউ মিস্টি কুমড়া ট্রাকে করে ঢেলে রেখে গেছে। এত বিশাল এলাকায় একটার পর একটা মিস্টি কুমড়া পড়ে থাকতে দেখে মনে হয়েছে এটা বোধহয় মিলিয়ন মিলিয়ন। আরও একটা বিষয় মনে হচ্ছিলো তা হল মাটি থেকে যদি ভালো উৎপাদন করা যায়,তাহলে জনসংখ্যা কোনো ব্যাপার না। তবে এসব বলে অনেকে আমাদেরকে ভয় দেখায়।
এবার একটা পার্কে আসলাম। এটাও নির্জন পার্ক। আমি ছাড়া আর মাত্র একজনকে দেখলাম। আমি ভেতরে গেলাম খানিকদূর গিয়ে একটি খাল আবিষ্কার করলাম। বেশ দারুন। অপর পাশে গিয়ে বুঝলাম এখানে বিশাল আকারের হরিনের ছড়াছড়ি। তারা দলবেধে শুয়ে থাকা এলাকায় ঘাসগুলো বসে গেছে। দিনে এরা বেশী ভেতরের দিকে চলে যায়,রাতে বের হয়। এখানে আবার ভাল্লুকও আছে,যদিও এরা ভীরু এবং মানুষকে আক্রমন করেছে বলে কোনো রেকর্ড নেই,তার পরও আমি আর আগালাম না। দুজন দুজনকে দেখে ভয় পাওয়ার চাইতে বরং বিষয়টা না ঘটুক !
এখানে যে গার্বেজ ক্যান রয়েছে তার মুখ বিশেষভাবে আটকানো। কারন ভাল্লুক মানুষের খাবার খুব পছন্দ করে,সে কারনে তারা রাতে এসক গার্বেজ ট্যাঙ্কে খাবার খুজে। একটা নোটিশে লেখা দেখলাম- আপনার বাড়ির খাবারের উচ্ছিষ্ট এখানে ফেলবেন না। কারন লোভে পড়ে কোনো দুষিত খাবার খেয়ে এরা অসুস্থ্য হয়ে পড়তে পারে।
এবার আরেক এলাকায় এসে দেখলাম রাস্তার উপর বিশাল মেলা বসেছে। মূলত এন্টিকসের পসরা। নানান পুরোনো জিনিসের ছড়াছড়ি। এক দোকানে দেখলাম আমাদের কামাররা যে উকো বা রেত ব্যবহার করে দা,ছুরি ধার করার জন্যে বা শান দেওয়ার জন্যে,সেটাই সাজানো আছে প্রাচীন হিসেবে। হাসলাম, কারন এটা এখনও আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয় ,ফলে এটা পুরোনো জিনস নয়,আমাদের কাছে। পুরোনো অনেক গাড়ি দেখলাম ১৯১৫ থেকে ৫০ সালের বিভিন্ন মডেল,যা এখনও সচল। আরও অনেক কিছু ছিল ,দেখে চলে আসলাম।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৩ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো
নামটা সেলাম না সালেম। লামা তো পড়েছি (টিন্ টিন এর "সূর্যদেব এর বন্দি" তে) দক্ষিন আমেরিকার প্রানি আর ওরেগন ইউএস এর সর্বউত্তর এর ষ্টেট! এখানে গেল কি করে?? শর্মা খেতে মন চাচ্ছে!!
বলেন দেখি, এগুলো কোথাকার?
মনে হচ্ছে আপনার সাথে ঘুরে আসলাম।
শুকরিয়া ভাই।
আপনাকে কে যে শহরের ইট -পাথরের মাঝে আটকে রেখেছে! ঐ ফার্ম হাউস, টিলা, নদী, জলপ্রপাত আর পাহাড়ি এলাকাতেই আপনাকে মানায়! সাথে থাকবে পুটির মা! চমৎকার জুটির চমৎকার বাসস্থান!
তো দোআ করেছিলেন তো ? নাকি বস্তায় ফল ভরতে ভরতে..
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন