আল কুরআনের সংরক্ষন(সীরাত ৪)

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৪০:০২ সকাল

আল-কুরআনের সংরক্ষন:

“আমিই আল-কুরআন নাযিল করেছি , আমিই একে সংরক্ষন করব।”-(আল-কুরআন,১৫: ৯)

যখন কোনো আয়াত নাযিল হত,তা রসেূলের(সাঃ) স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে গেঁথে যেত,অথবা আল্লাহর বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত দূত ফেরেশতা জিবরাঈল(আঃ) তাঁর(সাঃ)কাছে আল্লাহর বাণী সরাসরি নিয়ে আসতেন মানুষের বেশে এবং রসূল(সাঃ) তা মুখস্ত করতেন। এরপর তিনি(সাঃ) ফেরেশতা জিবরাঈলকে(আঃ) শোনাতেন কোনো ভূল হচ্ছে কিনা,তা বোঝার জন্যে। পুরোপুরি সঠিকভাবে মুখস্ত হলে ফেরেশতা জিবরাঈল(আঃ) বিদায় নিতেন। “ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত-রসূল(সাঃ) বলেন- রমজানের প্রত্যেক রাতে সম্মানিত ফেরেশতা জিবরাঈল তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তখন রসূল(সাHappy তাঁকে আল-কুরআন পাঠ করে শুনাতেন।”-(বুখারী)

হযরত হারিস ইবনে হিশাম(রাঃ) রসূলকে(সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন- ওহী কিরূপে নাযীল হয় ? তিনি(সাঃ) বললেন-সব ধরনের ওহী নিয়ে ফেরশেতা আগমন করেন, কোনো কোনো সময় ঘন্টার আওয়াজের মত শব্দ করে আসেন,যখন ওহী আগমন শেষ হয়ে যায়,তিনি যা বলেছেন আমি তার সবকিছু মুখস্ত করে ফেলি। এভাবে ওহী আসাটা আমার কাছে খুবই কষ্টকর। কখনও কখনও ফেরেশতা আমার কাছে মানুষের আকৃতিতে আগমন করেন এবং আল্লাহর বাণী প্রদান করেন। তিনি যা বলেন তা আমি মুখস্ত করে ফেলি। -(বুখারী)

এরপর রসূল(সাঃ) লিখতে জানা সাহাবাদের দ্বারা আয়াতগুলো লিখে রাখতেন। বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন এ কাজে নিয়জিত। হযরত যায়েদ বিন সাবিত(রাঃ) ছাড়াও ছিলেন আরও ৪২জন। এদের মধ্যে খুলাফায়ে রাশিদার চারজন খলিফা বা সাহাবীও ছিলেন। হযরত আলী(রাঃ) বলতেন- আমাকে আল কুরআন সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর যেখান থেকে খুশী,যেভাবে খুশী। এমন কোনো আয়াত নেই ,যা দিনে অথবা রাতের কোনো সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে আর তা আমার জানা নেই। সাহাবাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ আয়াতগুলো লিখে রাখার জন্যে।

আবু হুযায়ফা(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- আমি আলীকে(রাঃ) জিজ্ঞেস করলাম-আপনার কাছে কি লিখিত ইলম আছে ? তিনি বললেন- না, তবে কেবলমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছে আর সেই জ্ঞান-বুদ্ধী-বিবেক যা কেবলমাত্র একজন মুসলিমকে দান করা হয়, এছাড়া যা কিছু এই পত্রটিতে লেখা আছে। হুযায়ফা(রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন- এখানে কি লেখা আছে ? আলী(রাHappy বললেন-দীয়াতের(ক্ষতি পূরণ) ও বন্দী মুক্তির বিধান যে- মুসলিমকে কাফিরের বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না।”-(বুখারী)

রসূল(সাঃ) অন্যদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এভাবে শুরু থেকেই কুরআনের হাফিজ তৈরী হচ্ছিলেন। অবতীর্ণ হওয়া আয়াতসমূহ নামাজে তিলাওয়াত করা হত এবং বাস্তব জীবনে ব্যপক চর্চা করা হত। রসূল(সাঃ) বলেন-“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারা,যারা নিজেরা আল-কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়”-(বুখারী) “যে ব্যক্তি তার অন্তরে কুরআন গেঁথে রাখে বা মুখস্ত করে রাখে তার উদাহরণ হল ওই ব্যক্তির ন্যায় ,যে উট বেধে রাখে। যদি সে উট বেধে রাখে তবে তা তার নিয়ন্ত্রনে থাকে আর যদি সে খুলে দেয় তবে তা তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়” -(বুখারী) । তাঁর(সাঃ) এমন কথার পর সাহাবায়ে কেরাম আরও বেশী উৎসাহিত হয়েছেন আল-কুরআন সংরক্ষনে, তার শিক্ষায় ,প্রচারে এবং প্রতিষ্ঠায়। রসূলের(সাঃ) লক্ষাধিক সাহাবা তাকে অনুকণন,অনুসরণ করেছিলেন এবং সুন্নাহর চর্চা নিজেরা পূর্ণ মাত্রায় করতেন ,আর ইসলামের দাওয়াহ করাটা যেহেতু অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ তাই তারা ব্যপকভাবে ইসলাম প্রচার করতেন।

কাগজের প্রচলন না থাকায় তখন আয়াতগুলো পশুর চামড়ায়,বৃক্ষের ছালে,জীব-জন্তুর চওড়া হাড়ে,পাথরখন্ডে লিখে রাখা হত। আল-কুরআনের আয়াতগুলো বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে। বড় সূরাগুলোর সকল আয়াত একইসাথে নাযিল হয়নি,এমনকি একই সূরার সকল আয়াত ধারাবাহিকভাবেও নাযিল হয়নি। তাই রসূল(সাঃ) সাহাবাদেরকে বলে দিতেন কোন আয়াত কিভাবে,কোথায় লিখতে হবে। কোন আয়াতের পর কোন আয়াত সন্নিবেশিত হবে এবং সূরার নামগুলোও তিনি বলে দিতেন,কোন আয়াত কোন সূরার কোথায় লিখিত হবে,তাও বলে দিতেন। পুরো প্রক্রিয়াটি মহান আল্লাহর নির্দেশে এবং তাঁর(সাঃ) নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত হয়েছে। ফলে আল-কুরআনের আয়াত বিকৃত হওয়া বা নষ্ট হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়নি।

হযরত আমর ইবনে রাফে(রাঃ) বলেন আমি উম্মুল মুমিনিন হযরত হাফসার(রাঃ) জন্যে কুরআন মজিদের পান্ডুলিপি তৈরী করেছিলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দেন-অমুক আয়াতে পৌঁছে আমাকে জানাবে। আমি সেই আয়াতে পৌঁছে তাকে অবহিত করলাম।.....(এরপর তিনি নির্দেশনা দান করেন ; রসূলের(সাHappyকাছ থেকে যেভাবে শিখেছেন ঠিক সেভাবে) - ( মুওয়াত্তা- ঈমাম মুহাম্মদ)

হযরত আয়েশার(রাHappy মুক্ত দাস আবু ইউনুস(রাHappy বলেন- উ¤মূল মুমিনিন হযরত আয়েশা(রাHappy তার জন্যে আমাকে কুরআনের একটি পান্ডুলিপি তৈরী করতে বলেছিলেন। .....(এরপর তিনি নির্দেশনা দান করেন; রসূলের(সাHappyকাছ থেকে যেভাবে শিখেছেন ঠিক সেভাবে) - ( মুওয়াত্তা- ঈমাম মুহাম্মদ)

রসূল(সাHappyএর ওফাতের পর হযরত আবু বরকর(রাHappy এবং ওমরের(রাHappy খিলাফতের সময়ও যত্নের সাথে আল-কুরআন সংরক্ষিত হয়েছিল কিন্তু সেগুলো পুস্তকাকারে ছিলনা। তবে তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান(রাঃ)এর সময়ে কিছু এলাকায় আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন লিখিত হচ্ছিল। এতে কুরআনের বক্তব্য/ভাব বিকৃত হয়ে যেতে পারে মনে করে খলিফা ওসমান(রাঃ) সকল সাহাবায়ে কেরামের ইজমা অনুযায়ী আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত কুরআনের সকল কপি জব্দ করেন এবং তা পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেন। এরপর আর কখনও আঞ্চলিক ভাষায় তা রচিত হয়নি।

আল-কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার দীর্ঘ ২৩ বছরে যেখানে যেখানে এবং যেভাবে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষিত হয়েছিল তা সংগ্রহ করা হয়। খলিফা তা সংগ্রহ করেন(তিনি নিজেই কুরআনী হাফিজ ছিলেন এবং হাফিজগনেরও সাহায্য নিয়েছেন) এবং পুস্তকাকারে আল-কুরআন লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর উ¤মূল মুমিনিন হযরত হাফসার(রাঃ) কাছে রক্ষিত আল-কুরআনের মূল কপির সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। তারপর বহু সংখ্যক কপি খলিফার দায়িত্বে তৈরী করা হয় এবং খিলাফতভূক্ত বিভিন্ন অঞ্চলসমূহের বিভিন্ন স্থানে একাধীক কপি প্রেরণ করা হয়।

মূলত: আল-কুরআন কোনো কালেও অরক্ষিত ছিলনা। এটি সংরক্ষন করা হয়েছে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে। সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত সাবধানী। রসূল(সাঃ)এর জীবদ্দশা এবং তার ওফাতের পর এটি ছিল সর্বাধিক পঠিত। বহু সংখ্যক হাফিজ সাহাবী ছাড়াও অন্যদের মধ্যেও বহু সংখ্যক কুরআনী হাফিজ ছিলেন,যারা কুরআন মুখস্ত করে রেখেছিলেন। কিন্তু ভন্ড নবী মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক সংখ্যক কুরআনী হাফিজ শহীদ হলে খলিফা ওসমান(রাHappy এটার সংরক্ষন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কুরআন পরিপূর্ণ পুস্তকাকারে সংরক্ষিত ও প্রচলিত হয়। আজ আমাদের হাতে আল-কুরআনের যে কপিটি আছে,তা হুবহু হযরত ওসমান কর্তৃক সংরক্ষিত কপির অনুরূপ এবং রসূল(সাHappyএর উপর অবতীর্ণ হওয়া আল-কুরআন। হযরত ওসমান(রাHappy কর্তৃক সংরক্ষিত সেই কপিটি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। আল-কুরআন নামক কিতাবটি মহান আল্লাহ তায়ালা সংরক্ষিত রাখবেন পৃথিবী ধবংশ হওয়া পর্যন্ত। এটি আল্লাহর ওয়াদা।

নীচের লিংকে ব্লগার শেখের পোলা চাচার অনুবাদকৃত বয়ানূল কুরআনে উল্লিখিত ওসমান(রাঃ)কতৃক তৈরীকৃত আলকুরআনের ১০টি কপি বর্তমানে কোথায় কিভাবে আছে তা উল্লেখ কেরা হয়েছে। ব্লগার চাচার অনুমতি পেলে এই অংশটির কিছু অংশ আমি আমার বইতে সংযুক্ত করতে চাই।

http://www.bd-monitor.net/blog/blogdetail/detail/4370/theslave/67876#.VfT3fNJViko

বিষয়: বিবিধ

১৬৭৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

341390
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:৪৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বুঝলাম না, আমি ভাবছিলাম ইমোর সম্যা সমাধান করেছি,তারপরও এই কাজ ক্যামনে হল .....!!!
341398
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০০
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৩৩
282915
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বারাকাল্লাহ ফিকHappy
341447
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:০৬
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : খুবি গুরুত্ব হাদিস, জাজাকাল্লাহু খায়ের
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৩৪
282916
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান ভাই
341511
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
আল্লাহতায়লাই আল কুরআন কে হিফাজত করবেন।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৩৫
282917
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সত্য বলেছেন। তিনি কোটি কোটি হাফিজ এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে তা করছেন। তবে আমরা গাফেল
341692
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৪৭
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ।

কোরআন হিফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন। এ এমন এক গ্রন্থ যাতে কোন সন্দেহ নেই অথচ আমরা এই ঐশীগ্রন্থ থেকে আজ অনেক দূরে সরে এসেছি!

ভালো লাগছে, লিখতে থাকুন! আশাকরি চাচাজান অনুমতি দিবেন!

জাযাকাল্লাহ খাইর!
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
283203
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। হেহেহে চাচাজান অনুমতি না দিলেও সমস্যা নাই। আসলে যে অংশটুকু সংযুক্ত করতে চেয়েছিলাম সেটা হল-আল কুরআনের কপিগুলি বর্তমানে কোথায় কিভাবে আছে। এটা গুগল এ সার্চ করলে ও একটু স্ট্যাডী করলেও বের করা যায়। কিন্তু উনার তাফসীরের রেফারেন্স দিলে ভালো। যাইহোক চাচা ভাই লোক ভালো। Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File