চলুন ঘুরে আসি অলামেট ন্যাশনাল ফরেস্ট

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:২৮:৪৯ দুপুর





আজ ৭ই সেপ্টেম্বর, লেবার ডে, আমার ছুটি। ছুটির দিনগুলোকে আমি ঘুরতে পছন্দ করি। এবারের পরিকল্পনা অলামেট ন্যাশনাল ফরেস্ট। ওরেগনের শত শত মাইল জুড়ে এর অবস্থান। এতটা সমৃদ্ধ সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বে বোধহয় কমই আছে। প্রতিটি পদক্ষেপেই বলতে ইচ্ছে করে আলহামদুলিল্লাহ !

ফজরের নামাজের পর ঝাড়া ২ ঘন্টা ঘুমালাম। এরপর রেডি হয়ে যাত্রা শুরু করলাম। ডাচ ব্রাদার্সের কফি,বিশেষ স্বাদের এ্যামন্ড,ডিম,কলা,সলটেড বিস্কুট এবং চিজ সাথী হল। আজ সকালটা মেঘলা। রাস্তায় তেমন একটা গাড়িঘোড়া দেখলাম না। তাপমাত্রা ৫৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট। সুন্দর প্রশস্ত হাইওয়ে ফাইভ ধরে ইউজিনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এরপর পূর্বদিকের হাইওয়ে ১২৬ ধরে স্প্রিং ফিল্ড হয়ে অলামেট ন্যাশনাল ফরেস্টের দিকে চললাম। রওনা হবার ঘন্টাখানেক পর সূর্যের কিরনে পাহাড়ের মাথায় থাকা কুয়াশাসমূহ এবং মেঘমালা দূরীভূত হতে থাকল। তাপমাত্রা উঠতে শুরু করল। চারিদিকে রোদ ঝলমলে পরিবেশের সৃষ্টি হল। ভালো লাগল।

বিখ্যাত ম্যাকেঞ্জী নদী হল রাস্তার সাথী। তাকে হাতের ডানে রেখে দ্রুত বেগে ছুটলাম। রাস্তার দুপাশে একের পর এক বিভিন্ন পার্ক অথবা ফার্ম হাউস পড়তে লাগল। সেগুলোর সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে গেলে আসল কাজ হবেনা ভেবে এগুতে লাগলাম। কিন্তু ম্যাকেঞ্জী নদীর একটি সেতু লাগোয়া 'হেন্ডরিকস পার্কে' না থেমে পারলাম না। পার্কে নেমে হাটতে থাকলাম নদীর ধারে। এটি হল পাহাড়ী খরস্রোতা নদী। প্রবল বেগে পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীটি। নদীর দুপাড়ের সৌন্দর্য্য অপরূপ। পার্কের এ অংশে গরমের সময় মানুষ পানিতে নামে। বাচ্চাদের জন্যে পাথর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে একটি ছোট্ট স্থান,হাটু পানি সেখানে। বাচ্চারা এখানে খেলা করে। একটু দূরে স্রোতকে ঠেকাতে পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে,যাতে স্রোত সরাসরি এ অংশে আঘাত না করে। খুবই স্বচ্ছ সুন্দর পানি। নদীটি এ অংশে প্রশস্ততায় আনুমানিক ১০০ ফুট হবে। নদীর ওপারে ঝুলন্ত বারান্দাসহ একটি দারুন বাড়ি দেখলাম। একজন মিলিয়নিয়র এই দামী বাড়িটি কিনেছে। খুব দারুন লাগল বাড়িটি।

আবারও ছুটলাম। বেশ কিছুদূর চলার পর রেইনবো নামক এলাকায় উপস্থিত হলাম। এটি একটি ছোট্ট শহর। অনেক পুরোনো আর ঐতিহ্যবাহী একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে এখানে। খুব সুন্দর লাগল দেখে। খুবই পরিপাটি। ভেতরে প্রবেশ করলাম,অনেক মানুষ বিভিন্ন জিনিস খাচ্ছে। খাবারের মেন্যু এবং খাবারের বাস্তব চেহারা দেখে পছন্দ হলনা। মনে হচ্ছিলো যদি খানিকটা ভারতীয় মার্কা খাবার হত,বেশ জমত। চলে আসলাম।

খানিকদূর পর আরেকটি ছোট্ট শহরে আসলাম। এখানে বেশ কিছু ক্যাম্প গ্রাউন্ড রয়েছে। মানুষ তাদের মোটর হোম,আরভি নিয়ে এখানে কিছুদিন কাটায়। এখানে একটি তথ্য কেন্দ্র আছে যা অতিশয় চমৎকারভাবে বড় গাছের কান্ড দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। সরকারী ছুটির কারনে আজ বন্ধ কিন্তু বাইরে একটি শেড তৈরী করে বড় বড় করে ম্যাপ তৈরী করা হয়েছে,যাতে মানুষ ভ্রমনের বিস্তারিত তথ্য খুব সহযে বুঝে নিতে পারে। যদিও আমার কাছে ম্যাপ আছে,আর অাছে জনাব গুগল,কিন্তু এখান থেকে ভালোকরে দেখে নিলাম কোন রাস্তায় কি কি আছে। আবারও চলতে শুরু করলাম।

গন্তব্য: প্রক্সি ফলস। এখান থেকে মাইল তিন,চার সামনে গিয়ে হাতের ডানে মোড় নিলাম । এটি পাহাড়ী আকাবাকা রাস্তা। এদিকে অহরহ সাইকেল আরোহী পড়তে লাগল। এখানে ওদের রাজত্ব। গৃষ্মে মানুষ এদিকটাতে ক্যাম্পিংএ আসে আর সাথে থাকে খুব সুন্দর সুন্দর সাইকেল। বহু সাইকেলের দাম ভারতীয় মোটর বাইকের থেকেও বেশী। দু একটি ছাড়া বেশীরভাগ সাইকেলই একেবারেই পাতলা জাতের। সরু রাস্তায় বার বার সাইকেল পড়তে থাকল আর তাদেরকে অনেক দূরত্বে সাইড দিয়ে চললাম,এটাই নিয়ম। সাইড দিতে গিয়ে রাস্তার অন্য পাশে চলে আসতে হয়,তাদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টির জন্যে। তারা রাস্তা জুড়ে থাকলে চুপচাপ পেছনে দাড়িয়ে থাকতে হয়,নয়ত তাদের থেকেও আস্তে চলতে হয়। কোনোভাবেই হর্ণ বাজানো যাবেনা। তবে এরা বুঝতে পারলে রাস্তার এক পাশে সরে সাইড দেয়। ভদ্র লোক।

এই রাস্তাটি শীতে বন্ধ থাকে,কারন তুষার পড়ে রাস্তা দূর্গম হয়ে ওঠে। উপরের দিকে চলে গেছে রাস্তাটি। দশ মাইল পৌছে থামলাম। এটিই প্রক্সি ফলস ট্রেইল,হাতের ডানে। রাস্তার পাশে একটি বক্স আছে যেখানে একটি খামে ৫ ডলার ভরে ভেতরে ফেলতে হয় পার্কি ফি হিসেবে। এখানে ডিজিটালী পার্কিং ফি সংগ্রহ করা হয়না। লক্ষ্য করলাম সবাই নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ফি প্রদান করছে। ফাকি দেওয়া কোনো ব্যাপারই না,কিন্তু মানুষের চরিত্র বুঝেই কর্তৃপক্ষ এমন বিশ্বাস করে সবখানে। এ ব্যাপারে কাওকে কখনও ফাকি দিতে দেখিনি।

এখানে প্রক্সি ফলস আপার ও লোয়ার নামক দুটি জলপ্রপাত রয়েছে। হাতের ডান দিক দিয়ে শুরু করলাম,এভাবেই এলাকাটি ডিজাইন করা হয়েছে। সরু পায়ে চলা রাস্তা উপরে উঠে গেছে। এখানে সেখানে উচু,নীচু,খাড়া পাথরের চাক। এগুলো আগ্নেয় শীলা। কয়েকটি পরিবারকে দেখলাম। হঠাত সামনে চলমান একটি বাচ্চা ছেলে হুচোট খেয়ে পড়ে ঠোট,নাক ফাটিয়ে ফেলল। তাকে নিয়ে বাপ,মা ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি সাহায্য করতে পারি কিনা জিজ্ঞেস করলাম,তারা সবিনয়ে বলল যে তারা ঠিক আছে। চলতে শুরু করলাম।

অসাধারন সুন্দর স্থান এটা। এখান থেকে পাশের একটি খাড়া পাহাড় চোখে পড়ল। সবগুলো পাহাড়ই সবুজ বনভূমিতে আচ্ছাদিত । পাহাড়ের খাড়া ঢাল দেখতে খুব ভালো লাগে। আমি সবুজ বনবূমির ভেতর প্রবেশ করলাম। চারিদিকে সবুজ শ্যাওলাযুক্ত ভূমী আর শতবর্ষী শ্যাওলা ধরা বিশাল বিশাল বৃক্ষরাজী। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। যেদিকে তাকই শুধু মুগ্ধ হই। কত সুন্দর এই প্রকৃতি ! হঠাৎ জলপ্রপাতের শব্দ শুনলাম। আরও কাছে গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

বহু উপর থেকে পাহাড়ী নদী কঠিন পাথরের উপর আছড়ে পড়ে শত ধারায় ছড়িয়ে পড়ছে। সাংঘাতিক সুন্দর দৃশ্য। উপর থেকে কয়েকটি ধাপে পানি নীচে এসে পড়ছে। একেবারে নীচের ধাপটি থেকে পানি বৃষ্টির মত ধারায় নেমে আসছে। সে এক অদ্ভূত সুন্দর দৃশ্য। আমি তাকিয়েই থাকলাম।

শুধু তাকিয়ে থাকা লোক আমি না। পতিত পানি অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমি খাড়া ঢাল বেয়ে নীচে নামতে শুরু করলাম। যদিও পায়ের কেডসটি আজ এরকম পথের উপযুক্ত নয় এবং পেছনে মোটামুটি ভারী ব্যাগ, কিন্তু দমে যাবার পাত্র আমি না। এক দমে নীচে চলে গেলাম। এক অদ্ভূত সুন্দর পরিবেশ।

নীচে বিশাল বিশাল গাছ উপড়ে পড়ে আছে। অনেক গাছের কান্ড পচে,ক্ষয়ে শৈল্পিক দৃশ্য তৈরী করেছে। চলমান পানির ধারাকে আচকে দিয়েছে অনেক পতিত ,মৃত গাছ। পানি তখন ছুটে চলার প্রয়োজনেই নতুন পথ করে নিয়েছে। সে দৃশ্যও অপরূপ। কোথাও সমান্তরালে,কোথাও লাফিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে । আমি পাথুরে পিচ্ছিল পথে ,কখনও গাছের কান্ডের উপর ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যেতে থাকলাম পানির উৎস্যের কাছে।

এবার খানিকটা উপরে উঠে আসলাম এই মনোরম দৃশ্য উপভোগের স্বার্থে। পুরো এলাকা ক্যামেরাবন্দী করলাম। যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। এবার চিন্তা করলাম খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠব। যেই ভাবা সেই কাজ। আলহামদুলিল্লাহ আমার পায়ে বেশ শক্তি আছে। খাড়া পাহাড় বেয়ে জলপ্রপাতের কাছাকাছি দিয়ে উপরে উঠতে শুরু করলাম। পাথরের উপর স্যাতসেতে শ্যাওলা ,কোথাও কোথাও বড় বড় গাছ। এর ভেতর দিয়ে উঠতে থাকলাম। কিন্তু ভুলটা বুঝতে পারলাম প্রায় মাথায় পৌছে। এতটা আবেগতাড়িত হওয়া উচিৎ হয়নি। ভেবেছিলাম এদিক দিয়ে উপরে পৌছে উপরে উঠে রাস্তা ধরব। কিন্তু আমি জলপ্রপাতের অপর দিকে উঠছি তা খেয়াল করিনি। উপরে গিয়ে আমাকে এই জলপ্রপাতটি পার হয়ে এপাশে আসতে হবে,যা অসম্ভব। জলপ্রপাতের অপর পাশ মানে হল অন্য একটি এলাকা। এদিকে এমন একটি স্থানে এসে পড়েছি যেখান থেকে একই পথ ধরে নেমে যাওয়াও বেশ কষ্টকর। খাড়া ঢালে পা পিছলে পড়লে সর্বনাশ। নীচে নেমে যাওয়ার বিকল্প নেই,বিপদে পড়লাম। এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্কও নেই ,আমি একাকী অরন্যের খাড়া পাহাড়ী ঢালে। এতক্ষন গান গাইতে গাইতে উপরে উঠছিলাম,মাইনকা চিপায় পড়ে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে নীচে নামা শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ শরীরে ব্যপক ব্যালান্স এবং শক্তি রয়েছে। বেশ চমৎকারভাবেই নীচে নেমে আসলাম এবং না থেমেই এপাশের খাড়া ঢাল বেয়ে ট্রেইলে ফিরে আসলাম। এক ঢোকও পানি পান না করে লোয়ার প্রক্সি ফলসের দিকে চললাম।





আবারও সুন্দর চলার পথ। ছায়া ঢাকা উচু নীচু রাস্তা। বিশাল বিশাল বৃক্ষ,শ্যাওলা জমে থাকা ভূমি। খানিক পর উপস্থিত হলাম লোয়ার জলপ্রপাতে। এটির নাম লোয়ার হলেও তেমন লোয়ার নয়। তবে পূর্বেরটার চাইতে থানিক নীচু। এপাশের সৌন্দর্য যেন ওপাশের চাইতেও অধিক। ঝর্নার পানির পতনের স্থানে বহু মরা গাছপালা পড়ে আছে। কোনোটা আড়াআড়ি,কোনোটা লম্বালম্বি। পতিত পানি বিস্তৃত হয়ে নীচে নেমে আসছে অনেকগুলো ধারায়। কিছু গাছের কান্ড বহু বছরের ক্ষয়ে ভেতরে ফাকা স্থান তৈরী করে অনেকটা পাইপের মত হয়ে গেছে। সেগুলো দেখতে দারুন। উপরে এমনই একটি গাছের কান্ডের ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখলাম। ওহ দারুন লাগল ! আমি এই ঝর্নার চলার পথ ধরে খানিকটা উপরে উঠলাম কিন্তু ব্যপক পিচ্ছিল হওয়ায় বেশীদূর এগুতে পারলাম না। এর পতিত হওয়ার স্থানে একটি ছোট জলাধর তৈরী হয়েছে। চারিদিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম,তারপর চলে আসলাম।

ফুরফুরে মেজাজে আবারও রাস্তা চলতে শুরু করলাম। খানিক দূর পর এবার উপস্থিত হলাম -বেলন্যাপ হট স্প্রিং গার্ডেনে। এখানে খরস্রোতা ম্যাকেঞ্জী নদীর যেন ভরা যৌবন চলছে। ব্যপক প্রতাপে সে শব্দ তুলে চলমান। একেবারে ভাংচুর স্টাইলে চলছে। এখানে একটি লজ রয়েছে,যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে উন্নতমানের অবকাশ যাপন করা যায়। তবে মূল আকর্ষন হল -এখানে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক গরম পানির জলাশয় রয়েছে । পাথরী ভূমির ভেতর থেকে অতি উষ্ণ পানির উদগীরন। এটি যেখানে জমা হয়,সেখানে এই গার্ডেন ও লজ কর্তৃপক্ষ একটি বড় হট বাথের স্থান তৈরী করেছে। যারা লজে অবস্থান করে,তারা ফ্রিতে এবং দর্শনার্থীরা ঘন্টায় ৭ ডলার ফি দিয়ে অথবা ১২ ডলারে দিন চুক্তিতে উষ্ণ পানির পরশ নিতে পারে।

স্থানটিকে বায়ে রেখে ম্যাকেঞ্জী নদীর উপরের অতি চমৎকার সেতুটি পার হলাম। ওপারে অসাধারন চিত্র। এপারে এসে নদীটাকে আরেক রূপে পেলাম। ঘন বনের সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। এপাশের পাহাড়ী এলাকায় ক্যাম্পিং করছে অনেক মানুষ। নদীটির উজানে বিশেষ রাবারের বোট নিয়ে র্র্যাফটিং করে অনেকে। খুব বেশী ভালো লাগল,কিন্তু বেশী ভালো ভালো না,তাই চলে আসলাম।



আবারও পথ চলতে শুরু করলাম। বেশ কিছুক্ষন চলার পর আসলাম ক্লিয়ার লেকে। ক্লিয়ার লেকটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরী। পাহাড়ের মাথায় আগ্নেয় শীলার ভেতরেই এর জন্ম হয়েছে। এর পাশে মানুষ ক্যাম্পিং করে। অনেকে পিকনিকে আসে। কিছু মানুষকে দেখলাম বারবিকিউ করছে। লেকের ধারে নামলাম। খুবই স্বচ্ছ পানি। কিছু মানুষকে দেখলাম লেকে নৌকা চড়ছে। অনেকে হুইল দিয়ে মাছ ধরছে। খুব দারুন লাগল। খানিক হাটাহাটি করলাম,তারপর উঠে অাসলাম।

আবারও চলতে শুরু করলাম। খানিকদূর পর পেলাম এক বিখ্যাত জলপ্রপাত। এর নাম শাহালিস ফলস। ইতিপূর্বে এত বিশাল বেগে চলা আর একটি জলপ্রপাতদেখেছি,তা হল ম্যাকডয়েল জলপ্রপাত। কিন্তু এটার আকর্ষন ভিন্ন।



পাহাড়ী নদীটি যেখান থেকে পতিত হচ্ছে তার নীচের কঠিন পাথুরে দেওয়ালটি বিশাল গর্তের মত। আর এটি একটি বিশাল ধারায় পতিত হচ্ছে বেশ উপর থেকে। যেখানে পতিত হচ্ছে সেখানে বড় একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পানির ধারা পতিত হওয়ার দৃশ্যটি অসাধারন। এখান থেকে খরস্রোতা নদীটি বিভিন্ন স্তরে নীচের দিকে ধাবমান হয়েছে। চলার পথের দুধার সৌন্দর্য্যে সমৃদ্ধ। আমি এক পাশের রাস্তা ধরে স্বর্পিল গতিতে নীচের দিকে চললাম। চারিদিকের সৌন্দর্য্য বর্ণনা করার ভাষা নেই।

প্রবাহমান পানির দুপাশের বনভূমির চিত্র বোধহয় কোনো শিল্পীই নিখুঁনভাবে আঁকতে পারবে না। আমার ভালো লাগে সবুজ শ্যাওলা জমা গাছপালার ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখলে। কিন্তু বিষয়টা সাদামাটা নয়। দুপাশের গাছপালা সবুজ,কিন্তু সেটা ভিন্ন ধরনের সবুজ। এটা সুন্দর কিন্তু ভিন্ন ধরনের আবেদন রয়েছে এর ভেতর। স্বচক্ষে না দেখলে চলমান এই পাহাড়ী নদীর সৌন্দর্য উপলব্ধী করা অসম্ভব। আমি এর রূপে ধ্বংস হয়ে গেলাম।

আবারও চলতে শুরু করলাম। এবার সামনে পাহাড়ী অাকাঁবাকা রাস্তা। সে রাস্তা পাড়ি দিয়ে অনেক দূর অগ্রসর হয়ে সুইটহোমে পৌছলাম। এখানে আমার পছন্দের একটি পার্ক আছে নাম-রিভার ব্যান্ড পার্ক। এটি খুব সুন্দর। সম্ভবত এটি শান্তিয়াম নদী,যা পাহাড়ী রাস্তায় শব্দ তুলে চলেছে। এর দুকূলও ঐর্শ্বয্যশালী। এখানে একটি দারুন পার্ক আছে,যেখানে মানুষ নিয়মিত ক্যাম্পিং করে। সুন্দর করে সাজানো এই পার্কটি। রাত কাটানোর জন্যে এখানে বিশেষ লজ রয়েছে।



আমি সুন্দর বনভূমির ভেতর দিয়ে নদীতে নামলাম। পানির ধারা মোটামুটি প্রবল । নদীর তীর নূড়ি পাথরে ভরপুর। বড় বড় পাথরের চাকের উপর পা রেখে নদীর মাঝে আসলাম। চারিদিকে তাকিয়ে দৃশ্য উপভোগ করলাম। এ দৃশ্য ভোলার নয়। পূর্বেও এখানে এসেছি। বারবার আসলেও আবারও আসতে ইচ্ছে করে।

ইতিমধ্যে বিকেল হয়ে গেছে। এবার ফেরার পালা। বেশ ক্ষুধার তাড়নাও অনুভব করলাম। লেবাননের এক স্টোর থেকে পাকা পেপে কিনলাম, বাসায় ফিরে ওর খবর করব।

বিষয়: বিবিধ

১১৯১ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

340307
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৪
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : ভাই, ছবিগুলো কি আপনার পিক করা?
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৩
281862
দ্য স্লেভ লিখেছেন : না, আমার পিকচারগুলোর সাইজ বড়,তাই রিসাইজ করার ঝামেলা এড়াতে গুগল থেকে দিলাম
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:০৬
281879
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : সামান্য কয়েকটি ছবি দিতে এত কিপ্টেমি!
340316
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৩
নাবিক লিখেছেন : ভ্রমণ কাহিনী পড়তে সব সময়ই আমার ভালো লাগে, আপনারটাও ভীষণ ভালো লাগলো।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৩
281863
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমারও ভ্রমন কাহিনী পড়তে ভালো লাগে
340342
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : বরাবরের মত নিজের তোলা ছবিগুলো দিলেন না, মনে হয় শেষের ছবিটা আপনার হয়তো।

এত সুন্দর একটি ভ্রমন, আলহামদু লিল্লাহ যে গাড়ী এক্সিডেন্ট করেন নি, কারণ রাস্তার পাশে এত সুন্দর জিনিষ থাকলে তা দেখতে থাকলে দূর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।

যাই হোক দিনটি আপনার সুন্দর কেটেছে এটাই ভালো লেগেছে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৫
281864
দ্য স্লেভ লিখেছেন : রাস্তা প্রশস্ত আর গাড়িঘুড়াও তেমন একটা াকেনা,ফলে একসিডেন্টের সম্ভাবনা কম। আর আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ড্রাইভার Happy ছবিগুলোর সাইজ বড়,তাই দিলামনা।
340419
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক দিন পর একটা ডিটেইল ভ্রমন কাহীনি ও ছবির জন্য অনেক ধন্যবাদ। তবে এতবড় পার্কে কোন রেস্টুরেন্ট নাই!! বাংলাদেশে তো ক্ষুদ্রতম পার্কেও একটা দামি রেষ্টুরেন্ট বাধ্যতামুলক!!
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৭
281865
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এসব পার্ককে ন্যাচারাল পার্ক বলা যায়। আর সব পার্কে রেস্টুরেন্ট রাখলে ব্যবসা হবেনা। কারন লোক সংখ্যা কম। ওরেগন ৯৮৫০০ ব:মাইল আর লোক সংখ্যা ৪০ লাখ। তবে সব পার্কে টয়লেট আছে।
340497
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৯
আফরা লিখেছেন : ছবি গুলো গুগল থেকে নিয়েছেন সেটা জানি এখন বলেন নীচের ছবির উপরেরটা কোন জায়গার ?
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৪
281868
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এটা ন্যাশনাল ফরেস্টের শাহালিস নামক ফলস।ছবিটা ভুল স্থানের না। Happy
340517
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:১২
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। পুঁটির মা ছাড়া ভ্রমণ ভ্রাম্যমাণ মনে হচ্ছে Big Grin Big Grin Big Grin তারাতারি পুঁটির মা সহ ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন।


ভ্রমণে তৃপ্তি আরো বেশি অনুভব করবেন, ধন্যবাদ।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:৩৯
281990
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহ চাহে তো আগামী বছর সেরে ফেলব। আমারও আর তর সয় না Happy
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫৩
282088
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : পুঁটির মা জানেনি???
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:০৩
282233
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সময় হলেই জানবে রে ভাই...তাকে ছাড়া কি আর বিয়ে হবে ?? Rolling on the Floor Rolling on the Floor
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৪২
282311
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : Crying
340552
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৫৬
শেখের পোলা লিখেছেন : লেখার কারিগরিতে অসুন্দরও সুন্দর হয়ে যায়৷সবাই পারেনা৷ বারোদিন ধরে মিও বহু সুন্দর দৃশ্য দেখে এলাম৷অমন করে বর্ণনা করতে পারবনা তাই আজও তা কাউকে জানানো হলা৷ আর ছবিও অনেক তুলেছি,কিন্তু তা কেমন করে ব্লগের লেখায় দেয় তাও জানিনা৷ তাই এমন বর্ণনায় হিংসাই হয়৷ ধন্যবাদ৷
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:৪২
281992
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহেহে....চাচা ভাই এত বিশাল গ্রন্থ লিখলেন আর এটা পারবেন না বললে তো হবেনা। আর আরেকটা কথা আপনার লেখা আমি মনে করেছিলাম বোধহয় শ-খানিক বা শ-দুয়েক পাতার হবে....হায় আল্লাহ একেকটা ফাইল দেখী ৫/৬শত পৃষ্ঠা। আমার জ্বর এসেছে দেখে.....আমি ৫০পৃষ্ঠার মত কাজ করে পরে ফেল মেরেছি....Happy আশাকরি আপনি ক্ষমা সুন্দর সু-মধুর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং অভিযোগ রাখবেন না এবং মনে মনে রাগও করবেন না। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন !! Happy Happy Happy Happy
340609
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০৭
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : ছবিগুলি সুন্দর হয়েছে Happy Rose Rose
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:০৪
282234
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম কিন্তু বাস্তব চিত্র যা দেখেছি তা ছবির চাইতেও অনেক সুন্দর......এই আপনি আমার এলাকার লোক দাওয়াত দেন না কেন ??
340664
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫১
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো শেয়ারের জন্য অনেক ধন্যবাদ
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:০৪
282235
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্যে
১০
340857
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:১০
আহমদ মুসা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৩৯
282570
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই
১১
341144
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:২২
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম । ছবি এবং বিবরন দুটোই খুব চমৎকার!

শুকরিয়া!
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৩৫
282918
দ্য স্লেভ লিখেছেন : পড়া ও সুন্দর মন্তব্যের জন্যে জাজাকাল্লাহ খায়রান। Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File