মাযহাব এবং লা মাযহাব
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৫ আগস্ট, ২০১৫, ১২:৫৯:১৩ দুপুর
আস সালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শিরোনামের বিষয়টি আজকের সমাজে বেশ স্পর্শকাতর তাতে সন্দেহ নেই। আর তাই চিন্তা করলাম এ সম্পর্কে আমার কিছু চিন্তা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
রসূল(সাঃ) আমাদেরকে আল্লাহর বিধানসমূহ বলেছেন এবং ব্যবহারিক জীবনে তা শিক্ষা দিয়েছেন। কখনও কোথাও সমস্যা হলে মানুষ তার কাছে ছুটে যেত এবং সমস্যার সমাধান প্রাপ্ত হত। ইসলামের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা হলে ইসলাম মদীনার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পরবর্তীতে ইসলামের বিজয়ের সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ আরও ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সাহাবায়েকেরামগণ আল্লাহর রসূলের(সাঃ) পক্ষ থেকে নতুন নতুন স্থানে দাওয়াহ শুরু করেন। তারা যখনই কোনো নতুন সমস্যার সম্মুখিন হতেন তখনই নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে স্বয়ং রসূল(সাঃ)এর কাছ থেকে সমাধান পেয়ে যেতেন।
এরপর যখন রসূল(সাঃ)এর ওফাত হল এবং খিলাফায়ে রাশেদার শাসন শুরু হল তখনও নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে ,কিন্তু প্রখ্যাত সাহাবাগণ সম্মিলিত ভাবে মতামত বা ইজমার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছেন। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যাগত বিষয়ে এক সাহাবার সাথে অন্য সাহাবার চিন্তার পার্থক্য ছিল। এমনকি রসূল(সাঃ)এর জীবদ্দশায়ও সাহাবীদের পারষ্পরিক সুসম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হওয়া সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে মতের অমিল ছিল। তারা কেউই ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের পারষ্পরিক মতদ্বৈততায় কিছু রাজনৈতিক ভূলবোঝাবুঝি ও শত্রুর অপপ্রচার,ষড়যন্ত্রে দু একটি অঘটন ছাড়া তেমন সমস্যা হয়নি।
তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈনদের সময়ও মুসলিমরা কিতাবের জ্ঞান নিয়ে আজকের মত বিভক্ত ছিলনা। কিন্তু এর পরবর্তীতে মুসলিম সমাজে ইসলাম সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যপক বিভক্তি বাড়তে থাকে। অনেকগুলো মাযহাব বা মতের প্রচলন প্রতিষ্ঠিত হয়,এমনকি মুসলিম উক্ত মাযহাবসমূহে বিভক্ত হয়ে পারষ্পরিক দ্বন্দ সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়। এসব ক্ষেত্রে অজ্ঞ অনুসারীরাই মারাত্মক সীমালঙ্ঘন করতে থাকে। প্রখ্যাত মুস্তাহীদগণ যা বলেননি তা তাদের নামে প্রচার করে অনুসারীরা নিজেদের মতামতকে প্রতিষ্ঠার লড়াই চালাতে থাকে। এভাবে উম্মাহর সাধারণ অংশ অজ্ঞতাবশত ভুলও করেছে।
অনেকগুলো মাযহাব এর মধ্যে যেগুলো বেশী প্রতিষ্ঠিত হয় সেগুলো হল হানাফী,মালিকী,শাফেয়ী ও হাম্বলী। ঈমাম আবু হানিফা তাবেঈন ছিলেন,অন্যরা তাবে-তাবেঈন ছিলেন। আমার বর্ণনার মধ্যে বহু বিষয় বিস্তারিত বলার প্রয়োজন থাকলেও আজকের টপিকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন না হওয়ায় কাটছাট করে মূল ঘটনার দিকে যাচ্ছি।
উপরোক্ত ঈমামগন ছিলেন প্রখ্যাত মুস্তাহিদ। যখন সমাজে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তখন কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী সে সমকল সমস্যা ব্যাখা ও সঠিক সমাধান দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে উক্ত ঈমামগন তাদের নিজস্ব তদন্তে ও চিন্তায় কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী যে মতামত প্রকাশ করেছেন সেটিই হল মাযহাব। ঈমামগন একে অপরের কাছেও শিক্ষা গ্রহন করেছেন। তাদের সকলের উদ্দেশ্য ছিল এক উম্মাহর স্বার্থ রক্ষা ও বিভক্তি মুক্ত রাখা। তারা উম্মাহকে নিজেদের চিন্তায় বিভক্ত করতে কোনো মতামত প্রকাশ করেননি। তারা ছিলেন এই হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত-"যখন তোমাদের মধ্যে পারষ্পরিক মতবিরোধ দেখা দিবে তখন কুরআন,সুন্নাহর কাছে ফিরে এসো।"
প্রখ্যাত উক্ত ঈমাম সমূহের জীবদ্দশায় মানুষ তাদের মতামত নিয়ে দ্বন্দে লিপ্ত ছিলনা। তাদের মৃত্যুর পর মানুষ তাদের চিন্তা চেতনা নিয়ে অনেক সময় বাড়বাড়ি করেছে। আর হাদীস সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষনে তারা সতর্ক ছিলেন কিন্তু তারপরও সে সময় হাদীস জাল হয়েছে। আর এ কারনে তারা প্রত্যেকে বলেছেন- আমার কোনো সিদ্ধান্ত যদি রসূল(সাঃ)এর হাদীসের বিরুদ্ধে যায় তবে আমার মতটি পরিহার করবে,সহি হাদীসটি গ্রহন করবে। তারা কেউই নিজেদের মতামত কারো উপর চাপিয়ে দেননি। বরং তারা ইসলামের খেদমত করেছেন মূল্যবান ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের মাধ্যমে।
আর যখন একই বিষয়ে একাধীক মত থাকে এবং উভয়ের সাথেই কুরআন ও সুন্নাহর বলিষ্ঠ সাপোর্ট থাকে তখন চিন্তাশীল মুসলিম তার নিজের বিবেচনায় যেটিকে সত্যের অধিক নিকটবর্তী মনে করবে সেটিকে গ্রহন করবে। আর কিছু অজ্ঞ লোক মুসলিম সমাজে অবশ্যই থাকবে, তারা অনুসরন করবে কিন্তু সেটি অন্ধ অনুসরন হবেনা। অন্তত তারা প্রশ্ন করে জেনে নিবে বা চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তাদের অজ্ঞতার সুযোগে কেউ তাদের বিভ্রান্ত করলে আল্লাহই সর্বোত্তম বিারক।
বর্তমান সমাজে মাযহাবী ও লা-মাযহাবী দ্বন্দ বেশ মাত্রা পেয়েছে। মাযহাবী ও লা-মাজহাবীদের মধ্যে কিছু আলিম একে অন্যকে দোষারোপ করেছেন। যারা মাযহাক মানেন না,তারা বলেন-রসূল(সাঃ) কি মাযহাব মানতেন ? সাহাবী,তাবেঈন এমনকি ঈমাম আবু হানিফাসহ অন্য ঈমামগন কোন মাযহাব মানতেন ? ঈমামগন একে অপরের মতামতও মেনে নিয়েছেন। এই চিন্তাটি অবশ্যই যুক্তিপূর্ণ ও সুন্নাহ ভিত্তিক, কিন্তু এখানে সুক্ষ্ণ একটি বিষয় রয়েছে।
মাযহাবের ঈমামগন ইসলামের মৌলিক বিষয়ে মতামত দাড় করাননি,বরং উদ্ভূত কিছু সমস্যা ও ইসলামের খুটিনাটি বিষয়ে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী নিজেদের মতামত পেশ করেছেন। তারা যা করেছেন তা কুরআন সুন্নাহার সাথে সাংঘর্ষিক নয়,বরং সেটার স্বপক্ষে দলিল প্রমান রয়েছে। আর যদি সেই দলিল প্রমান সন্দেহযুক্ত হয় তাহলে পুরো মতামতটিকে তারা উপেক্ষা করতেও বলেছেন। ফলে মাযহাব বা মতামতটি সচেতনভাবে গ্রহন করা গোমরাহী নয়।
প্রত্যেকে মুস্তাহিদ নয়,ফলে সাধারন মানুষকে অবশ্যই কোনো না কোনো ব্যাখ্যার দিকে ঝুকতেই হবে। আর প্রত্যেকে যদি কুরআন সুন্নাহ অধ্যায়ন করে সকল বিষয়ে নিজস্ব মতামতকে প্রাধান্য দেয় তবে মুসলিমের মধ্যে বিভক্তি মারাত্মক পর্যায়ে পৌছবে। মুস্তাহাব নিয়ে বক্তব্য প্রদান করতে গিয়ে হারাম কাজ করে বসবে,যা ফরজ মানা থেকে বিরত রাখবে।
যারা নিজেদেরকে লা-মাযহাবী বলে দাবী করেন, অনেক বিষয়ে তাদের আলেমদের মধ্যেও মত-পার্থক্য রয়েছে। তারাও সকল বিষয়ে একই মতের উপর প্রতিষ্ঠিত নন। তারাও কুরআন সুন্নাহর ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে তাদের উর্ধতন আলেমদেরকে অনুসরন করেন। এটাকে তারা তাকলিদ বলেননা,বরং সচেতনভাবে অনুসরণ করা বলেন। কিন্তু মাযহাবীদের ক্ষেত্রে তারা একই বিষয়টিকে "তাকলিদ" করা বলেন এবং বিষয়টিকে হারাম ঘোষনা করেন। অনেকে আরও কিছুদূর বাড়িয়ে বলেন মাযহাব পূজারী।
তবে এটা সত্য যে-কেউ যদি মাযহাবের অনুসরণীয় বিষয়টির কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী স্পষ্ট ভুল দেখতে পায় তবে তার উপর কর্তব্য উক্ত বিষয়ে সহিহ সুন্নাহ অনুসরন করা। কারন ঈমামগণ এটাই করতে বলেছেন। এটাকেই তাদের মাযহাব বলে ঘোষনা করেছেন। ফলে কোনো আলিম বা মুস্তাহিদকে সচেতনভাবে অনুসরন করা তাকে পূজা করা নয় বা এটি অন্ধত্ব নয়। আমাদেরকে কোনো না কোনো আলেমকে প্রাধান্য দিতেই হবে।
আর যারা মাযহাব মানেন না তারাও এ কাজটিই করেন। বালাদেশের আহলে হাদীসের আলেমদের মধ্যে ড: আসাদুল্লাহ গালিব,আকরামুজ্জামান,শহিদূল্লাহ মাদানী,মতিউর রহমান মাদানী,শেখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সহ আরও অনেকে আছেন। অনেক মাসালা সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মতভেদও রয়েছে। ড: আসাদুল্লাহ গালিব লিখেছেন এক কুরবানীতে ৭ ভাগ হবেনা, কিন্তু আকরামুজ্জামান সাহেব বলেছেন অবশ্যই ৭ ভাগ হবে। আবার আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বলেছেন-কুরবানীতে ৭জন অংশ নিতে পারবে কিন্তু ৭টি পরিবার অংশ নিজে পারবে না। ৭জন এবং ৭টি পরিবার এক কথা নয়। একই হাদীস তারা পড়লেও সেটা অনুধাবনের ক্ষেত্রে এই তারতম্য।
আহলে হাদীসের মুজাফফর বিন মহসিন সাহেব বই লিখেছেন ঈদের নামাজ ১২ তাকবীর এর সাথে পড়তে হবে,১২ তাকবীরের হাদীসই কেবল সহি , ৬ তকবীরের বিষয়টি জাল। আবার তাদেরই আরেকজন আলেম আকরামুজ্জামান সাহেব বলেছেন ১২ তাকবীর ও ৬ তাকবীরের উভয় হাদীসই সহি।
বর্তমান সময়ের সারাবিশ্বের সবথেকে বড় হাদীস বিশারদ হিসেবে যাদের নাম আসে তারা হলেন--শেখ নাসিরুদ্দীন আল বানী,শেখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ,শেখ মুহাম্মদ উসাইমিন প্রমুখ। আরবের একজন প্রখ্যাত আলিম ড: সাদ আল বুরাইক উক্ত ৩ জন হাদীস বিশারদ আকিদা ও ফিকাহর বিষয়ে যেসব মতভেদ করেছেন সেসব নিয়ে বই লিখেছেন। তিনি সেখানে প্রায় ৪০০ বিষয় উপস্থাপন করেছেন , যেখানে তাদের পারষ্পরিক মতভেদ রয়েছে।
শেখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ নামাজের একটি মাসালার বিষয়ে বলেছেন-রুকু থেকে সোজা হয়ে দাড়িয়ে আবারও হাত বাধতে হবে। এটি রুকুর মতই সুন্নত,তবে করলে সওয়াব আছে না করলে গুনাহ নেই। অথচ শেখ আলবানী বলছেন রুকু থেকে উঠে আবারও হাত বাধা বিদআত,এটা করাই যাবেনা, করলে গুনাহ হবে। এ দুজনই আহলে হাদীস হিসেবে পরিচিত,অর্থাৎ কোনো মাযহাবের অনুসরনকারী নন। আহলে হাদীস ভায়েরা এ দুজনকেই মানেন। তাহলে এ দুজনের মধ্যে কে সঠিক ??
এখন কোনো ক্ষেত্রে কোনো আহলে হাদীস ভাই যদি আলবানীকে গ্রহন করেন,তাহলে কি আমরা বলতে পারি না যে তারাও মাযহাব অনুসরণ করেন ? কারন হানাফী,মালেকী,শাফেয়ী,হাম্বলী মাযহাবের বিষয়টিও তো একই রকম। কোনো একটি বিষয়ে প্রখ্যাত আলেমের মতামতকে দলিল প্রমানসহ গ্রহন করা।
আসল বিষয় হল সচেতনভাবে আমাদেরকে কোনো না কোনো আলেমের মতামতকে গ্রহন করতেই হয়। তবে অন্ধভাবে অনুসরন করলে সেটি পথভ্রষ্টতা হয়ে যাবে। সেটি নিষিদ্ধ। অন্ধভাবে কেবল রসূল(সাঃ)কে অনুসরন করা যায়। বাস্তবতা হচ্ছে এই যে-মাযহাবের অনুসারীগনের মধ্যে অনেকে অন্ধভাবে মাযহাব অনুসরন করেন। তার মাযহাবের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য আসলে তিনি তা প্রতিহত করেন যে কোনোভাবে। একতেলাফি বিষয়ে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে নিজের মতটিই যে শ্রেষ্ঠ তা প্রচার করেন, যদিও সাহাবাদের সুন্নাহ এমন ছিলনা।
বদরের যুদ্ধের পর আটককৃত বন্দীদের সাথে কি আচরণ করা হবে সেটা নিয়ে যখন রসূল(সাঃ) সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করলেন,তখন আবু বকর(রাঃ)বললেন- মুক্তিপণ নিয়ে তাদের মুক্ত করে দেওয়া হোক। আর ওমর(রাঃ)বললেন-তাদেরকে হত্যা করা হোক।
দুজনের মতামত একেবারেই বিপরীতধর্মী কিন্তু তারা একে অপরের প্রতি সর্বাধিক শ্রদ্ধা রাখতেন ও সর্বাপেক্ষা ভালোবাসতেন। সাহাবীদের পারষ্পরিক বিচার বিশ্লেষনে পার্থক্য ছিল কিন্তু তারা পরষ্পর ছিলেন আপন ভায়ের চাইতেও অধিক আপন। আর এই বিষয়টিই আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত। আমরা ক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে মুস্তাহাব বিষয় নিয়ে তর্ক করি,গীবত করি,সম্পর্ক নষ্ট করি,এক উম্মাহকে বিভক্ত করি। একটি মুস্তাহাবকে নিজের মতের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে প্রকাশ্য কবিরা গুনাহে লিপ্ত হই, এটাই আমাদের আমল ,আখলাকের চিত্র। যেখানে ফরজ,ওয়াজিব,অধিকাংশ সুন্নাহর বিষয়ে ঐক্য রয়েছে,সেখানে এই ঐক্যকে পুজি করে এক না হয়ে আমরা যেসব ক্ষুদ্র বিষয়ে মতদ্বৈততা রয়েছে,সেসবকে মতবিরোধে পরিনত করে পারষ্পরিক কোন্দলে লিপ্ত হয়ে ঐক্য নষ্ট করি,অথচ ঐক্যটি বজায় রাখা ছিল ফরজ।
যারা মাযহাব মেনে চলছি তাদেরকে উদার হতে হবে। সচেতনভাবে মাযহাব মানতে হবে। অন্ধভাবে কোনো ঈমামকে কোনো ক্ষেত্রে গ্রহন করা যাবে না,কারন তারা নবী নন। সচেতনভাবে তাদেরকে গ্রহন করতে হবে। "ঈমামের ভুল হতে পারে না" একথা বিশ্বাস করা যাবেনা।
আর যারা মাযহাব মানেন না তারাও প্রকারান্তরে একই কাজই করছেন কিন্তু বিষয়টি উপলব্ধী করছেন না। তারাও কুরআন সুন্নাহর ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে কোনো না কোনো আলেমকে প্রধান্য দিচ্ছেন,তবে সচেতনভাবে গ্রহন করছেন। তাই তাদেরকেও অন্যের ব্যাপারে কথা বলার সময় সতর্ক আচরন করতে হবে। হক পন্থীদের বা তাওহীদ পন্থীদের একে অপরের প্রতি অভিযোগ না করে আল্লাহকে ভয় করে ইসলাম পালন করতে হবে। তবেই ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
এবার আমরা দেখব মাযহাবের ঈমামগন তাদের মতামত সম্পর্কে কি বলেছেন:
**ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)বলেনঃ
"মানুষ ততক্ষন হেদায়েতের উপর থাকবে , যতক্ষন তাদের মাঝে হাদীসের জ্ঞান অর্জনকারী থাকবে | যখন হাদীস ব্যতীত ইসলামের জ্ঞান অর্জন করা হবে , তখন মানুষ ধ্বংস ও ফ্যাসাদে লিপ্ত হবে...".[মীযান, হাকীকাতুল ফিকহঃ পৃষ্ঠা ৭০]
"আমি যদি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও রাসূলুললাহ (সাঃ)এর কথার (হাদীস) বিরোধী কোন কথা বলে থাকি, তাহ’লে আমার কথাকে ছুঁড়ে ফেলে দিও’।" [ সালেহ ফুল্লানী, ইক্বাযু হিমাম, পৃঃ ৫০]
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেনঃ
"যে ব্যক্তি রাসুল (সাঃ) এর হাদীস অগ্রাহ্য করলো, সে যেন ধ্বংসের মুখে এসে দাড়ালো.. [হাকীকাতুল ফিকহ প্রথমখণ্ডঃ পৃষ্ঠা ২১৬]
"তুমি আমার তাক্বলীদ কর না এবং তাক্বলীদ কর না মালেক, শাফেঈ, আওযাঈ ও ছাওরীর। বরং তাঁরা যে উৎস হ’তে গ্রহণ করেছেন, সেখান থেকে তোমরাও গ্রহণ কর।" [ইলামুল মুওয়াক্কি’ঈন, ২/৩০২]
ইমাম মালেক (রহঃ)বলেনঃ
"আমি মানুষ ।ভুল শুদ্ধ দুটোই করি। আমার রায় দেখ, যা কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক হয়, তা গ্রহন কর, এবং যা তার বিপরীত হয় তা প্রত্যাখ্যান কর.। [ আল হাদীসু হুজজাতুন বি-নাফসিহীঃপৃষ্ঠা ৭৯ ]
"রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথাই গ্রহণীয় বা বর্জনীয়, একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ব্যতীত’। [ ইমাম ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ৬/১৪৫ ]
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তার ছাত্রকে লক্ষ্য করে বলেনঃ
"তোমার জন্য আফসোস হে ইয়াকুব (আবু ইউসুফ)! তুমি আমার থেকে যা শোন তাই লিখে নিও না। কারণ আমি আজ যে মত প্রদান করি, কাল তা প্রত্যাখ্যান করি এবং কাল যে মত প্রদান করি, পরশু তা প্রত্যাখ্যান করি’। [ঐ]
"যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাযহাব।"
[ হাশিয়াহ ইবনে আবেদীন ১/৬৩ ]
সুন্নাহ অনুযায়ী আমরা যদি মনে করি মুসলিম উম্মাহ একটি দেহ,তাহলে ঐক্যের জন্যে আমাদের ভেতরকার ছোটখাটো মতপার্থক্য ভুলে একে অপরের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হব। যেসব ক্ষেত্রে মতদ্বৈততা রয়েছে তা অপরের প্রতি সম্মান,মর্যাদা রেখে সুন্দরভাবে ও সুন্দর ভাষায় উপস্থাপন করা উচিৎ এবং কিছু বিষয় প্রকাশ্যে না আনা উচিৎ। আর নিজের বিচারে যেটাকে সত্যের অধিক নিকটবর্তী মনে হয় সেটাই গ্রহন করা উচিৎ। এতে আমরা ইনশাআল্লাহ সফলকাম হব।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
"আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।" [ আল কোরআনঃ ৩ : ১০৩]
"নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে।" [ আল কোরআনঃ৬ :১৫৯]
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল তাদের। ***তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যার্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। [ আল কোরআনঃ৪ :৫৯]
আমরা মাযহাবী নই,আমরা লা-মাযহাবীও নই। আমরা মুসলিম,আমরা মুহাম্মদ(সাঃ)এর অনুসারী। আমাদের পারষ্পরিক নাম ভিন্ন,ইসলামকে প্রতিষ্ঠাকল্পে কাজের সুবিধার্তে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন দল আছে কিন্তু আমরা তাওহীদপন্থীরা সকলেই এক। একটিই আমাদের দেহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অামাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন ! ইসলামের বিজয় দান করুন !
বিষয়: বিবিধ
৩৫৮৩ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মনের মত পোষ্ট, প্রিয়তে রাখলুম। জাযাকাল্লাহ খাইর
আপনি লিখেছেন: উপরোক্ত ঈমামগন ছিলেন প্রখ্যাত মুস্তাহিদ।
কথাটিতে প্রবলেম আছে। কেননা জারাহ ও তাদিলের কিতাব দেখলে দেখাযায় বেশিরভাগ মুহাদ্দিস ইমাম আবু হানিফা (রহ)কে যঈফ বলেছেন। তার হাদীস নেয়া যাবেনা বলেছেন।
যেমনটি আমি "এসা হাদীস শিখি" তে বলেছি যে, ফকিহ্ হওয়া এক জিনিস আর হাদীস বর্ণনা ভিন্ন জিনিস।
আসুন দেখি কিছু জারাহ ও তাদিল:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
نُعمان بْن ثابت، أَبو حَنِيفَة، الكُوفيُّ كَانَ مُرجِئًا، سَكَتُوا عنه، وعَنْ رَأيِهِ، وعَنْ حديثه
১. ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুরজিয়া ছিলেন। তারা (মুহাদ্দিছগণ) তার থেকে, তার মত থেকে এবং তার হাদীছ থেকে নীরব থেকেছেন। (তারীখুল কাবীর, ৮/৮১, রাবী নং ২২৫৩)
ومن ذلك أن البخاري إذا قال، في الرجل: " سكتوا عنه "، أو " فيه نظر "، فإنه يكون في أدنى المنازل وأردئها عنده ইমাম ইবনে কাছীর বলেন, ইমাম বুখারী যখন কোন ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেন “সাকাতু আনহু” অথবা “ফীহি নাযরুন”, তখন জানতে হবে যে, ঐ ব্যক্তি তার নিকট অত্যন্ত নীচু এবং নিম্ন মানের। (ইখতিছার উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ১০৬) “সাকাতু আনহু” – “তারা (মুহাদ্দিছগণ) নীরব থেকেছেন।” “ফীহি নাযরুন” – “তার প্রতি বিরূপ মন্তব্য রয়েছে।”
أبو حنيفة النعمان بن ثابت صاحب الرأي مضطرب الحديث ليس له كبير حديث صحيح
২. ইমাম মুসলিম বলেন, তিনি মুযতারীবুল হাদীছ। তার বেশী পরিমাণে ছহীহ হাদীছ নেই। (আল-কুনা ওয়াল আসমা, রাবী নং ৯৬৩)
أَبُو حنيفَة لَيْسَ بِالْقَوِيّ فِي الحَدِيث وَهُوَ كثير الْغَلَط وَالْخَطَأ على قلَّة رِوَايَته
৩. ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নন এবং তার বর্ণনা কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বেশী ভুলকারী। (নাসাঈ, কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ৫৮৬; তাসমীয়াহ মিন লাম ইয়ারিওয়া আনহু গাইরু রিজালু ওয়াহিদ, পৃঃ ১২৩)
كَانَ ضَعِيفًا فِي الْحَدِيثِ
৪. ইমাম ইবনে সা’দ বলেন, তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলেন। (ইবনে সা’দ, তাবাক্বাতুল কুবরা, রাবী নং ২৬৩১)
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَدَ قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ: حَدِيثُ أَبِي حَنِيفَةَ ضَعِيفٌ , وَرَأْيُهُ ضَعِيفٌ
৫. ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেন, আবু হানীফার হাদীছ দুর্বল এবং তার রায় (মত) ও দুর্বল। (উকাইলী, যু’আফা আল-কাবীর, রাবী নং ১৮৭৬, সানাদ ছহীহ)
حدثنا عبد الرحمن ثنا حجاج بن حمزة قال نا عبدان ابن عثمان قال سمعت ابن المبارك يقول: كان أبو حنيفة مسكينا في الحديث
৬. ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে মুবারাক বলেন, আবু হানীফা হাদীছের ক্ষেত্রে মিসকীন। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২০৬২, সানাদ ছহীহ)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ قَالَ: سَمِعْتُ يَحْيَى بْنَ مَعِينٍ، وَسُئِلَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ قَالَ: كَانَ يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ
৭. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলেন। (উকাইলী, যু’আফা আল-কাবীর, রাবী নং ১৮৭৬, সানাদ ছহীহ)
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سليمان، حَدَّثَنا ابن أبي مريم، قالَ: سَألتُ يَحْيى بْنَ مَعِين، عَن أبي حنيفة؟ قَال: لاَ يكتب حديثه ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন আরো বলেন, তার হাদীছ লেখা যাবে না। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ১৯৫৪, সানাদ ছহীহ)
৮. ইমাম আবু যুর’আহ তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (আবু যুর’আহ, কিতাবুয যু’আফা, রাবী নং ৩৩৮)
سمعت أبا زرعة يقول: "كان أبو حنيفة جهميا এছাড়াও ইমাম আবু যুর’আহ তাকে জাহমী বলেছেন। (আবু যুর’আহ, কিতাবুয যু’আফা, ২/৫৭০)
৯. ইমাম উকাইলী তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (উকাইলী, যু’আফা আল-কাবীর, রাবী নং ১৮৭৬)
১০. ইমাম ইবনুল জাওযী তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (ইবনুল জাওযী, কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ৩৫৩৯)
১১. ইমাম দারাকুতনী তাকে দুর্বল বলেছেন। (দারাকুতনী, হা/১২৩৩)
حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ يَحْيَى السَّاجِيُّ بِالْبَصْرَةِ قَالَ حَدَّثَنَا بُنْدَارٌ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْمُقَدَّمِيُّ قَالَ حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ الْعَنْبَرِيُّ قَالَ سَمِعْتُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيَّ يَقُولُ اسْتُتِيبَ أَبُو حَنِيفَةَ مِنَ الْكُفْرِ مَرَّتَيْنِ
১২. ইমাম সুফিয়ান ছাওরী বলেন, তাকে কুফরীর কারণে দুই বার তাওবাহ করানো হয়েছিল। (বুখারী, কিতাবুয যু’আফা, রাবী নং ৩৮৮; ইবনে হিব্বান, আল-মাজরূহীন, রাবী নং ১১২৭, সানাদ ছহীহ)
أخبرنا ابن الفضل، أخبرنا عثمان بن أحمد الدّقّاق، حدّثنا سهل بن أحمد الواسطيّ، حدثنا أبو حفص عمرو بن علي قال: وأَبُو حنيفة النُّعْمَان بن ثابت صاحب الرأي لَيْسَ بالحافظ مضطرب الحديث
১৩. ইমাম আমর বিন আলী বলেন, তিনি হাফিযদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না এবং তিনি মুযতারীবুল হাদীছ। (তারীখে বাগদাদ, ১৩/৪২৩, রাবী নং ৭২৯৭, বর্ণনা নং ১৪৯, সানাদ ছহীহ)
قال الشَّيْخ: وأَبُو حنيفة لَهُ أحاديث صالحة وعامة ما يرويه غلط وتصاحيف وزيادات فِي أسانيدها ومتونها وتصاحيف فِي الرجال وعامة ما يرويه كذلك ولم يصح لَهُ فِي جميع ما يوريه إلا بضعة عشر حديثا وقد روى من الحديث لعله أرجح من ثلاثمِئَة حديث من مشاهير وغرائب وكله على هَذِهِ الصورة لأنه ليس هُوَ من أهل الحديث، ولاَ يحمل على من تكون هَذِهِ صورته فِي الحديث
১৪. ইমাম ইবনে আদী বলেন, তার বর্ণিত কতিপয় ছহীহ হাদীছ রয়েছে, তবে তার অধিকাংশ বর্ণনাই ভুল। পড়তে এবং লিখতে ভুল করা হয়েছে। সেগুলোর সানাদ ও মাতানে (হাদীছের ভাষ্য) অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে পড়তে এবং লিখতে ভুল করা হয়েছে। তার অধিকাংশ বর্ণনাগুলো সেরুপই। তিনি যেসব হাদীছ বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে ১৩টি থেকে ১৯টি হাদীছ ছাড়া বাকীগুলো ছহীহ নয়। তিনি মাশহূর ও গারীব মিলে একই রকম প্রায় ৩০০টি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। কারণ তিনি মুহাদ্দিছদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে যার অবস্থা এই, তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করা হয় না। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ১৯৫৪)
كَانَ رجلا جدلا ظَاهر الْوَرع لم يكن الحَدِيث صناعته حدث بِمِائَة وَثَلَاثِينَ حَدِيثا مسانيد مَا لَهُ حَدِيث فِي الدُّنْيَا غَيره أَخطَأ مِنْهَا فِي مائَة وَعشْرين حَدِيثا إِمَّا أَن يكون أقلب إِسْنَاده أَو غير مَتنه من حَيْثُ لَا يعلم فَلَمَّا غلب خَطؤُهُ على صَوَابه اسْتحق ترك الِاحْتِجَاج بِهِ فِي الْأَخْبَار وَمن جِهَة أُخْرَى لَا يجوز الِاحْتِجَاج بِهِ لِأَنَّهُ كَانَ دَاعيا إِلَى الإرجاء والداعية إِلَى الْبدع
১৫. ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন, তিনি ছিলেন একজন তার্কিক, বাহ্যিকতায় তার পরহেজগারিতা ছিল। হাদীছ তার কাজের মধ্যে ছিল না। তিনি ১৩০টি মুসনাদ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। সেগুলো ব্যতীত তার আর কোন হাদীছ দুনিয়াতে নেই। যার মধ্যে ১২০টি হাদীছেই তিনি ভুল করেছেন। হয় সানাদ উল্টিয়ে ফেলেছেন কিংবা না জেনেই মাতান (হাদীছের ভাষ্য) পরিবর্তন করে ফেলেছেন। সুতরাং, যখন তার সঠিকের চেয়ে ভুলগুলোই বেশী, তখন হাদীছের ক্ষেত্রে তাকে গ্রহণ করার চেয়ে তাকে পরিত্যাগ করাই উপযোগী। অন্য আরেকটি কারণে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা জায়েয নেই। কারণ তিনি মুরজিয়া মতের দিকে দাওয়াত দিতেন এবং তিনি বিদ’আতের দিকে দাওয়াত দিতেন। (ইবনে হিব্বান, আল-মাজরূহীন, রাবী নং ১১২৭)
এটাই হচ্ছে হক। মুহাদ্দিসদের চোখে ইমাম আবু হানিফা যঈফ। তাই এই মাযহাবের বেজ ও ------কি বলবো অনেকে হয়তো আমার এই লেখা পড়ে আমাকে আক্রমন করা শুরু করবেন। তবে যতই আক্রমন করুন মুহাদ্দিসদের কওল তো আর মুছে ফেলতে পারবেন না।
ইমাম আবু হানিফাকে আল্লাহ জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন আমীন। আমি তার ফিকহের জন্য আকুল তবে তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল বা যঈফ। আর এটাই হক।
২. আমি যা বলেছি,তাতে উদ্দেশ্য স্পষ্ট।
৩. আমি ঈমাম বন্দনা করিনি,আবার কাওকে খাটো করার নিয়ত পোষন করিনি।
৪. সার বস্তু হল: আমরা যা পালন করি,তার পেছনে কুরআন,সুন্নাহর দলিল প্রমান না থাকলে সেটা গ্রহনযোগ্য নয়। এখানে কে আবু হানিফা আর কে ঈমাম মালিক তা বিবেচ্য নয়। কুরআন আর সুন্নাহ বিবেচ্য। ব্যাখ্যাগত বিষয়ে কিছু তারতম্য হয়েছে। আমি মুসলিমদের ঐক্যকে প্রাধান্য দিয়েছি। আর সেটার জন্যে বাহাস না করে উদার হয়ে একে অপরকে ভালোবাসতে হবে। যে বিষয়ে মত বিরোধ রয়েছে তা কখনও কখনও উল্লেখ না করে চুপ থাকতে হবে। হতে পারে আমার অতি উৎসাহী কোনো আচরনেই হয়ত ফিৎনা শুরু হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ ক্ষমা করুক
-সতর্কতার জন্য জাজাকাল্লাহু খায়র।
"তোমরা মতবিরোধ করো না। তোমাদের আগের লোকেরা মতবিরোধের কারণেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। "
[সহিহ বুখারী ৩৪৭৬
আরেকটা হাদীস খুজছিলাম পেলাম না। সেটা হল তর্ক করা প্রসঙ্গে। এটা এ কারনে যে আমরা যেন জানা বিষয়টাও আরেকবার জেনে সতর্ক হই। আপনি হাদীস অবশ্যই বেশী জানেন। কিন্তু আমাদের অনেকসময় চুপ থাকাই শ্রেয় যদিও আমরা সঠিক হয়ে থাকি---মুসলিম শরীফের হাদীসটা এরকমই ছিল। কারন এতে ঐক্য অটূট থাকে। আর নিজের বক্তব্যটি আমি দেওয়ার আগে বেশ কয়েকবার ভাবি,কিন্তু তারপরও ভুল হয়। আল্লাহ ক্ষমা করুক। আপনার প্রতি আমি বিরূপ ধারনায় এটা বলিনি। বরং মুমিন মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ। আমি অবশ্য জাতের মুসলিম নই...
এমন অনেক মাযহাবি আলেম আছেন যারা ফতোয়া দেয়ার সময় কোরআন হাদিসের চেয়ে আবু হানিফাকে প্রাধান্য দেয় আবার এমন অনেক লা-মাযহাবি আলেম আছেন যারা মাযহাবিদের সব আমলকেই ভুল প্রমাণ করার জন্যে উঠে পড়ে লাগে।
আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত আলেমদের কাছ থেকে জানার পাশাপাশি নিজে সচেতন হউয়া, নিজে পড়াশুনা করা, জানা এবং সঠিক ভাবে মানা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন