আল-কুরআনের মূল কপিগুলো কোথায় কিভাবে আছে ??
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ আগস্ট, ২০১৫, ০৯:২৬:৪৯ সকাল
ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর খেলাফত কালে কুরআনের যে নোসখা বা টেক্সট তৈরী করানো হয়, সেখানে পড়া ও নকলে কোন নিয়ম নীতি না থাকায়, কুরআন নকলে আঞ্চলিকতার প্রভাব পড়তে থাকে। (এখানে বলে রাখাউচিত যে, আঞ্চলিক উচ্চারণে পড়ার অনুমতি রসুল দিয়েছিলেন যা, আজও সোয়াদ ও যোয়াদ এর মাঝে বিদ্যমান।) লিখিত নোসখা আঞ্চলিকতার মিশ্রন-মুক্ত রাখতে তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান পূণরায় নুতন নোসখা তৈরী করান। যার সাতটি কপি বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে দেন। ভবিষ্যতে কুরআনের কপি বানাতে উক্ত নোসখার অনুসরণ ও পুরাতন নোসখাগুলো বাজেয়াপ্ত করার ফরমানজারি করেন। ঐ সাতটি কপি কোথায় কী অবস্থায় আছে তা আলোচনায় আনতে, জনাব মওলানা মুহীউদ্দীন খাঁন রচিত “কুরআন ও আনুষঙ্গিক প্রসঙ্গ” গ্রন্থ হতে কিছু অংশ সংযোজিত করাহল:
হজরত ওসমান (রাঃ) পবিত্র কুরআনের সাতখানা প্রামান্য কপি তৈরি করিয়ে তদানিন্তন মুসলীম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি কেন্দ্রে সেগুলো সংরক্ষন করার ব্যবস্থা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, কুরআন পাঠে কারও কোন সন্দেহ সৃষ্টি হলে উক্ত প্রামান্য কপি দেখে তা শুদ্ধ করে নেয়া। কেন্দ্রগুলো হলঃ- মদীনা, মক্কা, কুফা, বসরা, ইয়ামন, বাহরাইন, ও বাইতুল মোকাদ্দাস। এ স্মরণীয় কপিগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিকথা নিম্নরূপ-
১। মদিনায় সংরক্ষিত কপিটি হজরত ওসমানের (রাঃ) নিকটই সংরক্ষিত ছিল। বিদ্রোহীদের হাতে তিনি শহীদ হওয়ার পর হজরত আলি (রাঃ) এর হেফাযতে চলে যায়। খেলাফত লাভ করার পর এটি আমির মোয়াবিয়ার (রাঃ) নিকট সংরক্ষিত হয়। উমাইয়্যা খলিফাগনের শাসনকালের শেষ সময় পর্যন্ত কপিটি দামেষ্কেই সংরক্ষিত থাকে। দামেস্কে উমাইয়্যাদের পতনের পর কপিটি স্পেনে চলে যায়। স্পেনের পতনের পর তদানিন্তন মারাকেশের রাজধানী ফেজে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে কোনক্রমে সেটি আবার মদিনা শরীফে ফিরে আসে। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় উসমানী খেলাফতের বিরুদ্ধে আরবদের মধ্যে ব্যাপক গনঅসন্তোষ দেখা দিলে মদিনা শরীফের তদানিন্তন প্রশাসক ফখরী পাশা অন্যন্য পবিত্র স্মৃতি চিহ্নের সাথে সেটি ইস্তাম্বুলে নিয়ে যান। সেখানে আজ পর্যন্ত কপিটি সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে। (তাযকেরাতুল মাসাহেফ)
২। মক্কা শরীফে সংরক্ষিত কপিটি হিজরী ৬৫৭ সন পর্যন্ত মক্কা শরীফেই ছিল। আল্লামা শিবলী নোমানী লিখেছেনন, বিভিন্ন মুসলীম দেশ ভ্রমণোপলক্ষ্যে তিনি যখন দামেষ্ক পৌঁছেন, তখন হজরত আমির মোয়াবিয়া (রাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তথাকার ঐতিহাসিক জামে মসজিদে তিনি উপরোক্ত কপিটি দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। আল্লামা শিবলী সম্ভবতঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে দামেস্কে পৌঁছেছিলেন।
“কাশশাফুল মাহদী” নামক কিতাবের বিবরণ অনুযায়ী সুলতান আব্দুল হামিদ খানের খেলাফত আমলে(১৮৭৬-১৯০৬খৃঃ) দামেস্কের জামে মসজিদে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড ঘটে। উক্ত দূর্ঘটনায় পবিত্র কোরানের মহামূল্যবান সে কপিটিও ভষ্মীভূত হয়ে যায়।
৩। কুফায় সংরক্ষিত কপিটিকে বলাহত “মসহাফে শামী’”।প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আহমদ মুকরী ৩৭৫ হিজরীতে কপিটি দেখেছিলেন বলে স্বীয় ইতিহাসগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। কুফা থেকে এটি স্পেনের সুলতানগন কর্ডোভায় নিয়ে যান।
দীর্ঘকাল কর্ডোভার জামে মসজিদে এটি সংরক্ষিত থাকে। সুলতান আব্দুল মুমেনের শাসনামলে (৫৫৫ হিঃ)তাঁর রাজধানী মরক্কোতে আনিত হয়। ৬৪৫ হিজরীতে খলিফা মুতাজেদ আলী বিন মামুন এ মূল্যবান বস্তুটি হস্তগত করেন। সে বছরেই তিলমিসান আক্রমন করতে গিয়ে খলিফা নিহত হন। তাঁর নিকট প্রাপ্ত কুরআনের এ ঐতিহাসিক কপিখানা তিমিসানের রাজকীয় তোষাখানায় সংরক্ষিতহয়। কিছু কাল পর একজন ব্যবসায়ী বাদশাহী তোষাখানা থেকে এটি অর্থের বিনিময়ে হস্তগতকরতঃ ফেজে নিয়ে আসেন। আজ পর্যন্ত ফেজেই তা সংরক্ষিত আছে।
৪। বসরায় সংরক্ষিত কপিখানা ৫৭৫ হিজরী সনে সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবীর জনৈক উজীর ত্রিশ হাজার স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে হস্তগত করতঃ মিসরে নিয়ে আসেন। আজ পর্যন্ত এটি খেদিভ কুতুবখানায় সংরক্ষিত আছে।
৫। ইয়ামেনে সংরক্ষিত কপিটি বর্তমানে মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে।
৬। বাহরাইনে প্রেরিত কপিটি বর্তমানে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সরকারী গ্রন্থগারে সংরক্ষিত আছে।
৭। বাইতুলমোকাদ্দাসের কপিটি বর্তমানে ইস্তাম্বুলে রয়েছে। সম্ভবত: উসমানীয় খলিফাগন অন্যান্য বহু বরকতময় স্মৃতিচিহ্নের সাথে এ মূল্যবান দলিলখানাও ইস্তাম্বুলে নিয়ে আসেন।।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত সাতখানা প্রামান্য কপি ছাড়াও হজরত ওসমান (রাঃ) পবিত্র কোরানের আরও তিনখানা কপি তৈরি করেছিলেন। তন্মধ্যে একটি কায়রোর হজরত হোসাইন (রাঃ) মসজিদে এবং অন্য একখানা দিল্লীর জামেয়া মিল্লয়ার গ্রন্থাগারে রয়েছে। অন্য আর একখানা কপি লণ্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত। উক্ত কপিটিতে লেখা রয়েছে, পবিত্র্র কুরআনের এ মসহাফখানা হজরত ওসমান (রাঃ) স্বহস্তে লিপিবদ্ধ করেছেন। কপিটি মোগল সম্রাটগন সংগ্রহ করেছিলেন। এর গায়ে সম্রাট আকবরের সীলমোহর রয়েছে।
১৮৪৫ খ্রীস্টাব্দে এ অমূল্য সম্পদটি মেজর রবিন্স নামক জনৈক ইংরেজ সামরিক কর্মকর্তার হাতে পড়ে। তিনি এটি ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানীর লাইব্রেরীতে জমা দেন। সেখান থেকে লণ্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে স্থানান্তরিত হয়। এই কপিটির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৮১ এবং প্রতি পূষ্ঠায় ১৩ টি করে ছত্র রয়েছে। আরও উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে, হজরত ওসমান (রাঃ) যে পদ্ধতিতে পবিত্র কোরান লিপিবদ্ধ করেছিলেন, আজ পর্যন্ত তা অনুসৃত হয়ে আসছে।
এ প্রসঙ্গে আমার সবিনয়ে আরজ:- যারা ১৪০০ বৎসর আগে নাজিলকৃত কুরআন ও আজকের কুরআনের মাঝে বিন্দুমাত্র অসংগতি আছে বলে মনে করেন, তারা যেন উপরে উল্লেখিত কোন একটি কুরআন স্ব-চোখ্যে দেখে সন্দেহ দূর করেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: বয়ানূল কুরআন: জনাব ইশরার আহমেদ। অনুবাদ: আব্দুস সামাদ(শেখের পোলা)
বিষয়: বিবিধ
১৬১৯ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন