ঈদটি যেভাবে গেল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ জুলাই, ২০১৫, ০১:১১:৫৭ দুপুর
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আসেন ঈদের ফিরিস্তি শোনায়।
গতকাল বাসায় ফিরে খবর নিতে থাকলাম চান্দালী বাবাজীর,কিন্তু খবর না পেয়ে ভাবলাম তাহলে হয়ত কাল আবারও রোজা। এদিকে খাবার তো শেষ, সেহরী করতে হলে এই রাতে রান্না বান্না করতে হবে। দুপুরে অবশ্য ভেড়ার মাংস পানিতে ভিজিয়ে রেখেছিলাম পরদিন ঈদ মনে হওয়াতে।
কর্ভালিস মসজিদের ওয়েবসাইটে দেখলাম আগামী কাল ঈদ,জামাত সকাল ৮.৩০এ। ঈমাম সাহেবকে এসএমএস করলাম,তিনি জানালেন সকাল এ্যাভেরী পার্কে সকাল ৯টায় জামাত। খবরটা শুনেই ফুর্তি হল....তবে ফুর্তিটা মনে নাকি পেটে হল ঠিক বোঝা গেল না।
ইফতারীতে শুধু জুস খেয়েছিলাম। ভেগার মাংস অনেক বেশী পেয়াজ,মরিচ,মশলা দিয়ে রান্না করতে করতে রাত ১২টা বেজে গেল। এবার গরম গরম অবস্থায় ভাতের সাথে এমন ঝাড়লাম যে খাওয়ার পর মনে হল আরেকটু হলে ভালো হত। কিন্তু যেহেতু আমি খাদক নই,তাই ক্ষ্যান্ত হলাম।
যেহেতু দুরকম সময় পেলাম তাই অনেক ভোরে ঊঠে চলে গেলাম দূরের ঈদ ময়দানে। গিয়ে দেখী কাক পক্ষিও নেই। আমি হাটাহাটি করলাম। সুন্দর পার্কের বিভিন্ন স্থানে বসলাম,এর অনেক সময় পর লোকজন আসা শুরু হল। দুটো বাঙ্গালী পরিবার ,যাদেরকে অাগেই চিনি তাদের সাথে অনেকক্ষন গল্প হল। আরবী,পাকিস্থানী কিছু লোকের সাথেও পরিচয় হল। কিন্তু মাইক ঠিক করতে করতে সময় গড়িয়ে সকাল সোয়া ৯টা বেজে গেল। এবার পূর্বোক্ত স্থানে বসা জামাতকে ঠেলে আরেক স্থানে নিয়ে গেল,এরপর আরেকবার স্থানচ্যুত হলাম ঈমামের নির্দেশে।
পাশে এক ইরাকী জান্নাতি ভাইকে দেখলাম। জান্নাতি ভাইটিকে আগেও মসজিদে দেখেছি। লোকটির বয়স অানুমানিক ৪০ হবে। এই লোকটি তার পক্ষাঘাতগ্রস্ত পিতাকে রেখে দূরে কোথাও যেতে পারেন না। কোথাও গেলে পিতাকে নিয়ে যান। সবক্ষন পিতার পাশে থাকেন। তার পিতার চার হাত পা ই আচল। হুইল চেয়ারে বসে থাকেন,কথাও বলতে পারেন না। কিছুক্ষন পরপরই দেখলাম লোকটা তার পিতার মুখ টিস্যু পেপার দিয়ে মুছিয়ে দিচ্ছে, সুন্দর করে বসিয়ে রাখছে, সেখান থেকে সরে গেলে আবারও পূর্বের অবস্থানে বসাচ্ছে। সর্বক্ষন সে তার পিতার দিকে দৃষ্টি রাখছে। অত্যন্ত গভীর ভালোবাসা,মায়া,দায়িত্ববোধ,আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চিন্তা,আল্লাহর থেকে বিশাল পুরষ্কারের বিষয় মনের মধ্যে না থাকলে এটা প্রায় অসম্ভব। হঠাৎ মনে পড়ল প্রখ্যাত তাবেঈন হযরত ওয়ায়েজ করুনীর(রহঃ) কথা। আপন মায়ের সেবা করার কারনে প্রখ্যাত তাবেঈন হযরত ওয়ায়েজ করুনী চরম ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রসূল(সাঃ)এর সাথে দেখা করতে পারেননি। ওয়ায়েজ করুনী তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রসূল(সাঃ) সাথে যোগাযোগ রাখতেন। রসূল(সাঃ) ওয়ায়েজ সম্পর্কে বলেছিলেন তোমরা তাকে দিয়ে দোয়া করিয়ে নিতে পারো। মূলত: ওয়ায়েজ করুনীর দোয়া কবুল হত। এই লোকটির এই কর্মকান্ড দেখে হিংসা হওয়াই স্বাভাবিক।
আমার পাশে উনি তার পিতার হুইল চেয়ার রেখে মাঠের ঘাসের মধ্যে বসে পড়লেন,আর সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার নিজের জায়নামাজটি তুলে উনার পায়ের কাছে পেতে দিলাম। উনি খুশী হলেন। তার পিতাকে ইংরেজীতে বললেন-ইনি আমার বন্ধু। লোকটার সাথে পরিচিত হলাম,তার নাম বেথ।
মোটামুটি বড় মাঠে পুরুষের ৪ কাতার আর আমাদের অনেক পেছনে দূরে মহিলাদের ২ কাতার ছিল। ঈমাম সাহেব এর বয়স বড় জোর ৩৪/৩৫ হবে। জনাব সুদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন,তাতে মসল্লিদের ধৈর্যচ্যুতী ঘটল। অনেক লোক উঠে চলে গেল। তবে বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল দারুন। উনি আমেরিকার ইতিহাস,ইসলামের স্বর্নালী সময়ে আমেরিকার সাথে আরব বনিকদের যোগাযোগ এসব বিষয়ও উপস্থাপন করছিলেন।
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন বাঙ্গারী প্রফেসর দাওয়াত করলেন তার বাসায়। আরও বেশ কিছু বাঙ্গালী মিলে গেলাম। বিশাল বাড়ি তার। গিয়ে দেখলাম ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান,দেশ থেকে পি.এইচ.ডি করতে অাসা বেশ কিছু স্টুডেন্ট । ভদ্রলোক লোক ভালো,তাই বসার ৫ মিনিটের মধ্যে খাবার নিতে বললেন। আহা বড় ভালো লোকটা...সারা টেবিলের প্রতিটা কোনা কাঞ্চিতে নানান জাতের খাবার। গরুর মাংসের ৩ রকম রান্না। মুরগীর মাংসেরও কয়েক রকম। মিস্টি মিঠাই এটা সেটা.....খালি পেটে টানলাম।
বিদেশী শিক্ষক,স্টুডেন্টদের সাথে পরিচিত হল। বেশ খানিক সময় গল্প গুজব করে বিদায় হলাম। খাবারের স্বাদটা এখনও জিহবার অগ্রভাগকে শিহরিত করছে !!
বিষয়: বিবিধ
১২৬৮ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঈদ মুবারক আপনাকেও।
আপনি তো বেশি খাননা তাই মনে হয় আমাকে নিয়ে যেতে পারেন খাওয়ার জন্য। খারাপ বক্তৃতা শুনতে শুনতে আমাদের অবস্থা এমন যে ভালটাও আর শুনতে পারিনা। সেই ভাই এর জন্য দুয়া রইল।
ঈমাম সাহেবের বক্তৃতায় যখন লোক উঠে যাচ্ছিলো,তখন মনে হচ্ছিলো উনি বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করলেই বোধহয় ভালো হত। মাঠের এক পাশে বেশ রোদও ছিল। এদের অনেকে এরকম রোদ সহ্য করতে পারেনা। আবার নারী শিশু ছিল অনেক...
অনেক দিন পর আপনার পোস্টের মাধ্যমে স্টিকি শুরু!!!!! অভিনন্দন স্টিকিতে.....। পুঁটির মা সহ আপনাকে ঈদের দাওয়াত।
ওয়ায়েজ করুনী (রহঃ)ও কি বিবাহিত ছিলেন ?
ঈদের নামাজের পর খুতবা হয় - এটা শেষ হবার আগে উঠে যাওয়া মোটেও ঠিক না ।
দারুন সেই খুতবাতে কি সমকামীদের মধ্যে বিয়ের অনুমোদনের ব্যাপারটি ছিল ?
# ওয়াযেজ করুনী বিয়ে করেননি। রসূল(সাঃ) এর ওফাতের বেশ কিছুকাল পর তার মা মারা যায়। এরপর তিনি আবু বকরের(রাঃ)সময়ে পারশ্যের জিহাদে অংশ নেন এবং শাহাদাত বরন করেন।
# খুৎবা শোনা ওয়াজিব। ওঠা উচিত নয়। আর আমেরিকাতে থেকে তাদের আইনের বিরুদ্ধে কথা বললে যুক্তির মাধ্যমেই ঈমামরা বলেন। উনার বক্তব্যের বিষয়বস্তু সেটা ছিলনা। তবে প্রচলিত সমাজে যে খারাপ বিষয়টি ঘটছে সেটা বলছিলেন। আর মুসলিমরা পৃথিবীতে কিভাবে জ্ঞানের আলো জ্বেলেছে সেটাও কিছু বলছিলেন। সেখানে অনেক বিদেশী ও আমেরিকান নওমুসলিম ছিল।
দেশের বাহিরে ১০টা ঈদ কাটিয়ে দিলাম, প্রতিটা ঈদের দিন আমার জন্য খুব খুব কষ্টের ছিল। একজন প্রবাসির জন্য ঈদের দিনটা কতটা কষ্টের তা শুধু প্রবাসীরাই বুঝবেন, অন্য কারোও 'হৃদয়ের এই নির্মম রক্তক্ষরণ' বুঝবার সাধ্য নাই।
ভালো লাগলো, ধন্যবাদ আপনাকে।
তাক্বাব্বালল্লাহুম্মা মিন্না সালেহা আ'মালিনা।
ঈদ মোবারক
মন্তব্য করতে লগইন করুন