চলুন তবে মাউন্ট হুড

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ জুলাই, ২০১৫, ০৭:৪৮:৫৬ সকাল







আজ ৪ঠা জুলাই,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দীবস। আজ ছুটির দিন,এটিই আমার কাছে বেশী আবেদনময়। আজকের উদ্দেশ্য ওরেগনের সবথেকে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট হুড গমন। আজ তাপমাত্রা প্রায় ১০০ ফারেনহাইট ,সকাল ৯টাতেই সূর্য মামা রেগে বসে আছে। আজ ১৬ই রমজান,গৃষ্মের দীর্ঘ দিন উপেক্ষা করেই রোজা রেখে বহু কিছু করে যাচ্ছি।

গুগল থেকে ম্যাপ কপি করা হল। সেখানে যাওয়ার দুটি রাস্তা। আমি বরাবরই সবুজ বনানীর রাস্তা পছন্দ করি। প্রায় ৭০ কি:মি: হাইওয়েতে চলে ভেতরের রাস্তা ধরে অগ্রসর হতে থাকলাম। খুবই চমৎকার কৃষিক্ষেত,নানান ধরনের বাগান,গরুর ফার্ম,ছোট শহর একের পর এক পার হতে থাকলাম। দু এক স্থানে ছোট ছোট এয়ারপোর্টও আছে। এসব স্থানে ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোট প্লেন আছে। এদেশের বহু কৃষকের এরকম প্লেন রয়েছে। মোলাল্লা নামক ছোট শহরে এসে দেখী পুলিশ গাড়ি থামিয়ে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে যেতে বলছে। ভিন্ন রাস্তা ধরে খানিকটা পথ ভুল করে সামনে গিয়ে দেখী বিজয় দীবসের বিরাট শোভাযাত্রা। গাড়িতে নানান রঙ বেরঙের কাপুড়,কাগজ পেচানো,জাতীয় পতাকা শোভিত হয়েছে। ছোট বড় নানান রকমের গাড়িতে বাহারী রঙের পোষাকে মানুষ যাত্রা করেছে। ছোট ছোট শহরের স্টোরগুলোতেও আজ ব্যপক আতশবাজি বিক্রী হচ্ছে। দামে অনেক ছাড় দেওয়া হচ্ছে দেখলাম।

এবার আসলাম এস্টেকাডা নামক ছোট শহরে। এখানে মেলা চলছিলো। একটু ঘুরলাম। দেখলাম একটি স্থানে পানির ওপর বড় বড় স্বচ্ছ রাবারের বল এবং ভেতরে বাচ্চারা খেলা করছে। পানির উপর ভাসমান বৃহৎ বলের ভেতর তারা বেশ মজা পাচ্ছে দেখা গেল। বলগুলোর বাইরের পাশে জিপার রয়েছে। সেদিন দিয়ে কাউকে ঢুকিয়ে ভেতরে হাওয়া ভরে দেয় একটি যন্ত্রের মাধ্যমে,এরপর জিপারটি লাগিয়ে দেয়। এবার যতখুশী লাফাও, পানিতে ডোবার ভয় নেই। আরও কিছু খেলাধুলার আয়োজন দেখলাম। এখানেও দেখলাম স্তুপাকারে আতশবাজি রয়েছে। এগুলো আজ রাতে পোড়ানো হবে।

এবার স্যান্ডী সিটিতে আসলাম কিন্তু থামলাম না। এসব ছোট ছোট শহর আমার খুব ভালো লাগে। খুবই পরিচ্ছন্ন আর গ্রামের পরিবেশ বিরাজ করে। কিছু কিছু স্থানে কৃষকরা গৃষ্মকালীন দোকান সাজায়। দামেও খানিক সস্তা হয়।

এবার আরও ৬০/৭০ কি:মি: পাহাড়ী রাস্তা পাড়ি দিলাম। একস্থানে মাউন্ট হুড পরিষ্কার হল। পাহাড়ের এই বাকের একদিকে মাউন্ট হুড আরেক পাশে জেফারসন পাহাড়ের মাথা দেখা গেল। এখানে খানিকক্ষনের জন্যে নামলাম। খুবই চমৎকার স্থান। পাহাড়ের অনেক উপর দিয়ে রাস্তা বেঁকে চলে গেছে। সবুজ বনভূমীতে পূর্ণ পর্বতশ্রেণী যে কোনো মানুষকে আকৃষ্ট করবে। নির্মল বাতাশে প্রান জুড়ায়। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। পাহাড়ের উপর পাহাড়। কোথাও কোথাও লেক রয়েছে।

আবারও চললাম। এবার মাউন্ট হুডের পাদদেশে চলে আসলাম। এখান থেকে আরও ৬ মাইল উপরের দিকে উঠলাম এবং মাউন্ট হুডের কাধ বরাবর চলে আসলাম। হিসেব করলাম বাসা থেকে প্রায় ২৪০ কি:মি:, ২ ঘন্টার কিছু বেশী সময় ব্যয় করলাম। এখানে বিশাল পার্কিং লট,অনেক পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী রেস্টুরেন্ট ও হোটেল,দর্শনার্থীদের জন্যে বিশেষভাবে নির্মিত একটি ভবন রয়েছে,যেখানে এখানকার নানান তত্ত্ব,তথ্য,খাবার,মদের বার সবকিছু রয়েছে। এটি একটি বেজ ক্যাম্পও। মাউন্ট হুড স্কি করার জন্যে আদর্শ। বিভিন্ন বয়সের শত শত মানুষ প্রতিনিয়ত এখানে স্কি করতে আসে। তবে স্বভাবজাত ভাবে যারা স্কি করে তারা শীতে আসে বেশী। এ এলাকার পুরোটাই বরফে ঢেকে থাকে। এখন প্রচন্ড গরম,তাই বরফ প্রায় সবটাই গলে গেছে। তবু যা অছে তা সুন্দর করে স্কি পথ তৈরী করা হয়েছে বহু অংশে। পাহাড়ের মাথায় যেতে দুটি ভিন্ন রুটের কেবল কার রয়েছে। তারা সেখানে কেবল কারের মাধ্যমে পৌছে দ্রুত গতিতে স্কি করতে করতে নীচে চলে আসে। এটা দেখতে বেশ দারুন !



মাউন্ট হুডের উচ্চতা ৩৪২৯ মিটার বা ১১২৫০ ফুট। খানিক হাটাহাটি করলাম। এত উপরে উঠেও তাপ কমার তেমন কোনো লক্ষন দেখলাম না। এবার কেবল কারে ওঠার পালা।

কেবল কার স্টেশনে আসলাম। জীবনে কেবল কার সম্বলিত বহু এলাকা পরিভ্রমন করলেও এবারই পথমবারের মত কেবল কারে উঠছি। টিকেট কেটে চলমান একটি কারে চড়ে বসলাম। চলতে শুরু করলাম। এই কারগুলি একেবারেই খোলামেলা,এমনকি কোমরে বেল্ট বাধারও সিস্টেম নেই। ব্যপক মজা পেলাম এরকম খোলামেলা কারে। মনে হল আমি উড়ে যাচ্ছি। মাটি থেকে আনুমানিক ১০০ফুট উপর দিয়ে এটি চলমান। চারিদিকে ছবি উঠাতে থাকলাম। পাহাড়ের উপর থেকে পাহাড়কে দেখার মজাই আলাদা। দূর দীগন্ত,সবুজ পাহাড়ী বনভূমী,স্বচ্ছ নীল পানির লেক,আগ্নের শিলায় তৈরী পর্বতশৃঙ্গ তার খাজে খাজে জমে থাকা সাদা বরফ ...সত্যিই তুলনাহীন। উপর থেকে দেখলাম অনেকগুলো স্কি জোন রয়েছে। অনেক মানুষ দলবেধে সেখানে স্কি করছে।

এপাশের স্টেশনে নামলাম এবং হেটে আরও উপরের দিকে উঠলাম। নানান রয়সের মানুষের বরফের উপর মেতে থাকতে দেখলাম। এখানে যেহেতু গৃষ্মে অনেক মানুষ আসে,তাই এত উপরেও বেশ কিছু চলমান টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া যে কোনো পরিস্থিতিতে সেবা দেওয়ার সকল ব্যবস্থাই এদের আছে। এদিক ওদিক হাটাহাটি করলাম। বিশেষ গাড়ির সাহায্যে পর্বতের মাথা থেকে একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত একাধিক বরফের রাস্তা তৈরী করা হয়েছে,যাতে স্কি করতে সুবিধা হয়। মনে পড়ল ছোট বেলায় বৃষ্টির সময় পিচ্ছিল মাটির উপর পিছলা পিছলি খাওয়ার কথা। সেটারই উন্নত সংষ্করণ হল এটা। বিষয়টি বরাবরই আমার কাছে খুব মজার। বেশ কয়েক বছর আগে স্কেটিং করার শখ জাগাতে শেখা শুরু করলাম। কিন্তু ঢাকার রাস্তাঘাট এটার উপযোগী না হওয়াতে বেশী দিন সেটা করা হয়নি,কিন্তু শখটা ভেতরে রয়ে গেছে। একবার এবড়ো থেবড়ো রাস্তা দিয়ে পড়ি মরি করতে করতে চলার সময় একটা চাকায় সমস্যা হল,অল্পের জন্যে বেকায়দা পড়ার হাত থেকে বেচে গেলাম। চিন্তা করলাম রাস্তাঘাটে বিনা কারনে মরার কোনো কারন নেই। জীবন দেওয়ার বহু ভালো ক্ষেত্র রয়েছে। সেখানেই ইতি।

সত্যিই আজকের মাউন্ট হুড ভ্রমন অতন্ত মজাদার ছিল। বেশ উপভোগ করলাম। আসার পথে এক চার রাস্তার মোড়ে মেক্সিকান এক যুবককে দেখলাম গাড়ির পেছনের অংশ খুলে সেখানে দোকান সাজিয়েছে,যদিও এভাবে বিক্রী করা বে-আইনী। স্ট্রবেরী আর আম বিক্রী করছে। উপেক্ষা করা সম্ভব হল না,থামলাম। কিন্তু এই বদ সুরত আমের যা দাম ধরল,তাতে কেনার খায়েশ থাকল না। স্ট্রবেরীরও দাম অনেক বেশী আর কিনতে হবে বিশাল এক বাক্স একসাথে....চলে আসলাম। খানিক দূর পর দেখলাম এক কৃষকের দোকান। সেখানে গিয়ে ব্লুবেরী,ব্লাকবেরী,রাসবেরী,কিছু সব্জী সাজানো অাছে। দোকানদার নেই। একটি বোর্ডে দাম লেখা আছে। কিনতে চাইলে পণ্য নিয়ে নির্ধারিত মূল্য একটি বাক্সে ফেলে চলে আসতে হবে। এভাবেই ৩ বাক্স বিভিন্ন বেরী কিনলাম। ইফতারের পর টানব।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

328691
০৫ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৮:০০
শেখের পোলা লিখেছেন : একটা বিষয় বুঝলামনা ৪ঠা জুলাই আমাদের ১৭ রমজান গেল আর আপনার ১৬৷ আপনারা পিছিয়ে গেলেন কেমন করে? হতেও পারে৷ সময়ের তফাৎ অনেকটাই ৷ যাক ভ্রমন ভালই লাগল৷ তা এতক্ষনকি বেরীগুলো টানা হয়ে গেছে?
০৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:৩৭
270935
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ভলি হয়েছে হিসেবে আজ ১৭ই রমজান Happy জাজাকাল্লাহ খায়রান ...মিল্ক শেকের সাথে ব্যপক টানলাম...Rolling on the Floor Rolling on the Floor
328699
০৫ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৯:২০
হতভাগা লিখেছেন : মাউন্ট হুড জয় করেছেন । কোন সার্টিফিকেট দিয়েছে ?
০৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
270936
দ্য স্লেভ লিখেছেন : দিতে চেয়েছিলো কিন্তু তা লেখার জন্যে কাগজ খুজে পাচ্ছিলো না,পরে আমি এক খন্ড কাগজ দিলাম ,কিন্তু এবার কলম খুজে পেল না.....Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
328703
০৫ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:২৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : রামাদানের এই দিনটিতে দারুন আনন্দে ভাসছেন মনে হচ্ছে। জীবনের প্রতিটি দিনই সুখে থাকুন আর আবিষ্কার করতে থাকুন নতুন নতুন বিষয়াদি। ধন্যবাদ
০৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:৪০
270937
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। আজ কিন্তু বদর দীবসও...আল্লাহ যেন ইসলামের বিজয়কে তরান্বিত করেন
328712
০৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:০৬
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : আরও ঘুরতে থাকুন....আর আমাদের সাথে শেয়ার করতে থাকুন Smug
০৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:৪০
270938
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওহে এলাকার লোক !!...দাওয়াতও তো করেন না খালি জ্ঞান দেন...Smug Smug Smug
০৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
270955
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : এর পরে আপনি যেই স্থানে বেড়াতে যাবেন সেইখানে যাওয়ার দাওয়াত দিলামSmug
০৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:২৭
271012
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এ দেখী পুরো উকিলের মত কথা কয়...Rolling on the Floor Rolling on the Floor
328743
০৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:৫৫
পুস্পগন্ধা লিখেছেন :
আমরাও পাহাড় জয় করব, অপেক্ষায় থাকুন....। দেখা হবে পাহাড়ের চূড়ায়....
০৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:২৮
271013
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি দেখা হবে পাহাড়ের চুড়ায়। আপনি উঠবেন মাউন্ট এভারেস্টে,আমি উঠব সেন্ট হেলেনায়....হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাবেন।....Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
328753
০৫ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ৪ঠা জুলা্ই এর অভিজ্ঞতা আর মাউন্ট হুড দুইটাই ভাল লাগল। ব্ল্যাক বেরি দিয়ে কি মিলকশেক হয়??
০৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:২৯
271014
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ। মিলক শেকের ভেতর যা দেব তাই সহি...শুধু ব্লাকবেরী না,,,আরও বহু কিছু মেশাই। Rolling on the Floor Rolling on the Floor
328768
০৫ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৩
রাইয়ান লিখেছেন : কেবল করে ভ্রমন আসলেই অনেক মজার ও আনন্দের। আপনার রোজার দিনগুলি ব্যাপক আনন্দেই কাটছে দেখছি ! আল্লাহ আপনাকে অনেক অনেক ভালো রাখুন ....
০৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:৩১
271015
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আহা এই আপনিই হলেন সুপার ভালো মানুষ। কি সুপার দোয়া করলেন। আর নিজের জন্যে নেকীও নিয়ে গেলেন এই রমজানে। আপনার মুখে ফুল,চন্দন,বরফ,আইসক্রিম পড়ুক....Happy Happy
328958
০৭ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:২৩
মুসলমান লিখেছেন : ব্লুবেরী,ব্লাকবেরী,রাসবেরী এগুলোর ছবি দিয়েন কখনও দেখি নাই। পড়ে খুব মজা পেলাম। ভ্রমণ কাহিনী বরাবরই আমার প্রিয়।
344140
০৩ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৭:২৫
ইবনে হাসেম লিখেছেন : অাপনার ভ্রমনকাহিনীগুলো হয় বেশ আনন্দের। কি জানি একদিন ইবন্ বতুতাকেও হয়তঃ হার মানাবেন।
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৬:৩৯
285610
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাহাহাহা....আমাকে মানুষ ইবনে বতুতা ভাই ও কয়....Tongue Tongue Tongue Tongue

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File