বনভীল বাঁধ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৫ জুন, ২০১৫, ০২:৩১:৪৭ দুপুর
একসাথে ৩ দিনের ছুটি । ভাবলাম এটাকে কাজে লাগাই। আজ রবীবার ১৪ই জুন,উদ্দেশ্য বনভিল বাঁধ। এই বাধটি বেশ বিশাল। স্রোতস্বীনি কলাম্বিয়া নদী ওরেগন ও ওয়াশিংটন স্টেটকে যুক্ত করেছে। ১৮৯৬ সালে এখানে বাধ দেওয়া হয় কিন্তু সেটা উপযুক্ত ছিলনা,তাই ১৯৩৪ সালে আমেরিকান আর্মির ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এটি নতুন করে তৈরীর পরিকল্পনা করে। ১৯৩৭ সালে এর নির্মান শেষ হয়। এখানে নদীকে ৪টি ভাগে ভাগ করে বাধ দেওয়া হয়েছে।এখানে দুটি লক রয়েছে ,যার একটি দিয়ে জাহাজ, অন্যটি দিয়ে ছোট নৌযান পার হতে পারে। এই এলাকায় বসবাস করত আমেরিকান ইন্ডিয়ানরা। তাদের থেকে সেসময় জোরপূর্বক জায়গা ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। প্রায় ১০ হাজার বছর ধরে এখানে তাদের বসবাস ছিল। অবশ্য নদীর ওপারে ওয়ার্শিটনে তাদের বসতি রয়েছে এখনও।
রবীবারে সকালে রওনা হওয়াই ভালো,কারন রাস্তায় ব্যপক যানবাহন চলাচল করে সকাল ১০টার পর। দেড় ঘন্টা ড্রাইভ করে ওরেগন সিটি পার হয়ে বনভিল বাধে আসলাম। পুলিশ চেক পার হতে হয়। পুলিশ জিজ্ঞেস করল-সাথে বন্দুক,গোলাবারুদ জাতীয় কিছু আছে কিনা। এরপর কিছু নির্দেশনা ও ধন্যবাদ ও শুভকামনা জ্ঞাপন করে ভেতরে যেতে অনুরোধ করল।
এটা আসলেই একটা বিশাল জিনিস। আজব কারবার। এতটা মজবুত আর বড় বাধ জীবনে প্রথমবার দেখলাম। একটা নদীকে কিভাবে শাসন করা যায় তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। বাধের প্রথম অংশে দুটি লক রয়েছে। এর উপর দিয়ে গাড়ি ও ট্রেন চলাচলের রাস্তা বানানো আছে। জাহাজ পার হওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই লক ব্রিজ ও গেইট খোলা ও বন্ধ করা হয়। এটা পার হয়ে ওপাশে গেলাম। সেখানে আছে ভিজিটিং সেন্টার। এটি উপর থেকে পানির নীচ পর্যন্ত চলে গেছে। এ অংশে নদীর মাছকে লালন পালন করা হয়।
নদীর স্রোতকে বাধা দিয়ে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করা হয়। পাশেই একটা বিশাল হ্যাচারী রয়েছে। সেখানে স্যামন,স্টারজেনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা তৈরী করে নদীতে ছাড়া হয়। আন্ডারগ্রাউন্ডে নেমে নদীর পানির প্রবাহ দেখা যায়। সেখানে আড়াই বা তিন ইঞ্চি পুরু কাচের দেওয়াল অাছে,যেটা একুইরিয়াম মনে হয়। স্পষ্ট দেখা যায় বড় বড় স্যামন যাওয়া আসা করছে। বিশাল বিশাল স্যামন দেখলাম। আরেক পাশে একটি গেটের মাধ্যমে পানি ছাড়া হয়। সে পানি বিভিন্ন ধাপে ধাপে নীচে নেমে আসে। একইসাথে মাছও থাকে। সেখানে বড় ছোট মাছ দেখলাম।
এবার মূল বাধের কাছে আসলাম। এটার দৈর্ঘ ৮২০ মিটার। প্রবল পানির তোড়ের শব্দ দূর থেকেও শোনা যায়। দানবয়ি রূপে আছড়ে পড়ছে পানি নির্দিষ্ট গেইট দিয়ে। এই পানি দিয়ে দুটি পাওয়ার হাউস চালানো হয়। একেকটা টারবাইন এর আকৃতি একটা ছোট খাটো বাড়ির সমান। এরপর উপর পানি এসে পড়ে এবং প্রবল পানির তোড়ে ঘুরতে থাকে। এর সাথেই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক যন্ত্র সংযুক্ত থাকে যা টারবাইনের ঘূর্ণন শক্তিকে বিদ্যুতে রুপান্তরিত করে।
বাধের বেশ কিছু উজানে নদীর পাথরের তীর ধরে মানুষ মাছ শিকার করে। তবে যে কোনো স্থানে মাছ ধরার জন্যে লাইসেন্স দরকার হয়। এখানে বেশ বড় বড় স্যামন ধরতে পারে মানুষ।
এবার চললাম অনন্তা জলপ্রপাতের দিকে। এই বাধ থেকে সেটার দূরত্ব ১৬/১৭ মাইল হবে। আগে দুইবার এখানে এসেছি। এটা এমন একটা স্থান যেখানে বার বার আসতে ইচ্ছে করে। বিশাল বিশাল কাঠের গুড়ি পার হয়ে দূর্গম পথে যেতে হয় এই জলপ্রপাত দেখতে। বরফ ঠান্ডা পানি পার হয়ে,ধারালো পাথরের রাস্তার পর পাহাড়ের খাড়া ঢাল পার হতে হয়। এ অংশে বেশীরভাগ মানুষই বুক সমান পানির পথ ধরে হাটে। অনেকে পাহাড়ের খাড়া অংশ পার হয় আবার অনেকে ভারসাম্য হারিয়ে পানিতে আছড়ে পড়ে। আমি শুরু থেকেই এই খাড়া অংশ ধরে পার হই এবং অনেক দ্রুতই পার হই। মূলত: এদিক দিয়ে পার হওয়ার কিছু কৌশল আছে যা না বুঝলে পানিতে পড়া অবশ্যম্ভাবী। এই কষ্টের পর ঝর্ণাধারা দেখতে ভালো লাগে। এখন গরমকাল তাই কেউ কেউ এই পানিতে খানিকক্ষন সাতারও কাটে যদিও এটা একেবারেই ছোট্ট একটি স্থান। এটি অবস্থিত দুটি খাড়া পাহাড়ের ভেতরে। খুব ভালো লাগল।
এবার বিভারটনে আসলাম। উদ্দেশ্য ইন্ডিয়ান সুপারস্টোর। এখানে আরেকটি ভারতীয় স্টোর রয়েছে যার নাম বাজার,কিন্তু সেটার উদ্দেশ্যে যেতে গিয়ে রাস্তা ভুল করলাম। আর পেটে ক্ষুধা থাকায় খোজা হলনা। ইন্ডিয়ান সুপারস্টোরে নানান তরি তরকারী দেখলাম কিন্তু অনেক দাম। দেশী কাচা মরিচের দাম দেখলাম প্রতি পাউন্ড ৭ ডলার,মানে ১ কেজীর দাম ১৫ ডলারের উপরে। ভাবছিলাম দামে সস্তা হবে কিন্তু তা হলনা। এশিয়ান স্টোরের চাইতেও দাম খানিকটা বেশী। অনেক কিছু কিনলাম। পুইশাক কিনতে পেরে খুব দারুন লাগছে। এরপর ফিরে অাসলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৩ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাক কি আর করা, রাইয়ান আপুর চিংড়ি আর পুই শাকের চচ্চড়ি খেতে থাকি।
আমেরিকান আদিবাসি তথা ইন্ডিয়ান দের নিয়ে কিছু লিখুন।
ধন্যবাদ
আপনারটাও পাঠান..
https://www.facebook.com/minhazulislammohammed.masum
যাক ছুটি ভালো কাটলো তাহলে! রমাদান কারীম! দোআ করবেন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন