সিয়াটলে একদিন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ জুন, ২০১৫, ১২:১৭:৫৩ রাত
আমেরিকার যেসকল শহরের নাম সারা বিশ্ব জানে তার একটি হল সিয়াটল। এটি খুবই ঐতিহ্যপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ একটি শহর। গতকাল (৩১শে মে,২০১৫) অফিসিয়াল কাজে সিয়াটল গিয়েছিলাম। দুই ঘন্টার মধ্যেই কাজ মিটে গেল,এরপর একটু ঘোরাঘুরি করলাম।
ঘন্টায় ১২০-১৩০ কি:মি: বেগে ড্রাইভ করলাম ,সাথে আরও কিছু কলিগ ছিল। সাত সকালে রাস্তা মোটামুটি ফাকা থাকে। রবীবার সকাল ১০টার আগ পর্যন্ত খুব বেশী যানবাহন রাস্তায় বের হয়না। একদমে ওয়াশিংটনের রাজধানী অলিম্পিয়াতে আসলাম। এখানে একটি ছোট্ট বিরতি নিলাম। সেফওয়ে নামক একটি রিটেইল স্টোরের টয়লেটে ঢুকে বসে আপলোড,ডাউনলোড সংক্রান্ত জটিল চিন্তা ভাবনা করছি,ঠিক এমনই সময় এক বুড়ো বেরসিক দরজা খুলে ঢুকে পড়ল। সে থ হয়ে দেখল তার কাঙ্খিত সিটে আমি বসে আছি,আর আমি থ হয়ে দেখলাম কোনো এক বুড়ো ভাম আমার ইজ্জত আবরু ধুলায় লুটিয়ে দিল। নাহ....হল না....উঠে আসলাম। টয়লেটে ঢুকে সিটকানি লাগাতে ভুলে যাওয়া আমার নতুন কোনো ঘটনা নয়, পূর্বেও দু,একবার ঘটেছে। আবারও রওনা হলাম।
রাস্তার দুধারের সৌন্দর্য যে কোনো মানুষকে মুগ্ধ করবে। সৌন্দর্যের বুক চিরে চললাম। সিয়াটলে বোয়িং কোম্পানীর বিশাল ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। বিশ্বের সবথেকে বড় বড় প্লেন এখানে তারা তৈরী করে। .....এসব নিয়ে আরেকদিন লিখব..
সিয়াটল সিটিতে আসতে ৪ঘন্টা সময় লাগল। কাজ মেটালাম। কয়েকজন কলিগসহ ঘুরতে বের হলাম। এটা অামার প্রথম সিয়াটলে আসা। সিটিটার সব অংশ সমতল নয়। ঢালুতে নেমে সাগরের কান্দায় আসলাম।মনে হল অন্তত ৩০০/৪০০ফুট নীচে নেমে এসেছি। এখানে বিশাল বিশাল ক্রুজ শিপ দাড়িয়ে যাত্রীদের তুলে নিচ্ছে। এগুলো হল প্রমোদতরী। এর ভেতর ঢুকলে মনে হবে একটি শহরে প্রবেশ করেছি। জাহাজের ডেক থেকে উপরের দিকে ১২/১৫ তলা আর নীচে আছে আরও অন্তত ৭ তলা,অনেক জাহাজ আরও বেশী বড়। ছাদের উপর আছে পার্ক,ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের মত মজার ব্যবস্থা...বেশ কয়েকটা ফুটবল মাঠের সমান হবে ছাদের অংশটা। এখানে আসার উদ্দেশ্য হল ফিসফ্রাই খাওয়া, কিন্তু নির্মান কাজ চলার কারনে দেখলাম এই এলাকার বড় একটি অংশ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই চলে আসলাম পাইক প্লেসে।
এটা একটা পুরোনো মার্কেট। অনেক কিছু পাওয়া গেলেও মূলত এটি ফুল ও মাছের মার্কেট। নাম না জানা বিভিন্ন ফুলের সমাহার মুগ্ধ করল। এখানে স্যামন,হ্যালিবাট,ট্রাউট,কাকড়া,বিশাল সামুদ্রিক গলদা চিংড়ীসহ নানান মাছ পাওয়া যায়। ভাবছিলাম তাজা মাছ কিনব, কিন্তু স্যামনের দাম দেখলাম ১৫ ডলার প্রতি পাউন্ড,মানে প্রতি কেজী ৩৩ ডলার,আর বিশাল চিংড়ির দাম প্রতি কেজী পড়ে ৮৮ ডলার। কবি বলেন-এর চাইতে বিষ কিনে খাওয়া ভালো। কবির কথা শিরোধার্য করে হাটাহাটিকে উত্তম মনে করলাম।
এক দোকানে দেখলাম মার্কেটিং পলিসি বেশ দারুন। তারা মজার সব কান্ড করে দোকানের সামনে। মানুষ ভীড় করে। কেউ কোনো মাছ কিনলে তারা সুর তুলে সকলে ক্রেতার নাম এবং ক্রয়ের পরিমান উল্লেখ করে মাছটি নিজেদের মধ্যে ছোড়াছুড়ি করে। ছোট হোক, বড় হোক তারা দ্রুত বেগে ছুটে আসা মাছটি দারুনভাবে ক্যাচ ধরে এবং আরেকজনের কাছে ছুড়ে দেয়। এ দৃশ্য আমার কাছেও বেশ উপভোগ্য মনে হল। আর তাদের বিক্রীও বেশ ভালো হচ্ছে দেখলাম।
এক দোকান থেকে ডোনাট নামট মিস্টি পাউরুটি কিনলাম,এটি আকারে বেশ ছোট,সদ্য বানানো হচ্ছে। ২ পিসের দাম ৩.৫ ডলার,আর ১২ পিছের দাম ৪.৫ ডলার। বলাই বাহুল্য মানুষ ১২ পিছই বেশী কেনে। আমিও তাই। বেশ স্বাদের,টানলাম।
খানিক হেটে মানুষের নানান কর্মযজ্ঞ দেখে চললাম বলার্ড লকস দেখতে। প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশটি সরু হয়ে সিয়াটলের ভেতর প্রবেশ করেছে সেখানে একটি বাধ দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরী করা হচ্ছে। এটি আমেরিকান আর্মীর একটি প্রজেক্ট যা ১৯১৭ সালে নির্মিত। এখানে দেখার মত বিষয় হল বিভিন্ন ইয়ট,ক্ষুদ্র জাহাজ,ব্যক্তিগত জলযানসমূহের এ স্থান দিয়ে পার হওয়ার দৃশ্য। সত্যিই অসাধারণ লাগল।
বাধের এক পাশে দুটি খাল আছে। একটি মোটামুটি প্রশস্ত,অন্যটি কম প্রশস্ত। বাধের পানি একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে সুন্দর উপায়ে ছাড়া হয় ও পানি ভরা হয়। যানবাহ বের হতে চাইলে দুটি গেট ন্ধ করে ভেতরে পানি ঢুকানো হয়। খালের তলদেশ দিয়ে তখন বাধের পানি প্রবেশ করে এবং পানির স্তর বাধানে পানির সমান্তলাল হলে যেপাশে বেশী পানি সেদিকের গেইটটি খোলা হয়। ভেতরে পানবাহ প্রবেশ করে। এরপর পানি ছেড়ে দেওয়া হয়,সেটাও তলদেশ দিয়ে বের হয়ে যায়,যাতে যানবাহন স্থির অবস্থায় থাকে। এবার ওপাশের গেইট খুলে দেওয়া হলে যানবাহ বেরিয়ে যায়। অনুরূপভাবে এপাশে আসতে চাইলে যানবাহনসমূহকে দুই গেটের ভেতর প্রবেশ করিয়ে তারপর ভেতরে পানি ভরা হয়। বাধের পানির সমান্তরালে পৌছলে ওপাশের গেট বন্ধ রেখে এপাশের গেট খুলে দেওয়া হয়। দৃশ্যটি বেশ দারুন লাগল। মনে হল সিয়টলে ঘোরা স্বার্থক হল। এই বাধের থেকে অনতিদূরে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্রিজ রয়েছে। যেটা বিশাল এবং এটি সংযুক্ত ও বিযুক্ত করা যায়। বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ব্রিজটির একটি অংশ উপরে উঠে যায়। আবার সংযুক্ত করতে চাইলে তা নীচে নেমে আসে।
এবার আসলাম ইদ্রিসে মসজিদে। পৌছলাম দুপুর ২ টায়। অঅজ রবীবার। সিয়টলে মুসলিম কমিউনিটি রয়েছে। বেশ কয়েকটা মসজিদ রয়েছে এখানে। ইদ্রিস মসজিদ নিকটবর্তী হওয়াতে গেলাম। দ্বিতীয় জামাতে সামিল হলাম। জামাতে নামাজ পড়তে পেরে কত যে ভালো লাগা কাজ করল,তা বুঝাতে পারব না। অথচ দেশে থাকতে এই অনুভূতি তেমন টের পাইনি। এখানে মূলত আরব ও আফ্রিকান মুসলিম বেশী। তাদেরকে সালাম দিয়ে যে তৃপ্তী তা প্রিয় ফিস ফ্রাইতে পাওয়া সম্ভব নয়। মসজিদটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত চমৎকার,পরিপাটি। দ্বিতল বিিশিষ্ট মসজিদটির নীচ তলায় নেমে দেখলাম এক দল বাচ্চা নানান খেলায় মত্ত। এটাও নামাজের স্থান কিন্তু তখন নামাজ চলছিল না। তারা যেভাবে আনন্দে চিৎকার করে খেলায় মত্ত ছিল সেটা আমাদের গ্রামের হুজুররা দেখলে কঠোর হুঙ্কারে তাদেরকে স্তব্ধ করে দিত। যদিও স্বয়ং রসূল(সাঃ) তার নাতি হাসান ও হুসাইনকে মাথায়,কাধে নিয়ে নামাজ আদায় করেছেন এবং তার কোনো সমস্যা হয়নি,কিন্তু আমাদের অনেক হুজুরদের এসবে বেশ সমস্যা হয়। উনাদের ঈমান সম্ভবত আরও বেশী পাকা.....(সম্ভবত: পেকে পচে যার উপক্রম)
ফিরতি পথ ধরলাম। রাস্তায় ব্যপক গাড়িঘোড়া। এটা ওটা খেতে চলতে লাগলাম প্রসস্ত রাস্তা ধরে। একটানা এতক্ষন ড্রাই করলে আসলেই ভালো লাগেনা। ভাবছি লসএ্যাঞ্জেলেস বরাবর যাওয়া আসার ৩৪ ঘন্টার ড্রাইভের পরিকল্পনা বাদ দেব। এত ভালো ভালো না।
বিষয়: বিবিধ
১৩০০ বার পঠিত, ৪০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্রাদার...দোয়া রইল...
আমাদের জন্যও দোয়ার দরখাস্ত।
হুমম ভালো লাগায় ভরিয়ে দিলেন
কি ব্যাপার আপনি কি বালতি দিয়ে ঢেলেছেন নাকি?
মাছের দাম দেখি ওখানেও বাড়তি!! ছবিটা কি বোয়িং ফ্যাকটরি? লক গেট এর সাহাজ্যে ভিন্ন উচ্চতার পানির লেভেল এর দুটি জলপথ এর মধ্যে এভাবে যাতায়ত এর পদ্ধতি অনেক প্রাচিন।
মাছের দাম ইউরোপ,আমেরিকাতে অনেক বেশী। এশিয়ার বহু দেশে সস্তা। তবে বিশাল সাইজের লবস্টারের দাম দেশেও অনেক বেশী।
লক গেটের মাধ্যমে পারাপার অনেক প্রাচীন। যেটা দেখেতে গিয়েছিলাম সেটা ১৯১৭ সালের। কিন্তু এটা আমার কাছে নতুন
থাইল্যান্ড এ কিছু জায়গায় নাই। শুনেছি চিন ও কোরিয়াতেও আলাদা নাই অনেকখানে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন