আল্লাহ কোথায় আছেন ?
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ মে, ২০১৫, ০৮:২৫:৩৭ সকাল
আমি আমার এক বন্ধুর সাথে অনলাইনে প্রশ্ন-উত্তর খেলা করি। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে সে প্রশ্ন করে,আমি উত্তর দেই,আবার আমি প্রশ্ন করি সে উত্তর দেয়। উত্তর না পারলে আমরা সরলভাবে দুহাত তুলে আত্মসমর্পন করি। সভ্য ভাষায় গালিগালাজও করি। গত রাতে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম-বলো তো আল্লাহ কোথায় ? সে নীচের এই উত্তরটা দিল। প্রশ্নটা করেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,তাই উত্তরটা দেখিনি।
আজ অফিস থেকে ফিরে নদীর ধারে গেলাম,খুব দারুন আবহাওয়া ছিল আজ। নদীর ধারের পার্কে দেখলাম কিছু মুসলিম পরিবার পিকনিক করছে। দূর থেকে দেখলাম কাছে যাইনি। আমি নদীর ধারে হাটছিলাম আর ভাবছিলাম আমার একটা পুটির মা থাকলে বেশ মজা করতাম।
এরপর একটা স্টোরে গেলাম। বহু পূর্ব থেকেই বিনা কারনে কেনাকাটা করা আমার বদভ্যাস। একটা কাঠের চামুচ কিনলাম এবং দারুন একটা ফ্রাইং প্যান কিনলাম স্বজী যাতে দারুন করে ফ্রাই করা যায়।যদিও আমার অনেকগুলো কাঠের চামুচ এবং বিভিন্ন রকমের ফ্রাইং প্যান অাছে তারপরও কিনলাম। আর কিনলাম দারুন একটা ছুরি এটা দিয়ে ভেজিটেবল কাটতে দারুন লাগবে। ......
এরপর বাসায় এসে মেইল ওপেন করে দেখলাম প্রিয় বন্ধু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। উত্তরটা পড়েই বললাম আলহামদুলিল্লাহ ! সে আমার চাইতে অনেক বেশী জ্ঞানী এবং বেশী প্রাকটিসিং মুসলিম। তার জন্যে অন্তর থেকে দোয়া করলাম। তার উত্তরটা নীচে----
"তিনি(আল্লাহ) তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।" {সুরা হাদিদ, ৫৭:৪}
কিন্তু এর মানে এই না যে তিনি সশরীরে আমাদের সাথে থাকবেন, বা থাকতে হবে। এর মানে তিনি আমাদের সব কিছুর খোঁজ খবর রাখেন।
"আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।" (সুরা কাফ ৫০:১৬)
আল্লাহ আছেন আকাশে (সুরা মূলক, ১৬-১৭)
"আল্লাহ্ হলেন তিনি যিনি আসমানসমূহ ও জমিন ছয় দিনে পর্যায়কালে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আরশে আসীন আছেন।" (সুরা ফুরকান ৫৯, সুরা সাজদা ৪, ইউনুস ৩)
আর আরশ হল সাত আসমানের উপরে। সুতরাং আল্লাহ্ সাত আসমানের উপরে, আরশে আসীন।
তিনি আরশের উপরে থেকেই প্রত্যেক গোপন পরামর্শ ও প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে উপস্থিত থাকেন। কেননা তাঁর জ্ঞান তাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছে এবং তাঁর দৃষ্টি তাঁদের মধ্যে ক্রিয়াশীল আছে। তাঁর জ্ঞান ও দৃষ্টি থেকে কোন কিছুই আড়াল করতে পারে না এবং তারা তাঁর নিকট থেকে কোন কিছুই গোপন করতে পারে না। তিনি তাঁর পূর্ণ সত্তাসহ তাঁর সৃষ্টি থেকে দূরে আরশের উপরে সমাসীন আছেন। তিনি গোপন ও সুপ্ত বিষয় জানেন (ত্ব-হা ৭)।
তিনি আরশের উপরে থেকেই তাদের কারো নিকট ঘাড়ের রগ অপেক্ষা নিকটে অবস্থান করেন। তাঁর জন্য এমনটি হওয়ার বিষয়ে তিনি সক্ষম। কারণ কোন কিছুই তাঁর থেকে দূরে নয় এবং আকাশমন্ডলী ও যমীনের কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন থাকে না। তিনি গোপন পরামর্শের সময় চতুর্থ জন, পঞ্চম জন ও ষষ্ঠজন হিসাবে আবির্ভূত হন। তবে তিনি স্বয়ং তাঁর সত্তাসহ তাদের সাথে পৃথিবীতে বিরাজমান নন’।
আমরা কুরআন থেকে যা পাচ্ছি তা হ’ল আল্লাহ তা‘আলা আরশে সমাসীন; সর্বত্র বিরাজমান নন।
এ ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) হাদীস ও আছে এবং বিভিন্ন আলেমদের রেফারেন্স ও আছে কিন্তু কোরআনের পরে আমি আর সেগুলো দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না ।
===================
মূলত: আল্লাহ আরশে সমাাসীন। তিনি সেখানে থেকেই তার সমগ্র সৃষ্টি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অবগত। অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যৎ সবকিছু তিনি অবগত। তিনি মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। তাকে সর্বত্র বিচরণ করতে হয়না বা প্রয়োজন হয়না।
গতরাতে ইউটিউবে একজন প্রখ্যাত আলেমের বক্তব্য শুনেই এই প্রশ্নটা তৈরী হয়েছিল। তিনি হযরত আব্বাস(রাঃ)এর রেওয়ায়েতে একটি হাদীস পেশ করলেন,যেখানে রসূল(সাঃ)বলছেন ৭ আসমান আল্লাহর কাছে ৭টি সরিষা দানার মত। আল্লাহ তায়ালা বলেন-আমি নিকটতম আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত করেছি...বিজ্ঞানীরা এই মহা বিশ্ব সম্পর্কে বলেন এটি তারকা দ্বারা পরিপূর্ণ। কিন্তু এটা এতটাই বিশাল যে এর শেইপ বা আকার পর্যন্ত তারা কল্পনা করতে পারেননি। কোটি কোটি তারা নিয়ে ছায়াপথ,হাজার হাজার কোটি ছায়াপথ নিয়ে এই মহাবিশ্ব। সবথেকে কাছে অবস্থিত দুটির তারকার দূরত্ব ৪ আলোকবর্ষ,মানে আলোর গতিতে গেলে ৪ বছর লাগবে নিকটতম তারকাতে পৌছতে। বেশীরভাগ তারকাই সূর্যের চাইতে অনেক বড়।আর এটা প্রতি সেকেন্ডে ২০হাজার মাইল বেগে সম্প্রসারিত হচ্ছে। কুরআনের একটি আয়াতেও এসেছে ..আল্লাহ এটাকে সম্প্রসারিত করছেন। আল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী আমাদের চিন্তার সেই মহা বিশ্ব হল প্রথম আসমান। এটাকেই বিজ্ঞান বিশালতার কারনে অসীম হিসেবে জানে। এর পরে আরও ৬টি স্তর রয়েছে,সবটাই সম্প্রসারিত হচ্ছে,অর্থাৎ নিশ্চয় ওপাশে ফাকা জায়গা আছে,নইলে সম্প্রসারিত হতে পারত না। তবে এসব কিছুই সীমাবদ্ধ বা এর একটি নির্দিষ্ট আকার আছে। আর এর বাইরে আরও কোনো সৃষ্টি আছে কিনা তা বিজ্ঞানের পক্ষে শুধুমাত্র অনুমান করা সম্ভব। তাহলে যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন তিনি কেমন, কতটা বিশাল !! ??
আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেছেন তিনি অসীম। অসীম মানে হল যার শুরু এবং শেষ নেই। অর্থাৎ কোনো যুক্তিতেই অসীমের সাথে সসীম বা যার পরিসীমা আছে তার তুলনা করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ কতটা বিশাল এই চিন্তা মাথায় আসলেও এর উত্তর নেই। কারন যার শুরু এবং শেষ নেই...তার সম্পর্কে পরিমাপ করাটাই বৃথা।
কিছু সংখ্যক মানুষ তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে আল্লাহকে তার প্রদত্ত বর্ণনা অনুযায়ী মাপার চেষ্টা করেছে। এবং সরলভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে যে,তিনি সর্বত্র বিরাজমান, নইলে তিনি সবকিছু কিভাবে জানবেন ? আর তিনিই তো এভাবে বলেছেন....। মূলত : আল কুরআন আমাদের বোধগম্য ভাষায় নাযিল হয়েছে এবং আমাদের বুঝানোর জন্যে আমাদের মত করে বলা হয়েছে। হাদীস থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট বোঝা যায় যে আল্লাহ আরশে সমাসীন। কুরআনের আয়াতেও তিনি তা বলেছেন। আর তার জ্ঞান সকলকিছুকে পরিবেষ্ঠন করে আছে। তিনি সকল বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবগত,সকল ঘটনা,অবস্থা তার অধীনে।
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান ! এর আরেকটি ভার্সন হল, স্রষ্টা বা আল্লাহ সকল কিছুর মধ্যে আছেন। হিন্দুরা এটা বিশ্বাস করে এবং সবকিছু পুজা করে স্রষ্টা ব্রক্ষার মন জয় করে। আরও অনেক সম্প্রদায় এরকম বিশ্বাস করে। কিন্তু ইসলামী বিশ্বাস হল, আল্লাহ আরশে সমাসীন এবং সেখান থেকে তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন, সকল বিষয় সুস্পষ্টভাবে অবগত হন। এমনকি মানুষের সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে তিনি মানুষের শাহরগ থেকেও নিকটবর্তী ।
আমার বন্ধুটির জন্যে দোয়া করেন। আল্লাহ যেন তাকে সারা জীবন হেদায়াতের পথে রাখেন ! আল্লাহ যেন তাকে দুনিয়া এবং আখিরাতে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেন ও মহা সফলতা দান করেন ! তাকে যেন জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন ! দুনিয়াতে তাকে যেন তার পছন্দের এবং খুব উত্তম জীবনসঙ্গী দান করে সুখে রাখেন ! তার জন্যে সকল পরিক্ষা যেন সহজ করে দেন ! এরকম মানুষকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমি গর্বিত ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৮ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার উপস্হাপনা জানার পরিধি কে শাণিত করল অনেক!
আপনার বন্ধু এবং আপনার জন্যে জাযাকুমাল্লাহু খাইরান!
সে জন্যই তো এই ব্লগটাকে এত পছন্দ করি এরকম আর ও অনেক ভুল এখানে আপনাদের মত জ্ঞানীদের লেখা পড়ে শুধরে নিয়েছি ।এর জন্য আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন ।আমীন ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ হুজুর ।
@ রিদওয়ান কবির সবুজ ভাইয়া অনেক ধন্যবাদ ।
@ ছালসাবিল ছোট ভাইয়া এত ইমুর মানে কি ?
ও তাহলে আপনার বন্ধুও সিঙ্গেল।
যাক, কি আর করা যাবে। সিঙ্গেলে সিঙ্গেলেই তো ডবল হবে।
সত্যিই চমৎকার উত্তর, অনেক অনেক শুকরিয়া। আপনার বন্ধুর সাথে সাথে আপনার জন্যও রইল অনেক দোয়া। জাযাকুমুল্লাহ খাইর
"গুনি মানুষ" !!! ভাই, এভাবে লজ্জা দিবেন না। আপনারা সবাই আমার চেয়ে অনেক বেশী গুনী। উতসাহ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আল্লাহ তায়লা তার আরশ এ আছেন কিন্তু তিনি জ্ঞাত সর্ববিষয়ে।
আকীদার এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে অনেকেই সঠি জবাব টি জানেন না! আপনাকে শুকরিয়া সুন্দর পোস্টের জন্য!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন