আমার প্রিয় বই
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ মে, ২০১৫, ০১:৩৪:৩৭ রাত
আস সালামুআলাইকুম ! জি, আমি জানি,আপনি অবাক হয়েছেন। ভাবছেন, এই খাদক "প্রিয় খাবার" শিরোনামে না লিখে হঠাৎ বিদ্বান হয়ে উঠল ক্যান ?? হবে,হবে,,খাবার দাবার নিয়েও হবে। তবে সেটা নিয়ে লিখলে লেখাটা তো টুডে ব্লগের উত্তর মেরু থেকে দক্ষিন মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়বে, তাই আপাতত অ্যাপাটাইজার হিসেবে এটা দিলাম।
আমি ছোটবেলায় বজ্জাত স্বভাবের হলেও গল্পের বইয়ের প্রতি ছিল দূর্বার আকর্ষণ। ক্লাশের বইয়ের প্রতি যতটা ঘৃণা ছিল,ততধিক আকর্ষণ ছিল গল্পের বইয়ের প্রতি। ছোটবেলায় রুপকথার গল্প ছিল সবথেকে প্রিয়। আমাদের বাড়িতে বিভিন্ন রকমের বই থাকত। আমি সেখানথেকে খুজে খুজে গল্পের বইগুলো বের করতাম। সর্বপ্রথম নিজের টাকায় কেনা বই ছিল ঠাকুরমার ঝুলি। সম্ভবত: ক্লাশ ফাইভের পরিক্ষার পর এটা কিনেছিলাম। ১৮ টাকায় বইটা কিনে আনার পর আমার ভাই বলেছিলো, এই,, এ কিনে এনেছিস ? যা পাল্টায় আন। বললাম পাল্টাই কি আনব ? সে বলল-শরৎচন্দ্রের একটা বই কিনে আন। জিজ্ঞেস করলাম-তার মধ্যে কি এরকম ছবি আর ভুত পেত্নীর গল্প আছে ? সে বলল- না। তখন বললাম, তবে এটা পাল্টানোর কথা বলোনা। উল্লেখ্য: ছোটবেলায় লোকমুখে যেসব গল্প শুনে বেশী চমৎকৃত হতাম এবং যা শোনার বাইনা করতাম,তা হল জিন-ভূতের গল্প। জিনের গল্প শুনলে আমি একেবারে হারিয়ে যেতাম। আর সে সময় দুনিয়ার সব বানোয়াট গল্পের গল্পকারও আশপাসে থাকত।
ঠাকুরমার ঝুলির পর আরও অনেক রূপ কথার গল্প পড়েছি। অনেক ভালো লাগত সেসব। তবে সর্ব প্রথম যে বইটিকে আমার শ্রেষ্ঠত্বের তালিকায় রেখেছিলাম তা হল -আলেফ লায়লা নামক আরব্য উপন্যাস। এর বর্ণনা ভঙ্গী,গল্পের বিভিন্ন চরিত্র আমার মনের ভেতর গেথে গিয়েছিলো। একই বই অন্তত ১০/১২ বার পড়েছি,তারপরও ভাল লাগত। কল্পনায় যে কতবার সিন্দাবাদ নাবিক হয়েছি তার কোনো শেষ নেই।
ছোটবেলা থেকেই আমার মা আমাকে নবী-রসূল,সাহাবাদের বিভিন্ন গল্প শোনাতো। পরে বুঝেছি সেগুলোর অনেকটাই স্রেফ বানানো গল্প হিসেবে সমাজে পরিচিত ছিল, না বুঝেই তখনকার মানুষ সেসব গল্প সত্য মনে করে বলত। কিন্তু সেগুলোর ভেতর সত্যও অনেকটা ছিল। আমি হযরত মূসা(আঃ)এর গল্প বেশী শুনতে চাইতাম। একেবারে ছোটবেলা থেকেই একটু মাইরদাঙ্গা টাইপ ছিলাম। সমবয়সীদের পেটানো ছিল হবি। আর তাই যখন শুনেছিলাম মূসা(আঃ) একজন কিবতীকে(অনেকে বলেছেন শহরের দারোগাকে)এক ঘুসি বা থাপ্পড় মারেন অার সে মারা যায়। এটা বার বার শুনতে চাইতাম। আরও শুনতে চাইতাম মূসা(আঃ) ফেরেশতাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন,সেই কাহিনী। আমার আচরনের সাথে মূসা(আঃ)এর শক্তিমত্তার বিষয়টির মিল খুজে পেতাম। সেকারনে বোধহয় তার গল্প শুনতে বেশী ভালো লাগত। উনি ছিলেন আমার সুপার হিরো।
যে সময়ে আমার রূপকথার গল্প ভালো লাগত,সে সময়ই অামার নবী রসূলদের গল্প,সাহাবাদের গল্প অনেক ভালো লাগত। বয়স বাড়তে থাকলে সে ভালোলাগার পরিমান আরও বাড়ে। সে সময়ে একটা ছোট বই পেয়েছিলাম তার নাম ছিল কুদরতী কিস্সা। এটা ছিল বিভিন্ন ওলী আউলিয়ার বিভিন্ন কারামত সংক্রান্ত বই,মূলত: মিথ্যা কাহিনী। কিন্তু সেটাও দারুন লাগত। একইভাবে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী(রাহঃ)কে নিয়ে উদ্ভট কারামতের কাহিনীও শুনতাম ও পড়তাম। দারুন লাগত। তখন তো সত্য মিথ্যা বুঝতাম না। মনে মনে পীর,আউলিয়া হতে চাইতাম। তাদের বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতা যা তারা আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন,সেগুলো পেতে চাইতাম। আল্লাহর কাছে ওই রকম আলৌকিক ক্ষমতা চাইতাম। এসব ভূয়া কিতাব একটা উপকারও করেছে,তা হল আমার মনের মধ্যে ইসলামের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরী। তবে সে বিষয়টি অামার মা'ই প্রথম শুরু করেছে। সে আমার মধ্যে ইসলামের একটা ফাউন্ডেশন তৈরী করতে পেরেছিলো।
ছোটবেলায় শরৎচন্দ্রের লেখা খুব ভালো লাগত। তার শ্রকান্ত চরিত্রও ভালো লেগেছে। তার অন্য প্রায় সব উপন্যাসই পড়েছি। বঙ্কিমচন্ত্রসহ আরও অনেক ভারতীয় লেখকের বিভিন্ন উপন্যাস,গল্প ভালো লেগেছিলো। আমি ক্লাশের বাংলা বইতে থাকা সকল গল্প মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। আর উপরের ক্লাশের গল্পও পড়তাম। এগুলো দারুন লাগত। ছোটবেলায় একটা গল্প খুব ভালো লাগত। কল্পনায় ভাসতাম। সে গল্পটা যদিও আমার সিলেবাসে ছিলনা কিন্তু আমার বোনের বইতে ছিল-গল্পটার নাম ছিল ইদু মিয়ার মোরগ। তার বইতে ইদু মিয়া আর মোরগের সেই ছবিটা এখনও মনের মধ্যে গেথে আছে। শওকত ওসমানের অনেক লেখা গল্পও আমার ভালো লেগেছে। আরও অনেক লেখকের নাম মনে নেই কিন্তু তাদের গল্পে আলোড়িত হয়েছি।
ছোটবেলায় কমিক চরিত্র অত্যন্ত মজাদার ছিল। চাচা চৌধুরী ছিল এসবের মধ্যে সবথেকে প্রিয় । আর আমি কার্টুন ছবি দেখতে খুব ভালবাসতাম,তাই সেসবের উপর কোনো রঙ্গিন বই মুগ্ধ করত আমাকে।
এরপর এলাকার এক বড়ভাই এর নিজস্ব লাইব্রেরীতে সাইমুম সিরিজ পড়েছিলাম। সেটা বেশ ভালো লেগেছিলো। অনেকে ৩ গোয়েন্দাসহ আনোয়ার হোসেনের বিভিন্ন কিশোর থ্রিলার পড়ত,আমার সেসব ভালো লাগেনি। ক্রুসেডের উপর ভিত্তি করে লেখা আসাদ বিন হাফিজের ক্রুসেড সিরিজ ভালো লাগত। একই আঙ্গিকে লেখা আলতামাসের উপন্যাসগুলোও ভালো লেগেছে। সুলতাম মাহমুদ পড়ে রোমাঞ্চিত হয়েছি। তাকে নতুনভাবে চিনেছি। রকিব হাসানের রহস্যপূর্ণ বিষয়ে লেখা বিভিন্ন বই আমাকে দারুন নাড়া দিত। খুব পছন্দ করতাম তার বইগুলো। সব বিশ্বাস করতাম। পরে এসে বুঝেছি বেশীরভাগই ছিল মিথ। হুমায়ন আহমেদের শতাধিক উপন্যাস পড়েছি,সেগুলো ভালো লেগেছিলো,তবে তার হিমু চরিত্র আমার সত্যিই ভালো লাগেনি,যদিও হিমুর কিছু কথা শুনে হাসি পেয়েছিলো। তার সহজ সরলভাবে লেখা উপন্যাস,সাধারণ বিষয়টি অসাধারনভাবে তুলে ধরার বিষয়টি দারুন লাগত। মজা পেতাম তার লেখা পড়ে। জাফর ইকবালের লেখাও অনেক ভালো লেগেছে।
তবে সবথেকে ভালো লেগেছে এবং এখনও লাগে,তা হল ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস। আমি বরাবরই সাহাবাদের মত হতে চাইতাম। বিভিন্ন সাহাবীর বিভিন্ন বীরত্বপূর্ণ ঘটনা আমাকে আলোড়িত করত। কল্পনায় হারিয়ে যেতাম। এমনকি একবার স্বপ্নে রসূল(সাঃ)এর দলে বদরের যদ্ধে অংশ নিয়ে আবু জেহেলকে কুপিয়ে হত্যা করেছি। আমার সেরা উপন্যাস যদি থেকে থাকে তবে সেটা অবশ্যই নসিম হিজাজীর লেখা। আমি এবং আমার ভাই ছিলাম এটার পাগল। আমি প্রচুর বই কিনতাম। কায়সার ও কিসরা,খুন রাঙা পথ,ইউসুফ বিন তাশফিন, ভেঙ্গে গেল তলোয়ার এবং তার সবকটা উপন্যাস আমি একাধিকবার পড়েছি। কল্পনায় আমি সেসব মহা নায়কদের মত হতে চাইতাম। অনেক ভালো লেগেছিলো।
খালিদ বিন ওয়ালিদ বরাবরই ছিল আমার হিরো। আল্লাহর তলোয়ার নামক একটি বই ইসলামী ফাউন্ডেশন বের করেছিলো,সেটা গো-গ্রাসে গিলেছিলাম। খালিদের অশ্ব বাহিনীর প্রধান জাররার বিন আজওয়ার এবং তার বোন খাওলা বিন আজওয়ারের বিশ্ময়কর কাহিনী আমাকে বিমোহিত করেছে। ভাবতাম অঅমার এক সন্তানের নাম হবে খালিদ,অন্যটার নাম জাররার আর মেয়েদের নামও হবে সাহাবীদের নামে।
বিভিন্ন মুসলিম খলিফাদের জীবনী আমার অসাধারণ লাগত। নিজেকে কল্পনা করতাম একজন মহা মানব হিসেবে। কিন্তু আমি বান্দর তা বুঝতাম। তবে এখনও মুসলিম বীরদেরকে নিজের ভেতর লালন করি। মনে মনে তাদের আচরণ অনুসরন করি। নিজেকে তাদের স্থানে নিয়ে যাই,তাদের মত আচরণ করি। অনেক সময় আনমনা হয়ে যাই। অমি স্বপ্ন দেখী আমার স্ত্রীও হবে সুন্দর মানুষিকতার,যিনি স্বপ্ন দেখবেন এক সুন্দর সোনালী যুগের। যিনি স্বপ্ন দেখবেন সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর পিতা-মাতার মত, যারা বিয়ের পূর্বেই কামনা করত, এমন এক সন্তানের যে উদ্ধার করবে ফিলিস্থিন,বাইতুল মুকাদ্দাস। আমিও সেই স্বপ্ন দেখী। আমার সেই স্বপ্ন আমার অনাগত সন্তানের ভেতর প্রবেশ করাতে থাকি প্রতিটি ক্ষন।
বিষয়: বিবিধ
২৪৯৭ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাশাআল্লাহ! প্রতিটি লাইন পড়েছি আর ভালোলাগায় ঘুরে এলাম ঠাকুরমার ঝুলি থেকে একেবারে সাহাবীদের জীবনি পর্যন্ত! অসাধারন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রিয় বইগুলো সম্পর্কে আপনার অনুভূতি!
পরামর্শ- সম্ভব হলে আরো একবার এডিট করুন!
একজন যেহেতু ৫টি লিখা দিতে পারবে তাই বলবো সবচাইতে বেশি ভালোলেগেছে এমন একটি বই নির্বাচন করুন, কেনো ভালো লেগেছিলো, কি ঘটনা ছিলো , কিভাবে আপ্লুত হয়েছিলেন সবমিলিয়ে আরেকটি লিখা দিন!তাহলে আমাদের পাঠকদের অনেকবেশি ভালো যেমন লাগবে আমরা বইটি সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্যও অর্জন করতে পারব!
জাযাকাল্লাহু খাইর! আপানর সফলতা কামনা করছি!
খুব খুব ভালো লাগলো -অনেক সময় আনমনা হয়ে যাই। অমি স্বপ্ন দেখী আমার স্ত্রীও হবে সুন্দর মানুষিকতার,যিনি স্বপ্ন দেখবেন এক সুন্দর সোনালী যুগের। যিনি স্বপ্ন দেখবেন সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর পিতা-মাতার মত, যারা বিয়ের পূর্বেই কামনা করত, এমন এক সন্তানের যে উদ্ধার করবে ফিলিস্থিন,বাইতুল মুকাদ্দাস। আমিও সেই স্বপ্ন দেখী। আমার সেই স্বপ্ন আমার অনাগত সন্তানের ভেতর প্রবেশ করাতে থাকি প্রতিটি ক্ষন। আমীন! সুম্মা আমীন!
আর@ সালাহউদ্দীন, উনি ইতিহাসের সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর কথা বলেছেন। সাকার কথা বলেননি...
আপনার লেখা ভালো লেগেছে। তবে আমিও বলব নির্দিষ্ট কোন বই নিয়ে লিখতে। পিলাচ
মোটামোটি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপনার পাঠক জীবন ।
ধন্যবাদ আপনাকে ।
আমি অবশ্য প্রথম বই কিনেছিলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত কার্টুন বইগুলি। দুঃখের বিষয় এই আকর্ষনিয় বইগুলি এখন পাওয়া যায়না। আর ইসলাম সংক্রান্ত অনেক বই অল্প বয়সে পড়ে ফেলেছিলাম মুলত আমার দাদার বিশাল সংগ্রহ থেকে। প্রাইমারি স্কুলের উপরের দিকে তিনগোয়েন্দার সন্ধান পাই। শরৎ সাহিত্য অবশ্য ধরি আরো পরে কলেজ জিবনে।
আপনার সপ্ন সফল হোক আশা করি কিন্তু এই যুগে এমন মেয়ে পাবেন কই??
ক্রুসেড সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে ১৫-১৬ দিন আগে।
যদি তাই হয়ে থাকে, আপনি বড় ভাগ্যবান!!!! অনেক বেশি আমলদার লোকেরাই এমন স্বপ্ন দেখতে পারে!
যে পরিমাণ বই পড়েছেন, তার হাজারভাগের একভাগও পড়িনি!!! এই জন্যই আপনার সাহিত্যের চাপ খুব সুন্দরভাবেই ফুটে ওঠে, যা আমার মত বই না পড়া ব্লগারের পক্ষে সম্ভব হয়ে ঊঠে না! সরল স্বীকারক্তিঃ কিসের বই কিসের পড়া, এসসসি হেইচ এস সি পুরোটাই কেটেছে প্রেম পিরিতি করে! কিছু রোমান্টিক উপন্যাস পড়লেও বই পড়ার অভ্যাস আমার একেবারেই কম! বুঝাই যায়, আপনি অনেক সাহিত্য পড়েছেন, আর এখন সরাসরি আপনার মুখ থেকে জানলাম!
মাইরদাঙ্গা যে ছিলেন, নিজের পীঠেও কি পড়তনা তালের পিঠা? তারা কি এমনি এমনি ছেড়ে দিতো?
যাক, লেখাটি চমৎকার হয়েছে, পুরুষ্কার বুঝি আপ্নিই জিতে নেবেন! আপনাকে পুরুষ্কারের জন্য নির্বাচন করতে গিয়ে নির্বাচকরা মধুর সমস্যায় পড়বে, এতো বই এবং লেখকের নাম উল্লেখ করেছেন! সত্যিই বিস্ময়কর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন