আমেরিকার ন্যাচারোপাথী ডাক্তার !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ মে, ২০১৫, ০৫:০২:৫৯ সকাল
গতকাল এক কলিগ বলল,সে তার নানীকে দেখতে যাচ্ছে। নানীর ৯৯তম জন্মদিনের জন্যে উপহারও কিনেছে জানালো। বললাম বাহ দারুন ! মনে মনে বললাম, বাংলাদেশের মায়েরা ৫০এ বুড়ি হয়,আর তোমার নানী নিশ্চিন্তে সেন্সুরী হাকাতে যাচ্ছে।
....আমাদের দেশের লোকেরা স্বাস্থ্য সচেতন ,এই অপবাদ বোধহয় পৃথিবীর কেউ ই তাদের দিবেনা।
এই শীতে আমার হঠাৎ নীচের ঠোট শক্ত হয়ে গেল। এত ভেসলিন,লিপস বাম লাগালাম কিন্তু কাজ হলনা। এরকম জীবনেও হয়নি। কখনই শীতকালে ক্রিমও মাখতাম না। সমস্যাও হয়নি। ....আমেরিকায় প্রচুর গরুর মাংস খেয়েছি। এতটাই খেয়েছি যে, মনে করি সারা জীবনে যা খেয়েছি তার প্রায় সম পরিমান বোধহয় এক বছরে খেয়ে ফেলেছি। প্রচুর মাংস খাওয়ার কারনে আমার টয়লেট পরিষ্কার হতনা। আর চিন্তা করে দেখলাম আমার বেশী একটা পানি পানও করা হয়না।
এরই মধ্যে হঠাৎ ২/৩ দিন বেশ টেনশন হয়েছিলো। আমি টেনশন কখনই করিনি,কিন্তু টেনশনে আমার চুল পড়তে শুরু করল। অনেক বেশী উঠতে শুরু করলে আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম।
ডাক্তার মাথার ত্বক পরিক্ষা করে দেখল ত্বকে কোনো সমস্যা নাই। মা ও বাবার বংশের কারো চুলে,দাতে,চোখে সমস্যা নাই। বরং এসব ক্ষেত্রে তারা বেশ শক্তিশালী। আমার বংশের লোক শক্তিশালী এবং তাদের বিশেষ কোনো রোগব্যাধীর রেকর্ড নেই। তাই ডাক্তার বলল,সমস্যা নেই,যেসব চুল ঝরে গেছে তা উঠবে ৫/৬ মাসের মধ্যে।
ডাক্তার বলল বেশী পানি খেতে তাহলে ঠোটের শুষ্কতা থাকবে না। তারপরও আমার অনুরোধে ডাক্তার রক্ত পরিক্ষা করতে দিল। এখানে টেস্ট রিপোর্ট রোগীকে দেওয়া হয়না। সেটা সরাসরি ডাক্তারের কাছে চলে যায়। ডাক্তারের এসিসট্যান্ট ফোন করে আমাকে জানালো যে, রিপোর্টে কোনো সমস্যা নেই আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
কিন্তু আমি নিশ্চিন্ত হলাম না। কারন ডাক্তার আমার কাছে জানতে চায়নি আমার খাদ্যাভ্যাস কেমন। কোনো খাবারে সমস্যা হয় কিনা ইত্যাদী। তাই ভাবলাম এইটা ভুয়া ডাক্তার। কিন্তু সমস্যা যেহেতু টয়লেট টাইট হয়ে যাওয়া,তাই ভাবলাম প্রাকৃতিক কোনো উপায় আছে কিনা,মানে হোমিওপ্যাথিক টাইপ।
অনলাইনে খুজে ৩মাইল দূরে একজন অভিজ্ঞ ন্যাচারোপ্যাথি ডাক্তার পেলাম। উনি আমাকে ৭৫ মিনিট সময় দিলেন। আমার সকল কথা শুনলেন এবং শত শত প্রশ্ন করে জেনে নিলেন পুরো বিষয়। প্রথম দিন উনি আমার কান থেকে এক ফোটা রক্ত নিলেন পরিক্ষার জন্যে। ন্যাচারোপ্যাথি এ্যালোপ্যাথির মত না হলেও এরা রোগীকে নানানভাবে পরিক্ষা করে। এরা ভালো এ কারনে যে, শরীরে যে কোনো সমস্যার মূল কারন খুজে বের করার চেষ্টা করে এবং সেটা প্রাকৃতিক ওষুধের মাধ্যমে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিছু হার্বাল ও কিছু গোমিওপ্যাথী মেডিসিন দেয় এরা। অার কোন খাবারে রোগীর শরীরে কি ঘটছে সেটা তারা বলে। সুন্দর খাদ্য তালিকা তৈরী করে। এবং একটি সময়ের জন্যে নজরদারী চালায়। এই তরিকাটি আমার খুব পছন্দ হল।কারন এভাবে সত্যিই একটি রোগ প্রাথমিক পর্যায়েই বসে রাখা যায় বা সেটা থেকে মুক্ত হওয়া যায়।
আজ ছিল ২য় দিন। ডাক্তার বললেন, আগের রস থেকে তৈরী চিনি আমার খাওয়া যাবেনা। আগামী ৩ সপ্তাহ চিনির বদলে মধু খেতে বললেন। আমি প্রায় প্রতিদিন সকালে দৈ,চিনি,চিড়া খেতাম। ডাক্তার বললেন, দুগ্ধজাত খাবারের সাথে জাল,গম,ওট,যব থেকে তৈরী খাবার মিশ্রিত করে খাওয়া যাবেনা। দুটিই খাওয়া যাবে কিন্তু উভয়ের মাথে অন্তত ৬ ঘন্টা সময়ের ব্যবধান থাকতে হবে। পানি খেতে হবে বেশী। পূর্বের চাইতে অন্তত ২/৩ গ্লাস বেশী খেতে হবে।
আমেরিকার গরুর মাংসে অনেক সময় হরমোন প্রয়োগ করা হয় এবং গরুকে ভুট্টা খাওয়ানো হয়,যেটা গরুর জন্যে খারাপ। ঘাস খেলে গরুর শরীর বেশী সুস্থ্য থাকে এবং বিষমুক্ত থাকে। মুরগীর বিষয়ও তাই। তিনি ভেড়ার মাংস খেতে বললেন,তবে দিনে ৮০-১০০ গ্রামের বেশী নয়।
চিন্তা করলাম এই ডাক্তার গত এক সম্পাহ আমার ব্যাপারে কত কাজ করেছে ! আমার প্রত্যেকটি খাবারের বিষয়ে তিনি গবেষনা করেছের। আমার স্বাস্থের বিষয়ে তার এই আন্তরিকতা অামাকে মুগ্ধ করল।
তিনি আমাকে প্রত্যেক বেলা খাবারের পূর্বে ১ চা চামুচ এ্যাপল সাইডার ভিনেগার খেতে বললেন। আর এক বোতল হোমিও প্যাথি ওষুধ দিয়ে ১০ ফোটা করে ২ বার খেতে বললেন। একইসাথে রক্তের ৫টি বিভিন্ন ধরনের টেস্ট দিলেন। তিনি সবকিছু মিলে দেখতে চান শরীরের সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছে কিনা।
মজার ব্যাপার হল, পানি খাওয়া বাড়িয়ে দেওয়ার কারনে আমার শরীরের ওই সমস্যাটি মিটে গেছে। আর মাংস খাওয়া বাদ দিয়েছি। একইসাথে ৮-১০ রকমের ফল খাচ্ছি এবং সব্জীও। এতে শরীর অনেক ভালো। পূর্বের তুলনায় শরীরে অনেক বেশী শক্তি পাচ্ছি। কিন্তু ন্যাচারোপ্যাথির ব্যাপারে সত্যিই উৎসাহী হলাম। এরা ঘটনার পেছনের ঘটনা খুজে বের করার চেষ্টা করে।
৩ সপ্তাহ পর আমাকে আখের চিনি এবং মাংস খেতে দিয়ে দেখবে,সেটা কোনো সমস্যা করছে কিনা। এভাবে শরীর সম্পর্কে ধারনা নিবে এবং সুস্থ্য রাখার চেষ্টা করবে। এতে আমার কিছু পয়সা খরচ হলেও আমার আপত্তি নেই,কারন এটা অঅমার জরুরী ছিল। আর এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ নিজেই একটা রোগ, তাই ওসব এড়িয়ে চলি। আল্লাহ যেন আমাকে অনেক সুস্থ্য সবল রাখেন এবং সকল সমস্যা দূর করেন !
বিষয়: বিবিধ
১১৯৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিও চেষ্টা করি ন্যাচারাল সিষ্টেমে রোগমুক্তির। এতে কিন্তু সময় বেশি লাগে। আমাদের দেশে এখন বাটপার দের সাথে কিছু ভাল হাকিম,কবিরাজ ও আছেন। হামদর্দ,সাধনার মত প্রতিষ্ঠানগুলি ও মানসম্পন্ন ওষুধ বানাচ্ছে। আমি অবশ্য ওষুধ কম খেতে চেষ্টা করি। আমি এমনিতেই পানি বেশি খাই। পেটের সমস্যায় শুধু দুধ জাতিয় খাবার খাই পানি দিয়ে পাতলা করে। এভাবে কিন্তু আমি আগের চেয়ে ভাল আছি।
আমিও চেষ্টা করি ন্যাচারাল সিষ্টেমে রোগমুক্তির। এতে কিন্তু সময় বেশি লাগে। আমাদের দেশে এখন বাটপার দের সাথে কিছু ভাল হাকিম,কবিরাজ ও আছেন। হামদর্দ,সাধনার মত প্রতিষ্ঠানগুলি ও মানসম্পন্ন ওষুধ বানাচ্ছে। আমি অবশ্য ওষুধ কম খেতে চেষ্টা করি। আমি এমনিতেই পানি বেশি খাই। পেটের সমস্যায় শুধু দুধ জাতিয় খাবার খাই পানি দিয়ে পাতলা করে। এভাবে কিন্তু আমি আগের চেয়ে ভাল আছি।
উনার সাথে সহমত পোষন করলাম, ভালো ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে
নিষেধ।
নতুন ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট সিস্টেম ভালো লাগলো। আসলে রোগী যদি ডাক্তারের উপর সন্তুষ্ট থাকে রোগ অর্ধেক ভালো হয়ে যায়!
আপনার সু্স্থতার জন্য দোআ রইলো! শুভাকমনা জানবেন।
(মেয়েরা ভুলেও ব্যাবহার না করলে মিস করবেন )
মন্তব্য করতে লগইন করুন