ঈমান তাজা রাখা ঈমানের দাবী
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:০০:০৯ দুপুর
একবার ফেরেশতা জিব্রাইল এসে রসূল(সাঃ)কে জিজ্ঞেস করলেন-.....ঈমান কি ? তিনি(সাঃ)জবাবে বললেন, ঈমান মানে হল বিশ্বাস রাখা আল্লাহর প্রতি,তার রসূলগনের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি,মৃত্যুর পর পূণরুত্থানের প্রতি,কিয়ামতের পর হাশরের দিনের প্রতি। ফেরেশতা জিব্রাইল জিজ্ঞেস করলেন ইসলাম কি ? তিনি(সাঃ) বললেন-এক আল্লাহর ইবাদত করা, তার সাথে কাওকে শরিক না করা। সালাত প্রতিষ্ঠা করা,রমজানের রোজা পালন করা,যাকাত আদায় করা,--(বুখারী ও মুসলিম থেকে সংক্ষেপিত)
রসূল(সাঃ)বলেন ইসলামের ৫টি স্তম্ভ রয়েছে ১. এই সাক্ষ্য দেওয়া যে,আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহর রসূল। ২.নামাজ কায়েম করা, ৩.রমজানের সিয়াম পালন করা, ৪. যাকাত আদায় করা, ৫.. হজ্জ পালন করা।-(বুখারী,মুসলিম)
"ঈমানের ৬০এর অধিক শাখা রয়েছে আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।" -(বুখারী,মুসলিম), "লজ্জাশীলতা মঙ্গল ছাড়া আর কিছু আনেনা।" -(বুখারী,মুসলিম)
৩টি গুন যার মধ্যে রয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে: ১. 'আল্লাহ ও তার রসূল' অন্য সকল কিছু অপেক্ষা অধিক প্রিয় হওয়া। ২. কাওকে একমাত্র আল্লাহর জন্যেই ভালবাসা্ । ৩. কুফরীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতই ঘৃনা করা।-(বুখারী, মুসলিম)
রসূল(সাঃ)বলেন-তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষন না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান ও সকল মানুষের চাইতে অধিক প্রিয় হই।-(বুখারী,মুসলিম)
"তোমাদের কেউ ততক্ষন পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন না সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে, তার ভায়ের জন্যেও অনুরূপ পছন্দ করে।"-(বুখারী,মুসলিম)
"যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয় এবং সে যেন মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন উত্তম কথা বলে,নইলে চুপ থাকে।"-(বুখারী মুসলিম)
"জরীর ইবনে আব্দুল্লাহ বলেণ-আমি রসূলের(সাঃ)কাছে এই মর্মে বায়আত নিলাম যে ,তার(সাঃ)সকল কথা শুনব,তার আনুগত্য করব এবং সকল মুসলিমের কল্যান কামনা করব।"-(বুখারী,মুসলিম)
৪টি স্বভাব যার মধ্যে আছে সে খাটি মুনাফিক। এর কোনো একটি পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার ভেতর মুনাফেকির একটি স্বভাব থেকে যায়। ১. আমানত খিয়ানত করা, ২. মিথ্যা বলা, ৩. ওয়াদা ভঙ্গ করা, ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লিল গালি দেওয়া।-(বুখারী,মুসলিম)
মলত: ঈমান মানে হল আল্লাহকে সকল কিছুর একচ্ছত্র মালিক বা স্রষ্টা হিসেবে মৌখিক ও অান্তরিকভাবে স্বীকার করা। অত:পর আল্লাহর রসূলকে নি:শর্তভাবে স্বীকার করে নেওয়া। এর অর্থ হল আল্লাহর রসূল(সাঃ) যা কিছু আমাদেরকে করতে আদেশ করেছেন বা উপদেশ দিয়েছেন তা অবশ্যই পালন করা, আর যা করতে নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করা।
মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় নিজের নফস বা খায়েসের দাসত্ব করতে শুরু করে আর তখনই তার অধ:পতন হয়। প্রত্যেকটি মানুষকে আল্লাহ খারাপের প্রতি ভাল লাগার প্রবনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ তার বান্দা সমূহের মধ্য থেকে ভাল,মন্দ বেছে নেন এভাবে। একইসাথে মানুষের ভালো কাজের প্রতিও ভাল লাগার অনুভূতি প্রদান করা হয়েছে। একজন বান্দা পৃথিবীতে স্বাধীন থাকা অবস্থায় নিজেকে নিয়ন্ত্রন করবে এটাই আল্লাহর বিধান। আর সে নিয়ন্ত্রন যার যতটা কঠোর হবে, সে তত বেশী ঈমানদার। উপরে উল্লেখিত হাদীসে আমরা জেনেছি, আমাদের পিতা,মাতা,আত্মীয় এবং সকল মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ ও তার রসূল বেশী প্রিয় হতে হবে। বুখারীর অন্য হাদীসে আরও এসেছে আমাদের নিজেদের জীবন,সম্পদ,পিতা,মাতা, ব্যবসা বানিজ্য সকল কিছু থেকে আল্লাহ ও তার রসূল অধিক প্রিয় না হলে আমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারব না। এমনকি হযরত ওমর(রাঃ)কে যখন রসূল(সাঃ) এই ব্যাপারে একে একে জিজ্ঞেস করছিলেন তখন ওমর(রাঃ) বললেন-ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি কিন্তু নিজের জীবনের থেকে নয়। তখন রসূল(সাঃ)বলেন-তুমি তাহলে প্রকৃত ঈমানদার হতে পারনি। এরপর ওমর(রাঃ) কিছু সময় চেয়ে নেন। অতঃপর ওমর(রাঃ) নির্জনে চিন্তা করেন এবং নতুন উপলব্ধী নিয়ে ফিরে এসে রসূল(সাঃ)কে বলেন-ইয়া রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আমি এখন আপনাকে আমার নিজের জীবনের চাইতেও অধিক ভালবাসি। তখন রসূল(সাঃ)বলেন-এখন তুমি প্রকৃত ঈমানদার হলে।
জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে একজন ঈমানদার ব্যক্তি তার নিজেকে বিশ্লেষণ করবে। প্রত্যেকদিনের প্রত্যেকটি ঘটনার সময় সে ভাববে উপস্থিত পরিস্থিতিতে তাকে কোনটি বেছে নিতে হবে এবং কেন বেছে নিতে হবে। প্রতেকটি মুহুর্তে উপস্থিত প্রত্যেকটি ঘটনা বা কাজে আল্লাহর উপর নির্ভর করে রসূল(সাঃ)কর্তৃক প্রদর্শিত পথে তা পরিপালন করাই হল ঈমানের দাবী বা লক্ষন। একজন মুসলিম এটি সর্বোচ্চ মর্যাদায় সংরক্ষন করবে।
ঈমানের সর্ব প্রথম দাবী হল সে আল্লাহর সাথে কাওকে শরিক করতে পারবে না। তার চিন্তা,বিশ্বাস,আচরনে কোনোভাবেই প্রকাশ পেতে পারবে না যে,সে অন্য কাওকে আল্লাহ সমকক্ষ অথবা আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতায় অংশীদার করেছে। এটি ঘটলে তার সকল পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে,আমল বরবাদ হয়ে যাবে,কারন সে তার স্রষ্টা বা মালিককেই প্রত্যাখ্যান করেছে,অতএব তার সকল কাজ বা ইবাদত ভিন্ন রাস্তায় প্রবাহিত হয়েছে।
ঈমানের মৌলিক বিষয়ের মধ্যে আসে-আল্লাহর জন্যেই কাওকে ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যেই ঘৃণা করা। এই বিষয়টি একজন মানুষকে ঈমানের পথে অটল রাখতে সাহায্য করে। সে সর্বদা নিজেকে বিচার করতে সক্ষম হয়। প্রত্যেকটি কাজে সে নিজেকে বিশ্লেষণ করবে, তার সকল ভালবাসা এবং ঘৃনা প্রকাশ কার জন্যে উৎসর্গিত হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভালবাসে তার প্রত্যেকটি কাজ হবে এমন,যাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। আর এর আরেকটি অর্থ হল একই সময়ে শয়তান চরম রুষ্ঠ হবে। আর নিজেকে পরিক্ষা করার একটি উপায় হল শয়তানের প্রতি লক্ষ্য রাখা,তার প্রতি মনোযোগ রাখা যে, সে আমার প্রতি খুশী নাকি নাখোশ। তার আচরণ দেখে নিজের অবস্থা বিবেচনা করা যায়। আল্লাহর জন্যে ঘৃনা প্রকাশ করার অর্থ হল, যেসব কাজ আল্লাহ করতে নিষেধ করেছেন সেসব কাজকে অপছন্দ করা,পরিত্যাগ করা। এর অর্থ আল্লাহ ও তার রসূল(সাঃ)প্রদর্শিত পথের বিরুদ্ধ বা সাংঘর্ষিক বিষয়কে পরিস্তিতি অনুযায়ী প্রতিরোধ করা,প্রতিবাদ করা অথবা অন্তর থেকে ঘৃণা করা।
ঈমানদারের লক্ষন বা দাবী শিক্ষিত ও অশিক্ষিত ভেদে ভিন্ন হতে পারে। একজন অশিক্ষিত লোকের বিচার বুদ্ধি, বিবেচনা অনুযায়ী তার দায়িত্বশীলতা, কৈফিয়ৎ এক রকম,আবার শিক্ষিত মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি বিচার বিবেচনা ভিন্ন রকম হওয়ার কারনে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ভিন্ন রকম বা আরও ব্যপক। উভয়েরই জবাবদিহিতা রয়েছে,কিন্তু উভয়ের আমলের চরিত্র,অবস্থা,লক্ষন এক রকম নয়। উভয়ের জ্ঞান,সক্ষমতা সমান্তরাল না হবার কারনে তাদের দায়িত্বশীলতার তারতম্য হয়। এর ফলে জ্ঞানিদের জন্যে ঈমানের সকল শাখার অনুধাবন বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তারা অনুসারী হলেও যাচাই করে নেওয়ার বিষয়টি দায়িত্বশীলতা হিসেবে তার উপর নিপতিত হয়। অর্থাৎ কুরআন সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন তার জন্যে বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। অশিক্ষিতদের উপরও এটি বর্তায়,কিন্তু তার মাত্রা স্বল্প। মূলত: মানুষের করায়ত্ব করার সীমার উপর বিষয়টি বিবেচিত হয়। তবে উভয়ের উপর নির্দেশ- তাদের সাধ্যকে নিয়োগ করা।
প্রতেককে আল্লাহ তার সকল বিষয়ে প্রশ্ন করবেন এবং তাকে তার উত্তর প্রদান করতে বাধ্য করা হবে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলে সে ক্ষমা পাবে। তিনি ছাড়া উদ্ধারের কেউ নেই,সকল কিছুর তিনিই মালিক, তিনিই পুরষ্কার প্রদান করেন এবং তিনিই শাস্তি প্রদান করেন,কেউ তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেনা, এই বিষয়টি মনে সর্বদা জাগ্রত থাকার নামই ঈমান, অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহ দেখছেন এই অনুভূতি জাগ্রত থাকা। এর আরেকটি নাম হল জিকির বা সর্বদা আল্লাহর শ্মরণ। আর ঈমানের দাবী হল, এই বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনের প্রত্যেকটি কর্মকান্ড পরিচালনা করা। যখন সর্বক্ষেত্রে এই বিশ্বাসটি সর্বোচ্চ জাগ্রত থাকে,তখন তার সকল আচরন তার এই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়,আর এটিই হল সর্বোচ্চ ঈমান। সে তার নিজের সবথেকে প্রিয় জিনিস তার জীবনের চাইতেও আল্লাহ ও তার রসূলের নির্দেশকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করে। এই লোকটিই সর্বোচ্চ সফলদের অন্তর্ভূক্ত,জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান তার জন্যেই নির্দিষ্ট। আল্লাহ আমাদেরকে সেই সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ ঈমানের অধিকারী হিসেবে কবুল করুন !
বিষয়: বিবিধ
১৯৩১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি বিস্বাস স্থাপন করলাম আল্লাহর প্রতি এবং তাহার ফেরেস্তাগনের প্রতি এবং তাহার কিতাব সমূহের প্রতি এবং তাহার রাসুলগনের প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি এবং তগদিরের ভাল-মন্দ আল্লাহর নিকট হইতে এবং মৃত্যর পরে পুনরুণ্থানের প্রতি ।
এই সাতটি হল ঈমানের মূল অঙ্গ ।
আর শাখা প্রশাখা নিয়ে মতভেদ আছে কার মতে ৬০টি অধিক কার কার মতে ৭০টির ও বেশী ।এর মাঝে শ্রেষ্টটি হচ্ছে এই বলা যে , আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই আর নিম্নটি হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ,এবং লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা ।
হুজুর এবার তো বলবেন আমি তো এসব জানি তাই না- - - - ।
জী আমি ও বিস্বাস করি আপনি জানেন ।
এর যদি জানতে জান ৭০টি শাখা - প্রশাখা কি তাও বলে দিব ।
জাজাকাল্লাহ খায়রান হুজুরী। এসব বিষয় চর্চা করার মধ্যে ব্যপক কল্যান রয়েেছে যেদিও আমরা বেখবর..
ঈমানা সম্পর্কিত চমৎকার হাদীস সংকলনটি পড়ে আরো একবার ঈমানের তরাবারি ঝালাই হলো আলহামদুলিল্লাহ!
সবচাইতে বড় নিয়মত হলো ঈমান! আল্লাহ আমাদের এই নিয়মত দিয়েছেন, আমাদের দায়িত্ব এর যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন করা এবং হক গুলো আদায় করা!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানের উপর পুরো জীবনকে দৃঢ়, অটল রাখুন, পরকালীন যাত্রায় ঈমানের কালিমাকেই আমাদের কলবে, কন্ঠে বুলন্দ করুন! আমিন!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানের উপর পুরো জীবনকে দৃঢ়, অটল রাখুন, পরকালীন যাত্রায় ঈমানের কালিমাকেই আমাদের কলবে, কন্ঠে বুলন্দ করুন! আমিন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন