আফসোস তাদের জন্যে, যারা দু-কূল হারালো !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:৫৫:২৬ রাত
মহসিন গরিব বাপের ছেলে। অভাবে অনটনে বড় হয়েছে। একদিন স্কুলে আরেকদিন ক্ষেতে খামারে,এভাবে পড়া লেখা চালিয়েছে। কলেজে উঠে টিউশনি করে কোনো রকমে টেনে টুনে চলেছে। বহু কষ্টে বাপ তার অর্জিত অল্প টাকাটা তার হাতে দিয়েছে মানুষের মত মানুষ হওয়ার জন্যে। মহসিন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। এখনও দারিদ্র তার নিত্য সঙ্গী।
সে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র,তাই পিতা-মাতা আশা করে মহসিন ভাল চাকুরী করে পিতা মাতাকে সাহায্য করবে। এদিকে মহসিন অতিরিক্ত মেধাবী হওয়াই বিভিন্ন বিজ্ঞানমনষ্ক লোকেদের সাথে কিভাবে জানি ওঠা বসা শুরু করে। এরা এতটাই বিজ্ঞানমনষ্ক যে স্বয়ং স্রষ্টাকে পর্যন্ত তাদের বিজ্ঞান দিয়ে পরিমাপ করে ফেলে। বিশ্ব সৃষ্টি,তার সকল রহস্য তারা তাদের বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করে ফেলে। যদিও তাদের এসব চিন্তার সরবরাহকারী বিজ্ঞানীরাই হতাশ ছিল তারপরও অনুসারীরা ব্যপক জোস ও জজবা নিয়ে সেসব থিউরীর উপর নির্ভর করে সমাজ,ব্যক্তি জীবন সংক্রান্ত বড় বড় নিয়ম নীতি তৈরী করে ফেলে। নিজেদের ভাবুক পরিকল্পনা এবং সেটাকে সঠিকতা নিরূপনের ভাবুক সমর্থনে পুরো বিষয়টি হয়ে যায় বিশাল দর্শন। এই দর্শন মহসিনের ভাল লেগে যায়। সব কিছুতে কিছু যুক্তির আলোকে ব্যাখ্যা করা পদ্ধতিকেই শ্রেষ্ঠ বিধান বলে গন্য করে। অসম্পুর্ণ এবং অতি ক্ষুদ্র এক বিজ্ঞান দিয়ে সবকিছু বিচার করে সকল কিছু স্রষ্টাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে বিগব্যাং নামক এক মহা বিস্ফোরনকে সকল কিছু উৎপত্তি ভাবতে শুরু করে। যদিও একটি বড় বিস্ফোরন আর শাহবাগের মোড়ের ককটেল বিস্ফোরনের মধ্যে আকৃতিগত পার্থক্য ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই,তারপরও এরা বিগব্যাং নামক মহা বিস্ফোরনের পেছনে যেতে পারেনা। এর পেছনে কারো পরিকল্পনা আছে কিনা তা দেখতে বা চিন্তা করতে পারেনা। এমনই এক অথর্ব বিকারগ্রস্ত বিষয়কে মহা বিজ্ঞান জ্ঞান করে মহসিন আত্মতৃপ্ত হয়। সর্বাঙ্গ অচল বিশেষ হুইল চেয়ারে থাকা এক মহা বিজ্ঞানীকে ঈশ্বর ভাবতে থাকে।
এমতাবস্থায় কতিপয় লোক যখন বিগব্যাংএর পেছনে চলে যায়, এর পেছনে এক বিশাল স্রষ্টার মহা পরিকল্পনার বিষয়টি উপস্থাপন করে। তখন মহসিন সেটাকে মূর্খতা হিসেবে চিত্রায়িত করে। তার অন্যন্য বন্ধুদের সাথে মিলে সে তার এই বিশেষ আস্থার বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে ব্যপক প্রচেষ্টা চালায়। তাদের স্বপক্ষের মিডিয়াতে লেখালিখি শুরু করে। কিছু পশ্চিমা এটাতে বাতাশ দিতে থাকে। তাদের বিপরীত পক্ষের মানুষের অরিরিক্ত স্রষ্টা নির্ভরতার ব্যাপারটিকে উগ্রতা হিসেবে প্রকাশ করতে থাকে। এবং এর বিপরীতে তারা তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক শব্দগুলো যেমন মৌলবাদ,গোড়া,ধর্মান্ধ,জঙ্গী ইত্যাদী ব্যবহার করতে থাকে।
কিন্তু তারপরও তাদের বিজ্ঞানের জয় না হওয়াতে তারা দ্বিতীয় স্তরে উঠে এসে অকথ্য গালাগাল করতে শুরু করে। তারপরও কাজ না হওয়াতে তারা এবার তৃতীয় স্তরে উঠে এসে মুসলিমদের আল্লাহ ও নবীকে গালাগাল করতে শুরু করে। এবার খানিকটা কাজ হয়। তারা ভাবতে থাকে যে গালাগালি দিয়েছি, তোরা রাগে ক্ষোভে এবার তোদের ধর্মান্ধতা ছেড়ে দিবি,ধর্ম ছেড়ে আমাদের উর্বর বিজ্ঞান গ্রহন করবি। কিন্তু এই পর্যায়ে কিছু রগচটা লোকের মাথায় আরেক বিজ্ঞান ভর করে। তারা প্রকৃতির সমতা নামক এক বিজ্ঞানের আলোকে নিজেদেরকে আলোকিত ও ধারালো করে ফেলে।
তারা নিজেরা মহসিনদের বিজ্ঞানীদের মত চিন্তা ভাবনা শুরু করে। তারা ভাবে তোরা মুখ চালা, আমরা হাত চালাবো। তোরা হাত কাগজে চালাবি,আর আমরা হাত তোদের মুখে চালাবো। তোরা গালাগালিতে ধার দে,আমরা চাপাতি,দাওয়ে ধার দেব।
ব্যস তারপর একদিন ভরা জোসনায় চাপাতি চিকচিক করে ওঠে। সেদিন রাতে মহসিন প্রায় প্রতিদিনকার মত একটি বাসি পাউরুটি আর একটি কলা খেয়ে ভাবল বাইরের চায়ের দোকান থেকে এক কাপ চা খেয়ে আসলে মন্দ হয়না। মহসিন বাইরে গেল কিন্তু আজকে চায়ের দোকানে কারা যেন বসে আছে,সবার হাতে চায়ের কাপের বদলে চাপাতি,এমনকি দোকানদারের হাতেও। মসসিন ভাবল সে ভুলে চায়ের দোকানের বদলে কসাইয়ের দোকানে এসেছে। কিন্তু চায়ের কেটলি তো গরম হচ্ছে দেখা যায়...তবে....না ,মহসি আর ভাববার সময় পেলনা। সকলে জুলমন কসাইয়ের মত মহসিনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
মহসিনের জানাজার দৃশ্য খুব করুন। কেউ আসতে চায়না নামাজে। শেষে মসসিনের গরিব বাপ মহসিনের বন্ধূদের ডেকে আনে। তারা বলে লাশকে আমাদের বজ্রকন্ঠ স্তম্ভে নিয়ে যাওয়া হোক ,সেখানে আমরা ১ মিনিট নিরবতা পালন করে মহসিন নামক বস্তুর জন্যে মঙ্গল কামনা করব। কিছু ভাল বস্তুর জন্যে কিছু ভাল বস্তুকে কে উৎসর্গ করতেই হয়। পৃথিবী ও মহা বিশ্বের সবকিছুই হল বস্তু। আত্মা যদি থেকে থাকে তবে তাও বস্তু। আর সেটা মিশে গেছে। ওপারই সব,ওপার বলে কিছু নেই।
মহসিনের বাপের ধৈর্য শেষ। খেকিয়ে উঠে বলল-হারামজাদারা ,,,,....বাচ্চা !.....বাচ্চা.... তোরাই আমার পুলারে মারচোস ? আমার কুড়ালডা গেল কই....তগো একেকটারে ৪ ফালি করুম...
কিন্তু ঈমামও তো পাওয়া যায় না। জানাজা নিজেও তো পড়াতে পারিনা....পুলাডা মরেও গেল ,মেরেও গেল দেখছি....
শেষে উত্তর পাড়ার এক দাড়ী ওয়ালা কবরপূজারী লোক তার গোটা দশেক সাগরেদকে নিয়ে এক বেলা উত্তম খাওয়ার বিনিময়ে জানাজা পড়ালো অতিরিক্ত ৫/৬ তকবীরে।
এটা শুনে মসজিদের ঈমাম সাহেব বললেন-পচা কাঠাল আর মুচি খরিদ্দার !! কিছু লোকের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহই আফসোস করেছেন যে,তারা দুনিয়াতে কিছুই পাবেনা আবার অাখিরাতেও তাদের কিছু নেই....
সত্যিই...বড়ই আফসোস কি বাত !
বিষয়: বিবিধ
১৪১৪ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অবশ্যই আফসোস তাদের জন্য, যারা জ্ঞ্যানি হয়েও বিপথগামী।
যে যতো বেশি জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার পথে এগোবে, তার ততো বেশি স্রষ্টার শোকরিয়া আদায় করা উচিত, নচেৎ জ্ঞানের আধিক্য স্রষ্টাকে ভুলিয়ে দেয়।
ধন্যবাদ ভাই স্লেভ সুন্দর লিখাটি উপহার দেবার জন্য।
You are good at "wit".
Thanks for sharing this.
সফদর ডাক্তার-- মাথা ভরা টাক তার । ক্ষিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে ।
সে যে আপনি তা জানা ছিল না ।জেনে অনেক ভাল লাগল ।
এটা দিয়ে বিনা ফী ছাড়া ।
চমৎকার লিখেছেন! শুকরিয়া
অসাধারণ উপস্থাপনা ও সর্বোপরি সুন্দর একটি বিষয় নির্বাচনের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন